কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪০ পিএম
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম ও দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে : চরমোনাই পীর

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, দেশ, ইসলাম ও মানবতা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমান সরকার জাতির ওপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছে। সরকারের ছত্রছায়ায় নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসে মেতে উঠেছে। শিক্ষানীতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন। এমতাবস্থায় দেশের জাগ্রত বিবেক ওলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ওলামায়ে কেরামকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আজ শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় যেমনি দেশের ও জনগণের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ইসলাম ও ইসলামী তাহজীবও ধ্বংসের মুখে। এজন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থেই সরকারের পদত্যাগ আন্দোলনে সকলকে সামিল হতে হবে।

এসময় আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজীকে সভাপতি, মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মাওলানা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনকে সহ-সভাপতি, মুফতী রেজাউল করীম আবরারকে সাধারণ সম্পাদক, মুফতি হেমায়েতুলস্নাহ কাসেমীকে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন পীর সাহেব চরমোনাই।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শায়েখ জাকারিয়া রহ. ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, আব্দুল হক আজাদ, ড. অধ্যাপক আফম খালিদ হোসাইন, মিজানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল উবায়দুর রহমান মাহবুব, আল্লামা ইয়াহইয়া মাহমুদ, খুলনা দারুল উলূমের প্রিন্সিপাল মাওলানা মুশতাক আহমদ, বেফাকুল মাদারিসিদ দীনিয়ার মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী, মুফতী তাজুল ইসলাম, ড. বেলাল নূর আজিজী, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ, মুফতী আব্দুল আজিজ কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধি মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা শাহজাহান আলহাবিবী, মাওলানা নাযীর আহমদ শিবলী, মাওলানা আশরাফ আলী নূরী, মুফতী আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতী ইসমাঈল হোসাইন সিরাজী, মুফতী রফিকুন্নবী হাক্কানী, হাজী শরয়াতুলস্নাহর বংশধর মুফতী হানজালা, মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী পীর সাহেব চন্ডিবর্দী, ময়মনসিংহ জেলার শায়খুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল হক, কুড়িগ্রামের মুফতী মুজ্জামিল হক আইমানী, ফেনী জেলার শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, ভাসানটেক মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আনোয়ারী, যশোর জেলার শায়খুল হাদীস মাওলানা হারুনুর রশিদ কাসেমী, খাগড়াছড়ি জেলার মুফতী ইমামুদ্দিন কাসেমী, বগুড়া জেলার মুফতী আব্দুল মতিন, গাজীপুরের মাওলানা হাবিবুর রহমান মিয়াজী ও মুফতী ওবায়দুল্লা বিন সাঈদ, কুমিল্লা জেলার মাওলানা মাহবুবুর রহমান আশরাফী ও মাওলানা মুসাদ্দিকুর রহমান আশরাফী, কেরাণীগঞ্জের মুফতী শফিউদ্দিন কাসেমী, মুন্সিগঞ্জের মুফতী এমদাদুল হক আরেফী, কুষ্টিয়া জেলার মুফতী মুজ্জাম্মিল হক কাসেমী, চাঁদপুর জেলার মাওলানা আনসার আহমদ পীর সাহেব বাগিচাপুর প্রমুখ।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

এদিকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা এবং ৩ মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। প্রস্তাবনাগুলো হলো- ১. দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মুলনীতি ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত করতে দেশের শাসনতন্ত্র, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক মুল্যবোধকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তুলতে সকলকে যার যার স্থান থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২. বিভিন্ন চিন্তাধারার উলামায়ে কেরামের মাঝে বিদ্যমান দুরত্ব কমিয়ে ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ৩. ওলামা-মাশায়েখ আইম্মাসহ সকল ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে বিষোদগার ও অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৪. দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনগণের যথাযথ মর্যাদা প্রদানপূর্বক সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, এতিম ও দুস্থ্য ভাতা এবং দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরনের মতো সামাজিক নিরাপত্তা কাজে ইমামগণের মত সৎ জনশক্তিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ৫. কাওমী মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট অক্ষুন্ন রেখে দেশের সকল কওমী মাদরাসার শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দাওরায়ে হাদিস ও উচ্চতর মাদরাসাসমূহের শিক্ষকদের সরকারী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের শিক্ষকদের সমতুল্য মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। ৬. দেশের সকল সরকারী বেসরকারী প্রাইমারী স্কুলে মুসলিম শিশুদের কুরআন ও নামাজ শিখানোর জন্য একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলেম বা ক্বারী নিয়োগ দিতে হবে। ৭. দেশে যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল এবং সম্মেলনে কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানী করা যাবে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুলিশ পারমিশনের হয়রানীমূলক ও অপমানকর বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে হবে। ৮. দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং মক্তব ও মাদরাসার শিক্ষকদের চাকুরী বিধি এবং বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। ৯. মসজিদ মাদরাসা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহে দাতাগণের যাবতীয় দান-অনুদান সম্পুর্ণ আয়কর মুক্ত করতে হবে। ১০. কারাবন্দী সকল মজলুম আলেমকে দ্রম্নত মুক্তি দিতে হবে এবং উলামায়ে কেরামের নামে দায়ের করা সকল ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ১১. ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অবমাননাকারীদের প্রতিহত করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। কুরআন সুন্নাহ রিরোধী বিদ্যমান সকল আইন বাতিল করতে হবে এবং কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা যাবে না মর্মে সংবিধানে ধারা স্থাপন করতে হবে। ১২. কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম নাগরিক ঘোষণা করে তাদেরকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। ১৩. অপসংস্কৃতি, মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌতুক প্রথার বিরম্নদ্ধে ওলামায়ে কেরাম এবং ইমামগণকে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৪. দেশে সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৫. দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে।

কর্মসূচিগুলো হলো

১. দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ও সিরাতুন্নবী মাহফিল (১লা অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) ২. প্রতিটি থানা ও উপজেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ওলামা সম্মেলন (১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত) ৩. ডিসেম্বর’২৩ মাসব্যাপী সারাদেশে তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ও গণ-কুরআন শিক্ষা কর্মসূচি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আওয়ামী দোসরদের বের করবে জুলাই ঐক্য, শুরু সচিবালয় থেকে

প্রতিপক্ষের হামলা / জিয়া সাইবার ফোর্সের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আহত ৭

ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার সম্ভাবনা

কৌশলের রাজনীতি মানুষ দেখতে চায় না : চরমোনাই পীর

টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

খুবি শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

সিরাজগঞ্জের সেই ভয়ংকর গুপ্তঘরের মালিকের স্বীকারোক্তি

নরসিংদীতে ভুয়া জুলাইযোদ্ধা তালিকা ও শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদ

ববি ভিসিসহ প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণ

১০

আশুলিয়ায় যুবদলের লিফলেট বিতরণ / ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম

১১

চট্টগ্রাম বোর্ডে বাংলা দ্বিতীয়পত্রে একাধিক ভুল, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা

১২

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির এক সদস্যকে বহিষ্কার 

১৩

সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির বর্ষপূর্তি উদযাপন

১৪

বরিশাল মহানগর বিএনপির দুই নেতাকে শোকজ

১৫

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদির ১৪২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অস্ত্র চুক্তি

১৬

বেতন-পদোন্নতি নিয়ে চিকিৎসকদের সুখবর দিল সরকার

১৭

সাবেক এমপি আনার হত্যার এক বছর : মরদেহের খণ্ডাংশের অপেক্ষায় স্বজনরা

১৮

ববির নতুন ভিসি তৌফিক আলম 

১৯

আওয়ামী যড়যন্ত্রকারীদের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না : আমিনুল হক 

২০
X