কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ফিরে দেখা ২৯ জুলাই

লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা

ছবি : বাসস থেকে নেওয়া
ছবি : বাসস থেকে নেওয়া

রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা ব্যাপকভাবে প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের খুদেবার্তা পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা জানান।

এতে বলা হয়, হত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে ৩০ জুলাই মঙ্গলবার মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা ব্যাপক প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির বিষয়টিও তিনি খুদেবার্তায় উল্লেখ করেন। নতুন কর্মসূচির কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার করা হয়।

কর্মসূচি ঘোষণার পর সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এ কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই কর্মসূচি ঘোষণার পর অনেক তারকাও ফেসবুক প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেন।

এদিকে সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীর সভার বৈঠকে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বলা হয়, শোক পালনের অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। আর নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

এদিকে সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘জিম্মি’ করে বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদ, গুম-গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ছাত্র-জনতার হত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এই দিন শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, যশোর, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালীসহ কয়েক জেলার কিছু স্থানে বিক্ষোভ করেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এদিনও কর্মসূচিস্থল থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করেন।

সোমাবার রাজধানীর পল্টন, সেগুনবাগিচা, সায়েন্সল্যাব, ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরসহ কয়েকটি এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া ও লাঠিচার্জে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। শুধু ঢাকায় জমায়েত হওয়ার স্থান থেকে কমপক্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

২৯ জুলাই অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার পরিবেশ প্রায় স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

দশম দিনের মতো দেশে কারফিউ অব্যাহত থাকে, যদিও দিনের বেলার কারফিউ শিথিল থাকার সময়সীমা বাড়ানো হয়।

সোমবার সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) তাদের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে টহল দিতে দেখা যায়। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায়।

এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় চেকপোস্ট। পুলিশ মাইকিং করে কাউকে এক জায়গায় জড়ো না হতে হুঁশিয়ারিও দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করাকে জাতির সঙ্গে মশকরা বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট এ কথা বলেন।

এদিকে রাতে গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দলের নেতারা একমত হন।

বৈঠকে শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের নেতারা মনে করেন, ‘বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল ও শিবির তাদের দোসর জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই ১৪ দলের নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত ও শিবিরকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধে একমত হয়েছেন।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যু, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তারসহ নির্যাতনের নানা ঘটনার সত্য উদ্‌ঘাটনে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘গণহত্যার বিচার চাই; গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করো’ শীর্ষক আইনজীবীদের এক মানববন্ধন থেকে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান কোটা আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নিহতের এ সংখ্যা অনেক বেশি।

এদিকে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড ও সামগ্রিক ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তসহ ছয় দফা দাবি জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, গ্রেপ্তারকৃত বিরোধী নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গোয়েন্দা বাহিনীর তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও ব্লক রেইড বন্ধ করা।

চলমান ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসজুড়ে সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া সারা দেশে হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক-হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানান বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠে বাধ্য করাকে ‘অনৈতিক’ ও ‘গর্হিত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জানায়, ডিবি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেন বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক। ২৯ জুলাই প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের বেশিরভাগই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবা-মা

বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি, ডুবছে ঝুলন্ত সেতু

মোহাম্মদপুরের সেই ওসির পক্ষে মানববন্ধন মাদককারবারিদের

একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন প্রস্তাব আহ্বান

মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কাজ করছি : ড. আনিসুজ্জামান

ফাহিম ফয়সালের সুফি গান

শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, বর্তমান অবস্থান কত

এইচএসসিতে জিপিএ-২.৫ নিয়েই বিজিবিতে চাকরির সুযোগ

দুই হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি দেবে ডিএনসিসি

বিএসইসির কমিশনার হলেন সাইফুদ্দিন

১০

জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় এনসিপি

১১

প্রত্যেক ইঞ্চি মাটি থেকে মুজিববাদ বিতাড়িত করব : নাহিদ

১২

‘জুলাই সনদ’ নিয়ে শিবির সভাপতির হুঁশিয়ারি

১৩

পেহেলগামের হামলাকারীদের সবাই নিহত : পার্লামেন্টে অমিত শাহ

১৪

রাজশাহীর সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কারাগারে

১৫

ভুয়া র‍্যাবকে ধাওয়া দিয়ে ধরল আসল র‍্যাব, গণপিটুনি

১৬

জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক : জামায়াত

১৭

বিজয় সেতুপতির বিরুদ্ধে কাস্টিং কাউচ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

১৮

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুরের ফ্ল্যাট জব্দ, হিসাব ফ্রিজ

১৯

সাবেক সচিব মিহির কান্তিসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা 

২০
X