ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন কৃষক
রংপুরের পীরগাছায় ভোট দিতে গিয়ে কেন্দ্রে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন নওয়াব আলী (৭২) নামে এক বৃদ্ধ ভোটার। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওয়াব আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম।   বুধবার (৮ মে) দুপুরে উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নে সোনারায় কারবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। মৃত নওয়াব আলী পেশায় একজন কৃষক। তিনি সোনারায় গ্রামের মহর উদ্দীনের ছেলে। হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তার পরিবার। জানা গেছে, বুধবার বেলা ১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ভোট দিতে সোনারায় কারবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যান। সেখানে ভোট দেওয়ার আগে কেন্দ্রের পাশে প্রস্রাব সারতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করেন। ততক্ষণে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আমিনুল ইসলাম জানান, দুপুরে ভ্যানে চড়ে ভোটকেন্দ্রে যান তার বাবা। সেখানে ভোট দেওয়ার আগে হঠাৎ প্রস্রাবের চাপ দিলে পাশের একটি টয়লেটে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এর আগেও দুইবার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে (হার্ট অ্যাটাক) তিনি মারা গেছেন বলে পরিবার ধারণা করছেন। সোনারায় কারবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, ওই ব্যক্তি কেন্দ্রের বাইরে মারা গেছেন। এটি কেন্দ্রের বাইরের ঘটনা। তবে তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।  তিনি জানান, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৭০১ জন। এর মধ্যে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সকালের তুলনায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে।
০৮ মে, ২০২৪

ধানের পরিবর্তে চিটা, সর্বস্বান্ত কৃষক
যশোরের অভয়নগরে তেজগোল্ড জাতের ধান চাষ করে ধানের পরিবর্তে চিটা হয়ে শতাধিক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ১৫০ বিঘা জমিতে ৭৮ জন চাষিদের ধানক্ষেতে চিটা হয়ে গেছে। সোমবার (৬ মে) দুপুরে উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেয়াপাড়া এলাকার মাঠে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে গ্রামের ৭৮ জন চাষিকে ফ্রিতে তেজগোল্ড জাতের ধান বীজ দেওয়া হয়। আমরা সবাই মিলে একযোগে এ ধান চাষ করি ভালো ফলনের আশায়। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করে পেলাম ধানের পরিবর্তে চিটা। উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের পরামর্শে সরিষার আবাদ শেষে হওয়ার পর আমরা ৭০-৮০ জন তেজগোল্ড ধানের বীজ নিয়ে চাষ করি। ধানের গাছ ও গোছা ভালো হলেও এখন ধান কাটার সময়ে আমরা সব ধান চিটা পাচ্ছি। ধানচাষি আয়ুব মোল্লা, শহিদুল গাজী, রেজাউল ইসলাম, শাহাজান হোসেন, জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠকর্মী দেব্রত বাবু ও অন্য মাঠকর্মীদের পরামর্শে আমরা তেজগোল্ড জাতের ধান বীজ নিয়ে চাষ করি। দারিদ্র্যতার কারণে ধারদেনা করে ধান চাষে পানি ও সার কীটনাশক ব্যবহার করি। তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার দেয় সেগুলোই ব্যবহার করি। ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। পানি ৪ হাজার টাকা, চাষের সময় ২ হাজার ৪শ, কীটনাশক বালাই নাশক ২ হাজার, কাটার জন্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। পরিশেষে ধান কাটার সময় দেখি সব ধান চিটা হয়ে গেছে।  তারা আরও বলেন, আমরা চাষিরা এখন কোথায় কার কাছে যাব। আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়েই জীবনযাপন করতে হবে। শ্রীধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, কৃষকের কোনো ক্ষতি আমরা কখনো চাই না। মাঠকর্মীদের পরামর্শে যে ঘটনা ঘটেছে এতে কৃষকদের ভাগ্যে চরম বিপর্যয় নামবে। কৃষি কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাই। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, দেয়াপাড়া ধান চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় তা করব। চাষিদের ধানক্ষেতের এই অবস্থার সঠিক তদন্ত করা হবে।
০৬ মে, ২০২৪

ভোট বর্জনে কৃষক দলের লিফলেট বিতরণ
চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে নওগাঁর মহাদেবপুরে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে উপজেলা কৃষক দল। শনিবার (৪ মে) মহাদেবপুরে উপজেলা কৃষক দল আয়োজিত কর্মিসভা শেষে সাধারণ মানুষের মাঝে এ লিফলেট বিতরণ করা হয়। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল। তিনি বলেন, বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৭ জানুয়ারির একতরফা প্রহসনের ভোট বর্জন করেছে। উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণ করছি। আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় নির্বাচনের মতো জনগণ উপজেলার ভোটও প্রত্যাখ্যান করবে। আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সাত্তার মাস্টার, উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান (মতি), সহসভাপতি প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ইথার ও আপেল মাহমুদ পল্টু, হাতুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ কৃষক দলের উপজেলা কমিটি, ১০ ইউনিয়ন ও ৯০টি ওয়ার্ডের নেতারা।
০৫ মে, ২০২৪

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ফুলবাড়ীতে পুড়ছে ক্ষেতের ফসল, দুশ্চিন্তায় কৃষক
সারা দেশে চলছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। অন্যবারের মতো এবারও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এরাকায় বোরো, ভুট্টা, বেগুন ও মরিচ আবাদ করা হয়েছে। প্রায় এক পক্ষকাল ধরে টানা তাপপ্রবাহে পুড়ে যাচ্ছে এসব ক্ষেতের ফসল। বাড়তি সেচে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কাজ হচ্ছে না। এই অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, মাত্র ১০-১৫ দিন গেলে তারা ভুট্টা ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এসব ভুট্টা পরিপক্ব না হতেই গাছ মরে চুপসে যাচ্ছে। প্রতিদিন সেচ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ক্ষেতের মাটি পুড়ে হলদে রঙের হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর উপজেলায় বোরো ১৪ হাজার ১৮৬ হেক্টর, ভুট্টা ৪ হাজার ১০ হেক্টর, আম ৪৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এসবের মধ্যে বাদাম ৭৫ হেক্টর, ভুট্টা ১ হাজার ৩৭০ হেক্টরসহ বিভিন্ন শাকসবজি ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দিনাজপুর জেলায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে। গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৩ মে শুক্রবার পর্যন্ত ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রির মধ্যেই তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে; যা সব ধরনের ফসলের জন্যই ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বোরো, ভুট্টা, মরিচ ও বেগুন ক্ষেতের গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেতে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি যোতিশ চন্দ্র রায় বলেন, বর্গা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। প্রতিদিন ভুট্টা ক্ষেতে বাড়তি সেচ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। আর এক সপ্তাহ গেলেই ভুট্টাগুলোর দানা ভালোভাবে পুরোট হয়ে যাবে। তখন তুললে ভুট্টার ওজনও বাড়বে আর বাড়তি কিছু আয়ও হবে। চলমান খরার জন্য ভুট্টাগুলো এবার হয়েও হলো না। একই ইউনিয়নের পাঠকপাড়া গ্রামের সবজি চাষি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিজের এক বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষ করেছেন। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সবজি ক্ষেতের গাছ শুকে যাচ্ছে, আর ফল ঝরে পড়ছে। এতে কোনো লাভ হবে না। একই ইউনিয়নের আমডুঙি গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মরিচ চাষি নির্মাল মার্ডী বলেন, এ বছর ২৭ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের জন্য গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ফুল থেকে বের হওয়া মরিচ রোদের তাপে ঝরে পড়ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচ উঠবে কী না এনিয়ে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, শীতকালীন ভুট্টা এখন তোলার সময়। এমন ক্ষতি হওয়ার কথা না। তবে তাপের কারণে হতেও পারে। এ ছাড়াও তাপের কারণে অন্যান্য ফসলও কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে কৃষকদেরকে ক্ষেতে সেচের মাধ্যমে পানি ধরে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
০৪ মে, ২০২৪

বজ্রপাতে কৃষক শিক্ষার্থীসহ ১১ জন নিহত
বজ্রপাতে দেশের চার জেলায় কৃষক, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার চার উপজেলায় চারজন, রাঙামাটি সদর ও বাঘাইছড়িতে তিনজন, কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুজন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় একজন এবং সিলেটের কানাইঘাটে প্রাণ গেছে একজনের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ও দুপুরের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯ জন। রাঙামাটিতে গতকাল সকাল থেকেই থেমে থেমে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলার মুসলিম ব্লক এলাকায় বাহার জান (৬০) নামে এক বৃদ্ধ বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশে মাঠে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতে তিনিসহ গরুটিরও মৃত্যু হয়। এ ছাড়া উপজেলার বড়াদম গ্রামে স্বপন চাকমা নামে একজনের দোকানে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্রনাথ চাকমা, সুষমলাল চাকমা, অক্ষয় মণি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমর জ্যোতি চাকমা। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে, সকাল ১১টার দিকে সাজেকের লংথিয়ান পাড়ায় বজ্রপাতে তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭) নামে এক নারী নিহত হন। বাঘাইছড়ি থানার ওসি ইশতিয়াক আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাঘাইছড়িতে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়ায় কাপ্তাই হ্রদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মো. নজির (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার চার উপজেলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতে একজন করে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বুড়িচং উপজেলার পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামে কুদ্দুস মিয়ার ছেলে মো. আলম হোসেন (২০), দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামে মোখলেছুর রহমান (৫৮), সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের উত্তর সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০) এবং চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে দৌলতুর রহমান (৪৭) মারা যান। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার কোদাইল্যাদিয়া ও চরিপাড়া এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মাঠে লবণ ঢাকতে গিয়ে বজ্রপাতে মোহাম্মদ দিদার (২৬) এবং আরফাত হোছাইন (১২) নামে দুজন নিহত হয়েছে। মগনামা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বদিউল আলম জানান, ভোরে কালবৈশাখী ও বজ্রপাত শুরু হলে মাঠে লবণ ঢাকতে যান জমির উদ্দিনের ছেলে দিদার। এ সময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল জানান, চরিপাড়ার জামাল হোছাইনের ছেলে আরাফাত তার বাবার সঙ্গে লবণমাঠে গেলে বজ্রপাতে প্রাণ হারায়। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নে ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১০) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সে ওই এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে। বড়নাল ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দিঘীরপার পূর্ব ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বাবুল আহমদ নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুজন। নিহত বাবুল (৪৮) দক্ষিণ কুয়রেরমাটির মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। আহতরা হলেন বাবুলের ভাতিজা ফাহিম আহমদ (১৭) এবং মানিকপুর গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (২০)। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
০৩ মে, ২০২৪

বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার ধামতি ইউনিয়নের ধামতি গ্রামের আবুল হোসেন সরকার বাড়ির পূর্বপাশে কৃষি জমিতে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা। নিহত কৃষকের নাম মোখলেসুর রহমান (৬৫)। তিনি ওই গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে।  নিহতের ভাতিজা ইয়াসিন সরকার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় বৃষ্টির আশঙ্কায় শুকনা খড় জমাতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতে মোখলেছুর রহমান আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক নিহতের বাড়িতে লোকজন পাঠাই। তার পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। 
০২ মে, ২০২৪

সূর্যমুখী আবাদে কৃষক এরশাদ মাহমুদের চমক
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া সুখবিলাস গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। উচ্চশিক্ষিত এরশাদ মাহমুদ ইউরোপের উন্নত জীবনকে পেছনে ঠেলে ১৯৮৮ ইংরেজি থেকেই করে যাচ্ছেন নানা কৃষিজ ফল-ফসল, মাছ চাষ ও বিলুপ্ত প্রাণী গয়ালসহ গৃহপালিত পশুর খামার। তার এমন ব্যতিক্রমী কৃষি ও খামার গড়ার জন্য স্বর্ণপদকসহ অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার। রাঙামাটি কিংবা বান্দরবান যাওয়ার পথেই রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে বর্তমানে তার সূর্যমুখী আবাদ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে এবং দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সবচেয়ে বড় সূর্যমুখী বাগান গড়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। তার এই আবাদ স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যান্য কৃষকদেরও। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তিনটি স্পটে ৮০ শতাংশ বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই খামারি। সরকারের তেল ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবং অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহিত করতেই মূলত গেল ৭/৮ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুল চাষে মনোনিবেশ করেছেন বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখিতে স্থানীয় অনেকেই এই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে এবছর আবাদ করেছেন বলে জানা যায়। তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। তার সূর্যমুখী ফুলের আকার উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আবাদকৃত ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গেল কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী আবাদ করে নিজের পরিবারের প্রয়োজনীয় তেলের চাহিদা মিটছে। এবার তিনি চাহিদার চেয়েও বেশি পরিমাণ তেল পাবেন বলে আশা করেন। শুধু এরশাদ মাহমুদই নন, একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে সূর্যমুখীর। জানা যায়, প্রথাগত চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা। এতে সরিষাসহ তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। এ বছরও বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর। পাকা, আধা পাকা সূর্যমুখী ফুলে বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ আকার ধারণ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন বিস্তির্ণ কৃষি মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া দেওয়া হয়েছে। এসব বীজে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এর বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।  কৃষকরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৩০০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বড়ুয়া জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপণ থেকে শুরু করে পুনরায় বীজ সংগ্রহে ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় এবার সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে। কৃষি অফিসের নানা প্রণোদনা কর্মসূচি এবং মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় বাগান গড়ে তুলেছেন পদুয়ার এরশাদ মাহমুদ। পতিত জমিকে আবাদ উপযোগী করে এই আবাদ করেছেন। তার মতো সবাই অনাবাদি জমিকে চাষ উপযোগী করে তেল ফসলের আবাদ করতে চাইলে কৃষি অফিস সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাবে।
০১ মে, ২০২৪

বোরোর বাম্পার ফলনেও হতাশ কৃষক!
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশার নোয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আকছির মিয়া। চলতি বোরো মৌসুমে নিজের চার একর এবং মহাজনের কাছ থেকে আরও চার একর ইজারা নিয়ে মোট আট একর জমিতে করেছিলেন বোরো আবাদ। এই আট একর জমিতে বোরো আবাদে জমির ইজারা, চারা, হালচাষ, জমি বুনন, সার, সেচের পানি, ধান কাটাসহ প্রতি একরে আকছির মিয়ার খরচ হয়েছে মোট ৫০ হাজার ৭৫০ টাকা। আবাদ করা জমিতে প্রতি একরে গড়ে ধানের ফলন হয়েছে ৭০ মণেরও বেশি। স্বপ্ন বুনেছিলেন ধানের ভালো দাম পেলে বর্ষা মৌসুমে একটু সচ্ছলভাবে চলবে সংসার। তাই হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় ধান কাটার পরই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের বাজারমূল্য কম থাকায় আকছির মিয়ার মুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। শুধু আকছির মিয়াই নন, উপজেলার অধিকাংশ সাধারণ কৃষক ধানের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এখন হতাশায় ভুগছেন। একদিকে ধানের মূল্য কম থাকা, অপরদিকে সরকারের ভর্তুকি মূল্যের হারভেস্টারে ধান কাটাতে প্রতি একরে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা গুনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর বলছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। ধানের দাম সরকারিভাবে ৩২ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর হারভেস্টার মেশিন গত বছর বিঘা প্রতি ১ হাজার ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ডিজেলের দাম বাড়ার পর চলতি বছরে নতুন ফি নির্ধারণ করা হয়নি। আকছির মিয়া জানান, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অনেক কষ্টে ধান কাটাও প্রায় শেষের দিকে। হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় কাটার পরই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি মণ ধানের দাম পেয়েছি ৭৩০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা করে। এভাবে ধানের দাম কম হলে আমরা কৃষকরা কোথায় যাব। জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৩ হেক্টরসহ জেলায় মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টরসহ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বোরো চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে।  জেলায় ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৬৫ টন। সরকার নির্ধারিত ধানের বাজার মূল্যে যা ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকার বেশি। কৃষক আলিমুল মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে চার একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে কিন্তু ধান কাটাতে মেশিনে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরছ হয়েছে। এখন প্রতি মণ ধান বিক্রি করত হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়।  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ কালবেলাকে বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার নিচু হাওড়গুলোর ধান কাটা শেষ হয়েছে। উপজেলার ৬ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা  নিয়মিত হাওরগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। ধান ৮০ ভাগ পাকা সম্পন্ন হলে কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ধানের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারিভাবে ধান বিক্রি করলে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। উপজেলায় ৩৮টি হারভেস্টার মেশিন চালু রয়েছে। আমরা তাদের সঠিক মূল্যে কৃষকের ধান কাটার জন্য বলে দিয়েছি।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সেচ সংকটে ৬০ গ্রামের কৃষক
দখলে ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অদের খাল। নদীর তীর দখল করে দোকানপাট ও আবাসিক ঘর নির্মাণসহ অনুমোদন ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে সংকুচিত হয়ে আসছে নদীর গতিপথ।  এসব কারণে বর্ষায় নৌরুট বন্ধ এবং শুষ্ক মৌসুমে ব্যাহত হচ্ছে সেচ সুবিধা। এতে সেচ সংকটে পড়েছে পাঁচ উপজেলার ৬০ গ্রামের কৃষক। সরেজমিনে দেখা যায়, বাংগরা বাজার ও গাজীর হাট অংশে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে প্রায় বন্ধ করে ফেলা হয়েছে নদীর গতিপথ। এ ছাড়াও অদের খাল ও এর শাখা খালের দুই পাশে দোকান ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।  নদীটির বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’ এর একটি প্রতিনিধি দল। তারা নবীনগরের বাংগরা বাজার, গাজীরহাট, জাঙ্গাল, গাজীপুর ও রাজাবাড়ীসহ নদীটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং নদী তীরবর্তী মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এ ব্যাপারে ‘তরী বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, নবীনগরের বাংগরা বাজারে সওজ’র সড়কের পাশে খালেরপাড়ে সরকারি জায়গায় দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, এমন সংবাদে আমরা সরেজমিনে দেখতে আসি। এ সময় বাজারের এসব অবৈধ স্থাপনা দেখতে গিয়ে অদের খালের বেহাল অবস্থা নজরে আসে। শুরুতেই আমরা বাংগরা ও গাজীরহাটের মধ্যবর্তী অদের খালের ওপর অবস্থিত সওজ’র ব্রিজের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা এবং ব্রিজের নিচে ময়লার ভাগাড় দেখতে পাই।  যার ফলে অদের খাল সংকুচিত হয়ে রীতিমতো নদীর গতিপথ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। পরে আমরা অদের খালটির বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করি। অদের খালের রাজাবাড়ী-আশ্রাফপুর এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে বর্ষায় নৌরুট বন্ধেরও অভিযোগ পেয়েছি স্থানীয়দের কাছ থেকে। স্থানীয় বাসিন্দা সাদেকুর রহমান ও ইয়ার হোসেন বলেন, একসময় এই এলাকার একমাত্র নৌরুট অদের খাল দিয়ে এই এলাকার প্রসিদ্ধ হাট-বাজারের পণ্যসামগ্রী পরিবহনে বেশ গুরুত্ব বহন করলেও সময়ের ব্যবধানে এটি পরিণত হয়েছে মরা নদীতে। রাজাবাড়ী অংশে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। যার ফলে ২০২২ সালের পর থেকে এই নদীতে নৌচলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যপারে ‘ঐতিহ্য কুমিল্লা’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, অদের খাল হলো কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীটি সালদা নামে কসবা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবীনগরের আদর্শগ্রাম, মুরদনগরের কালিগঞ্জ এবং কসবার শিমরাইলে ত্রিমোহনায় এসে বুড়ি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল।  অদের খাল নামে নদীর স্রোতধারা মিলিত হয়েছে মেঘনায়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অদের খাল মিলিত হয়েছে মেঘনায়। যুগযুগ ধরে নদীটি একপাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর এবং অপর পাশে কুমিল্লার মুরাদনগর ও হোমনা উপজেলারমানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।  দখল দূষণের শিকার হয়ে এবং অবৈধ স্থাপনার কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়া অদের খাল অচিরেই দখল মুক্ত হয়ে আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, অদের খালের রাজাবাড়ী-আশ্রাফপুর এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে বর্ষার মৌসুমে নৌরুট বন্ধের অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের এসিল্যান্ড অসুস্থ। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে এমন সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

কৃষক খুনের ঘটনায় থামছে না ভাঙচুর ও লুটপাট
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের চর দিঘলিয়া গ্রামে গত ১৩ জানুয়ারি কৃষক ওলিয়ার রহমান মোল্যা (৭১) খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুটিয়া গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং মাছের ঘের লুটপাটের মহোৎসব শুরু হয়েছে। এসব ঘটনায় লোহাগড়া থানা পুলিশ বারবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের কোনো পদক্ষেপে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন আশ্বস্ত হতে পারছেন না।  ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত ১৩ জানুয়ারি উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের চর দিঘলিয়া গ্রামে ওলিয়ার রহমান নামের একজন বৃদ্ধ খুন হয়। এ খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৩ মার্চ চরমাওলী গ্রামের মৃত জাকু মোল্যার ছেলে মো. ইসলাম মোল্যার নেতৃত্বে একই গ্রামের জসিম, সোহাগ, তরিকুল, রমজান, সাফায়েত, রুবেল, সবুজ, নুরুন্নবীসহ আরও ২০-২৫ জনের একদল ক্যাডার বাহিনী দেশীয় অস্ত্র হ্যামার, লোহার রড, রামদা, বল্লম নিয়ে লুটিয়া গ্রামের মোস্তফা কামাল ওরফে ওকিলের ছাদ করা পাকা বাড়ি ও শাফি খানের আধাপাকা টিনের বাড়ি লুটপাট করে ভেঙে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ওই দুই পরিবারের প্রায় কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।  এরপর ওই একই সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে ২১ এপ্রিল রাতে জিকু বিশ্বাসের আধাপাকা টিনের বাড়ি লুটপাট শেষে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল রাতে নড়াইল জেলা কৃষক লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. ফিরোজ শেখের বসত বাড়িতে লুটপাট ও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এতে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য ফিরোজ শেখ জানান, এতে কমপক্ষে তার ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফিরোজ শেখ আরও জানান, ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা বিল্ডিং ভাঙার যন্ত্রপাতি হ্যামার, লোহার রড, রামদা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।  ফিরোজ শেখ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওলিয়ার রহমান যেদিন খুন হয়, সে সময় আমার ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য আমি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। চিকিৎসাধীন সব তথ্য প্রমাণ আমার নিকট এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকটও রয়েছে। তবুও হিংসাত্মকভাবে ওই খুনের মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। যেটি আমার জন্য কষ্টের ও বেদনাদায়ক। তিনি আরও বলেন, চরমাওলী গ্রামের মৃত জাকু মোল্যার ছেলে যুবদল নেতা ইসলাম মোল্যার নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী বাহিনী বুধবার (২৪ এপ্রিল) আমার বাড়িতে হামলা চালায়। তখন ভাঙচুর ও লুটপাট করে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ওলিয়ার রহমান খুন হওয়ার পর থেকে লুটিয়াসহ চর দিঘলিয়া গ্রামের আরও তিন-চারটি বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তিনি আরও বলেন, অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয় ও আতঙ্কে পুরুষরা বাড়ি ঘরে ফিরতে পারছেন না, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজী, ভাংচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে। এসব মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য এলাকার শান্তি কামনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  এ বিষয়ে যুবদল নেতা ইসলাম মোল্যার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, এসব ঘটনায় থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আসামিরা পালিয়ে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। আসামিরা যতই ধুরন্দর হোক না কেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ওই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪
X