‘২০১৮ সালে রাগ করে কোটা সিস্টেম বাতিল করেছি’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনি তো ডামি প্রধানমন্ত্রী। আপনি শপথ নেওয়ার সময় বলেছিলেন না? রাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। আপনি তো শপথ ভঙ্গ করছেন। সংবিধান ভঙ্গ করছেন প্রতিনিয়ত।’
সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক কারাবন্দি খন্দকার এনামুল হক এনামের পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, খন্দকার এনামের স্ত্রীর মর্মস্পর্শী কথাগুলো শুনে হৃদয়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। এটি বিরোধী রাজনীতির সবার পরিবারের কথা। কারণ, এই পরিবারগুলো বেশি ভুক্তভোগী। আমাদের পার্মানেন্ট ঠিকানা করে দেওয়া হয়েছে কারাগার। আমাদের প্রত্যেকের বসবাস হয় নদীর ধারে, বাঁশঝাড়ে, হয় লাল দালানে।
তিনি বলেন, আমরা যতক্ষণ না আমাদের মা, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারছি, গণতন্ত্র মুক্ত করতে না পারছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আনতে না পারছি ততক্ষণ আমাদের প্রেরণা দিচ্ছেন আমাদের মা, স্ত্রীরা বোনরা। এটি সব থেকে বেশি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
রিজভী বলেন, সবচেয়ে বড় যদি অপরাধী হয়, কারাবন্দি হয়, সেটি তো আপনাকে হতে হবে। প্রতি মুহূর্তে তিনি একের পর এক আইন ভাঙছেন। রাগের বশবর্তী হয়ে আপনি কোটাপদ্ধতি বাতিল করেছেন, প্রথমেই আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি শপথ ও আইন ভঙ্গকারী প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে কেউ তো ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই তাদের কাছে শপথ ভঙ্গ করা বিষয় নয়, তাদের কাছে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখাই বিষয়, এমন মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, আজ কোটা সংস্কারের জন্য উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ প্রধানমন্ত্রী যৌক্তিক আন্দোলন পরিপন্থি কথা বলেছেন। কী বলেছেন, ‘যারা আন্দোলন করেছেন তারা নাকি রাজাকারের নাতি’। ২০১৮ সালে আপনি আন্দোলনরত ছাত্রদের সান্ত্বনা দিতে বাতিল করেছিলেন। মনে আক্রোশ পুষে রেখেছিলেন, সময়মতো সেটি কাজে লাগাবেন। তাই লাগিয়েছেন।
রিজভী বলেন, আমি যদি ৩৪ বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতাম।
আইন আদালত সব তো প্রধানমন্ত্রীর আঁচলে বন্দি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদালতকে দিয়ে আপনি সব ইচ্ছা পূরণের কাজ করে যাচ্ছেন। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, কেউ আসবে না। মনে রাখতে বেহুলার বাসরঘরের কোথাও না কোথাও ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্র দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের ঢেউ আপনার সিংহাসন ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
প্রতিটি সময় খোঁজখবর নেওয়ায় এনামের পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জানানো হয়। এ সময় দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কারাগারে থাকা এনামের স্ত্রী।
এনামের স্ত্রী নাজনীন আক্তার লতা তার পরিবারের দুঃসময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আমরা সব সময় নিরাপত্তাহীনতা ভুগী। আমার দুটি বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময় আমি আমার স্বামীকে কাছে পাইনি। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে। জন্ম হওয়ার পর তার সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। বাবা বেঁচে থাকার পরও আমরা সন্তানেরা এতিম। শুধু বিরোধী রাজনীতি করায় বিসিএস ভাইভা থেকে নো নো শুনে বের হয়েছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি জয়দেব জয়, সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালসহ নেতারা।
মন্তব্য করুন