কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৪, ১১:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মিল্টনের বিরুদ্ধে কালবেলায় উঠে আসা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ডিবি

ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত

দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে আসা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার, কিডনি কেটে বিক্রি, মরদেহ দাফন গড়মিল, মৃত্যু সনদে জালিয়াতির মতো ভয়াবহ অভিযোগের বিষয় তুলে ধরেন ডিবিপ্রধান।

আরও পড়ুন মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নেবে ডিবি

হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টনকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানবসেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।

আরও পড়ুন : সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলেন মিল্টন সমাদ্দার

এ সময় তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মূলত উত্থান হয় তার বাবাকে পেটানোর পর। এ ঘটনার পর এলাকাবাসী মিল্টনকে এলাকা ছাড়া করে। পরে শাহবাগে এসে একটা ফার্মেসিতে চাকরি করেন মিল্টন। সেখান থেকে ওষুধ চুরি করার কারণে তাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে মিতু হালদার নামে এক নার্সকে সে বিয়ে করে। বিয়ে করার পর তার স্বপ্ন এলো সে একটা ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার স্থাপন করবে। তারপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে।

তিনি বলেন, এরপর সে রাস্তা থেকে শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়। আপনারা দেখেছেন সে ওই সব ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তাকে নিয়ে নিউজ করা হয়। সে বলেছে তার অপারেশন থিয়েটার ছিল কিন্তু তার কোনো অনুমোদন ছিল না। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন তিনি।

এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে।

গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর মাঠে নামেন ডজন ডজন সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য।

আরও পড়ুন : ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন : ডিবিপ্রধান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শুশ্রূষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও।

তবে ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ। মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।

কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে না রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া দাফন করা মৃতদেহের পেটে আবার কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার অভিযোগও রয়েছে।

আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট মিল্টন নিজেই তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ডাক্তারের সিল-স্বাক্ষর জাল করে এসব করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। আবার মৃতদেহের শরীরে কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুললে বিনামূল্যে সেখানে গোসল (মৃতদের) করানো বাদ দেন মিল্টন। পরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ করে আশ্রমের মধ্যে মৃতদেহ গোসল করানো হতো বলে জানা গেছে।

মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে এক বৃদ্ধকে রেখে আসেন মিরপুরের দারুস সালাম থানার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি রনি মল্লিক। তবে সেই বৃদ্ধের ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেই উত্তর পাননি রনি মল্লিক। রনির অভিযোগ, বৃদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাকে নির্যাতন করা হয়। তার ধারণা বৃদ্ধকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

মিল্টন সমাদ্দার হোমকেয়ার নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে ৬৬ লাখ টাকা বৃদ্ধাশ্রমে দান করেছেন বলে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তার হোমকেয়ারের কোনো সার্ভিস নেই। শুধু লাইসেন্স আছে। এ ছাড়া তিনি সব সময় দুটি আশ্রমের কথা বলে এসেছেন। তবে একটি আশ্রমের তথ্য সব সময় গোপন রেখে এসেছেন অভিযোগ আছে।

এ ছাড়া আশ্রমে চর্টার সেল বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন, বরিশালে চার্চ দখল করতে মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া চিঠি তৈরি, চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, শিশু পাচার বা বিক্রি, সাঈদী, মামুনুল হকের মতো লোকদের মুক্তির মিথ্যা প্রচারণা ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ষাট লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না 

শীত আরও বাড়বে কিনা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

নওগাঁয় শীতের তীব্রতায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ঘরে 

জুলাই আন্দোলনে আহত না হয়েও প্রতি মাসে ভাতা তুলছেন যুবক

চিড়িয়াখানায় সিংহের কাছে গিয়ে প্রাণ হারাল কিশোর

দিনাজপুরে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.১ ডিগ্রি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনসিপির সদস্য সচিব

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট

ইতিহাস বদলে দিল বাংলাদেশ, যা আগে কখনো ঘটেনি

মেহেদির রং না শুকাতেই নববধূ ইলমা বিধবা

১০

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাকে শোকজ

১১

ভেজাল গুড় খেলেই হতে পারে যেসব জটিল রোগ

১২

শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু ৪১০, নিখোঁজ ৩৩৬

১৩

বেগম জিয়ার অসুস্থতা হাসিনার কারণেই : রিজভী

১৪

সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে পুশইন বিএসএফের

১৫

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হবে উৎসবমুখর : প্রধান উপদেষ্টা 

১৬

পর্তুগালের জালে এক হালি গোল দিয়েও মন ভরেনি ব্রাজিলের

১৭

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

১৮

সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া যুবশক্তির ২ নেতাকে অব্যাহতি

১৯

‘আমি আর কত ক্ষতিগ্রস্ত হবো?’—প্রশ্ন বিজয়ের

২০
X