সরকার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় এই অভিযোগ করেন তিনি।
‘নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ‘নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের লেখা এই গ্রন্থটির প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার এমন এক সরকার যারা ন্যূনতম সম্মানবোধ করতে জানে না গুণী মানুষকে। ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী। বাংলাদেশে একমাত্র ব্যক্তি যিনি একটা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখন ওনার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে- একটা অবস্থান তারা তৈরি করেছে। গতকালকে (বুধবার) একজন মন্ত্রী বলছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যে কারণে জেলে যেতে হয় সেই কারণ তো ড. ইউনূসের জন্য না। এই সরকার ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসার কারণে, শত্রুতার কারণে ড. ইউনূসকে এভাবে ভিকটিম করে তার বিরুদ্ধে এই মামলা নিয়ে এসে এভাবে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, আমরা (বিএনপি) না কি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছি। ড. ইউনূসের ওপর ভর করার আমাদের কোনো কারণ নেই। আমরা পুরোপুরিভাবে এদেশের জনগণের ওপর ভর করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের জনগণ হচ্ছে সব শক্তির উৎস্য, এদেশের জনগণই এদেশে জনগণের সরকার তৈরি করবে এবং ভাগ্য পরিবর্তন করবে। সেই কারণে আমরা মানুষের কাছে গিয়েছি। আপনারা কেন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান না। কারণ আপনারা জানেন যে ওইটা করলে আপনারা ১০টা আসনও পাবেন না।
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী নেতাদের দ্রুত জেলে দিতে চায় এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের (সরকার) উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। যারা এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারা এই সরকারের পক্ষে নয়, যারা এই সরকারকে বলছে, তুমি অনেক খারাপ কাজ করেছ তুমি সরে যাও-তাদের সবাইকে কারাগারে ঢুকিয়ে দিতে চায়। এমনকি তারা ওই উপলক্ষে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় একটা সেল তৈরি করেছে সেই সেলকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অতি দ্রুত সেই সমস্ত মামলাগুলোকে চিহ্নিত করবে যেগুলো তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা এবং রাষ্ট্রবিরোধী মামলা- সেই সমস্ত মামলাগুলোকে অতি দ্রুত যেন রায় দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবে। কিছুদিন আগে আইন মন্ত্রণালয় একই ধরনের আইন করেছে। এভাবে তারা গোটা দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যে পুরোপুরি একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে।
তিনি বলেন, আজকে যে ফ্যাসিবাদ, এই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচারের বাবা, স্বৈরাচার থেকে আরও ১০ ডিগ্রি বেশি। এই ফ্যাসিবাদকে যদি দূর করতে হয় তাহলে তরুণ-যুবকদের বুকে অনেক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আমান উল্লাহ আমানরা যেমন বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় নেমে দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচার মুক্ত করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আজকে আমাদের তরুণ-ছাত্র-যুবকদেরও বুকে সেই সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। মৃত্যুর পরোয়া করলে চলবে না, জেলের পরোয়া করলে চলবে না। আজকে আমাদের অবশ্যই এইভাবে শপথ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। সবাই একবার অন্তত রাস্তায় নেমে পড়ুন দেখবেন, ওরা পালাবার পথ পাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমি কোর্টে গিয়েছিলাম। আমাদের এই অবস্থাই হয়েছে প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। আমান উল্লাহ আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে আছেন। আজ শুধু এই দৃশ্য নয়, প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী কোর্টের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দৃশ্য হতে পারে না, কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃশ্য হতে পারে না।
এ সময় নিজের একটি মিথ্যা মামলার বিচারের কার্যক্রম তড়িঘড়ি করে শেষ করার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমার একটি মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আমার ধারণা, এক-দেড় মাসের মধ্যেই আমানের মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে। তাদের উদ্দেশ্যটা একদম পরিষ্কার। কাউকে বাইরে রাখবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে এবং ডাকসুর সাবেক এ জি এস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্রনেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফজলুল হক মিলন, খন্দকার লুৎফর রহমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুর রহমান খান ও কামরুজ্জামান রতন বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন