বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঢাবি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আইন অনুষদ শাখার সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ও আহ্বায়কের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে নীল দলের সাধারণ সভায় এই নাম প্রস্তাব হয়। তবে আইন অনুষদের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহর নাম প্রস্তাবের পর ফের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সভা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে নীল দলের পূর্বনির্ধারিত সাধারণ সভা ছিল। সভায় বিভিন্ন অনুষদের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ও আহ্বায়কের নাম প্রস্তাব করা হয়। এ সময় আইন অনুষদের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। এ সময় সভায় উপস্থিত কোনো শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেননি বলে দাবি রব্বানীর। যদিও নীল দলের আহ্বায়ক বলেছেন ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, তিনি একজন বিতর্কিত শিক্ষক। আমাদের জাতির পিতার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত খন্দকার মোশতাকের তিনি প্রশংসা করেছেন। তার এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ঢাবির প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর পরবর্তী সময়ে তিনি আদালতের নির্দেশে ক্লাসে ফেরত এসেছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তিনি বিতর্কিত। যে খন্দকার মোশতাক চিহ্নিত খুনি, আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। নীল দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত দল। সে জন্য নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিতে বিষয়টির সুরাহা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আজকে নীল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা ছিল। সভায় বিভিন্ন অনুষদের প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব হয়েছে। আইন অনুষদের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি হিসেবে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর নাম এলে সবাই এটি প্রত্যাখ্যান করে। বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাককে নিয়ে একই অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর সমমর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল রহমত উল্লাহ। তাই মোশতাকের প্রেতাত্মা রহমতকে নীল দলের এই কমিটি থেকে বর্জন করা প্রয়োজন। এদিকে, অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর বক্তব্য নিজস্ব বলে মন্তব্য করেছেন নীল দলের আহ্বায়ক সীতেশ চন্দ্র বাছার। তিনি বক্তব্য দেওয়ার পর পক্ষে বা বিপক্ষে কেউ মন্তব্য করেননি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, অনুষদ থেকে যাদের নাম এসেছে, এটি গৃহীত হবে। কোনো সদস্য যদি এ বিষয়ে কিছু বলে থাকেন, তাহলে এটি তার নিজস্ব বক্তব্য। তিনি তার বক্তব্য (ড. গোলাম রব্বানী) উপস্থাপনের পর কোনো ব্যক্তি আর কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেননি। অনুষদ থেকে যাদের নাম এসেছে, আমরা সেটি গ্রহণ করেছি। উনি থাকবেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান বলে অভিযোগ ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মন্তব্য করুন