সিকদার আমিনুল হকের কবিতা
‘সিকদার আমিনুল হকের কাব্যযাত্রার শুরু ১৯৬৫ সালে এবং কিছু দোলাচল সত্ত্বেও তা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় চার দশক। জীবন-জীবিকার পাগলা ঘোড়া তাঁকেও পথভ্রষ্ট করতে চেয়েছে বারবার। শেষাবধি কবিতা ছাড়া অন্য কোনো প্রেম কিংবা প্রলোভনের কাছে কখনোই তিনি নিজেকে সমর্পণ করেননি কিংবা করার কথা ভাবেননি। এ-সময়ে শ্রেষ্ঠ কবিতাসহ তাঁর ষোলোটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ববর্তী ও সমকালীন বহু কবির বিপুল রচনাসম্ভারের তুলনায় নগণ্য হলেও তাঁর স্বাতন্ত্র্যকে শনাক্ত করার জন্যে তা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারতো। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, তাঁর সতত ডানার মানুষ কাব্যগ্রন্থটির সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে এমন কাব্যগ্রন্থ বাংলাদেশের কবিতায় শুধু নয়, সমগ্র বাংলা কবিতায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।’
১২ ঘণ্টা আগে

মে দিবসের গান ও কবিতা
আজ পহেলা মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে প্যারিসে শ্রমিকদের যে আন্দোলন শুরু হয় তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দিবসটিকে নিয়ে বিশ্বে বহু গান, সিনেমা, কবিতা, নাটকসহ রচিত হয়েছে বহু সৃজনশীল কর্ম। দিবসটির তাৎপর্য বহন করে এমন কিছু গান ও কবিতার কথা থাকছে। ১৮৮৯ সালে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণার পরের বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে দিবসে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিক্ষোভ হয়। বিখ্যাত প্রতিবাদী সংগীত তারকা পিট সিগার ‘টকিং ইউনিয়ন’ গানের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতি সমর্থন জানান। শ্রমিকদের দাবির কথা বলেছেন যারা, তারা কঠোর দমননীতির শিকার হন। এমনই একজন জো হিল। অভিবাসী শ্রমিক ও সংগীত রচয়িতা জো হিলকে হত্যার অভিযোগে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় ১৯১৫ সালে। ‘জো হিল’ নামে বাঁধা হয় বিখ্যাত গান, যা অমরত্বের দাবিদার। কণ্ঠ দেন কিংবদন্তি সংগীত তারকা জোয়ান বায়েজ। বিখ্যাত প্রতিবাদী সংগীত তারকা পিট সিগার ‘টকিং ইউনিয়ন’ গানের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতি সমর্থন জানান। ১৮৮৯ সালে জিম কোন্যাল লেখেন রেড ফ্লাগ নামে একটি গান। যার প্রথম চরণ—জনতার পতাকা টকটকে লাল/ ঢেকে রাখে শহীদের লাশ/ শক্ত শীতল তাদের দেহ/ এই পতাকার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে/ হৃদয়ের রক্ত রাঙায় এই পতাকা। এটি একটি দীর্ঘ সংগীত। একইভাবে বব হার্ট, কপল্যান্ড, অ্যাসলেট প্যাটিশ মে দিবস ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে গান লিখেছেন। মে দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলা গান ও কবিতা হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা: প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/ কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,/ গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে, তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য/ জীবনকে চায় ভালোবাসতে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গাওয়া গান জন হেনরি। এটি এমন এক গান, যা আমাদের চিন্তা জগৎকে মুহূর্তে নাড়িয়ে দেয়, আলোড়ন তোলে এবং মানুষের মুক্তির চূড়ান্ত পথে চালিত করতে উদ্বুদ্ধ করে। গানের কথা: জন হেনরি, জন হেনরি/ নাম তার ছিল জন হেনরি ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন/ হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে শিল্পী/ খুশি মনে কাজ করে রাত-দিন/ হো হো হো হো খুশি মনে কাজ করে রাত-দিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—‘সবচেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে বাকি সকলের পরিচর্যা করে। সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’ আবার গণসংগীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সব গানই মেহনতি মানুষের গান। মে দিবস নিয়ে তার লেখা ও গাওয়া গান, ‘বলো সাথী সবদিনই আমাদের পহেলা মে দুনিয়ার মজদুর এক হও এই ডাক শুনি যেদিন, সেদিনই মে দিন সাথী সেদিনই মে দিন।’ এ ছাড়া ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ এবং ‘আলু বেচো ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি’ উল্লেখযোগ্য। আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুলি-মজুর’ কবিতার কয়েকটি পঙক্তি: হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,/ পাহাড়-কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,/ তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,/ তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;/ তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,/ তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
০১ মে, ২০২৪

ছবি দেখে কবিতা লিখবে বুদ্ধিমান ক্যামেরা!
কবিরা কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পান প্রকৃতি থেকে। কবিতায় কথা বলে প্রকৃতি। কিন্তু অনেকের আবার প্রকৃতি ভালো লাগলেও মনে দোলা দেয় না কোনো চরণ। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড দিতে গিয়েও লিখতে পারেন না দু-চার লাইন। সেক্ষেত্রে ছবিটা তুলতে পারেন ‘পোয়েট্রি ক্যামেরা’ দিয়ে। কেননা এই ক্যামেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আপনার তোলা ছবি থেকে তৈরি করে দেবে মানানসই কবিতা! যুক্তরাষ্ট্রের দুই বন্ধু কেলিন ও রায়ান ক্যামেরাটি তৈরি করেছেন। দেখতে অনেকটা মিনি প্রিন্টারের মতো। এতে আছে ছবি তোলার সেন্সর। ভেতরে আছে একটি ছোট্ট কম্পিউটার—রাস্পবেরি পাই। এটি মূলত সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার। পোয়েট্রি ক্যামেরার সেন্সর যখন কোনো দৃশ্যকে ধারণ করে, তখন এই কম্পিউটার দৃশ্যগুলো বিশ্লেষণ করে। তারপর ছবির রং, বিন্যাস বিশ্লেষণ করে কবিতা তৈরি করে ওপেন এআই এর জিপিটি-৪ কে কাজে লাগিয়ে। ছবি দেখে নানা ধরনের কবিতা তৈরি করে এই ক্যামেরা। সনেট, হাইকুর মতো কবিতাও লিখে দেবে নিমেষে। কবিতা লেখার পর ক্যামেরা থেকে প্রিন্টারের মতো ছোট কাগজে কবিতাটি ছাপা হয়ে বের হয়ে আসবে। দুই ডিজাইনার রায়ান ও কেলিন এই ক্যামেরার কোডিংয়ে ওপেন সোর্স করে দিয়েছে। তারা এটা তৈরি করেছিল শিল্পের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ফুটিয়ে তুলতে। প্রকল্পটি নিয়ে তাদের ছিল না বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য। তবে প্রোটোটাইপ তৈরির পর এই ক্যামেরা বিক্রির অসংখ্য অনুরোধ পাচ্ছেন তারা। তাই হয়তো অচিরেই বাজারে মিলতে পারে কবিতা-ক্যামেরা।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

উৎকলিত রহমানের কবিতা ‘জ্যোতিষ্ময়ীর গান’
উজানি বৃষ্টি ঢলে আমার সমতল বুকে তখন উত্তাল বান ডাকে, কতটা ভেঙে এসেছে সে ঢেউ,  কত ফসলি জমি, সম্ভাবনার অঙ্কুর সমূলে গিয়েছে ভেসে, বুক ছিঁড়ে ঝিনুক তোলা হাহাকার,পাহাড় পারে না ডিঙ্গাতে- সুনীল নিস্তব্ধতায় নির্লিপ্তের চাহনি মেখে রয়! ভেসে যাই, ভেসে রই, যেন বেঁচে রই এক টুকরো খড়ের আকুতি বুকে চেপে! . অবশেষে, কোন দূর নক্ষত্র থেকে তুমি এলে লতানো কচি লাউয়ের ডগার মতো দুটি বাহু, গোলাপের পাপড়ির রং ঠোঁটে মেখে- অপার মায়ার সাগর মুখে দেখে প্রাণ জুড়ালো যেন!  এইরূপ মায়ায় এই মুখ ভালোবেসে- আমার স্বপ্ন বাঁধি কতরূপে, আমার রক্তের ধারা, হিজল ছায়ায় শান্ত নদীর মতো, তোমার সকল ধারা জুড়ে বয়, এই স্রোত আমার শক্তি, আমার প্রেরণা যতো তোমারে আছে ঘিরে! . বৈশাখের প্রথম বৃষ্টি তুমি, শেষ ঝরা পাতার পর,  নতুন কুশিতোলা সোনালু। তুমি সৈকতজুড়ে চিতল আকাশে ডালি সাজানো সিঁদুর অংশুমান, পাণ্ডুর মেঘে ছড়িয়ে দেয়া ঈষৎ লাল, টোল পড়া সন্ধ্যায় ঝাউয়ের ডগায় দক্ষিণ শীতল হাওয়া তুমি, নীল ঊর্মিমালী মাঝে উচ্ছল জলপরী- নানা রঙে নানা বর্ণে উজ্জ্বল ঝর্ণা ধারা। . শাশ্বত চঞ্চল হরিণীর ডাগর চোখের মোহন মায়া তুমি, লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের কৃষ্ণগহ্বর যেন, কি নেশায় ভুবন টানে সেই সে কেন্দ্রে- দুর্বার চৌম্বক ক্ষেত্র এক, আবেশের শেষে আগলে রাখো মনে। . শ্যামল রেইন্ট্রির দীঘল সারি মেঠো পথ নিয়ে গেছে বেঁকে, তুমি সেই শ্যামলীমায় বিছিয়েছ স্নিগ্ধ আলোকাবরণ, পেলব তুমি, মেরুপ্রভায় রক্তিম সূর্যের দীপ‍্যমান আভা, চেতনার গহন মায়ায়, আমার জ্যোতিষ্ময়ী পূর্ণাভা। . [কবি উৎকলিত রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী; বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ’এর সঙ্গে কাজ করছেন।]
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফে ও আজব প্রকাশের সাহিত্য আড্ডা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের সদস্যদের সঙ্গে এবার সাহিত্য আড্ডায় যোগ দিয়েছিল স্বনামধন্য প্রকাশনা ও আবৃত্তি সংগঠন ‘আজব প্রকাশ’। সৈয়দ মাজহারুল পারভেজের সম্পাদিত ‘নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ সংকলনটি নিয়ে হয়েছিল এবারের আলোচনা, যেখানে কেবল কবিতার শিল্পগুণ নিয়েই নয়, বরং আলোচনা হয়েছিল কবিতার বিষয়বস্তু ও বিভিন্ন সময়ে লেখা এসব কবিতার এই সংকলনে স্থান পাওয়া নিয়েও। গত ২৭ মার্চ সাহিত্যসভায় রিডিং ক্যাফে এবং আজব প্রকাশের সদস্যরা বইটির বেশ কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করেন। আলোচকরা কবিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিও ব্যক্ত করতে ভুল করেননি। সম্পাদকের কবিতা নির্বাচন নিয়ে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আরও অনেক উল্লেখযোগ্য কবিতা রয়েছে, যেগুলো এই সংকলনে যুক্ত হতে পারত। সাহিত্য আড্ডার গুরুত্ব নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, ‘সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা, আমাদের মাঝে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর চেতনা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হলো, প্রতিষ্ঠানে পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যা আমাদের জ্ঞান এবং বিনোদন দানের পাশাপাশি ক্ষমতায়ন করতেও ভূমিকা রাখবে। এই ধরনের সাহিত্য আলোচনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী বর্ণনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, যা আমাদের ঐতিহ্যের গভীরতাকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম করে তোলে।’ এপ্রিল মাসের আলোচনার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফে নির্বাচন করেছে প্রখ্যাত ঊর্দু লেখক সাদাত হাসান মান্টোর ছোটগল্পের সংকলন। পরবর্তী আলোচনাও উপভোগ্য হতে চলেছে বলে বিশ্বাস এই পাঠচক্রের সদস্যদের। আজব প্রকাশকে সঙ্গে নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের এই উদ্যোগটি ইতিহাসের জটিলতা এবং মানবিক অবস্থাকে অনুধাবন করতে সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। পড়ার যে একটা শক্তি আছে, এই উদ্যোগটি আমাদের সমষ্টিগত এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোকে সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তার-ই প্রমাণ রেখে যাচ্ছে।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

কবি শামীমা নাইসের কবিতা : আত্মদর্শনের নিমগ্নতায় বিমূর্ত পঙক্তিমালা
পুস্তক পর্যালোচনাটি লিখেছেন: আব্দুর রাজ্জাক ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’- এর  লেখিকা শামীমা নাইস এ প্রজন্মেরই একজন কবি। নিয়মিত কবিতা লিখছেন। কবিতার মাঝেই তার বসবাস এবং তার কবিতা লেখার নেশা অসাধারণ। তিনি সারা বাংলা -১৯৮৮-র একজন বন্ধু। কবিতার নিমগ্নতায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিমগ্ন প্রার্থনায় তুমি,’ ২০২২ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্যতার প্রতিবিম্বে অতল জোছনা,’ প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ সালে।  একুশ বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ : ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে প্রান্ত প্রকাশন থেকে। বইটির মুখবন্ধ / গৌরচন্দ্রিকা লিখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি ও সংগঠক প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক। কবি শামীমা নাইসের তৃতীয় এ বইটি নিয়েই দুএকটি কথা বলতে চাই।  শামীমা নাইসের কবিতায় প্রকৃতিপ্রেম, বিরহ, আনন্দ, কাব্যরস, জীবনঘনিষ্ঠ অনুভূতিগুলো আকৃষ্ট করে আমাদের। তিনি কর্মজীবী নারী হিসেবে শত ব্যস্ততার ফাঁকে লিখছেন কবিতা, সচল রেখেছেন আবৃত্তি চর্চাও।   তার কবিতার পরশ ছোঁয়ায় একবার স্পর্শিত হলে গোটা বইটি একপলকে শেষ না করে আর থাকা যায় না। আমি তার কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক। তার ৩টি বই-ই আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। নতুন ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’ আগ্রহভরেই আত্মস্থ করেছি। কাব্যের নামকরণও হয়েছে কবিতা থেকে। সেই নিঃসঙ্গ অরণ্যে কবি তার প্রিয়জনকে ছাড়া একা বোধ করেন।  তার ভাষায় : ‘তুমিহীন একলা আমি যেন নক্ষত্রহীন নিঃসঙ্গ গ্রহ! ঐশ্বরিক বেদনাহত তুমিহীন আমি যেন নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল!’ কী আবেগ, কী ভালোবাসা প্রিয় মানুষটির জন্য তা ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে আমাদের। প্রিয় মানুষকে নিয়েই যেন তার চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আশা, কল্পনা।  প্রিয় দেশকে নিয়েও কবির অনেক ভাবনা, অনেক ভালোবাসা যার প্রমাণ পাই বইটির প্রথম কবিতা ‘অমর একুশে’ থেকে। যে বাংলা ভাষায় আমরা কবিতা পড়ি, কথা বলি, বাংলা ভাষা আন্দোলনে শহিদরা তাদের রক্ত দিয়ে লিখে দিয়ে গেছেন। কবির ভাষায় : ‘রক্ত ভেজা মাটিতে, বাতাসের গায়ে আপামর বাঙালির বেদনা সিক্ত হৃদয়ে বীর শহিদরা রক্ত দিয়ে লিখে গেলেন প্রাণপ্রিয় বর্ণমালা অ আ ক খ।’  রাজশাহী মহানগরীর একটা ঐতিহ্য আছে, একটা ঐতিহাসিকতা আছে। রাজশাহীর আকাশে বাতাসে যার নাম ধ্বনিত, সেই জাতীয় নেতা শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে স্মরণ করেছেন তার ‘বিবেকের ক্রন্দন শুনতে কি পাও’ কবিতায়। সেখানে আমরা পাই : ‘হাসনাহেনার মতো সৌরভ ছড়াবে বলেই হয়ত তোমার নাম রাখা হয়েছিল হেনা, বেড়ে উঠেছ পদ্মাবিধৌত পুণ্যভূমি রাজশাহীতে। সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্বের অসীম গুণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলে আমৃত্যু; মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার আজীবন।’  তার কাব্যে প্রকৃতি প্রেম, রোমান্টিকতা সদা উথলিয়ে পড়ে যা আমরা ‘ইষ্টিকুটুম’ কবিতায় লক্ষ্য করি : ‘আনন্দ জাগানিয়া গুনগুন গান ধরা মধুর দুপুরে বসন্ত এসে ঠকঠক কড়া নাড়ল দুয়ারে; শব্দের জলসিঁড়ি বেয়ে- কবিতা এসে ধরা দিল কবির কলমে।’ তার রোমান্টিকতার আর এক কবিতা ‘স্বপ্নপিয়াসী মন’ যেখানে কবি দেখিয়েছেন কীভাবে মনসুখ খুঁজতে হয়: ‘স্বপ্নপিয়াসী মন একদিন জেগে উঠেছিল হেমন্তের ভোরে- লাল ঝুঁটি মোরগের ডাকে ; উত্তাল কুয়াশায় ঝাঁপ দিয়ে নিসর্গ নিঃস্তব্ধতায় হিমশীতল আদুরে বাতাসে শেফালির ঘ্রাণ মেখে খুঁজেছিল ভৈরবী সুখ।’  শামীমা নাইসের কবিতায় প্রেম- রোমান্টিকতা, ভীষণ ভালোলাগা খুঁজে পাই ‘চিঠির ভাঁজে’ কবিতায় আমরা যেভাবে :  ‘চিঠির ভাঁজে স্বপ্ন ছিল কাব্যরসে সিক্ত হৃদয় তখন গভীর প্রেমে ভীষণ অনুরক্ত।’ তার আর এক অনন্ত সুখরস পাওয়া যায় ‘সুখের প্রণয়’ কবিতায় : ‘আমি অধরা চাঁদ তবু ধরা দিই তোমার বুকে তোমার ঢেউয়ের লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠি উল্লাসে।’ কবি আবার কখনো নিজকে নিঃসঙ্গ, একাকী ভেবে বিরহের যন্ত্রণায় উৎকণ্ঠা হয়েছেন; যা তার ‘বিপন্ন বর্ষা ’ কবিতায় আমরা লক্ষ্য করি : ‘মনে হয় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমি একা খুব একা; কোথাও কেউ নেই, নেই কোথাও কেউ।’  নারীবাদী কবিরা তো নারীর পক্ষে জয়গান গাইবেন, এমনটিই স্বাভাবিক। নারীকে তিনি কীভাবে মানুষ হিসেবে দেখতে চান তা -তার ‘বালিকা তুমিও মানুষ’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই : ‘বালিকা তুমি আলোর আঁধার সঞ্জীবনী সুধায় ভরা পাত্র। তুমি বৃত্তের মধ্যে থেকো না বন্দি, জীবনের স্বরলিপি ছুঁয়ে সমাজ, সংসারের সেরা কাজটি তুমিই পারো; পৃথিবী জানুক তুমি শুধু নারী নও, তুমি পরিপূর্ণ মানুষ।’  গ্রন্থটির শেষ কবিতা ‘কুয়াশার মিছিলে একদিন’; যেখানে কবি কুয়াশার জলে স্বচ্ছ-পবিত্র মানুষ হয়ে আলো ছড়াতে চান একদিন। আমরাও তো সেটাই প্রত্যাশা করি! ‘একদিন কুয়াশার স্নিগ্ধ জলে অবগাহন করে হতে চেয়েছিলাম প্রকৃতির মতো পবিত্র, গোটা সূর্যকে ধারণ করতে চেয়েছিলাম বুকের ভিতর; হতে চেয়েছিলাম মুক্তোদানার মতো দ্যুতিময়।’  চমৎকার একটি ভাবনার মধ্য দিয়েই কাব্যটির ইতি টানা হয়েছে। মনে হচ্ছে এরকম ভাবনা তিনি ভাবতেই থাকুন, এমন কবিতা তার চলতেই থাকুক। এ যে শেষ হয়েও হলো না শেষ! অনিঃশেষ শুভকামনা রইল কবির জন্য। আরও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি তার ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য। জয় হোক যুগে যুগে কবিমানসের, সুপাঠ্য কবিতার, প্রিয় কবির।  আব্দুর রাজ্জাক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক 
২৬ মার্চ, ২০২৪

ম. রাশেদুল হাসান খানের কবিতা ‘স্বাধীনতার উপ্যাখান’ 
বৈষম্য-হুমকি-অনাচার কিংবা পদস্খলনের অসহনীয় নিষ্পেষণে সূত্রপাত স্বাধীনতার ভয়-জয়ের উত্তালে ক্রমশ: শুরু হয় পরাধীনতার শিকল ভাঙার। তাইতো ধীরলয়ে আঁচ করতে হয় তমসাচ্ছন্ন ‘কালোরাত্রি’র অনাহুত পলেস্তারা- আঁধার কেটে রক্তিম আলোকছটায় তবেই উদ্ভাসিত হয় ‘স্বাধীনতা’র পসরা। ক্রমাগত নতজানু অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক পরাধীনতার শিকলের ঝংকারের ছন্দের নিঃশব্দ সুরে রচিত হয় মুক্তির গান। সময়ের চাপে, শিকল ভাঙার মুক্তির গানের কোরাসে, বজ্রকণ্ঠ-বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নির্দেশে ‘স্বাধীনতা’ আনে মাথা উঁচুর তাগিদে। রাজনৈতিক-ধর্মীয় ঘোরটোপের আবদ্ধ প্রাচীর পেরিয়ে, ঠিক যেন, লালপেড়ে শাড়ীতে কিশোরী দখিনা হাওয়ায় সবুজ ধানের সঙ্গে দুলে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বাক স্বাধীকারের অর্জন পূরণে, সামাজিক-রাজনৈতিক-আঞ্চলিক দর্শনও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাঁড়ায় কারণে-অকারণে। পথিক হিসেবে পথ চলতে কতটা স্বাধীনতায় অগ্রসর হলে, মানবে তুমি শেষে, বড্ড বেশী স্বাধীনতায় প্রত্যাশিত গন্তব্য হারিয়েছ অবশেষে!   [কবি ম. রাশেদুল হাসান খান পেশাগত জীবনে একজন ব্যাংকার; বর্তমানে তিনি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত।]
২৬ মার্চ, ২০২৪

আশরাফ সিদ্দিকীর স্মরণে দুইটি কবিতা
ড. আশরাফ সিদ্দিকীর চতুর্থ প্রয়াণ দিবস আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ)। তিনি জন্মেছিলেন  ১৯২৭ সালের এই দিনে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার নাগবাড়ি গ্রামে। তিনি একধারে ছিলেন কবি, লোক বিজ্ঞানি, ছোট গল্প লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক। শান্তি নিকেতন হতে বিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় এমএ করেন। এমএ ও ফোকলোর বিষয়ে পিএইচডি করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকা হতে।  ১৯৫১ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন রাজশাহী সরকারি কলেজে। সে বছরেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তিনি রাজশাহী কলেজ, ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ার এ প্রধান সহকারী সম্পাদক, তদানীন্তন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক, ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ার এর প্রধান সম্পাদক এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এবং প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান সহ নজরুল একাডেমী এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।  তার বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে তালেব মাষ্টার ও অন্যান্য কবিতা (১৯৫০), বিষকন্যা (১৯৫৫), ভোম্বল দাস দ্য আংকেল অফ লায়ন (১৯৫৮), রাবেয়া আপা (১৩৬২), লোক সাহিত্য প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড (১৯৬৩), রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতন (১৯৭৪), ফোকলরিক বাংলাদেশ, প্যারিস সুন্দরী (১৯৭৫), তিরিশ বসন্তের ফুল (১৯৭৬), বাণিজ্যেতে যাবো আমি (১৯৭৭), বাংলাদেশের রূপকথা (১৯৯১), আরশী নগর, গুনীন (১৯৮৯) ইত্যাদি।  একুশে পদক (১৯৮৮), শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কারসহ তিনি আরও বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমিতে একুশে বই মেলা আয়োজন এবং জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সমাধিস্থল নির্ধারণে তিনি নিয়ামক ভূমিকায় ছিলেন। বাংলার লোকায়ত মৌখিক সংস্কৃতির অনেকটাই লিখিত রূপে আনার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।  বিবাহ সূত্রে তিনি আবদ্ধ ছিলেন সাঈদা সিদ্দিকীর সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনে প্রথম নারীদের প্রতিবাদ ঘটেছিলো সাঈদার নেতৃত্বে যিনি আজীবন আজিমপুর গালর্স হাই স্কুলে শিক্ষকতায় ব্রতী ছিলেন।  আশরাফ সিদ্দিকীর প্রয়াণ দিবসে তার স্বরণে কবিতা লিখেছেন সন্তান সায়ীদ সিদ্দিকী। বাবাকে শ্রদ্ধা করে লেখা সায়ীদ সিদ্দিকীর দুইটি কবিতা এখানে তুলে ধরা হল।  আমি একজন কবি বলছি  -- সায়ীদ সিদ্দিকী  তোমরা যারা আমার জানাজায় এলে  আমার অভিবাদন গ্রহণ করো  আমার জন্য তোমাদের প্রাণ ঢালা প্রার্থনা  সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় আমলে নেবেন  মৃত্যুকে নিয়ে বেশি ভেবোনা মৃত্যু হলো  বাড়ির দরজা খুলে বিশাল পৃথিবীতে  নুতুন কিছু ঠিকানার খোঁজে  অজানার পথে হারিয়ে যাওয়া  এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে অজস্র গন্তব্য  সারা জীবন কি তুমি আর আমি এর খোঁজে  হন্নে হয়ে ঘুরি নি? গন্তব্যে পৌঁছনোর পথ ভিন্ন ভিন্ন  আমাকে প্রকৃতি কবির মন দিয়ে তৈরী করেছিল  তাই আমার ঠিকানা ছিল বিমূর্ততার মাঝে  সেখানে আমি তালেব মাস্টার , রাবেয়া আপা  গলির ধারের ওই ছেলেটা ,  আর মায়াবতী নার্স দেড় সান্নিধ্য পেয়েছি  ওদের কথা তোমাদের বলেছি  মনে করোনা ওরা কল্পনা প্রসুত  চোখ খুলে দেখো , এমন শত শত জীবন তোমাদের মাঝে গল্প হয়ে আছে  ওদের একজন দুজনকে খুঁজে বার করো  ওদের গল্প বল , তুমি ও কবি বলে পরিচিত হবে  আমাকে যেথায় শেষবারের মতো শেষের ঠিকানায়  রেখে এসেছো ,  সেখানে তোমাদের বার বার  যাবার প্রয়োজন নেই  যদি আমাকে মনে করতে চাও  যে লেখা গুলো তোমাদের  উপহার হিসেবে দিয়ে এলাম  চোখ বুলিও পাতা গুলোয়  আমার জন্য চোখের জল ফেলো না  অশ্রু ফেলো গলির ধারের সেই ছেলেটার জন্য  রাবেয়া অপার অস্ফুট চাপা ব্যথার জন্য  তালেব মাস্টার এর কন্যার না খেয়ে জীবন অবসানের জন্য  চেষ্টা করো তোমাদের আশপাশের তালেব মাস্টারদের ভাগ্য উন্নয়নে  তাহলেই তোমাদের এই কবি নিজেকে সার্থক ভাববে  তাঁর সম্মুকে যখন দাঁড়াবো , বলবো  হে ঈশ্বর , আমি সাম্যের কথা বলেছি  আমি লালনের গান গেয়েছি  আমি রবীন্দ্র নাথের কথা বিলিয়ে বেরিয়েছি ঘোষণা করেছি নজরুলের প্রতিবাদ  আমি চিরতরে চলে যাই নি  যদি একজনকে ও অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি  আমি তার মাঝে বেঁচে রইবো  তোমরা যারা আমাকে ভালোবেসেছো  আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে রইবো  তোমারা যদি আমাকে কবি বলে জানো  জেনো , কবিরদের মৃত্যু অন্যরকম  বাণীর মাঝে আমরা রই , ভালোবাসার পাত্র হয়ে  আমার সময় ফুরালো  -- সায়ীদ সিদ্দিকী  আমার সময় ফুরালো  নটে গাছটি মুরোলো তোমরা হাসপাতালে আমার বিছানা ঘিরে দাঁড়িয়ে। এক এক করে আমি সবাইকে দেখছি। তোমরা যারা আমার নাভিশ্বাস ওঠা দেখে কষ্ট পাচ্ছো,  খোদার কাছে অবিরাম প্রার্থনা করে যাচ্ছ,  আমি তোমাদের বলছি, তিনি নিশ্চয় তা শুনছেন।  তিনি দয়ালু , এ কথা নিশ্চয় সত্য। তোমাদের সবার জন্য রেখে যাচ্ছি আশীর্বাদ। মানুষের জীবনের শেষ মুহূর্তে যে যে ধাপ গুলো পেরতে হয় ,  তোমাদের কাছে তা দেখতে মৃত্যু যন্ত্রনা মনে হয়।  দেহ আর আত্মার ৯৫ বছর ধরে সহ অবস্থান,  খাঁচা ছেড়ে চিরতরে আলাদা হবার প্রক্রিয়া একটু কঠিন হওয়া টা স্বাভাবিক বটে।  আমার নাম আশরাফ সিদ্দিকী।  তোমরা বাংলার মানুষেরা  আমাকে কবি বলে যে সম্মান আজীবন দিয়েছো, আমি তোমাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।  আমার জন্য আফসোস করো না. আমি লম্বা আয়ু পেয়েছি. কত অজানার জানালেন তিনি  “কত ঘরে দিলেন ঠাই”...কত বন্ধু, কত শুভাকাঙ্ক্ষী আছে আমা ।  ওপারে রয়েছেন আমার স্নেহময়ী মা,  আমার পুণ্যবান বাবা, আমার ছোট বোন চপল  (সৃষ্টি কর্তা তাকে ভালোবেসে অল্প বয়সে কাছে নিয়ে গেলেন)  আমার বড় ভাই, বোন, নানা জান, সুরতির মা, কত ভালোবাসার মানুষ গুলো।  আমি চলে গেলে তোমরা কাঁদবে জানি,  কিন্তু নিশ্চয় জেনো আমি হারিয়ে যাবো না।  তোমাদের মাঝে আমি রইবো, যত দিন আমাকে মনে রাখবে, ততদিন ।  আমার প্রিয়তমা স্ত্রী অলি, বহু বছর আগে গেলো চলে।  আজ পর্দার ওপারে আবার নব বধূর সাজে রয়েছে অপেক্ষায়।  তোমরা মায়া ছাড়লেই আমি যেতে পারি।
১৯ মার্চ, ২০২৪

নিঃসঙ্গতার কবিতা / গন্তব্যের খোঁজে! 
আমার মন খারাপের মেঘ, ঈশান কোণে রোজ বিকেলে-  উঁকি দেয় নিয়ম করে, বিষাদের দুপুর চৈত্রের দহন দাহে, আদ্রতা বাড়ায় চোখের কোণে, কেবল অভিমানী বর্ষা আসে না, শ্রাবণ ধারায় ফুরায় না ব্যথার গভীরতা! উজান ঢলে চাপ বাড়ে মনের হ্রদে, ফেঁপে ওঠা অগভীর জলাধার - প্লাবন ঘটায়,  তাতে আকরিক সুখ ধরে না!  .  তারপর ধরণী শীতল করে আসে বৃষ্টির ধারা, দাবদাহে পুড়ে খাক আত্মা বৃষ্টিতে মন ভিজিয়ে- শয্যায় খোঁজে আশ্রয়। জানালার ওপারে সজনের ডালে ভিজে কাক, ব্যস্ততা বাড়ে জেলের, বৈঠার তালে সম্ভাবনা দোলে, বহুদূরে কুসুম মেঘে আলোর ঝিলিক- দুপুরের জ্যোতি নিভে আগ্রাসী কালো মেঘে।  .  এইসব দিন প্রকৃতির কোলাহল আবর্তে- বয়সের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় বর্ষা স্নাত কিশোরীর উচ্ছলতায়, ক্লান্ত রাতে নিঃসঙ্গতার ক্যাফেইন ছড়ায় শিরায়, ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে আয়েশ খুঁজে নেয় নিঃসঙ্গ নাগরিক জীবন। ভাট ফুলে বসন্ত লাগা বিকেলে- অলীক অনিশ্চয়তায় হাত ধরে চলে স্বপ্নেরা! বেশতো আছি, জীবনের কাছাকাছি, পথ হেঁটে হেঁটে - গন্তব্যহীন গন্তব্যের খোঁজে! [কবি উৎকলিত রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী; বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ’এর সঙ্গে কাজ করছেন।]
০৮ মার্চ, ২০২৪

প্যারিসে একুশের কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে সাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘স্রোতে’র আয়োজনে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হলো একুশের কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা। কবি বদরুজ্জামান জামানের উপস্থাপনায় গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি হলে এ আয়োজন করা হয়।  আলোচনায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। যা বিশ্বে আমাদের জন্য বিশেষ গৌরবের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সর্বত্র বাংলা ভাষা চালুর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া বিদেশে প্রতিটা দেশে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানানো হয়। প্রবাসে বেড়ে উঠা সন্তানদের বাংলা শেখানোর জন্য বাবা-মাকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে একুশ নিয়ে প্রসিদ্ধ কবিতাসমূহের আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন- কবি আবু জুবায়ের, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আরিফ রানা, আবৃত্তিশিল্পী মুনির কাদের, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, ছড়াকার ও কবি লোকমান আহমদ আপন, স্রোত সম্পাদক কবি বদরুজ্জামান জামান, কবি মেরি হাওলাদার, সাহিত্যানুরাগী মোহাম্মদ আহমেদ সেলিম, মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, চিন্তক খালেদুর রহমান সাগর, সংগঠক এলান খান চৌধুরী, সংগঠক জুয়েল দাস লেলিন, সংগীতশিল্পী ইসরাত খানম ফ্লোরা, আয়েশা সুলতানা প্রমুখ। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কুমকুম রানা।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X