আওয়ামী লীগ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির একটি অংশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে বুলেটের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। এই আক্রমণে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। তারা আঘাত করছে স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা, বাঁশ, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, কাঠ ও চাপাতি দিয়ে।
আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে গায়ের জোরে চলছে আওয়ামী দুঃশাসন। তাদের অনাচারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ। এমনই একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে এই সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বন্দুকের নল তাক করা থাকে। অংশগ্রহণকারীদের ভাগ্যে থাকে আটক কিংবা কারাবরণের জুলুম। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে বিস্তৃত পরিসর জুড়ে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করে মানুষের মিছিলের এক মহাসমুদ্র। এই দৃশ্য সহ্য করতে পারেনি সরকারের পেটোয়া বাহিনীরা। সমাবেশের মানুষদের লক্ষ্য করে খই ফোটানোর মতো বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে থাকে। রক্তরঞ্জিত করা হয় সমগ্র সমাবেশকে।
তিনি বলেন, সরকার পতনের একদফা দাবিতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে হামলা এবং দলের মহাসচিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের আজ মঙ্গলবার প্রথম দিন। শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্তৃক কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও কৃষক দল নেতা বিল্লাল মিয়া এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়ি চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের নির্যাতনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. জাকির হোসেন মৃত্যুবরণ করেন।
রিজভী বলেন, আসলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এই সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি শব্দগুলোতেই আঁতকে উঠে বিরোধী দলকে বিনাশ করতে অস্ত্র নিয়ে নেমেছে সরকারের বাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ড সরকারের মাস্টারপ্ল্যান।
তিনি বলেন, বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে- এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লক্ষ-লক্ষ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেপ্তার ও রায় নিশ্চিত করা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শাসকগোষ্ঠীর হাতে চরমভাবে মানবতা লঙ্ঘনের শিকার হয়েও দেশব্যাপী রুখে দাঁড়াচ্ছে নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণ। খালি হাতে রাজপথে নেমে আসছে, আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। খুনিদের প্রতিহত করছে কখনো রাস্তায় পড়ে থাকা ইট-পাথর দিয়ে, আবার কখনোবা অসীম সাহসে আওয়ামী অপশক্তির হাতিয়ার ছিনিয়ে নিয়ে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে রক্ত ও জীবন দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ, লুণ্ঠিত মানবতাকে ধারণ করেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ এই সংগ্রাম প্রিয় বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। এই লড়াই ১৮ কোটি মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য।
রিজভী জানান, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত ৪৬টির অধিক মামলায় ২২৮০ জনের অধীন নেতাকর্মী গ্রেপ্তারকে করা হয়েছে। ৩৩৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত এবং একজন সাংবাদিকসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ২০ আগস্ট ২০২৫ 
