জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সূর্যমুখী আবাদে কৃষক এরশাদ মাহমুদের চমক

রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী বাগানে উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। ছবি : কালবেলা
রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী বাগানে উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া সুখবিলাস গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। উচ্চশিক্ষিত এরশাদ মাহমুদ ইউরোপের উন্নত জীবনকে পেছনে ঠেলে ১৯৮৮ ইংরেজি থেকেই করে যাচ্ছেন নানা কৃষিজ ফল-ফসল, মাছ চাষ ও বিলুপ্ত প্রাণী গয়ালসহ গৃহপালিত পশুর খামার। তার এমন ব্যতিক্রমী কৃষি ও খামার গড়ার জন্য স্বর্ণপদকসহ অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার।

রাঙামাটি কিংবা বান্দরবান যাওয়ার পথেই রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে বর্তমানে তার সূর্যমুখী আবাদ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে এবং দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সবচেয়ে বড় সূর্যমুখী বাগান গড়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। তার এই আবাদ স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যান্য কৃষকদেরও। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তিনটি স্পটে ৮০ শতাংশ বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই খামারি। সরকারের তেল ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবং অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহিত করতেই মূলত গেল ৭/৮ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুল চাষে মনোনিবেশ করেছেন বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখিতে স্থানীয় অনেকেই এই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে এবছর আবাদ করেছেন বলে জানা যায়।

তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। তার সূর্যমুখী ফুলের আকার উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আবাদকৃত ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গেল কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী আবাদ করে নিজের পরিবারের প্রয়োজনীয় তেলের চাহিদা মিটছে। এবার তিনি চাহিদার চেয়েও বেশি পরিমাণ তেল পাবেন বলে আশা করেন।

শুধু এরশাদ মাহমুদই নন, একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে সূর্যমুখীর। জানা যায়, প্রথাগত চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা। এতে সরিষাসহ তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। এ বছরও বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর। পাকা, আধা পাকা সূর্যমুখী ফুলে বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ আকার ধারণ করেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন বিস্তির্ণ কৃষি মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া দেওয়া হয়েছে। এসব বীজে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এর বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৩০০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বড়ুয়া জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপণ থেকে শুরু করে পুনরায় বীজ সংগ্রহে ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় এবার সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে। কৃষি অফিসের নানা প্রণোদনা কর্মসূচি এবং মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় বাগান গড়ে তুলেছেন পদুয়ার এরশাদ মাহমুদ। পতিত জমিকে আবাদ উপযোগী করে এই আবাদ করেছেন। তার মতো সবাই অনাবাদি জমিকে চাষ উপযোগী করে তেল ফসলের আবাদ করতে চাইলে কৃষি অফিস সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশাল্লাহ : জুয়েল

ডেঙ্গুতে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৪১০

দম্পতিকে আশীর্বাদ করতে মঞ্চে উঠে বিপদে বিজেপি নেতা

সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগ, যেভাবে আবেদন

যে নিয়মের কারণে বিপিএল খেলার অনুমতি পেলেন পিযুষ চাওলা

আপ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ৭০ হাজারের বেশি প্রবাসীর নিবন্ধন

ফের ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের দাম, শুক্রবার কততে বিক্রি হচ্ছে

ইমরান খান জীবিত না মৃত, প্রশ্ন ছেলের

শক্তি বাড়িয়ে ৮৮ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’

১০

‘খালেদা জিয়াকে জেলের ভেতর স্লো পয়জন দিয়ে মারার চেষ্টা করেছে’

১১

ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু

১২

সীমান্তে বিদেশি শুটার গান ও গুলি উদ্ধার

১৩

আমি অন্যায়ের কাছে মাথানত করার মতো লোক না : এ্যানি

১৪

একাধিক মহল নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : ফারুক

১৫

প্রতিদিন ২টি করে খেজুর খেলে কী ঘটে শরীরে? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১৬

কুয়েটে মারধরের ঘটনায় শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৭

এক ম্যাচে ১৭ লাল কার্ড, মাঠে যা ঘটেছিল (ভিডিও)

১৮

খালেদা জিয়া কেমন আছেন, জানালেন মির্জা ফখরুল

১৯

নারী ইউপি সদস্যকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী পলাতক

২০
X