নাইজারে জিম্মি ফরাসি রাষ্ট্রদূত
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও অন্য কূটনীতিকদের নিয়ামির দূতাবাসে এক অর্থে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সের কোট দি’অর অঞ্চল পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাখোঁ বলেছেন, নিয়ামির ফরাসি দূতাবাসে খাদ্য সরবরাহে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত সেনাদের রেশন খেয়ে বেঁচে আছেন। গত জুলাই মাসের সেনা অভ্যুত্থানে পর থেকে নাইজারের জান্তা সরকারের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিলভাইন ইত্তেকে নাইজার ছাড়ার নির্দেশ দেয় জান্তা সরকার। এরপর তার ভিসা প্রত্যাহার করে তাকে বহিষ্কার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে জান্তা সরকারের এমন পদক্ষেপের পরও এখনো নাইজারে আছেন রাষ্ট্রদূত ইত্তে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, রাষ্ট্রদূত ইত্তেকে দূতাবাসে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে পারসোনা নন গ্রেটা (অবাঞ্ছিত) ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না।   রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে মাখোঁ নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের এখতিয়ারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাজুমের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমি এ বিষয়ে কিছু করব। তিনিই বৈধ প্রেসিডেন্ট। তার সঙ্গে প্রতিদিনই আমার কথা হয়। এর আগে এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা বলেছিলেন, রাষ্ট্রদূত ইত্তে এখনো কাজ করছেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তিনি তার যোগাযোগ ও টিমের মাধ্যমে খুব কার্যকরী। তার সঙ্গে এখনো ছোট একটা দল আছে। আমরা যতদিন চাইব তিনি সেখানে অবস্থান করবেন এবং তার দেশে ফিরে আসা নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ সিদ্ধান্ত নেবেন।  
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

৯ মের সহিংসতা ছিল অভ্যুত্থান চেষ্টা-প্রধানমন্ত্রী কাকার
পাকিস্তানে গত ৯ মে ঘটে যাওয়া সহিংসতাকে ‘অভ্যুত্থান ও গৃহযুদ্ধের চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার। বিভিন্ন স্থানে হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল সেনাপ্রধান ও বাহিনীটি। গতকাল রোববার জিও নিউজকে প্রথমবার বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। দুর্নীতির কারণে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তার সমর্থকরা যে সহিংসতা চালিয়েছে, সাক্ষাৎকারে তার নিন্দা জানান তিনি। কাকার বলেন, গত ৯ মে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পুরো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। এ ধরনের কারসাজি কোনো সরকারেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্নীতির অভিযোগে ৯ মে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তার দলের কর্মী-সমর্থকরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। এ ঘটনায় দলটির ১০ হাজারের বেশি কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা এখনো কারাগারে। সেনাবাহিনীর চাপে পিটিআই ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেয় অনেকে। কাকার বলেন, সহিংসতায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে, এমন ইমেজ তৈরি করতে চায় না সরকার। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করা হচ্ছে ভাবা হবে। পাথর ছুড়ে মারা, ভবনে আগুন দেওয়ার মতো কাজ কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না।
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এবার নাইজারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিল আফ্রিকান ইউনিয়ন
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের সদস্যপদ স্থগিত করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। একই সঙ্গে দেশটির জান্তা সরকারকে বৈধতা দেয়, এমন কার্যক্রম থেকে অন্যান্য সদস্য দেশকে বিরত থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছে আফ্রিকার ৫৫ দেশের জোটটি। গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। এরপর থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম ও তার পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে রেখেছে সামরিক সরকার। তাদের এ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোওয়াস। সেনা অভ্যুত্থানের পর নাইজারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইকোওয়াস। ক্ষমতাচ্যুত সরকার পুনর্বহালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ইকোওয়াসের নেতারা। এরপর আজ দেশটির সদস্যপদ স্থগিত করল আফ্রিকান ইউনিয়ন। আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কাউন্সিল জানিয়েছে, ইকোওয়াসের স্ট্যান্ডবাই ফোর্স সক্রিয় করার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নাইজারে এ সেনা মোতায়েন করলে কী ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রভাব পড়তে পারে, তা মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। এ ছাড়া অবিলম্বে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে মুক্তি দিয়ে অভ্যুত্থানকারীদের সেনা শিবিরে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছে জোটটি। তবে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তিন বছরের সময় চেয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ দেশের জোট ইকোওয়াসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর গত ১৯ আগস্ট মধ্যরাতে এমন প্রস্তাব দেন জান্তা সরকারের প্রধান জেনারেল আবদুর রহমান চিয়ানি।
২২ আগস্ট, ২০২৩

নাইজারে অভ্যুত্থান / স্ট্যান্ডবাই সেনাদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশ ইকোওয়াসের
নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার পুনর্বহালে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য স্ট্যান্ডবাই সেনাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ দেশের জোট ইকোওয়াস। গত মাসের নাইজারের সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় জরুরি বৈঠক করেন ইকোওয়াসের রাষ্ট্রপ্রধানরা। এ সম্মেলন থেকে  স্ট্যান্ডবাই সেনাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে রাখেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। আটকের পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন তারা। এরপরই দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। এমনকি সমাবেশ থেকে প্রেসিডেন্টের দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। ফলে প্রেসিডেন্ট সমর্থক ও অভ্যুত্থানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত থেকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে উৎখাতের পর ২৮ জুলাই নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদোরাহমানে চিয়ানি। তবে তাদের এ অভ্যুত্থানকে ভালোভাবে নেয়নি আফ্রিকা অঞ্চলের ১৫ দেশের জোট ইকোয়াস। ৬ আগস্টের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে পুনর্বহালের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল জোটটি। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর কড়া বার্তাও দেওয়া হয়। সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের সহায়তা চেয়েছে নাইজারের জান্তা সরকার। ইকোয়াসের এই সময়সীমা শেষ হয়েছে। গতকালের সম্মেলন থেকে বাজুমকে পুনর্বহালে যারা বাধা দেবে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে জোটটি। ইকোওয়াস চেয়ারম্যান ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বলেন, কোনো বিকল্পই বাধ দেওয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ উপায় হলো সামরিক শক্তি প্রয়োগ। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল। নাইজারের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার যাত্রায় আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। আমি আশাবাদী আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নাইজারে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে পারব। এখনো সব কিছু শেষ হয়ে ‍যায়নি। এর আগে গত সপ্তাহে সেনা অভ্যুত্থানকারীদের হটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে পুনর্বহাল করতে নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা কথা জানিয়েছিল ইকোওয়াস। ইকোওয়াসের রাজনীতি, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কমিশনার আবদেল-ফাতাউ মুসা বলেছিলেন, ইকোওয়াস কখন, কোথায় হামলা করবে তা অভ্যুত্থানকারীদের কাছে প্রকাশ করা হবে না। তবে এ বিষয়ে জোটের রাষ্ট্রপ্রধানরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছে নাইজারের জান্তা সরকার। তারা বলছে, এমন হলে তারাও পাল্টা লড়াই করবে। এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করার কথা জানিয়েছে প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসো। এ দুই দেশও ইকোওয়াসের সদস্য।
১১ আগস্ট, ২০২৩

সক্রিয় ওয়াগনার / নাইজারে অভ্যুত্থান এবং আফ্রিকায় পুতিনের খেলা
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থান শুধু আফ্রিকা নয়, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতির বেশকিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে।   গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দুর রাহমান চিয়ানি গত শুক্রবার নিজেকে নাইজারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন।  এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশের মতো নাইজারও ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশ যেখানে এখনো ফ্রান্স তার আর্থিক এবং সামরিক প্রভাব ধরে রেখেছে এবং নাইজারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ জারি রেখেছে। ফলে নাইজারের এই সেনা অভ্যুত্থানে মানুষ সমর্থন জানাচ্ছে এবং কিছু বিক্ষোভকারী দেশ থেকে ফ্রান্সকে হটিয়ে  রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।  নাইজারে এই সেনা অভ্যুত্থানের ফলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনকে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক রূপান্তরের সূচনা হিসেবে দেখা যায়। এটি গ্লোবাল সাউথের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে।     গত সপ্তাহে সেন্ট পিটার্সবার্গে দ্বিতীয় রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের সাম্প্রতিক সমাবর্তন এবং এর পরই নাইজারের সেনা অভ্যুত্থান আফ্রিকায় রাশিয়াকে খেলোয়াড়ের আসনে বসিয়েছে। এই অভ্যুত্থান একই সাথে পুরো আফ্রিকাজুড়ে রাশিয়ার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, এমনকি তার আক্রমণাত্মক কৌশল, সেইসাথে সেখানে শাসন ও রাষ্ট্র-নির্মাণে রাশিয়ার গভীর প্রভাবকে তুলে ধরে। এটি এও প্রকাশ করে যে, মহাদেশজুড়ে ক্ষমতা প্রতিযোগিতায় রাশিয়া একটি অপ্রতিরোধ্য চ্যালেঞ্জ। এই অভ্যুত্থানের প্রকৃত কারণ যাই হোক না কেন, অভ্যুত্থানের নেতারা বলছেন- দেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকার দেশের ‘দরিদ্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা’ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই তারা সরকারকে হটিয়ে দেশের ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে নিয়েছেন।  নাইজারে অভ্যুত্থান ঘটানো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা প্রকাশ্যভাবেই রাশিয়ার সাথে যুক্ত। রাশিয়া তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে এবং রাশিয়ার ওয়াগনার বাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে। ভ্লাদিমির পুতিন নাইজারকে সরাসরি ভর্তুকি দিচ্ছেন। নাইজার, সুদান, বুরকিনা ফাসো এবং মালিতে ঘটা অভ্যুত্থানগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একটি অন্যটির সাথে একটি সাদৃশ্য বহন করছে।  সুদানে এবং এখন দৃশ্যত নাইজারে অভ্যুত্থানকারীরা মূলত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব স্থানীয় সামরিক বাহিনীর ওপর তাদের ক্ষমতাকে ব্যাহত করবে। প্রকৃতপক্ষে, গণতান্ত্রিক সরকার সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছুটা সাফল্য পেয়েছিল যা অভ্যুত্থান ঘটানো নেতাদের অভিযোগকে দুর্বল করে দেয়।  সুতরাং গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সরিয়ে সামরিক নেতৃত্ব নিয়ে আসার মধ্যে রাশিয়া এবং আফ্রিকান ক্লায়েন্টরা পারস্পরিক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক লাভ দেখছে। নাইজারের বিক্ষোভকারীরা রাশিয়ানপন্থি এবং পশ্চিমাবিরোধী, বিশেষ করে তাদের ফরাসিবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে রাশিয়ার হাত স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।   ওয়াশিংটনের আফ্রিকা সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক জোসেফ সিগেল বলেছেন, বুরকিনা ফাসোতে অভ্যুত্থানের পর ‘‘ওয়াগনারের সাথে যুক্ত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টগুলো স্পষ্টভাবেই বলছে- ‘নাইজার আমাদের পরবর্তী টার্গেট,’’। জোসেফ সিগেল তার পর্যবেক্ষণে আরও দেখিয়েছেন, রাশিয়া পশ্চিম আফ্রিকায় একটি সামরিক টেকওভার দেখতে আগ্রহী যা এই অঞ্চলে তাদের প্রভাবকে আরও বৃদ্ধি করবে।   এই বিশ্লেষণটি যদি সঠিক হয়, তবে নাইজারের অভ্যুত্থানটি কিছুটা হলেও রাশিয়ার গোয়েন্দা এবং ওয়াগনার বাহিনী দ্বারা প্ররোচিত। রাশিয়া বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য মাথায় রেখে এই অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছে।   রাশিয়ার একটি লক্ষ্য হলো- গণতান্ত্রিক কিন্তু বিপর্যস্ত আফ্রিকান সরকারগুলোকে উৎখাত করে সেখানে রাশিয়ান প্রক্সি সরকার বসানো। যাতে জেনারেলরা রাশিয়ান অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে মস্কোর সাথে সংযুক্ত থাকে এবং পশ্চিমা প্রভাবকে হ্রাস করে সেখানে রাশিয়ন কর্তৃত্ববাদী শাসনকে লালন করে। মস্কো স্পষ্টভাবেই আফ্রিকার আঞ্চলিক, উপজাতীয়, জাতিগত, ধর্মীয় বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বকে তার উদ্দেশসাধনে কাজে লাগাবে।  আফ্রিকান দেশগুলোতে ঢুকে রাশিয়া শুধু খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন এবং অন্যান্য চুক্তি করেই থেমে থাকেনি বরং ওয়াগনার গ্রুপের মাধ্যমে সেসব দেশে একটি বিকল্প সরকার ব্যবস্থাও তৈরি করে। যাতে প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে সেই দেশের সরকারকে সহজেই প্রতিস্থাপন করতে পারে। অথবা চাপ প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় চুক্তি বা সুবিধা আদায় করতে পারে।  এটি তখন প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং স্থায়ী সামরিক অবস্থান বা নৌ/বিমান ঘাঁটি গড়তে সেই দেশকে চাপ দিতে পারে। যা সেসব দেশে স্থায়ীভাবে রাশিয়ান সামরিক অবস্থানের ইচ্ছার চূড়ান্ত প্রকাশ।  সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান আফ্রিকার দেশগুলোতে রাশিয়ার শক্তি, কৌশল এবং লক্ষ্যগুলোকে স্পষ্ট করে। এখান থেকেই স্পষ্ট হয়, কেন ভ্লাদিমির পুতিন জুনের বিদ্রোহের পরও ওয়াগনার বাহিনীকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন।  মূল - স্টিফেন ব্ল্যাঙ্ক (STEPHEN BLANK), দ্য হিল (THE HILL) থেকে ভাষান্তর – মুজাহিদুল ইসলাম 
০৮ আগস্ট, ২০২৩

যে তিন দেশে বারবার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে গত ২৬ জুলাই (বুধবার) প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাকে উৎখাতের পর ২৮ জুলাই নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদোরাহমানে চিয়ানি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আবারও আলোচনায় এসেছে অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের বিষয়টি। অতীতেও অনেক দেশে বারবার সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সেনা অভ্যুত্থানের নজির সবচেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়, তার পরই রয়েছে এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান ও মিয়ানমার।     বিভিন্ন দেশের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে শনিবার (৫ আগস্ট) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।  প্রতিবেদনে বলা হয়—বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যে দেশের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক বা মানব উন্নয়নসূচক (এইচডিআই) খুব কম থাকে, সেই দেশেই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেশে দারিদ্র বেড়ে গেলে, ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এইচডিআই কমে আসে। সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক নজির ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান থেকে শুরু করে মিয়ানমারে এই ধরনের সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে বারবার।  সামরিক অভ্যুত্থানে সাধারণত সেনাবাহিনীর জয় নিশ্চিত। তবে এই পরিস্থিতি থেকেও সরকারে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদি অন্য কোনও মিত্র দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আক্রান্ত দেশটির সরকারকে সাহায্য করে, বাইরে থেকে যদি সামরিক সাহায্য আসে, সে ক্ষেত্রে সেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। সম্প্রতি সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। নাইজেরিয়ার উত্তরে নাইজার নামের ছোট্ট দেশটিতে শাসনক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। নাইজারের চারদিকের সীমান্তও একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। অন্য দেশের সাহায্যের পথ বন্ধ করে সামরিক শাসনের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করেছেন। আরও পড়ুন : নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর দলীয় কার্যালয়ে আগুন  ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর যে পাকিস্তানের জন্ম, সেখানেও বারবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল পাকিস্তানে। ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৯ বছর সেনা শাসনের অধীনে ছিল ভারতের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। ২০২১ সাল থেকে ফের দেশটি সামরিক বাহিনীর শাসনাধীন। এ ছাড়া নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝে মাঝেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বারবার দেশের জনগণ নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। কখনও সেনার অধীনে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কখনও নেমে এসেছে অশান্তির অন্ধকার। সেনা অভ্যুত্থানের নজির সবচেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ২০০ বার সেই দেশে সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সেনা। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের পাশে অবস্থিত বলিভিয়া। ১৮২৫ সাল পর্যন্ত দেশটি স্পেনের অধীনে ছিল। ওই বছরের অগস্ট মাসে বলিভিয়া স্বাধীন হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বলিভিয়ার রাজনীতিতে বহু পালাবদল ঘটেছে। ১৯০ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এই দেশে। ২০১৯ সালে শেষবার সেনা বলিভিয়ার ক্ষমতা দখল করেছে। ২০১৯ সালের সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে বলিভিয়া সরকার নিজে থেকেই হার স্বীকার করে নেয়। পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকে দেশটিতে সেনাশাসন জারি রয়েছে। বলিভিয়ায় নড়বড়ে সরকার এবং বারবার সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কিন্তু দারিদ্র্য নয়। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে কফি উৎপন্ন হয়। কফির বীজ নিয়ে এ দেশে অশান্তির সূত্রপাত। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে বলিভিয়া তৃতীয়। কলম্বিয়া এবং পেরুর পরেই তার স্থান। এই কফির ওপর বাইরের দেশগুলোর নজর বহু দিনের। বাইরে থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে প্রভাববিস্তার করে দেশে অশান্তির আবহ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ। অশান্ত বলিভিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান এখন পানিভাত হয়ে গিয়েছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও সেনা এবং সরকারের এই সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়। সামরিক অভ্যুত্থানের নিরিখে পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে বলিভিয়া। পাকিস্তানে কোনও প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে টিকে থাকতে পারেননি বটে, তবে সেখানে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানও হয়নি।
০৫ আগস্ট, ২০২৩

মৌরিতানিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান
২০০৫ সালের ৩ আগস্ট দিনটি ছিল রোববার। এদিন আফ্রিকা মহাদেশের মৌরিতানিয়ায় একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। প্রেসিডেন্ট মাওউয়া অওল্ড সিদ আহমেদ তায়াকে মৌরিতানিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন মিলিটারি কাউন্সিল ফর জাস্টিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (সিএমজেডি) নেতা এলি অওল্ড মোহাম্মদ ভাল। সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া এ সময় সৌদি আরবের রাজা ফাহাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে সৌদি আরবে ছিলেন। অভ্যুত্থানকারীরা একটি সাংবিধানিক গণভোট এবং সংসদীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা এবং অভ্যুত্থানের নেতারা কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ১১ মার্চ ২০০৭ তারিখে মৌরিতানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক সরকার শেষ হয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাউনা উলদ হাইদাল্লার কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং টানা প্রায় ২০ বছর মৌরিতানিয়া শাসন করেন। এ শাসনের বিরুদ্ধে মৌরিতানিয়ায় ২০০৩ সালের জুন এবং ২০০৪ সালের আগস্টে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। এসব অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়ার সখ্য। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার জন্য আরববিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের মধ্যে একটি ছিল মৌরতানিয়া, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা মেনে নিতে পারেননি। অভ্যুত্থানটির পেছনে কিছু বিরোধী সমর্থন ছিল। ৩ আগস্ট ২০০৫ তারিখে প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় সেনাসদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদস্যরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ঘিরে ফেলে। রাজধানী নুওয়াকশুতে তখন গুলির শব্দ শোনা যায় এবং রাস্তাঘাট খালি হয়ে যায়। অভ্যুত্থানকারীরা রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও ও টিভি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। মৌরিতানিয়ার টেলিভিশনে একটি আনুষ্ঠানিক বার্তায় অভ্যুত্থানের নেতারা ঘোষণা করেন যে, ‘সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিলুপ্ত শাসনের বিগত কয়েক বছরের সর্বগ্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট অবসান ঘটাতে হবে, যার অধীনে আমাদের জনগণ গত কয়েক বছর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ঠিক অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া মৌরিতানিয়া ফেরার জন্য বিমানে ছিলেন। অভ্যুত্থানকারীরা তাকে পাশের দেশ নাইজারে অবতরণ করতে বাধ্য করে। তিনি শেষ পর্যন্ত মধপ্রাচ্যের কাতারে যান এবং সেখানকার একটি সামরিক একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। অভ্যুত্থানের পর আফ্রিকান ইউনিয়ন মৌরিতানিয়ায় ‘সাংবিধানিক আদেশ’ ফিরে আনার দাবি জানায় এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে মৌরিতানিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে। ২০০৭ সালে একটি সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মৌরিতানিয়ার সামরিক সরকারের শাসন শেষ হয়। এ নির্বাচনে সিদি অওল্ড চেখ আবদুল্লাহি নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আবদুল্লাহি আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ইসলামিক কট্টরপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রাসাদে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারি তহবিল অপব্যবহার করেছিলেন বলে সেনাসদস্যদের নেতৃত্বে ২০০৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করা হয়। লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
০৩ আগস্ট, ২০২৩

কারাগার থেকে গৃহবন্দি সু চি
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। গত সোমবার (২৪ জুলাই) থেকে রাজধানী নাইপিডোর একটি সরকারি বাসভবনে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মিয়ানমারের কারাগারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ‍ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। এরপর তাকে কারাগারে এক বছরের বেশি সময় আটক করে রাখা হয়। বিভিন্ন মামলায় ৭৮ বছর বয়সী সু চিকে ৩৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব রায়েই বর্তমানে তিনি জেলে আছেন। কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় সু চির অসুস্থতার বিষয়ে বেশ কয়েকবার গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে গত দুই বছর ধরে তার শারীরিক অবস্থার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের জান্তা সরকারও এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। আরও পড়ুন : মায়ের মুক্তি চাইলেন সু চির ছেলে ২০২১ সালে সেনাবাহনীর হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরুতে সু চিকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। পরে গত বছর মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিডোতে তাকে কারাবাসে পাঠানো হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি থাকার পর ২০১০ সালে মুক্তি পান। সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট মিয়ানমারে বন্দি সু চি বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছিলেন। মিয়ানমার ও বিশ্বজুড়ে তার মুক্তি উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে চুপ থেকে তিনি সমালোচিত হন। সেসব নিপীড়িত রোহিঙ্গারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন।
২৮ জুলাই, ২০২৩

নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর দলীয় কার্যালয়ে আগুন
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে উৎখাতের পর তার দলের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে সামরিক অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। খবর বিবিসি। গত বুধবার (২৬ জুলাই) প্রেসিডেন্ট বাজুমকে আটকের পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। এর আগে তারা প্রেসিডেন্টকে তার বাসভবনে অবরোধ করে রাখে। সেনা অভ্যুত্থানের পর বৃহস্পতিবার নাইজারে সেনাবাহিনীর পক্ষে দেশটির পার্লামেন্টের বাইরে সমাবেশ করেন মানুষ। এরপর সেখান থেকে বেশ কয়েকজনের একটি দল ক্ষমতাসীন দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দেয়। এ সময় তারা রাশিয়ার জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করছিলেন। আরও পড়ুন : নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান, দেশজুড়ে কারফিউ ৬৪ বছর বয়সি বাজুম দুই বছর আগে নাইজারের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিত্রদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে দেশটিতে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাজুমের শপথ নেওয়ার কয়েকদিন আগেই সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের এ ব্যর্থ চেষ্টা করে। এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুতের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বাজুমের পাশে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে। অন্যদিকে জাতিসংঘ দেশটি থেকে তাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। তবে অভ্যুত্থানের কারণে এটি স্থগিত করা হয়েছে কি না, তা এখনো অস্পষ্ট রয়েছে। যদিও জাতিসংঘ এর আগে জানিয়েছিল, নাইজারে ৪০ লাখের বেশি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাজুমের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
২৮ জুলাই, ২০২৩
X