চৈত্র শেষে এসেছে বৈশাখ। এই সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনে আগুনে রোদ ও গরমে খাঁ খাঁ করে চারদিক। রাতেও কমছে না তাপমাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
শবিবার (২০ এপ্রিল) সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন নাজেহাল। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের।
কথা হয় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার এক রিকশাচালক মো. খোরশেদ সঙ্গে। তিনি বলেন, গরম কেমন পড়ছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তারপরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাতে হয়। গরমের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষ অনেকে অসুস্থ হচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে গরমের তারনায় ঘন ঘন পানি খেতে হচ্ছে। আগে চায়ের দোকানে ফ্রি পানি খাওয়া যেত কিন্তু এখন চায়ের দোকানেও প্রতি গ্লাস দুইটাকার বিনিময়ে পানি কিনে খেতে হয়। সারাদিনের বিশ গ্লাস পানি খেতে হলে ৪০-৫০ টাকা লাগে। সারা দিনের আয় মাত্র তিন-চারশ টাকা। এরই মধ্যে খাওয়া খরচ ও থাকা খরচ বহন করে বাড়ি টাকা পাঠাতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গরমে শুধু যে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, আয়-রোজগারও কমেছে। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশা যেমন চালানো যায় না, আরেকদিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরমের কারণে দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।
একজন বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জুবায়ের হোসেন সজল বলেন, বাইরে তো গরমের জন্য এক ঘণ্টাও থাকা যায় না। বাসায়ও গরমে নাজেহাল অবস্থা। মাথার উপর ফ্যান ঘোরে, কিন্তু সেই বাতাসও গরম। দিনের বেলা ট্যাপ থেকে যেন ফুটন্ত পানি বের হয়। একটু বৃষ্টি যে কবে নামবে সেই অপেক্ষায় আছি।
শাহবাগে চায়ের দোকানদার শুভ বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে গরমের মাত্রা বেড়েছে। ফলে মানুষ ঘর থেকে দিনেরবেলা কম বের হয়। ব্যবসার অবস্থাও ভালো না। আগে প্রায় প্রতিবছরই এ সময় সারাদিন শাহবাগে মানুষ থাকত, বেঁচা-বিক্রি হতো। এখন সন্ধ্যার পর ছাড়া সারাদিন বেঁচা-বিক্রি নামমাত্র। রিকশাচালকরা ছাড়া তেমন কোনো মানুষ আসে না। তারা আসেন একটা রুটি অথবা বিস্কুট খায় এবং পানি খায় দুই-তিন গ্লাস। পানির দামও বারতি। তাই দাম নিতে হয় গ্লাস প্রতি ২ টাকা।
এপ্রিলে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের তাপমাত্রা বেড়েছে ক্রমান্বয়ে। রোদের প্রখরতাও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে দুটি রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। ইতিহাসের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ। আর নয় বছরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন