কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কবি শামীমা নাইসের কবিতা : আত্মদর্শনের নিমগ্নতায় বিমূর্ত পঙক্তিমালা

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

পুস্তক পর্যালোচনাটি লিখেছেন: আব্দুর রাজ্জাক

‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’- এর লেখিকা শামীমা নাইস এ প্রজন্মেরই একজন কবি। নিয়মিত কবিতা লিখছেন। কবিতার মাঝেই তার বসবাস এবং তার কবিতা লেখার নেশা অসাধারণ। তিনি সারা বাংলা -১৯৮৮-র একজন বন্ধু। কবিতার নিমগ্নতায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিমগ্ন প্রার্থনায় তুমি,’ ২০২২ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্যতার প্রতিবিম্বে অতল জোছনা,’ প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ সালে।

একুশ বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ : ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে প্রান্ত প্রকাশন থেকে। বইটির মুখবন্ধ / গৌরচন্দ্রিকা লিখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি ও সংগঠক প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক। কবি শামীমা নাইসের তৃতীয় এ বইটি নিয়েই দুএকটি কথা বলতে চাই।

শামীমা নাইসের কবিতায় প্রকৃতিপ্রেম, বিরহ, আনন্দ, কাব্যরস, জীবনঘনিষ্ঠ অনুভূতিগুলো আকৃষ্ট করে আমাদের। তিনি কর্মজীবী নারী হিসেবে শত ব্যস্ততার ফাঁকে লিখছেন কবিতা, সচল রেখেছেন আবৃত্তি চর্চাও।

তার কবিতার পরশ ছোঁয়ায় একবার স্পর্শিত হলে গোটা বইটি একপলকে শেষ না করে আর থাকা যায় না। আমি তার কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক। তার ৩টি বই-ই আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। নতুন ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’ আগ্রহভরেই আত্মস্থ করেছি। কাব্যের নামকরণও হয়েছে কবিতা থেকে। সেই নিঃসঙ্গ অরণ্যে কবি তার প্রিয়জনকে ছাড়া একা বোধ করেন।

তার ভাষায় : ‘তুমিহীন একলা আমি যেন নক্ষত্রহীন নিঃসঙ্গ গ্রহ! ঐশ্বরিক বেদনাহত তুমিহীন আমি যেন নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল!’ কী আবেগ, কী ভালোবাসা প্রিয় মানুষটির জন্য তা ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে আমাদের। প্রিয় মানুষকে নিয়েই যেন তার চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আশা, কল্পনা।

প্রিয় দেশকে নিয়েও কবির অনেক ভাবনা, অনেক ভালোবাসা যার প্রমাণ পাই বইটির প্রথম কবিতা ‘অমর একুশে’ থেকে। যে বাংলা ভাষায় আমরা কবিতা পড়ি, কথা বলি, বাংলা ভাষা আন্দোলনে শহিদরা তাদের রক্ত দিয়ে লিখে দিয়ে গেছেন। কবির ভাষায় : ‘রক্ত ভেজা মাটিতে, বাতাসের গায়ে আপামর বাঙালির বেদনা সিক্ত হৃদয়ে বীর শহিদরা রক্ত দিয়ে লিখে গেলেন প্রাণপ্রিয় বর্ণমালা অ আ ক খ।’

রাজশাহী মহানগরীর একটা ঐতিহ্য আছে, একটা ঐতিহাসিকতা আছে। রাজশাহীর আকাশে বাতাসে যার নাম ধ্বনিত, সেই জাতীয় নেতা শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে স্মরণ করেছেন তার ‘বিবেকের ক্রন্দন শুনতে কি পাও’ কবিতায়। সেখানে আমরা পাই : ‘হাসনাহেনার মতো সৌরভ ছড়াবে বলেই হয়ত তোমার নাম রাখা হয়েছিল হেনা, বেড়ে উঠেছ পদ্মাবিধৌত পুণ্যভূমি রাজশাহীতে। সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্বের অসীম গুণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলে আমৃত্যু; মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার আজীবন।’

তার কাব্যে প্রকৃতি প্রেম, রোমান্টিকতা সদা উথলিয়ে পড়ে যা আমরা ‘ইষ্টিকুটুম’ কবিতায় লক্ষ্য করি : ‘আনন্দ জাগানিয়া গুনগুন গান ধরা মধুর দুপুরে বসন্ত এসে ঠকঠক কড়া নাড়ল দুয়ারে; শব্দের জলসিঁড়ি বেয়ে- কবিতা এসে ধরা দিল কবির কলমে।’ তার রোমান্টিকতার আর এক কবিতা ‘স্বপ্নপিয়াসী মন’ যেখানে কবি দেখিয়েছেন কীভাবে মনসুখ খুঁজতে হয়: ‘স্বপ্নপিয়াসী মন একদিন জেগে উঠেছিল হেমন্তের ভোরে- লাল ঝুঁটি মোরগের ডাকে ; উত্তাল কুয়াশায় ঝাঁপ দিয়ে নিসর্গ নিঃস্তব্ধতায় হিমশীতল আদুরে বাতাসে শেফালির ঘ্রাণ মেখে খুঁজেছিল ভৈরবী সুখ।’

শামীমা নাইসের কবিতায় প্রেম- রোমান্টিকতা, ভীষণ ভালোলাগা খুঁজে পাই ‘চিঠির ভাঁজে’ কবিতায় আমরা যেভাবে : ‘চিঠির ভাঁজে স্বপ্ন ছিল কাব্যরসে সিক্ত হৃদয় তখন গভীর প্রেমে ভীষণ অনুরক্ত।’ তার আর এক অনন্ত সুখরস পাওয়া যায় ‘সুখের প্রণয়’ কবিতায় : ‘আমি অধরা চাঁদ তবু ধরা দিই তোমার বুকে তোমার ঢেউয়ের লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠি উল্লাসে।’ কবি আবার কখনো নিজকে নিঃসঙ্গ, একাকী ভেবে বিরহের যন্ত্রণায় উৎকণ্ঠা হয়েছেন; যা তার ‘বিপন্ন বর্ষা ’ কবিতায় আমরা লক্ষ্য করি : ‘মনে হয় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমি একা খুব একা; কোথাও কেউ নেই, নেই কোথাও কেউ।’

নারীবাদী কবিরা তো নারীর পক্ষে জয়গান গাইবেন, এমনটিই স্বাভাবিক। নারীকে তিনি কীভাবে মানুষ হিসেবে দেখতে চান তা -তার ‘বালিকা তুমিও মানুষ’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই : ‘বালিকা তুমি আলোর আঁধার সঞ্জীবনী সুধায় ভরা পাত্র। তুমি বৃত্তের মধ্যে থেকো না বন্দি, জীবনের স্বরলিপি ছুঁয়ে সমাজ, সংসারের সেরা কাজটি তুমিই পারো; পৃথিবী জানুক তুমি শুধু নারী নও, তুমি পরিপূর্ণ মানুষ।’

গ্রন্থটির শেষ কবিতা ‘কুয়াশার মিছিলে একদিন’; যেখানে কবি কুয়াশার জলে স্বচ্ছ-পবিত্র মানুষ হয়ে আলো ছড়াতে চান একদিন। আমরাও তো সেটাই প্রত্যাশা করি! ‘একদিন কুয়াশার স্নিগ্ধ জলে অবগাহন করে হতে চেয়েছিলাম প্রকৃতির মতো পবিত্র, গোটা সূর্যকে ধারণ করতে চেয়েছিলাম বুকের ভিতর; হতে চেয়েছিলাম মুক্তোদানার মতো দ্যুতিময়।’

চমৎকার একটি ভাবনার মধ্য দিয়েই কাব্যটির ইতি টানা হয়েছে। মনে হচ্ছে এরকম ভাবনা তিনি ভাবতেই থাকুন, এমন কবিতা তার চলতেই থাকুক। এ যে শেষ হয়েও হলো না শেষ! অনিঃশেষ শুভকামনা রইল কবির জন্য। আরও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি তার ‘নিঃসঙ্গ অরণ্যে নীল ঘাসফুল’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য। জয় হোক যুগে যুগে কবিমানসের, সুপাঠ্য কবিতার, প্রিয় কবির।

আব্দুর রাজ্জাক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হ্যাক হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেবে মেটা 

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ / ডাচ দলে চোটগ্রস্ত বার্সা তারকা

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন

গাছ তলায় জায়েদ খান

নিরব-রিফাতের ‘অবুঝ মনের প্রেম’

ধানের দাম নিয়ে কৃষকের হাহাকার

কার বেশি আয়, রোনালদো নাকি মেসির?

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান চালাবে র‍‍্যাব

স্বেচ্ছামৃত্যুর আগে তরুণীর ব্যতিক্রমী আয়োজন

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ল ১৪ দোকান 

১০

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল তারেক

১১

সৌদি পৌঁছেছেন ২৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী

১২

গণতন্ত্র-উন্নয়নে শেখ হাসিনা বিশ্বে রোল মডেল : রাষ্ট্রপতি

১৩

ঢাকার যেসব এলাকায় শনিবার গ্যাস কম থাকবে

১৪

৬ তারিখে বাজেট দেব, বাস্তবায়নও করব : প্রধানমন্ত্রী

১৫

দেবরের হাতে ভাবি খুন

১৬

বীজতলা ফেটে চৌচির, কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

১৭

যারা একবেলা খেতে পারত না, তারা চারবেলা খায় : প্রধানমন্ত্রী

১৮

আ.লীগ সরকার টেলিযোগাযোগ খাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করেছে : প্রধানমন্ত্রী

১৯

ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪

২০
X