সিলেটের দুটি আসনে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব। নিজস্ব প্রতীকের বাইরে প্রচারে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। তবে, এটি দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত কীনা- এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না কেউই।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) জকিগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুসাম উদ্দীন চৌধুরীর পক্ষে মিছিল সমাবেশ করে ভোট প্রার্থনা করেছে জকিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের নেতারা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরীর পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছেন গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তার বিপক্ষে লড়ছেন দলের আরেক নেতা ড. আহমদ আল কবীর। তবে, ভোটের মাঠে মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন ফুলতলীর পীরের ছেলে হুসাম উদ্দিন চৌধুরী। তার পক্ষে প্রথম থেকে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এবার প্রকাশ্যে মাসুক উদ্দিনকে রেখে ফুলতলীর পীরের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুসাম উদ্দীনের হয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে আছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের তিনি বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানান।
এদিকে, সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন ‘সোনালি আশ’ প্রতীকের প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার হোসেন। নির্বাচনের প্রচারের শুরুর পর থেকে দেখা যায়, খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী কাজ করছিলেন সরোয়ার হোসেনের পক্ষে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এই আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ অবস্থান নেন শমসের মবিনের পক্ষে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে উপজেলা সদরের রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেন। সেখানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধূরী এলিম, উপজেলা আ.লীগ সহসভাপতি রোকন উদ্দিনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হক বলেন, আমরা সিনিয়রদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। শমসের মবিন আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান। তার সম্মান রক্ষা করতে কাজ করছি। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বও মানেন।
গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহেল আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমাদের দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে যে কাউকে ভোট দিতে উন্মুক্ত করেছে। সেই হিসেবে আমরা উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে পিছিয়ে পড়া গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজারকে এগিয়ে নিতে আমাদের এলাকার সন্তান, একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রমকে সমর্থন প্রদান করেছি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধূরী এলিম বলেন, এবারের নির্বাচন ভিন্ন। অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা অন্যায়ের কিছু নয়। বিগত দিনে এ অঞ্চলে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমরা উন্নয়নের স্বার্থে শমসের মবিনের পক্ষে কাজ করছি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মুবিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, এবার সিলেট-৬ আসনে যোগ্য প্রার্থীকে মানুষ নির্বাচিত করবে। আওয়ামী লীগের নেতারা একটি সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তার কথা অনুযায়ী স্বচ্ছ নির্বাচন করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য করুন