বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার সম্প্রসারণ চাই। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন একটি নির্ধারিত দলীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হোক, সেটা চাই না।
তিনি জানান, বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে শরীয়তবিরোধী কোনো আইন প্রণীত হবে না।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন এসব কথা বলেন।
এর আগে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজনকারী দল এবং মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে সংযুক্তকারী দল। এবারও সংস্কার কমিশনে আমরা এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মাদ্রাসা শিক্ষা সম্প্রসারণ চাই; কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন একটি নির্ধারিত দলীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হোক, সেটা চাই না।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে শরিয়তবিরোধী কোনো আইন প্রণীত হবে না। আমরা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ইসলামপন্থি সমস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নায়েবি আমিরের সঙ্গে কথা বলেছি, ছারছীনা পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি, আলিয়া মাদ্রাসা ধারার যে সকল মুরব্বি আছেন—তাদের সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। উদ্দেশ্য একটাই—বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠীকে আমরা একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাই, যেখানে বিভক্তি থাকবে না। সবাইকে একত্রে ধারণ করে, বাংলাদেশের গণমুখী চেতনাকে ধারণ করে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই। সেজন্য আমরা রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সকল মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সমুন্নত করা যায়, দৃঢ় করা যায়। বিভক্তি নয়, আমরা ঐক্য চাই।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকতে পারে, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কোনো দলের প্রভাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এমনভাবে চাপানো ঠিক না, যেটাতে মনে হয় যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এটা জবরদস্তি। সেটা কৌশলেই হোক আর বাস্তবেই হোক। আমরা (বিএনপি) এটার বিরোধী। আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই, আমরা চেষ্টা করব কোনো প্রতিষ্ঠানেই যেন কোনো ধরনের জবরদস্তি না হয়। সবাই যেন যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী, যা অনুশীলন করতে চায়, তা করতে পারে। আমরা ক্ষমতায় এলে নিশ্চিত করব যাতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন কারও দখলে না থাকে। শিক্ষার প্রকৃত অগ্রগতি যেন নিশ্চিত হয়।
জনমত গঠনে আলেম-ওলামারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের নেতা (জিয়াউর রহমান) এমন এক সময়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যখন এ দেশের মানুষ এমন একটি রাজনৈতিক দল দেখতে চেয়েছিল—যে দল তাদের আদর্শকে ধারণ করবে, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অনুগত থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাব ধারণ করবে। সে কারণে তিনি (জিয়াউর রহমান) সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থার কথা বলেছেন। আমরা তারই কর্মী, শহীদ জিয়া যা করেছিলেন—পরে তা অন্যরা বদলাতে পারেনি। এরপরে অনেক সরকার এসেছে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। আপনাদের হাত দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং তারা সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি, দোয়া চাইতে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের দোয়া সহযোগিতা আমাদেরও খুব কাজে লাগবে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদর্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ২০ হাজার দরবার, ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ও ৫৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি থাকলেও বিগত আওয়ামী সরকারের মাদ্রাসাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রছাত্রী অনেক কমেছে। তবে এখনো ৫৫ লাখ শিক্ষার্থী আছে এবং ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান আছে।
তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যদি শিক্ষাক্রম তৈরি হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তাহলে আফগানিস্তানের যে দশা হয়েছে—আমাদের এখানেও একই রকম অবস্থা হবে। তাদের (জামায়াত) তৈরি কারিকুলামে মা শিক্ষার্থী তৈরি করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আপনারা (বিএনপির নেতৃদ্বয়) নিশ্চিন্তে থাকুন, এ দেশের আলেম-ওলামাগণ, ২০ হাজার দরবার, ৫৫ লাখ ছাত্রছাত্রী তাদের অভিভাবক সকলে মিলে সহিহ ইসলামের পক্ষে যারা থাকবে, ইসলাম নিয়ে যারা রাজনীতি করে না—তাদের সাথে থাকবে। তাদের পেছনে এ দেশের লাখ লাখ হাক্কানি আলেম-ওলামার পাশাপাশি কোটি কোটি ভোটারও থাকবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী। এ সময় জমিয়াতের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন