পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে গত ২৬ জুলাই (বুধবার) প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাকে উৎখাতের পর ২৮ জুলাই নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদোরাহমানে চিয়ানি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আবারও আলোচনায় এসেছে অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের বিষয়টি। অতীতেও অনেক দেশে বারবার সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সেনা অভ্যুত্থানের নজির সবচেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়, তার পরই রয়েছে এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান ও মিয়ানমার।
বিভিন্ন দেশের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে শনিবার (৫ আগস্ট) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়—বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যে দেশের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক বা মানব উন্নয়নসূচক (এইচডিআই) খুব কম থাকে, সেই দেশেই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেশে দারিদ্র বেড়ে গেলে, ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এইচডিআই কমে আসে। সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক নজির ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান থেকে শুরু করে মিয়ানমারে এই ধরনের সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে বারবার।
সামরিক অভ্যুত্থানে সাধারণত সেনাবাহিনীর জয় নিশ্চিত। তবে এই পরিস্থিতি থেকেও সরকারে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদি অন্য কোনও মিত্র দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আক্রান্ত দেশটির সরকারকে সাহায্য করে, বাইরে থেকে যদি সামরিক সাহায্য আসে, সে ক্ষেত্রে সেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।
সম্প্রতি সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। নাইজেরিয়ার উত্তরে নাইজার নামের ছোট্ট দেশটিতে শাসনক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। নাইজারের চারদিকের সীমান্তও একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। অন্য দেশের সাহায্যের পথ বন্ধ করে সামরিক শাসনের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন : নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর দলীয় কার্যালয়ে আগুন
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর যে পাকিস্তানের জন্ম, সেখানেও বারবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল পাকিস্তানে।
১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৯ বছর সেনা শাসনের অধীনে ছিল ভারতের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। ২০২১ সাল থেকে ফের দেশটি সামরিক বাহিনীর শাসনাধীন।
এ ছাড়া নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝে মাঝেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বারবার দেশের জনগণ নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। কখনও সেনার অধীনে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কখনও নেমে এসেছে অশান্তির অন্ধকার।
সেনা অভ্যুত্থানের নজির সবচেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ২০০ বার সেই দেশে সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সেনা।
দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের পাশে অবস্থিত বলিভিয়া। ১৮২৫ সাল পর্যন্ত দেশটি স্পেনের অধীনে ছিল। ওই বছরের অগস্ট মাসে বলিভিয়া স্বাধীন হয়।
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বলিভিয়ার রাজনীতিতে বহু পালাবদল ঘটেছে। ১৯০ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এই দেশে। ২০১৯ সালে শেষবার সেনা বলিভিয়ার ক্ষমতা দখল করেছে।
২০১৯ সালের সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে বলিভিয়া সরকার নিজে থেকেই হার স্বীকার করে নেয়। পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকে দেশটিতে সেনাশাসন জারি রয়েছে।
বলিভিয়ায় নড়বড়ে সরকার এবং বারবার সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কিন্তু দারিদ্র্য নয়। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে কফি উৎপন্ন হয়। কফির বীজ নিয়ে এ দেশে অশান্তির সূত্রপাত।
কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে বলিভিয়া তৃতীয়। কলম্বিয়া এবং পেরুর পরেই তার স্থান। এই কফির ওপর বাইরের দেশগুলোর নজর বহু দিনের। বাইরে থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে প্রভাববিস্তার করে দেশে অশান্তির আবহ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।
অশান্ত বলিভিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান এখন পানিভাত হয়ে গিয়েছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও সেনা এবং সরকারের এই সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়।
সামরিক অভ্যুত্থানের নিরিখে পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে বলিভিয়া। পাকিস্তানে কোনও প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে টিকে থাকতে পারেননি বটে, তবে সেখানে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানও হয়নি।
মন্তব্য করুন