সিরিয়ার শরণার্থীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী আগমনের ১০ বছরের মাথায় অভিবাসন বিষয়ে ইইউর নীতি কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইইউর অভিবাসন কমিশনার মাগনুস ব্রুনার মনে করেন, গত ১০ বছরে ইউরোপ যা শিখেছে, তার প্রতিফলনের সময় এখনই। আশ্রয়প্রার্থীদের ক্রমাগত আগমনের মুখে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সেই বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে চান তিনি।
ইউরোপীয় নিউজরুমকে (ইএনআর) দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত কে অতিক্রম করতে পারবেন আর কে করতে পারবেন না সেই সিদ্ধান্ত নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷’
আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের বিষয়টিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে তিনি যেসব অভিবাসীর আশ্রয় পাওয়ার আইনি অধিকার নেই, তাদের প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তা ছাড়া ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ওপরও জোর দেন তিনি।
ইএনআর : ২০১৫ সালে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছিল, সেই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন এবং ইইউর দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের সমবণ্টনে কতটা শক্তশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে ইইউ?
ব্রুনার : অভিবাসন বিষয়ে গত ১০ বছরে ইউরোপ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে। এই সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো পরিষ্কারভাবেই আমাদের আশ্রয় প্রদান ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় যে দিকটি আমরা শিখতে পেরেছি তা হলো, অভিবাসনের বিষয়টি ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে একসঙ্গে সামলাতে হবে। ১০ বছরের আলোচনার পর আমরা একটি আধুনিক অভিবাসনব্যবস্থা তৈরি করতে যাচ্ছি, যার মাধ্যমে কে ইউরোপে আসতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেই বিষয়টির ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
এখনো আমরা পুরোনো আইনি ব্যবস্থাই প্রয়োগ করছি। ২০২৬ সালের জুনে প্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম কার্যকর করা, প্রত্যাবাসন বিষয়ে আমাদের অন্যান্য প্রস্তাব এবং যেসব পথ দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসীরা আসছেন, সেসব তৃতীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যে জায়গাগুলোয় আমরা আমাদের সহযোগিতা বাড়িয়েছি, সেখানে আমরা অনিয়মিত পথে আগমন অনেক কমে আসতে দেখেছি। যেমন বলকান রুট ২০২২ সালে পর ৯৫ ভাগ এবং মধ্য ভূমধ্যসাগর পথে ৬০ ভাগ কমে এসেছে।
ইএনআর : অতীতে সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার সময়ে সহিংস আচরণের অভিযোগ রয়েছে। ইইউর সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স এবং ইইউ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি তাদের আচরণের কী পরিবর্তন এনেছে, তার কি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দিতে পারেন?
ব্রুনার : আমাদের বহিঃসীমান্তের কথা বলতে গেলে, এখানে কোনাে যদি-কিন্তু নেই। মানবিক ও মৌলিক অধিকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এটিই আমাদের ইউরোপিয়ান করে তুলেছে। বহিঃসীমান্তে ট্যাকনিক্যাল ও অপারেশনাল কাজে সহায়তা দিয়ে ফ্রন্টেক্স সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করে থাকে৷ আমরা ফ্রন্টেক্সের ম্যান্ডেট বাড়াতে কাজ করব।
ইএনআর : ১০ বছর পর কি ইইউ ভিন্ন কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে চিন্তা করছে নাকি বাইরে থেকে নেওয়া সমাধান যেমন আলবেনিয়া, তিউনিশিয়া এমন দেশগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র করে সমাধানের দিকেই এগিয়ে যাবে?
ব্রুনার : গঠনগত, টেকসই পরিবর্তন আনতে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তিসহ দ্বিমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে কমিশন। আমার এটি নিশ্চিত করছি যে আশ্রয়প্রদান, ফেরত পাঠানো এবং ইউরোপের বাইরের দেশগুলো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের পর বিষয়টিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাসহ ইত্যাদি বিষয়ে একটি সঠিক আইনি ফ্রেমওয়ার্ক বলবৎ আছে। একই সঙ্গে আমরা জানি যে অভিবাসনপ্রক্রিয়া আমাদের সীমান্ত থেকে শুরু হয় না কিংবা এখানে এসে শেষ হয় না। তাই অনিয়মিত পথে যে দেশগুলো থেকে যাত্রা করে, সেই দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির সামলানো যেতে পারে।
ইএনআর : ইইউর কিছু দেশে যখন অভিবাসনবিরোধী মনোভাব শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসন বিষয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনে এবং এটিকে প্রমাণভিত্তিক ও অরাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে গড়ে তুলতে কী পদক্ষেপ নেবে ইইউ?
ব্রুনার : এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, অভিবাসন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করা যে, ইউরোপে যা হচ্ছে তার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এ জন্য অবশ্যই ইউরোপিয়ান পর্যায়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও শক্তিশালীভাবে বিষয়টিকে সামলাতে হবে। এর মানে হলো, কে ইউরোপে প্রবেশ করতে পারবেন আর কে পারবেন না, কাদের ইউরোপ থেকে চলে যেতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নীতি প্রণয়ন করা।
জনগণ ইউরোপের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং জাতীয় পর্যায়ের সরকার হিসাবে আমাদের কাছে যা প্রত্যাশা করে তা হলো, যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা হচ্ছি, তা সমাধানের সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। আমাদের জনগণের উদ্বেগের বিষয়টি শুনতে হবে এবং এই উদ্বেগের সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে হবে৷ কমিশন, সদস্য রাষ্ট্র এবং পার্লামেন্ট–সবাই মিলে আমাদেরকে কাজ করতে হবে৷
সূত্র : ইনফো মাইগ্র্যান্টস
মন্তব্য করুন