কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলেন মিল্টন সমাদ্দার

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত

সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। গত শতকের ৯০ দশকে ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মান্নার সিনেমা দেখে নায়ক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তিনি।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ মিল্টন সমাদ্দার তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। মিল্টন সমাদ্দারের দেওয়া সেই পোস্টটি কালবেলার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

পোস্টে মিল্টন লিখেছিলেন- ‘ছোটবেলা স্বপ্ন ছিল, নামকরা চিত্রশিল্পী হবো, ৯০ দশকে নায়ক মান্নার সিনেমা দেখে ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের নায়ক হবো। কোনোটাই হতে পারি নাই, এখন স্বপ্ন দেখি একজন সৎ ভালো মানুষ হবো। মৃত্যুর পরে অনেকেই বলুক লোকটা ভালো ছিল, দোয়া করে বলুক সৃষ্টিকর্তা বেহেস্ত/স্বর্গবাসী করুন।’

মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক থেকে নেওয়া স্ক্রিনশর্ট।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর মাঠে নামেন ডজন ডজন সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শুশ্রূষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও।

তবে ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ। মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।

অনুসন্ধানে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

মিল্টন সমাদ্দারের দাবি, আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার আশ্রমে চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়; যা অস্বাভাবিক।

আশ্রমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেন মিল্টন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার।

তবে কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে না রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া দাফন করা মৃতদেহের পেটে আবার কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার অভিযোগও রয়েছে।

আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট মিল্টন নিজেই তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ডাক্তারের সিল-স্বাক্ষর জাল করে এসব করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। আবার মৃতদেহের শরীরে কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুললে বিনামূল্যে সেখানে গোসল (মৃতদের) করানো বাদ দেন মিল্টন। পরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ করে আশ্রমের মধ্যে মৃতদেহ গোসল করানো হতো বলে জানা গেছে।

মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে এক বৃদ্ধকে রেখে আসেন মিরপুরের দারুস সালাম থানার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি রনি মল্লিক। তবে সেই বৃদ্ধের ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেই উত্তর পাননি রনি মল্লিক। রনির অভিযোগ, বৃদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাকে নির্যাতন করা হয়। তার ধারণা বৃদ্ধকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুয়েট শিক্ষার্থী রিমান্ড শেষে কারাগারে 

স্পেন দল থেকে বাদ পড়লেন ইয়ামাল

না খেয়ে কত দিন বেঁচে থাকা সম্ভব? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা

১৩ নভেম্বর আ.লীগের কর্মসূচি নিয়ে সোহেল তাজের স্ট্যাটাস

পুলিশের দাবি  / ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি সফলে ‘বোম ফারুককে’ টাকা দেন নিক্সন চৌধুরী

মুখ ফসকে ‘শেখ’ বলার ব্যাখ্যা দিলেন স্নিগ্ধ

বুধবার ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই ৫ পানীয়

পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলা, অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে

ড্যাফোডিলে পর্তুগিজ রাজবংশের আগমন ও লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ চুক্তি 

১০

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১২

১১

আমরা শান্তির রাজনীতি করতে চাই : মির্জা ফখরুল

১২

গোবিন্দই আমাকে প্রথম হিরো হতে বলেছিলেন : অক্ষয় কুমার

১৩

যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করুন : ডিএমপি কমিশনার

১৪

বিইউবিটিতে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্মশালা ‘গ্রিটকোয়েস্ট’র উদ্বোধন

১৫

রাতে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করবেন, জানালেন সোহেল তাজ

১৬

চার প্রতিবন্ধীকে নিয়ে স্বামীহারা জাহানারার জীবনসংগ্রাম

১৭

গাজায় ‘নো ওয়ার-নো পিস’ মডেলে এগোচ্ছে ইসরায়েল

১৮

ঘরের ভেতর তৈরি করা ‘বিশেষ’ সুড়ঙ্গে লুকিয়ে থাকতেন যুবলীগ নেতা

১৯

অবৈধ স্থাপনা নিয়ে ডিসি সারওয়ারের হুঁশিয়ারি

২০
X