

বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। আগামী বুধবারের (২৬ নভেম্বর) মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, গতকাল (শনিবার) যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, তা আরও ঘনীভূত হয়ে মালাক্কা প্রণালী ও সংলগ্ন আন্দামান সাগরের উপরে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সোমবারই (২৪ নভেম্বর) দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরের উপরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সেটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরেই সেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর সেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে নাম হবে ‘সেনিয়ার’। যে নামটা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই শব্দের অর্থ হল সিংহ। অর্থাৎ নামেই তাণ্ডবের আভাস আছে।
তবে সেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় কোন পথে অগ্রসর হবে অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একইভাবে গতিবেগ কত থাকবে, তা এখনই বলা যাবে না। আবহবিদদের মতে, সাগরে থাকার সময় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বেশ বাড়তে পারে। মঙ্গলবার বা বুধবার নাগাদ মোটামুটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য অভিমুখ এবং গতিবেগ নিয়ে আরও কিছুটা ধারণা স্পষ্ট হবে।
এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ রোববার (২৩ নভেম্বর) সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাস দিয়েছেন। তার পোস্ট অনুসারে, আগামী ২৬ বা ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে (আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণ পাশে) একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এই লঘুচাপটি পর্যায়ক্রমে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও সর্বশেষে ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। একটি ঘুর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এই বিষয়ে সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একমত।
তিনি লেখেন, সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কেমন শক্তিশালী হবে ও কোন স্থানের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করবে এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ভিন্ন-ভিন্ন পূর্বাভাস দিচ্ছে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী যেকোনো স্থানের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কেমন শক্তিশালী হবে ও কোন স্থানের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করবে ২৬ নভেম্বর অধিক নিশ্চয়তা সহকারে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পলাশ।
মোস্তাফা কামাল পলাশ কৃষকদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ফলে জমিতে থাকা পাকা আমন ধান কাটা ও মাড়াই করা শেষ করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। শীতকালীন শাক-সবজি চাষিরা সম্ভব্য এই বৃষ্টিপাতের কথা মাথায় রেখে বীজ বোনা ও জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত জন্য রোদ্দৌজ্জল আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে পুরো দেশে।
সমুদ্রগামী জেলাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখের পর থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উত্তাল হওয়ার শুরু করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে উপকূলে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে সমুদ্রে মাছ ধরা সকল ট্রলারকে। ৩০ নভেম্বরের পরে নতুন করে সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন