বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকেই জাহাজটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। নানা আলোচনার পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা হয় জাহাজের মালিকপক্ষের। এরপর দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। মুক্ত হয় জাহাজ ও ২৩ বাংলাদেশি নাবিক। কীভাবে নাবিকরা জাহাজসহ মুক্তহলো তা এখনো পরিষ্কার করছে না কোনো পক্ষ।
রোববার (১৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, আমি উদ্ধার প্রক্রিয়া হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মনোনীত প্রতিনিধি। আমাদের সঙ্গে ওদের কনফারেন্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। সেই অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আমি আপনাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারব না। কারণ এটা আমি সই করেছি। উদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমরা আমেরিকান নিয়ম মেনেছি এবং ইউকে (যুক্তরাজ্য) ও সোমালিয়ার নিয়ম মেনেছি। ফাইনালি কেনিয়ার নিয়মও মেনেছি। সবার সঙ্গে আমাদের অ্যাগ্রিমেন্ট করা আছে এ বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। তবে আমি আবার বলি, আমরা সবকিছু আইন মেনে করেছি।
তবে এ বিষয়ে জানা গেছে, জলদস্যুদের দাবি অনুয়ায়ী মুক্তিপণ নিয়ে একটি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ সময় শনিবার বিকেলে জিম্মি জাহাজের ওপর চক্কর দেয়। এসময় জাহাজের ওপরে ২৩ নাবিক অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর উড়োজাহাজ থেকে ডলারভর্তি ৩টি ব্যাগ সাগরে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে এসব ব্যাগ জলদস্যুরা কুড়িয়ে নেয়। জাহাজে ওঠে দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ গুনে নেয় জলদস্যুরা। তবে চুক্তি অনুযায়ী জাহাজটি যথাসময়ে ছেড়ে দেয়নি দস্যুরা। পরে তারা আশপাশে কেউ আটক করছে কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়।
কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, একটা কথা বারবার আসছে, কেন আমরা আর্মড গার্ড নেইনি। এটার কারণ হচ্ছে আমরা হাই রিস্ক এলাকার বাইরে ছিলাম। সাধারণত ২০০ নটিক্যাল মাইলের ভেতর হাইরিস্ক এলাকা হিসাব করা হয়। কিন্তু আমরা যাচ্ছিলাম মোটামুটি ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দিয়ে। গত ৮-৯ বছরে ওই এলাকায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেখানে আর্মড গার্ড নিতে হয়। এ কারণে আমরা আর্মড গার্ড নেইনি।
এদিকে, জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি, দীর্ঘদিন কথাবার্তা চলেছে। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই। আমাদের আলাপ-আলোচনা এবং বিভিন্ন ধরনের চাপ আছে এখানে। সেই চাপগুলো এখানে কাজে দিয়েছে।
প্রসঙ্গ, গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
মন্তব্য করুন