লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত : জামায়াত
সারা দেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোমবার (৬ মে) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।  তিনি বলেন, দেশে অব্যাহত লোডশেডিং ও বিদ্যুৎখাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। একদিকে প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ, অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এ জামায়াত নেতা বলেন, তীব্র গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমতাবস্থায় কুইক রেন্টালের মতো জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল এবং বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি ও সব প্রকার অব্যবস্থাপনা দূর করে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমানে গ্রামে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। কিছু সময়ের জন্য আসে আবার চলে যায়। বিদ্যুতের অভাবে সেচের পাম্পগুলো অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে পানিসেচ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষক ফসল ফলাতে পারছে না। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘলাইন ধরেও পাম্পগুলো থেকে খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্পগুলো পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎখাতে সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের কারণে বিদ্যুৎখাতে এই নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞগণ কুইক রেন্টালের বিরোধিতা করলেও সরকার সেদিকে কোনো কর্ণপাত করেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার এবং খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার জনগণের ওপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে শিল্প ও কৃষিসহ দেশের গোটা অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রভাব পড়বে। গণবিরোধী সরকার দেশের জনগণকে মেরে নিজেরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
০৬ মে, ২০২৪

রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওষ্ঠাগত জনজীবন
বেশ কয়েকদিন থেকেই সূর্যের পোড়া দহনে রাজশাহীর মানুষ ও প্রাণিকুলের জীবন ওষ্ঠাগত। প্রতিদিনই রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তামপাত্রার রেকর্ড হচ্ছে। আর এরই মধ্যে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য ওঠার পর থেকেই তীর্যক রশ্মি আর আগুন মিশ্রিত লু-হাওয়ায় মানুষের মাঝে রীতিমতো তৈরি হয়েছে নাভিশ্বাস। এই পরিস্থিতিতে যেন মানুষের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকদিন থেকেই তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকে হঠাৎ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করায় শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার পর থেকেই রাজশাহীর রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা হওয়া শুরু করে। শুক্রবারের পর থেকে রাজশাহীতে প্রায় একই ধরনের তামপাত্রা বিরাজ করায় নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে জনমনে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হয়েছে, যেন রাজশাহীতে অঘোষিত কোনো কারফিউ চলছে। বেশ কয়েকদিন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছু মানুষকে ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা গেলেও শুক্রবার থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গাছের ছায়ার নিচেও মানুষজনকে বসে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়নি। তবে রাজশাহীর রাস্তাঘাটে কিছু রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষদের অতি তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে রিকশা চালাতে কিংবা কাজ করতে দেখা গেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যক্ষেক গাওসুজ্জামান জানান, ‘মঙ্গলবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবারও (১ মে) তাপমাত্রার পারদের চেয়ে বেশি কিংবা এমন উঠতে পারে। তবে আপাতত রাজশাহীতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে তাপমাত্রা সামনে আরও কয়েকদিন এমন উত্তপ্ত থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, গত কয়েকদিন থেকেই রাজশাহীর ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ চলছে। সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তিনি আরও বলেন, এছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হিসেবে গত কয়েকদিন থেকেই রাজশাহীতে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।’ গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সোমবার (২৯ এপ্রিল) চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তামপাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’ এমন পরিস্থিতি অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ এবং শিশুরা বাড়ির সামনে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। কেউবা আবার স্বস্তি পেতে বাড়ির পাশের গাছতলায় পাটি বিছিয়ে বসেছেন। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় বিদ্যুৎ থাকছে না ৬/৭ ঘণ্টা। সকাল, দুপুর, বিকেল এমনকি মধ্যরাতেও হচ্ছে লোডশেডিং। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। রিকশাচালক মো. লিটন মিয়া বলেন, রোদের খুব তাপ। তারপরও চালাতে হচ্ছে রিকশা। না চালিয়েও উপায় নাই। একদিন কাজ না করলে আমাদের পেটে খাবার জোটবে না। তাই রোদেও কষ্ট করে রিকশা চালাচ্ছি। বাসায় গেলে দেখি বিদ্যুৎ নাই। তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে অনেক কষ্ট হয়। গৃহিণী সালমা আক্তার বলেন, রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে বাচ্চারা গরমে কান্না শুরু করে দেয়। বাচ্চাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। এভাবেই প্রতিদিন চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মনোহরগঞ্জ বাজারের মো. নাছির মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান। আমার সকল কাজ বিদ্যুৎ নির্ভরশীল। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। মনোহরগঞ্জ দারুল উলুম কেরামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জিন্নত আলী বলেন, গরমের কারণে ছাত্র/ছাত্রীদের উপস্থিতি কম। তার মধ্যে লোডশেডিং। এভাবে তাপমাত্রা চলমান থাকলে ছাত্র /ছাত্রীরা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ-৪ মনোহরগঞ্জ উপজেলার জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক নীল মাধব বনিক কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি সমন্বয় করতে এই লোডশেডিং হচ্ছে। তাপমাত্রা না কমলে ও বৃষ্টিপাত না হলে লোডশেডিং সমাধানের কোনো উপায় নেই।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ দিনাজপুরের জনজীবন
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় হঠাৎ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। একদিকে বৈশাখের তীব্র তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের জাঁতাকলে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। দিনে রাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। বিঘ্ন হচ্ছে হাটবাজার ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। দিনে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। ইরি বোরো আমনের ক্ষেতে সেচ দিতে সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা বলেন, কয়েক দিন ধরে দিনে রাতে চলছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। ক্লান্ত শরীরে রাতে ঘুমাতে গেলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসে। এরপর আধা ঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। দিনরাতে কয়েক দিন ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যুতের যাওয়া আসা। দিনে বিদ্যুৎ থাকে না তাই ভ্যাপসা গরমে ঘরে টিকে থাকাও যায় না। এদিকে গরমের তীব্রতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে দুর্ভোগে হয় আরও তীব্রতর। দিনরাত মিলিয়ে এক টানা দেড় ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে দুর্ভোগে বাড়ছে। ঘন ঘন লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে হাটবাজারে লোকসমাগমও কমে গেছে। বিপণিবিতানগুলোও থাকছে ক্রেতাশূন্য। দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম বিপুল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে সারাদেশে লোড বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হচ্ছে। এ কারণেই ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমাদের উপজেলায় ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাচ্ছি মাত্র ৫-৬ মেগাওয়াট। এই অবস্থায় লোডশেডিং দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আশা করি, দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।  বিপুল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রিড থেকে দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, এখন একটি চালু আছে আর একটি বন্ধ আছে। এ অঞ্চলে ৮৭ শতাংশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে কোনো লোডশেডিং হতো না। সেখানে আমরা ৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি, ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করতে পারি না, পিডিপির কাছ থেকে ৬.৫৬ টাকা প্রতি ইউনিট কিনে নিয়ে ৫.২৫ টাকায় বিক্রি করি। 
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আগুনে রোদ আর তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ
চৈত্র শেষে এসেছে বৈশাখ। এই সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনে আগুনে রোদ ও গরমে খাঁ খাঁ করে চারদিক। রাতেও কমছে না তাপমাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। শবিবার (২০ এপ্রিল) সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন নাজেহাল। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কথা হয় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার এক রিকশাচালক মো. খোরশেদ সঙ্গে। তিনি বলেন, গরম কেমন পড়ছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তারপরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাতে হয়। গরমের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষ অনেকে অসুস্থ হচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে গরমের তারনায় ঘন ঘন পানি খেতে হচ্ছে। আগে চায়ের দোকানে ফ্রি পানি খাওয়া যেত কিন্তু এখন চায়ের দোকানেও প্রতি গ্লাস দুইটাকার বিনিময়ে পানি কিনে খেতে হয়। সারাদিনের বিশ গ্লাস পানি খেতে হলে ৪০-৫০ টাকা লাগে। সারা দিনের আয় মাত্র তিন-চারশ টাকা। এরই মধ্যে খাওয়া খরচ ও থাকা খরচ বহন করে বাড়ি টাকা পাঠাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গরমে শুধু যে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, আয়-রোজগারও কমেছে। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশা যেমন চালানো যায় না, আরেকদিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরমের কারণে দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।  একজন বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জুবায়ের হোসেন সজল বলেন, বাইরে তো গরমের জন্য এক ঘণ্টাও থাকা যায় না। বাসায়ও গরমে নাজেহাল অবস্থা। মাথার উপর ফ্যান ঘোরে, কিন্তু সেই বাতাসও গরম। দিনের বেলা ট্যাপ থেকে যেন ফুটন্ত পানি বের হয়। একটু বৃষ্টি যে কবে নামবে সেই অপেক্ষায় আছি। শাহবাগে চায়ের দোকানদার শুভ বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে গরমের মাত্রা বেড়েছে। ফলে মানুষ ঘর থেকে দিনেরবেলা কম বের হয়। ব্যবসার অবস্থাও ভালো না। আগে প্রায় প্রতিবছরই এ সময় সারাদিন শাহবাগে মানুষ থাকত, বেঁচা-বিক্রি হতো। এখন সন্ধ্যার পর ছাড়া সারাদিন বেঁচা-বিক্রি নামমাত্র। রিকশাচালকরা ছাড়া তেমন কোনো মানুষ আসে না। তারা আসেন একটা রুটি অথবা বিস্কুট খায় এবং পানি খায় দুই-তিন গ্লাস। পানির দামও বারতি। তাই দাম নিতে হয় গ্লাস প্রতি ২ টাকা। এপ্রিলে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের তাপমাত্রা বেড়েছে ক্রমান্বয়ে। রোদের প্রখরতাও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে দুটি রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। ইতিহাসের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ। আর নয় বছরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
২০ এপ্রিল, ২০২৪

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন
পাবনার আটঘরিয়ায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। বসন্তের দিন ফুরিয়ে রুক্ষ প্রকৃতিতে এখন কেবলই সূর্যের সীমাহীন উত্তাপ। বৈশাখের পূর্ব থেকেই খরতাপে পুড়ছে দেশ। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র অসহনীয় গরমে সবচেয়ে কষ্টে আছেন দিনমজুর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রৌদ্র ও গরমের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, বাইরে কাজে বের হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জীবিকার তাগিদে উপায়ান্ত না পেয়ে তীব্র রোদেই কাজে বের হতে হয় খেটে খাওয়া মানুষদের। দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি। পারখিদিরপুর এলাকার ভ্যানচালক কালাম বলেন, আমাদের মতো গরিবদের আর গরম, মরলে কি? বাঁচলেইবা কি? জীবিকার তাগিদে সড়কে বের হতেই হয়।  উপজেলার রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের মন্তব্য প্রায় একই। বৈশাখের ২য় ও ৩য় দিনে সোমবার-মঙ্গলবার তীব্র গরমে নাজেহাল এলাকাবাসী। গত কয়েক দিন ধরেই পুড়ছে জনজীবন। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। দিনে তীব্র গরমের পর রাতেও নেই স্বস্তি। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। আগের মতো বড় বড় গাছ নেই, পুকুর নেই, খাল নেই। এসব কারণে বাতাসের সঙ্গে ময়েশ্চার বহন করে না, সবকিছু শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় গরমের তীব্রতা বাড়ছে। গরমে পানিশূন্যতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় পেশাজীবী, শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালকদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তীব্র গরমে পানিশূন্যতা কিংবা হিটস্ট্রোক এড়াতে একটানা কাজ না করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

তীব্র তাপদাহেও লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন
বগুড়ায় তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জনজীবন। টানা কয়েক দিনের তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।  মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, বগুড়ায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম।  এদিকে, তীব্র গরম ও লোডশেডিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ছায়া পেলেই সেই স্থানে দাঁড়িয়ে শরীরকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এ ছাড়া শহরে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানেও ভিড় জমিয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন অনেকে।  কাহালু থেকে শহরে রিকশা চালাতে আসা ফজলু মিয়া বলেন, ‘বৈশাখের এই তীব্র রোদের কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এত গরম যে রাস্তায় দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে মানুষ কম বের হচ্ছে। ফলে ভাড়াও কমে গেছে। বগুড়া সদরের শাখারিয়া এলাকার কৃষক রফিকুল হোসেন বলেন, তীব্র রোদে মাঠে কাজ করতে পারিনি। এজন্য ভোরে বাড়ি থেকে বের হই। রোদের তাপ বাড়ার আগেই বাড়ি ফিরে আসি। এতে ফসলের যত্ন নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে।  আহম্মদ উল্লাহ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, একে তো তীব্র গরম আর এই গরমে বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শহরের সাতমাথায় শরবত বিক্রেতা এনামুল মিয়া বলেন, রোদের যে তাপ এতে শরবত বিক্রি বেড়েছে। মানুষ ঠান্ডা পানীয় খেয়ে তাদের শরীর ও মনকে ঠান্ডা করছে। বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।  চাহিদা অনুযায়ী মেগাওয়াট না পাওয়ার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ জেনারেল ম্যানেজার মোনয়ারুল ইসলাম ফিরোজী। তিনি বলেন, আমার এরিয়াতে ৮০-৮৬ মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে। চাহিদামতো না পাওয়ায় ১৪ থেকে ২০ শতাংশ সময় লোডশেডিং হচ্ছে।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সিরাজগঞ্জে মৃদু তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ
বৈশাখের শুরুতেই মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে চলায় যমুনাপাড়ের শহর সিরাজগঞ্জের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই ভ্যাপসা গরম পড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূর্যের প্রখরতা। এতে পুরো শহরে তীব্র উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছে চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, তাঁত শ্রমিক, রিকশা শ্রমিকদের গরমে হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে। একটু কাজ করার পরই হাঁপিয়ে পড়ছেন তারা। কথা হয় সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ফল, সবজি ও কাপড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। দোকানে আসছে না ক্রেতারা। ঠিকমতো বেচাকেনাও হচ্ছে না। তার ওপর প্রচণ্ড সূর্যের উত্তাপে ফুটপাতে বসে থাকাও যাচ্ছে না। বৈশাখের শুরু থেকেই যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করাই দায়। একদিন বেচাকেনা না করতে পারলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। রিকশাচালক আমিনুল, ফরিদুল ও আবু তালেব বলেন, গরমে শহরে মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। তাই ভাড়াও ঠিকমতো হচ্ছে না। নির্মাণ শ্রমিক নজরুল ও দুলাল বলেন, এই গরমে বালু বা ইটের বোঝা মাথায় নিয়ে কাজ করা অনেক কষ্টকর। তাই শ্রমিকরা বিশ্রাম নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে কাজের অগ্রগতিও হচ্ছে না। তাড়াশ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে। এ অবস্থা আরও সপ্তাহখানেক চলতে পারে।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

ঘন ঘন লোডশেডিং, বিপর্যস্ত জনজীবন
খুলনার কয়রা উপজেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে বাইরে গিয়ে কাজকর্ম দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে ঘরে বসে থাকাও যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ যাবত তাপদাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিংও। দিনরাত মিলিয়ে নিয়ম করেই যেন ৮-৯ ঘণ্টা চলে লোডশেডিং। জানা গেছে, কয়রার অধিকাংশ এলাকায় দিনে রাতে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ থাকছে না তারাবি, সেহরি-ইফতারের সময়ও। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আসছে না। আবার ঈদের কেনাকাটাকে সামনে রেখে বাজারের ব্যবসায়ীগণও তীব্র গরমে ঠিকমতো বেচাকেনা করতে পারছেন না। কৃষকরা বলছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় সময়মতো সেচে পানি দিতে পারছে না তারা। সেচে পানি দিতে না পারলে ক্ষেতের ধান মারা যাবে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। জানা যায়, কয়রায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৯-১০ মেগাওয়াট। বর্তমানে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে ৫ মে.ওয়াট। ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের জন্য সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ না থাকায় শংকিত থাকতে হয় কর্মকর্তাদের। কয়রা এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর রহমান নামে এক চাকরিজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টির সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। গরমের সময়ও থাকে না। কখন যে থাকে, সেটাই ভাবনার বিষয়। কয়রা জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. কায়ছার রেজা কালবেলাকে বলেন, লোডশেডিং শুধু কয়রাতে না সারা দেশে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবারাহ কম হওয়ায় এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কয়রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯-১০ মেঘাওয়াট কিন্তু সেখানে পাই অর্ধেকেরও কম। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে লোডশেডিং কমে আসবে বলেও জানান।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
চট্টগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। কয়েক দিন ধরে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে বিদ্যুৎ থাকছে না প্রায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত। একবার বিদ্যুৎ গেলে আসছে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টাখানেক পর। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এদিকে এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঈদের কেনাকাটা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে নগরের বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায়। এলাকাটি নগরের ঘনবসতিপূর্ণ জনপদগুলোর একটি। এর বাইরে পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে। শহরের বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইউনিট ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়বকুণ্ড, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারীতে তিন-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ (চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চল)। একইভাবে রাঙমাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার বিতরণ বিভাগ তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তথ্য জানিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের এই বিবরণের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বলছেন ভোক্তারা। নগর ও জেলার কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন উপজেলার ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে জানান। তারা বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল দুপুরে নগরের টেরি বাজারে কথা হয় মাইশা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, আমার এই দোকান থান কাপড় ও থ্রি-পিচের জন্য বিখ্যাত। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে এখন দোকানদারি করতেই কষ্ট হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকে না বিদ্যুৎ। বিকল্প হিসেবে লাগানো হয় জেনারেটর। কিন্তু বিদ্যুতের চাপ বেড়ে যাওয়া তা নষ্টের পথে। নগরের ষোলশহর এলাকায় কথা হয় গৃহিণী আবিদা সুলতানার (৩০) সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ যায়। এক ঘণ্টা পর এসে আবার বেলা ১১টায় চলে গেছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় আসে। আবার বেলা তিনটায় যায়, আসে বিকেল ৫টায়। রাত ৮টায় যায়, সাড়ে ৯টায় আসে। কয়েক দিন ধরে এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। এতে ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।  নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রমজানের শুরু থেকে ওয়াসার পানি নিয়ে কষ্টে আছি। এখন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে লোডশেডিং। সারা দিনে ছয় থেকে আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে সারারাত জেগে থাকতে হয়। নিস্তার নেই ইফতার-সেহরিতেও। শুধু আগ্রাবাদ নয়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অধিকাংশ এলাকায় দিনে আট থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিদ্যুৎ থাকছে না সেহরি-ইফতারের সময়ও। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আসছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিস্টেম কন্ট্রোল সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ছুটির দিনে পিক আওয়ারে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গেছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে ওই সময়ে চট্টগ্রামে লোডশেডিং হয়েছে ৩৮০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া সারা দিনে কমবেশি ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা দুদিন ধরে নাজেহাল অবস্থায় আছি। জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকালও আমাদের চাহিদা ছিল সাড়ে ১২শ মেগাওয়াটের বেশি, কিন্তু আমরা পেয়েছি ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ এদিকে সপ্তাহ খানেক ধরে চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে সাত ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪
X