কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৪, ১১:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নেবে ডিবি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমে কথা বলেন। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমে কথা বলেন। ছবি : সংগৃহীত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে ৮টায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দার তার বাবাকে পেটালে এলাকাবাসী তাকে এলাকা ছাড়া করে। সেখান থেকেই মূলত তার উত্থান হয়। পরে শাহবাগে এসে একটা ফার্মেসিতে চাকরি করে। সেখান থেকে ওষুধ চুরি করার কারণে বের করে দেয়। পরে মিতু হালদার নামে এক নার্সকে সে বিয়ে করে। বিয়ে করার পর তার স্বপ্ন এলো সে একটা ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার স্থাপন করবে। তারপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে।

আরও পড়ুন : মিল্টনের বিরুদ্ধে কালবেলায় উঠে আসা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ডিবি

তিনি বলেন, এরপর সে রাস্তা থেকে শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়। আপনার দেখেছেন সে ওই সব ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করত। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তাকে নিয়ে নিউজ করা হয়। সে বলেছে তার অপারেশন থিয়েটার ছিল কিন্তু তার কোনো অনুমোদন ছিল না।

এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে।

গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর মাঠে নামেন ডজন ডজন সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শুশ্রূষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও।

আরও পড়ুন : সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলেন মিল্টন সমাদ্দার

তবে ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ। মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।

কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে না রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া দাফন করা মৃতদেহের পেটে আবার কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার অভিযোগও রয়েছে।

আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট মিল্টন নিজেই তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ডাক্তারের সীল-সাক্ষর জাল করে এসব করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। আবার মৃতদেহের শরীরে কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুললে বিনামূল্যে সেখানে গোসল (মৃতদের) করানো বাদ দেন মিল্টন। পরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ করে আশ্রমের মধ্যে মৃতদেহ গোসল করানো হতো বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন : ডিবির ব্রিফিংয়ে উঠে এলো মিল্টনের কিডনি বিক্রির ইস্যু

মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে এক বৃদ্ধকে রেখে আসেন মিরপুরের দারুস সালাম থানার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি রনি মল্লিক। তবে সেই বৃদ্ধের ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেই উত্তর পাননি রনি মল্লিক। রনির অভিযোগ, বৃদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাকে নির্যাতন করা হয়। তার ধারণা বৃদ্ধকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

মিল্টন সমাদ্দার হোমকেয়ার নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে ৬৬ লাখ টাকা বৃদ্ধাশ্রমে দান করেছেন বলে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তার হোমকেয়ারের কোনো সার্ভিস নেই। শুধু লাইসেন্স আছে। এছাড়া তিনি সব সময় দুটি আশ্রমের কথা বলে এসেছেন। তবে একটি আশ্রমের তথ্য সব সময় গোপন রেখে এসেছেন অভিযোগ আছে।

এছাড়া আশ্রমে চর্টার সেল বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন, বরিশালে চার্চ দখল করতে মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া চিঠি তৈরি, চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, শিশু পাচার বা বিক্রি, সাঈদী, মামুনুল হকের মতো লোকদের মুক্তির মিথ্যা প্রচারণা ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ষাট লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইশরাক-নুসরাতের বাগদান নিয়ে নুরের ফেসবুক পোস্ট

অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর

ভোটে সিল মেরে বলবেন ‘আলহামদুলিল্লাহ দাঁড়িপাল্লা’ : গোলাম পরওয়ার

জন্মদিনে ভক্তদের কী সুখবর দিলেন অপু বিশ্বাস?

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র / মার্কিন নাগরিক এনায়েতের সহযোগী আজহার রিমান্ডে

গুম করে কীভাবে ভারতে নেওয়া হয়, জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ

সিরিজ বাঁচানোর মিশনে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন একাদশ

মেলানিয়া ট্রাম্পের দাবিতে সাড়া দিলেন পুতিন

ছবিতে প্রথমে কী দেখছেন বলে দেবে, মানুষ আপনাকে কেমনভাবে দেখে

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ

১০

ঘি চা খাওয়া কি সত্যিই ভালো

১১

এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কেমন হওয়া উচিত, জানালেন জ্বালানি উপদেষ্টা

১২

এশিয়ান কাপ খেলতে যে কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

১৩

অবশেষে রাকসু নিয়ে মিলেছে স্বস্তির খবর

১৪

অনলাইন জুয়া চক্রের শীর্ষ এজেন্ট লিপু গ্রেপ্তার

১৫

ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, তারিখ ঘোষণা

১৬

অনুমতি ছাড়া খুলনা মেডিকেলে সংবাদ সংগ্রহে পরিচালকের নিষেধাজ্ঞা

১৭

এক টেবিলে বিএনপির হেভিওয়েট ৫ মনোনয়নপ্রত্যাশী 

১৮

ঢাবি, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরিচ্ছন্নতায় ডিএসসিসি

১৯

রোববার ইতালি যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

২০
X