চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া সুখবিলাস গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। উচ্চশিক্ষিত এরশাদ মাহমুদ ইউরোপের উন্নত জীবনকে পেছনে ঠেলে ১৯৮৮ ইংরেজি থেকেই করে যাচ্ছেন নানা কৃষিজ ফল-ফসল, মাছ চাষ ও বিলুপ্ত প্রাণী গয়ালসহ গৃহপালিত পশুর খামার। তার এমন ব্যতিক্রমী কৃষি ও খামার গড়ার জন্য স্বর্ণপদকসহ অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার।
রাঙামাটি কিংবা বান্দরবান যাওয়ার পথেই রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে বর্তমানে তার সূর্যমুখী আবাদ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে এবং দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সবচেয়ে বড় সূর্যমুখী বাগান গড়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। তার এই আবাদ স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যান্য কৃষকদেরও। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তিনটি স্পটে ৮০ শতাংশ বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই খামারি। সরকারের তেল ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবং অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহিত করতেই মূলত গেল ৭/৮ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুল চাষে মনোনিবেশ করেছেন বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখিতে স্থানীয় অনেকেই এই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে এবছর আবাদ করেছেন বলে জানা যায়।
তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। তার সূর্যমুখী ফুলের আকার উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আবাদকৃত ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গেল কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী আবাদ করে নিজের পরিবারের প্রয়োজনীয় তেলের চাহিদা মিটছে। এবার তিনি চাহিদার চেয়েও বেশি পরিমাণ তেল পাবেন বলে আশা করেন।
শুধু এরশাদ মাহমুদই নন, একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে সূর্যমুখীর। জানা যায়, প্রথাগত চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা। এতে সরিষাসহ তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। এ বছরও বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর। পাকা, আধা পাকা সূর্যমুখী ফুলে বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ আকার ধারণ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন বিস্তির্ণ কৃষি মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া দেওয়া হয়েছে। এসব বীজে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এর বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৩০০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বড়ুয়া জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপণ থেকে শুরু করে পুনরায় বীজ সংগ্রহে ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় এবার সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে। কৃষি অফিসের নানা প্রণোদনা কর্মসূচি এবং মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় বাগান গড়ে তুলেছেন পদুয়ার এরশাদ মাহমুদ। পতিত জমিকে আবাদ উপযোগী করে এই আবাদ করেছেন। তার মতো সবাই অনাবাদি জমিকে চাষ উপযোগী করে তেল ফসলের আবাদ করতে চাইলে কৃষি অফিস সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাবে।
মন্তব্য করুন