কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত না করলে বর্জনের ঘোষণা গণঅধিকার পরিষদের

জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের রোডম্যাপের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মো. রাশেদ খান। ছবি : কালবেলা
জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের রোডম্যাপের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মো. রাশেদ খান। ছবি : কালবেলা

জুলাই ঘোষণাপত্রে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত না করলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের রোডম্যাপের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এতে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

লিখিত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৬নং দফায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ইত্যাদি...’ ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে বাতিল হওয়া কোটার অংশবিশেষ (৩০%) হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ফিরে না আসলে, নতুনভাবে আন্দোলনের সূচনা হতো না। এখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা অন্য কোনো দাবিতেও আন্দোলন শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু এই আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, গণঅধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস বাদ দিতে পরিকল্পিতভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি বড় ধরনের অপরাধ। জুলাই ঘোষণাপত্রের এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে মিথ্যা শেখাবে। ঠিক ১৯৭১ নিয়ে যেভাবে আমাদের মিথ্যা শেখানো হয়েছে। তাহলে আওয়ামী লীগের তৈরি ইতিহাস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৈরি ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

রাশেদ খান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৭নং পয়েন্টে বলা হয়েছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে; কিন্তু জাতিসংঘ বলছে এই সংখ্যা ১৪০০-এর বেশি, সরকারি গেজেটেড শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন। তাহলে কি আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের শহীদের সংখ্যার মতো জুলাইয়ের শহীদের সংখ্যা নিয়েও রাজনীতি করব? কেন ৬ শহীদের লাশ ১ বছর ধরে ঢাকা মেডিকেলে পড়ে থাকে? কেন গণকবর দেওয়া শহীদের পরিচয় আজও চিহ্নিত করা গেল না? আবার যে ফ্যাসিবাদী বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে, এই বাহিনীর যারা ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে বিপ্লবীদের হত্যা করেছে, তাদের কেন আজও গ্রেপ্তার করা হলো না? এই বাহিনীগুলোর আজও সংস্কার হলো না?

তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৮নং পয়েন্টে বলা হয়েছে, গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়—হাসিনা কি সত্যিই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়? আজও আমরা জানি না, কীভাবে হাসিনা ভারতে চলে গেল? সেসময়ই তাকে গ্রেপ্তার করা জরুরি ছিল। সে এত মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার বিচারের জোরালো দাবি করা হয়। কিন্তু যার নির্দেশে এত প্রাণ ঝরে গেল, এত রক্ত, এত পঙ্গুত্ব, তার বিরুদ্ধে শুধু রায় ঘোষণা করে দিলেই কি বিচার সম্পন্ন হয়ে যাবে? হাসিনাকে শতবার ফাঁসিতে ঝোলালেও শাস্তি কম হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ সেনা অফিসারের হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি স্থান পায়নি। এসব ঘটনা এই প্রজন্মের মস্তিষ্ক ও মনস্তত্ত্বে বিপ্লবের বীজ বপন করে ও তারুণ্যকে বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু কেন ও কোন উদ্দেশ্যে তারুণ্যের এই সংগ্রামকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না?

গণঅধিকারের এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এতে ১/১১ সৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাডভোকেট সরকার নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দাড়ি রাখা, অগোছালো পোশাক আর মেনে নেওয়া হবে না : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গাজামুখী নৌবহর থেকে সরে দাঁড়াল ইতালি

অবশেষে নেপালের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়

বিশ্বকাপে ভারতের শুভসূচনা

বিশ্বকাপ শুরুর আগে বাংলাদেশ দলে দুঃসংবাদ

এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে রিয়ালের বড় জয়

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

পূজায় কোনো নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই : ডিএমপি কমিশনার

হাসপাতালের বিছানায় সাবেক মন্ত্রীর বিতর্কিত ছবি নিয়ে যা বলছে কারা কর্তৃপক্ষ

বিএনপির পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে নর্থ আমেরিকা পররাষ্ট্র কমিটির বৈঠক

১০

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সকলে মিলে দেশ গড়বো : ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ

১১

বকেয়া বিল আদায়ের ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার

১২

ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : সেলিমুজ্জামান 

১৩

ধেয়ে আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘প্রবাহ’

১৪

চবির ফারসি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম অভিযোগ গেল দুদকে

১৫

একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতাল

১৬

চারদিন পর খাগড়াছড়িতে অবরোধ স্থগিত

১৭

চলতি অর্থবছর কেমন হবে, জানাল এডিবি

১৮

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবাই মিলে দেশ গড়ব : ড. ফরিদুজ্জামান

১৯

সিপিআর বাঁচাতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লাখো প্রাণ

২০
X