নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ছবি : সংগৃহীত
বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। কয়েক দিন ধরে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে বিদ্যুৎ থাকছে না প্রায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত। একবার বিদ্যুৎ গেলে আসছে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টাখানেক পর। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এদিকে এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঈদের কেনাকাটা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে নগরের বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায়। এলাকাটি নগরের ঘনবসতিপূর্ণ জনপদগুলোর একটি। এর বাইরে পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।

শহরের বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইউনিট ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়বকুণ্ড, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারীতে তিন-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ (চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চল)। একইভাবে রাঙমাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার বিতরণ বিভাগ তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তথ্য জানিয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের এই বিবরণের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বলছেন ভোক্তারা। নগর ও জেলার কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন উপজেলার ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে জানান। তারা বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে নগরের টেরি বাজারে কথা হয় মাইশা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, আমার এই দোকান থান কাপড় ও থ্রি-পিচের জন্য বিখ্যাত। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে এখন দোকানদারি করতেই কষ্ট হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকে না বিদ্যুৎ। বিকল্প হিসেবে লাগানো হয় জেনারেটর। কিন্তু বিদ্যুতের চাপ বেড়ে যাওয়া তা নষ্টের পথে।

নগরের ষোলশহর এলাকায় কথা হয় গৃহিণী আবিদা সুলতানার (৩০) সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ যায়। এক ঘণ্টা পর এসে আবার বেলা ১১টায় চলে গেছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় আসে। আবার বেলা তিনটায় যায়, আসে বিকেল ৫টায়। রাত ৮টায় যায়, সাড়ে ৯টায় আসে। কয়েক দিন ধরে এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। এতে ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।

নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রমজানের শুরু থেকে ওয়াসার পানি নিয়ে কষ্টে আছি। এখন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে লোডশেডিং। সারা দিনে ছয় থেকে আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে সারারাত জেগে থাকতে হয়। নিস্তার নেই ইফতার-সেহরিতেও।

শুধু আগ্রাবাদ নয়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অধিকাংশ এলাকায় দিনে আট থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিদ্যুৎ থাকছে না সেহরি-ইফতারের সময়ও। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আসছে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিস্টেম কন্ট্রোল সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ছুটির দিনে পিক আওয়ারে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গেছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে ওই সময়ে চট্টগ্রামে লোডশেডিং হয়েছে ৩৮০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া সারা দিনে কমবেশি ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।

বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা দুদিন ধরে নাজেহাল অবস্থায় আছি। জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকালও আমাদের চাহিদা ছিল সাড়ে ১২শ মেগাওয়াটের বেশি, কিন্তু আমরা পেয়েছি ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

এদিকে সপ্তাহ খানেক ধরে চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে সাত ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবজাতিকে বিলুপ্ত করতে কতগুলো পরমাণু বোমা লাগবে?

নভেম্বরের মধ্যে ইকসু নির্বাচনের আশ্বাস উপাচার্যের

ঢাকায় এসেছেন বিএসএফ ডিজি দালজিৎ সিং চৌধুরী

৭৩৯ ওষুধের দাম নির্ধারণ সরকারের হাতে

পুলিশের এডিসিকে ছুরিকাঘাত করা সেই ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

সিজিএসের সংলাপ / দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর দাবি

সৌরভ গাঙ্গুলী কি আসলেও ভারতের কোচ হচ্ছেন?

এক ইলিশ বিক্রি হলো ৬ হাজার টাকায়

হাইকোর্ট বিভাগে ২৫ জন বিচারক নিয়োগ

শিক্ষা খাতে চীনের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে : ইউজিসি চেয়ারম্যান

১০

ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের নতুন মোবাইল অ্যাপ ‘উমা’ উদ্বোধন

১১

আর্জেন্টাইন গায়িকার প্রেমে ভালোই মজেছেন ইয়ামাল

১২

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে : ড. ফরিদুজ্জামান

১৩

রাকসু নির্বাচন / দ্বিতীয় দিনে মনোনয়ন তুলেছেন ১৬ প্রার্থী

১৪

দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ ববি শিক্ষার্থীদের

১৫

৭ জেলায় নতুন পুলিশ সুপার

১৬

ডাকসু নির্বাচন / লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের 

১৭

ট্রাম্পের ভুল সমীকরণ, চীনের ফাঁদেই ধরা যুক্তরাষ্ট্র!

১৮

নিজ সন্তানকে কোলে নিতে আদালত প্রাঙ্গণে বাবার কান্না

১৯

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘কাজিকি’, সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে

২০
X