কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ পিএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়াক তা চায়নি ভারত : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক তা কখনই চায়নি ভারত। সেজন্যই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

তিনি বলেন, ভারত তাদের অশ্বমেধ যজ্ঞ করার কিছু মানুষকে এ দেশে পাঠিয়ে দিয়ে চক্রান্ত করছেন। তারা আটক হলে আক্ষেপ করছে, প্রতিবাদ করছে। চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের উলম্ব অভিযান।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। কথা-বার্তা নেই হঠাৎ করে একটি সংগঠন, যাদের বৈধতা আছে কি না আছে এ সম্পর্কেও বাংলাদেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা যার বিতর্কিত আচার-আচরণের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের ভিতরের কেউ কেউ এবং বাহির থেকে সেই বিতর্কিত নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছেন। এ প্রতিবাদ আসাটাই সারা দেশের মানুষকে একধরনের দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলেছে এবং মানুষ বিস্মিত হয়ে বিষয়টি লক্ষ করছে। চিন্ময় নামে একটি ব্যক্তি যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অথচ সে সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন তাকে আগেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর-ঘাতক সরকারের পতনের পর থেকে এদের (ইসকন) অস্বাভাবিক তৎপরতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তাদের কি দাবি? দাবি সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি সেটিও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। তাদের দাবি নিয়ে দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে ৭টি বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দিয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? কি করতে চাচ্ছে তারা? আবার পাশের রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার গ্রেপ্তার নিয়ে মুক্তি দাবি করেছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে তো লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গুম-খুনসহ ভয়ংকর অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্য দেশের স্টেটমেন্ট বিরল।

রিজভী বলেন, ছাত্রলীগের খুনিরা যখন বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নিপুন রায়কে রাস্তার মাঝে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিল, তখন তো পাশের রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না! তারাও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশে ইসকন নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনটিকে কখনও দেখিনি শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করল তাদের একটি স্টেটমেন্ট দিতে! অথচ, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

অথচ তাদের একজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যারা দুই দিন আগেই একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সে সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্য দেশ বিবৃতি দিচ্ছেন তার মুক্তির জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে? এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয় তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তির জন্য তারা মুক্তি দাবি করছেন সে যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তিটি দেশের স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। কক্সবাজারের এক ওসি একজন মেজরকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সে ওসি হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল। সে সময়ও আমরা দেখেছি পাশের রাষ্ট্র তার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছে। এগুলো আজকে মানুষের মনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রিজভী বলেন, এই জাতির সার্বভৌমত্ব, বিশেষ করে ৫২ থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে অর্জনগুলো সে অর্জনকে অবমাননা করা হচ্ছে। এটি কখনো এ দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। তাদের আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের ভিতরে একটি ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের ব্যানারে কি হচ্ছে? কারা করাচ্ছে?

তিনি বলেন, আমরা বারবার পাশের রাষ্ট্রের কিছু বিষয় নিয়ে যে সমালোচনা করতাম, তাদের অন্যায়ের যে প্রতিবাদ করতাম এটি যে ন্যায়সঙ্গত এ ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হলো। বিএনপি সবসময় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করেছে। শুধু আমাদের দেশের পরিবেশবিদরাই নয় ভারতের পরিবেশেবিদরাও বলেছেন, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন দেখল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হবে- তখনই এ প্রকল্পের অনুমতি দিয়ে দিল। ২০১৬ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করে ২০২২-এ তা উপযোগী হয়ে যায়। আমাদের যে আশংকা ছিল তা আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে, গাছগাছালি বিনষ্ট হচ্ছে। শুধু পাশের রাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তাদের ব্যবসায়ীদের খুশী করার জন্য শেখ হাসিনা কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ, বাংলাদেশের পরিবেশ, বৃক্ষ, পানি, পাখি সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হাসিনার ছিল না, বরং এগুলোকে ধ্বংস করে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ, তাকে ক্ষমতায় রেখে দেবে এই গ্যারান্টি নিশ্চিত করার জন্যই সেদিন হাসিনা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিতর্কে জড়ালেন অনীত পাড্ডা

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান পেছাল 

জাতপাত বিলোপ জোটের আত্মপ্রকাশ

সমাবেশের অনুমতি ছিল না, জানালেন জাপা মহাসচিব

চাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে ফের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

যে শহরে ২ ঘণ্টার বেশি ফোন ব্যবহার মানা

বিপিএলে দেখা যেতে পারে নোয়াখালী দল

‘শিশুদের নোবেল’ পুরস্কারে জন্য মনোনীত রাজশাহীর মুনাজিয়া

তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

১০

বাসায় বানিয়ে ফেলুন চকোলেট-কফির মজাদার মোকা কেক

১১

লালবাগ কেল্লায় গ্রুপ মেডিটেশন ও ইয়োগার আয়োজন

১২

ট্রফি না দেওয়ায় নকভির চাকরি খেতে চায় বিসিসিআই

১৩

গুম হওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ

১৪

আকিজ বেকার্স লিমিটেডের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স উদযাপন

১৫

তারেক রহমান ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড করবেন : মাহবুবুর রহমান 

১৬

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে তারেক রহমানের বার্তা

১৭

স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রক্ষায় মানুন এই ৫ নিরাপত্তা টিপস

১৮

নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নই হবে আগামীর বাংলাদেশের শক্তি : মীর হেলাল

১৯

বাদীর জিম্মায় জামিন পেলেন ছাত্রদল নেতা শাওন

২০
X