ডিন পদ ফিরে পেলেন ঢাবি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে অব্যাহতি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ তার ডিন পদ ফিরে পেয়েছেন। মঙ্গলবার (৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সভাপতিত্ব করেন।  বুধবার (৮ মে) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিন্ডিকেট সদস্য বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক রহমত উল্লাহর ব্যাপারে হাইকোর্টের একটা রায় ছিল। সেটা বাস্তবায়নেই সিন্ডিকেট ডিন পদ ফিরিয়ে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় আপিলও করেছিল, কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এরপর তিনি দুবার উকিল নোটিশ দিয়েছিলেন।  এর আগে, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরপরই বক্তব্য দিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ।  পরের দিন ১৮ এপ্রিল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোনো শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে থাকি, তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এরপর ২০ এপ্রিল এক সিন্ডিকেট সভায় তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তবে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করলে তাকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক।
০৮ মে, ২০২৪

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা আজ, আসনপ্রতি লড়ছেন ৪২ জন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ‘কলা, আইন ও সামাজিকবিজ্ঞান’ এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শুরু হতে যাচ্ছে। বেলা ১১টায় এই পরীক্ষা শুরু হয়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে শেষ হবে। এবার এই ইউনিটে ২ হাজার ৯৩৪টি আসনের বিপরীতে মোট আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৭৯টি। এ হিসেবে প্রতি আসনের জন্য লড়াই করছেন ৪১ দশমিক ৬৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ জন শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া সময়সূচি অনুযায়ী ‘ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট’-এর ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার), ‘বিজ্ঞান ইউনিট’-এর ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১ মার্চ (শুক্রবার) এবং ‘চারুকলা ইউনিট’-এর ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান ও অংকন) আগামী ৯ মার্চ (শনিবার) সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ‘চারুকলা ইউনিট’ ব্যতীত অন্য ৩টি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকাসহ ৮টি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় কেন্দ্রসমূহ হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। চারুকলা ইউনিট ছাড়া অন্যান্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। শুধু চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৬০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষা হবে। চারুকলা ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৩০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৬০ মিনিট সময় নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করা হবে। এরমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ এবং মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ওপর থাকবে ২০ নম্বর।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ক্যাম্পাসে টাইমপাস / চবির কলা অনুষদ দেয়ালের আছে কত কথা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর জন্য নির্মিত হয় ড. আবদুল করিম ভবন। যে ভবন এখন বয়ে চলেছে সহস্র শিক্ষার্থীর স্মৃতি। আর সেই স্মৃতির ছটা চোখে পড়বে পুরোনো দেয়ালের আনাচে-কানাচে। কোথাও গুণীর বাণী, তো কোথাও শেষ বর্ষের বেদনামাখা কথামালা। এই অনুষদের প্রতিটি দেয়াল যেন শিক্ষার্থীদের আবেগ স্তম্ভে গড়া। ‘তাকে ভালোবাসার পর আর ওকে মনে ধরল না’, ‘কেন রোদের মতো হাসলে’, চোখে পড়বে এমন আরও শত বাক্য। নিচতলা থেকে চতুর্থতলা অবধি ঘুরে বেড়ালেও দেখা যাবে ঢের। প্রাক্তনরা এখানে এসে প্রায়ই হয়ে যান নস্টালজিক। এক যেন আরেক পৃথিবী। প্রতিটি বাক্য ও শব্দের আড়ালে লুকিয়ে আছে কত দিন-রাতের স্মৃতি। ‘হাঁটাচলার সময় যখনই দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে অজান্তেই অতীতে চলে যাই।’ বললেন অনুষদেরই ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা আজিজ।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

সিকৃবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
অ্যানিমেল হাসবেন্ড্রি প্রকল্প আইন-২০২৩ গঠনকল্পের সভা বন্ধের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এই সভাকে প্রাণিসম্পদ সেক্টেরকে বিভাজন করার পক্ষপাতদুষ্ট উদ্যোগ আখ্যায়িত করে সেটি বন্ধের আহ্বান জানান অন্যথায় কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জানা যায়, সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন ২০২৩ গঠনকল্পে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশিদের সভাপতিত্বে সভা আহ্বান করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ১৪টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে সিকৃবি ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিমুল মজুমদার বলেন, গত ১০ ও ১৪ ডিসেম্বর দুটি চিঠি থেকে আমরা জানতে পারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভেটেরিনারি কাউন্সিলের আদলে তারা পশু পালনের সেক্টরের জন্য নতুন একটি কাউন্সিল গঠন করতে যাচ্ছে যেটার একেবারেই কোনো প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে যেখানে ভেটেরিনারি কাউন্সিলেই দুইটি অনুষদীয় সব একাডেমিক ও নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়াবলি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে আজ (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় তারা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে গোপনীয়ভাবে মিটিং ডাকে। এটি মূলত বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যে সচিব রয়েছেন উনার একটি অসৎ চাওয়া। উনি নিজে একজন পশুপালন গ্র্যাজুয়েট এবং উনি যে মিটিং ডেকেছেন সেখানে ৮ জন পশুপালন গ্র্যাজুয়েট রেখে মাত্র ৩ জন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট রেখেছেন। পাশাপাশি তারা এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছেন কারণ এখন সংসদ অধিবেশনের কোনো সুযোগ নেই। পরবর্তীতে যখন সংসদ অধিবেশন হবে সহজেই যেন এটি সংসদে পাশ করিয়ে ফেলা যায়। তার উপর উনার ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব বহাল থাকবে। উনি তার আগেই তড়িঘড়ি করে কিছু একটা করে ফেলতে চাচ্ছেন। তবে আমরা ভেটেরিনারি ছাত্রসমাজ এই কুচক্রীমহলের এমন অন্যায় চাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই মিটিং যেন না হয় সেই দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধনে সিকৃবি ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির সহসভাপতি আতিকুল হক বলেন, একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একই ধরনের দুটি কাউন্সিল করা ঠিক হবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও এমন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারাও একটি কাউন্সিল দিয়েই সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এই কুচক্রীমহল কেন দুটি কাউন্সিল করতে চাচ্ছে তা আপনারা সকলেই বুঝতে পারছেন। তারা আমাদের ভেট সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করবে। ইতোমধ্যেই পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা আমাদের অনেক পদ ও নিয়োগে ভাগ বসিয়েছি। পশুপালনের অনেক কোর্স আমাদের পড়ানো হলেও আমরা সেগুলোর স্বীকৃতি পাই না। আমরা এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই এই সকল কুচক্রীমহলের স্বার্থ হাসিলের কোনো সুযোগ আমরা ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীরা দেবে না। এর আগেও চলতি বছরের ৩০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০২৩ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত গেজেটে জু অফিসার, সহকারী ব্যবস্থাপক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, অ্যানিমেল প্রোডাকশন অফিসার ও পশুপালন কর্মকর্তা পদগুলোতে ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজব্যান্ড্রি ডিগ্রিধারীদের আবেদনের যোগ্যতার কথা বলা হয়। কিন্তু ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি প্রকাশিত গেজেটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

নানা সংকটে ভুগছে যবিপ্রবির ভেটেরিনারি অনুষদ
নানা সমস্যায় জর্জরিত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পূর্বের ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে যবিপ্রবির অনুষদ হিসেবে যুক্ত করা হয়। তবে প্রায় ৩৬০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ২ জন স্থায়ী শিক্ষক, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের অনুপস্থিতি, ২ বছরের সেশনজট, ১৫টি ল্যাবের ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ অনুষদ। ফলে গুণগত মানের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনের পরও দীর্ঘ ৯ মাসে সংকট সমাধান না হওয়ায় অনুষদটির শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে যবিপ্রবির এ অনুষদটিতে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সাতটি ব্যাচে প্রায় ৩৬০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। এর বিপরীতে স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র ২ জন যারা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন। নেই কোনো অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক কিংবা সহকারী অধ্যাপক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন, প্রভাষক ও অতিথি শিক্ষক সহ মোট ২২ জন শিক্ষক ও ৫২ জন কর্মচারী আছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভেটেরিনারি অনুষদে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারেনি যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও ভর্তি করানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তীব্র সেশনজট, রাজনৈতিক গ্রুপিং-অস্থিরতাসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত এ অনুষদ। এদিকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। বাকি কর্মচারীরা এলাকার প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ লোক পরিচয়ে কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত। নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কখনো কর্মক্ষেত্রে আসেন না। ফলে পুরো ক্যাম্পাসটির চারিদিকে ঝোপ-ঝাড় ও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বমানের ডিভিএম গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে হাতে কলমে শিক্ষার জন্য ল্যাবগুলোতে আনা অতি দামি কেমিক্যালগুলো অনেক আগেই ব্যবহারে দক্ষ জনবলের অভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। যার সবগুলোর মোড়কই খোলা হয়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্যাম্পাসটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকট চরমে। স্থানীয় রাজনীতির কারণে একাধিকবার ক্যাম্পাস বন্ধ হয়েছে। ২০১৯ সালে অনুষদটির ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছিলেন। এরপর ২০২২ সালে ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে হামলায় তৎকালীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের ভিপি মুরাদ বিশ্বাস, ছাত্রলীগ কর্মী তৌহিদ ও সমরেশ হোসেন ছমির নিহত হয়েছিলেন।  ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের আরেক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ছাড়া ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব, গ্রুপ ভিত্তিক মারামারি, সাইবার বুলিং, যৌন হয়ারানি, হল দখলসহ অভিযোগের শেষ নেই। রাজিনৈতিক সংকট নিরসনে যবিপ্রবি উপাচার্য গত ৯ জুলাই অনুষদটির সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম (সভা, সমাবেশ, মিছিল, রাজনৈতিক পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড স্থাপন ও প্রদর্শন) নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ভেটেনারী অনুষদের শিক্ষার্থী সোহান শেখ বলেন, ‘ভেটেরিনারী মেডিসিনের মতো টেকনিক্যাল বিষয়ের জন্য মাত্র দুই জন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন বাকিরা সবাই গেস্ট টিচার হিসাবে ক্লাস নিচ্ছেন। এখানে প্রায় ৭-৮ টি ব্যাচের ক্লাস পরীক্ষা চলমান। ২ জন মাত্র শিক্ষকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাচের একসঙ্গে ক্লাস পরীক্ষা চালানো প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে ল্যবগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান রিএজেন্ট নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ।’ তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, ‘এ অনুষদের মেডিকেল সেন্টারে কোনো ডাক্তার বা ঔষধ নেই। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্সের কোনো ব্যাবস্থা নেই। কোনো শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে ৯ কিলোমিটার দূরে নিজেদের গাড়িতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগে। এখানে পোল্ট্রি শেড থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে আমরা এ ব্যাপারে শিক্ষাগ্রহণে বঞ্চিত হচ্ছি। ইতোপূর্বে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে সেশনজটে পড়তে হয়েছে। যে সকল সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। আমরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। উপাচার্য স্যারের নিকট সকল সমস্যা সমাধানের আবেদন করছি।’ যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সমন্বয়ে আমরা ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে যবিপ্রবির অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করি। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। পূর্নাঙ্গরূপে  বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ হওয়ার জন্য অনেক কাজ বাকি। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকবল নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নির ব্যবস্থা করতে হবে। এ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ক্যাম্পাসকে পুরোপুরি যবিপ্রবির নিকট জমি জায়গাসহ হস্তান্তর করতে হবে তারপর বাজেট প্রণয়ন সহ বাকী কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিতে পারলে আমরা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকার পরেও কেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি দ্রুত কার্যক্রম শুরু করছে না তা আমার বোধগম্য নয়। ইউজিসি যেহেতু এখানে সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করছে সেহেতু তারা যতদ্রুত এ সমন্বয় করতে পারবে ততদ্রুত আমরা জনবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।’ সেশনজট নিরসন, আধুনিক গবেষণা ও মানসম্মত গ্রাজুয়েট তৈরির বিষয়ে উপাচার্য ড. আনোয়ার বলেন, ‘এটি যখন সম্পূর্ণরুপে আমাদের কাছে হস্তান্তরিত হবে তখন আমরা অনুষদটিকে একটি ভেটেরিনারি শিক্ষার আধুনিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবো। যবিপ্রবি সর্বদা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে বিশ্বাসী সুতরাং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি দ্রুত আমাদেরকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পর্যাপ্ত বাজেট দিলেই সেশনজট নিরসন করা সম্ভব।’ ২-৩ মাসের মধ্যেই সবকিছু শুরু করার আশা ব্যক্ত করেন যবিপ্রবি উপাচার্য ।
১৮ অক্টোবর, ২০২৩
X