কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শোকজের জবাবে যা বললেন ফজলুর রহমান

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে বিএনপির কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির কাছে নোটিশের জবাব জমা দেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিকালে তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা জানান, উনি (ফজলুর রহমান) এই সংক্রান্ত চিঠির জবাবে লিখিতভাবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বিশেষ বার্তা প্রেরক সেটা জমা দিয়ে এসেছেন। এখন উনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান নামে নিজস্ব প্যাডে চার পৃষ্ঠার এই জবাবে দলের তরফ থেকে যা জানতে চাওয়া হয়েছে, তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন বলে জানান তার সহধর্মিণী।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর জবাবটি লেখা হয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে তারা, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের একটি খাম পেয়েছেন। জবাবটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল ফজলুর রহমানের অনুরোধে আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়েছে বিএনপি, যা শেষ হবে আজ রাত ৯টায়।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বরাবর পাঠানো লিখিত জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। ২৪-০৮-২০২৫ রাত ৯টায় আপনার স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ আমি হাতে পাই। এরপর যথাসময়ে নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় বাড়ানোর জন্য আমি আবেদন করি। আপনি আমাকে ২৪ ঘণ্টা সময় বৃদ্ধি করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ।

তিনি আরও লিখেছেন, আপনার নোটিশে আমার কাছে সবকিছু জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই অভিযোগগুলোর উত্তর একত্রে দিচ্ছি।

নোটিশের জবাবে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, (ক) অভিযোগ করা হয়েছে যে, আমি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, এই অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি। আমি কোনোদিন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেইনি। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাইদকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যার পর আমিই প্রথম বলেছিলাম, তিনি একুশ শতকের প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’। আমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি সবসময় জুলাই-আগস্ট শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।

(খ) আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, এটি সত্য নয়। আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী একজন মানুষ। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্মের ব্যবসায়ীদের (যেমন জামাতে ইসলামী) বিরুদ্ধে অতীতেও বলেছি, ভবিষ্যতেও বলব।

মোট ১১টি পয়েন্টে ফজলুর রহমান লেখেন, ১) কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রথম শুরু হয়েছিল তা ছিল নির্দলীয় চরিত্রের এবং রাজনৈতিক দাবি বিবর্জিত। আমিই প্রথম তাদেরকে ইউটিউবের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম, ‌'বাবারা তোমরা শুধু চাকুরী চাও, গণতন্ত্র চাও না? তোমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কর।

২) জুলাই আন্দোলনের পরতে পরতে সমস্ত কিছুর সঙ্গে জীবনের শংকা নিয়েও যুক্ত ছিলাম যা আমার দল এবং এ দেশের সমস্ত মানুষ জানে।

৩) ২০২৩ই সনের ২৮ শে অক্টোবরে বিএনপি আহুত লক্ষ লক্ষ জনতার মহা-সমাবেশকে স্বৈরাচারী সরকার ১ঘণ্টার আক্রমনে ভেঙ্গে দিয়েছিল। পঁচিশ হাজারেরও বেশি নেতা কর্মী যখন জেলে ছিল, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী যখন মিথ্যা মামলার আবর্তে পড়ে জীবন বাচাঁনোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছিল, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে আমি তখন প্রতিদিন অনলাইন এবং টেলিভিশন টকশোর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জিবিত করেছি এবং জাতির সামনে আশার আলো জাগিয়ে রেখেছি।

8) ৫ আগস্ট আন্দোলনের বিজয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট শক্তি পালিয়ে গেল এবং জনগণ বিজয়ী হলো আমি সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম 'ইসলামী ছাত্র শিবিরের' সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সম্মেলনে দাড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলো 'জামাত শিবিরই ছিল জুলাই আন্দোলনের মূল ভ্যানগার্ড'। আমি সেদিনই প্রথম গুনলাম এবং আন্দোলনের সমস্ত বিজয়কে তারা নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করলো।

৫) আমি জামাত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই অনৈতিক দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শতবার বলেছি। বিগত ১৫ বছরের আন্দোলনে জমিটি তৈরি করেছিল, বিএনপি বীজ এবং চারা রোপন করেছিল, তৈল মবিল পানি দিয়ে ধান ফলিয়ে ছিল বিএনপি কিন্তু ধান কাটার লগ্নে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেই তৈরি ধানটি কেটে দিয়েছিল। তারা ছিল আমার ভাষায় 'দাওয়াল', কাজেই আন্দোলনের সমস্ত ফসল পাওয়ার দাবিটি অনুচিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবাক বিস্ময়ে সবাই দেখলো ৭১ এর পরাজিত শক্তি জামাত শিবির স্বদর্পে মাঠে হাজির হয়েছে এবং দাবি করছে সমস্ত আন্দোলনের ভ্যানগার্ড তারাই এবং শুধু একটা নির্বাচনের জন্যই তারা আন্দোলন করেনি বরং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের মতো দুঃসাহস তারা প্রদর্শন করতে লাগলো। জামাত শিবিরের পত্রিকার আহব্বান জানানো হলে '৭১-এ যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল তারা আল্লাহর কাছে মাফ চাও” (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। সেদিন থেকে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে তাদেরকে সাবধান করার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুন : রুমিন ফারহানা ইস্যুতে যে আহ্বান জানালেন হাসনাত

৭) এরপর থেকে জামাত শিবির এবং এনসিপি একসাথে বলতে শুরু করলো ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০২৪ ইং হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে হলো এসব অশ্রাব্য এবং মিথ্যা তথ্য শোনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম এবং জামাত শিবিরকে 'কালো শক্তি' চিহ্নিত করে এনসিপিকে তাদের সহযোগী বলতে শুরু করলাম। তারাই এখন দেশের সমস্ত প্রশাসন, অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে।

৮) আমি সবশেষে বলতে চাই মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ ছিল। প্রথমতো 'বিএনপি সহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে' 'গণ-আন্দোলন' যার লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে পরাজিত করে গণ-তান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্টিত করা। যার প্রধান স্লোগান ছিল 'এক দফা 'এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি'। কিন্তু আমি যাদেরকে অন্ধকারের 'কালো শক্তি' বলেছি তারা হলো জামাত শিবির যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণ আন্দোলনের ফসলকে কুক্ষিগত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এবং শক্তি সৃষ্টি করছে। জাতীয় নির্বাচন তাদের নিকট গৌন ব্যাপার।

আরও পড়ুন : ক্ষমা চেয়ে আবেদন উমামা ফাতেমার

৯) আমার প্রিয় দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক 'মেজর জিয়া' পরবর্তী সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচাইতে বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তার মহান স্মৃতিকে শ্রদ্ধা এবং স্মরণ করেই আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর কথা বলা এবং প্রতিবাদ করাকে আমার পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। গত ৬মাস ধরে এ ব্যাপারে আমি শত শত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি, এর মধ্যে দু একটা বক্তব্যে আমার কিছু ভুল ত্রুটিও থাকতে পারে কারণ আমি তো মানুষ। আমি আরও দাবি করতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করার পরে আমি স্বৈরাচারী সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমি আমার নেত্রীর মুক্তির জন্য সমগ্র বাংলাদেশে শত শত সভা ও জনসভায় বক্তব্য রেখেছি। এমনকি ইদানিংকালে একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রিয় নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এমন জঘন্যতম কুৎসিত স্লোগান দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে অপমান করা হচ্ছিল যার উদাহরণ ‌'গাছের ডালে কাউয়া'। তখন আমিই প্রথম ইউটিউব চ্যানেল পুর্নিয়াতে কঠিনভাবে এর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলাম।

১০) আমার সার্বিক বক্তব্য উপস্থাপনায় যদি প্রমানিত হয় আমি কোন ভুল বক্তব্য দিয়েছি তবে আমি দুঃখ প্রকাশ করবো।

১১) আমার প্রিয় দল বিএনপির কোন ক্ষতি হয় এমন কোন কথা ও কাজ আমি করিনি এবং করবোও না। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের বিচার বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে, আশা করি আমি সুবিচার পাবো এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদাই অনুগত থাকব।

আরও পড়ুন : শ্বশুরের বিচারপতি হওয়া নিয়ে সমালোচনা, ব্যাখ্যা দিলেন সারজিস

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রদ্রিগোর বিস্ফোরক মন্তব্যে রিয়াল মাদ্রিদে ঝড়!

মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে এই শরিফুল?

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘স্টোররেন্ট’ এক মাসের জন্য স্থগিত

ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখবেন যেভাবে

বাংলাদেশ-চায়না আপন মিডিয়া ক্লাব ও টিএমজিবির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

অনিল কাপুরের সঙ্গে শয্যা দৃশ্য, ক্যামেরার সামনেই চিৎকার ঐশ্বরিয়ার

শ্বশুরবাড়িতে আগুন দিয়ে পালালেন জামাই

সিলেটে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়ে স্থগিত করল এনসিপি

রুমিন ফারহানা ইস্যুতে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন

হঠাৎ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছাড়ছে মার্কিন বাহিনী

১০

‘এই অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি’

১১

জর্জিনার আংটিতে লুকিয়ে রোনালদোর প্রেমবার্তা!

১২

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ

১৩

এনবিআইইউ প্রক্টর বরখাস্ত

১৪

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অংশীজনের সমন্বিত ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

১৫

আবারও ১১ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

১৬

আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

১৭

ফজলুর রহমানের পক্ষে মি‌ছিল, ‌স্লোগা‌নে উত্তাল অষ্টগ্রাম

১৮

ডাকসুর ভিপি-জিএস পদে কার ব্যালট নম্বর কত

১৯

পোষ্য টাইসনকে মৃত অবস্থায় পেলেন নিলয় আলমগীর

২০
X