স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদ করছে পেট্রোবাংলা
স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদ্যমান উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) হালনাগাদ করছে পেট্রোবাংলা। চলতি মাসে পিএসসির হালনাগাদ খসড়া চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ১৯৯৭ সালের পর স্থলভাগের পিএসসি আর হালনাগাদ করা হয়নি। সম্প্রতি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার পর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ২৭ বছর পর স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদ্যমান পিএসসি হালনাগাদ করা হচ্ছে। খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ প্রায় শেষ। শিগগির আমরা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠাব। তিনি বলেন, অফশোর (সাগরে অনুসন্ধানের জন্য) পিএসসির মতো অনশোর (স্থলভাগ) পিএসসিও আর্কষণীয় করা হচ্ছে। যাতে করে আমাদের অনশোরেও আইওসিগুলো (আন্তর্জাতিক অয়েল কোম্পানি) বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। জানা গেছে, গত এক দশকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত গ্যাসের উত্তোলন দিন দিন কমছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এই সময় আমদানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। বড় বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোরও মজুত ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় স্থালভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে স্থলভাগের পিএসসি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরিত্যক্ত গ্যাসকূপগুলোকে ফের খনন ও সংস্কারের (ওয়ার্কওভার) মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের ৯৮টি কূপ সাময়িক বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে উৎপাদনে আনা সম্ভব। বাকিগুলোতেও কাজ করার সুযোগ আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এজন্য পিএসসিও হালনাগাদ করে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। কিন্তু সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার চেয়ে কম সময়ের ভেতর স্থলভাগের অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। ওই কর্মকর্তা জানান, পিএসসি হালনাগাদের পাশাপাশি আকর্ষণীয়ও করা হচ্ছে। গ্যাস পেলে উৎপাদিত গ্যাসের অংশীদারত্বে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক জরিপের ভিত্তিতে উচ্চ সম্ভাবনাময়, মাঝারি সম্ভাবনাময় ও ন্যূনতম সম্ভাবনাময় এই তিন ক্যাটাগরিতে ব্লকগুলোকে ভাগ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেশীয় অনুসন্ধান কোম্পানিগুলোকে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর টেকনিক্যাল, ফিন্যান্সিয়াল ও দক্ষ মানবসম্পদের ওপর ভিত্তি করে কাজ পাওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে তিনটি রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি হলো বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, স্থলভাগে মোট ২২টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে এখনো কোনো ধরনের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়নি। খালি থাকা ব্লকগুলো হচ্ছে ১, ২এ, ২বি, ৩এ, ৪এ, ৪বি, ৫, ৬এ, ২২এ, ২২বি এবং ২৩ নম্বর। এসব ব্লকে কাজ করতে যোগ্যতম বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ কোম্পানি গঠন করে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। এ ছাড়া এ খাতের কোনো কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাজ করানোর সুযোগ রাখা হচ্ছে হালনাগাদ পিএসসিতে। স্থলভাগের গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশের স্থলভাগে প্রথম পিএসসি করা হয় ১৯৯১ সালে। এর অধীনে শেভরন বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের কাজ পায়। পরে ১৯৯৭ সালে সংশোধিত পিএসসির অধীনে কুমিল্লার বাঙ্গুরায় তাল্লো কাজ পায়। তবে কানাডিয়ান কোম্পানিকে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের কাজ দেওয়া হয় পিএসসি ছাড়াই। বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্রের ১১৩টি কূপ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। গতকাল পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এদিন এসব কূপ থেকে ১ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয়েছে। এর সঙ্গে আমদানি করা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ করে জাতীয় গ্রিডে মোট ২ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয় সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। মার্কিন কোম্পানি শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই গ্যাসক্ষেত্রের ২৬টি কূপ দিয়ে দৈনিক ৭৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে জালালাবাদ ফিল্ডের সাতটি কূপ দিয়ে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক সাড়ে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এককভাবে শেভরন সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। অন্য বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লো বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ২১ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স আটটি গ্যাসক্ষেত্রের ১৫টি কূপ দিয়ে ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো হচ্ছে সালদা, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সেমুতাং, শ্রীকাইল, বেগমগঞ্জ ও রূপগঞ্জ। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফএল) সিলেট, কৈলাশটিলা-১, কৈলাশটিলা-২, রশিদপুর ও বিয়ানীবাজার এই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের ১১টি কূপ দিয়ে দৈনিক ১১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল) পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের ৪৪টি কূপ দিয়ে দৈনিক ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। গ্যাসক্ষেত্রগুলো হচ্ছে তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদী এবং ম্যাগনামা। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রটি সবচেয়ে পুরোনো।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৬৭০ জন লোক নেবে পেট্রোবাংলা
সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। প্রতিষ্ঠানটির ১৮টি পদে অষ্টম, নবম ও দশম গ্রেডে ৬৭০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম : বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)  পদের সংখ্যা : ১৮টি  লোকবল নিয়োগ : ৬৭০ জন  পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদসংখ্যা : ১১৮টি  বেতন : ২২০০০-৫৩০৬০ টাকা (গ্রেড-৯)। বিজিএফসিএলের ক্ষেত্রে ২৩,০০০-৫৫,৪৭০ টাকা (গ্রেড-৮) পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (আইন) পদসংখ্যা : ০৭টি  বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯) পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদসংখ্যা : ৮৭টি  বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯)। বিজিএফসিএলের ক্ষেত্রে ২৩,০০০-৫৫,৪৭০ (গ্রেড-৮) পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) পদসংখ্যা : ২০২টি (মেকানিক্যাল ৭১টি, ইলেকট্রিক্যাল ৪৭টি, সিভিল ২২টি, সিএসই/আইটি/আইসিটি ১৭টি, কেমিক্যাল ২২টি, পেট্রোলিয়াম ১১টি, আইপিই ৪টি, এমএমই ২টি, ইলেকট্রনিকস ৩টি, নেভাল আর্কিটেকচার ১টি ও টেলিকম ২টি) বেতন: ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯)। বিজিএফসিএলের ক্ষেত্রে ২৩,০০০-৫৫,৪৭০ টাকা (গ্রেড-৮) পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদসংখ্যা : ৩৫ টি (জিওলজি ২০টি, জিও ফিজিকস ৭টি, কেমিস্ট্রি ৩টি, এনভায়রনমেন্ট ২টি ও মার্কেটিং ৩টি) বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯)। বিজিএফসিএলের ক্ষেত্রে ২৩,০০০-৫৫,৪৭০ টাকা (গ্রেড-৮) পদের নাম : সহকারী কারিগরি কর্মকর্তা পদসংখ্যা : ০২টি  বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯) পদের নাম : সহকারী ব্যবস্থাপক (চিকিৎসা) পদসংখ্যা : ০৩টি  বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯) পদের নাম : সহকারী ড্রিলার পদসংখ্যা : ০১টি  বেতন : ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা (গ্রেড-৯) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (প্রশাসন) পদসংখ্যা : ৭৫টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (লাইব্রেরি) পদসংখ্যা : ০১টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (আইন) পদসংখ্যা : ০১টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (অর্থ) পদসংখ্যা : ৫০টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : উপসহকারী প্রকৌশলী পদসংখ্যা : ৭৮ টি (মেকানিক্যাল ৩৬টি, ইলেকট্রিক্যাল ১৬টি, ইলেকট্রনিকস ২টি, সিভিল ১১টি, কম্পিউটার/আইটি ৩টি, অটোমোবাইল ১টি, কেমিক্যাল ১টি, পাওয়ার ১টি, এনভায়রনমেন্ট ১টি ও মাইনিং ৬টি) বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (কারিগরি) পদসংখ্যা : ০২টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সহকারী কর্মকর্তা (কেমিস্ট) পদসংখ্যা : ০১টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : সার্ভেয়ার পদসংখ্যা : ০৪ টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : ট্রেইনি ড্রিলার পদসংখ্যা : ০২টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) পদের নাম : নার্স/ব্রাদার পদসংখ্যা : ০১টি  বেতন : ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা (গ্রেড-১০) আবেদন যেভাবে : আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে ও বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
১০ মার্চ, ২০২৪

উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছে পেট্রোবাংলা
জ্বালানি খাতে বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ডলারের সংস্থান না থাকায় বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। গত জুলাইয়ে জ্বালানি খাতের জন্য মাসে ৩২০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর চার মাস অতিবাহিত হলেও কার্যত ডলার সংকট সমাধানে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং দিন দিন এলএনজি ক্রয় এবং বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছে দিন দিন দেনা বাড়ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয় বাবদ বকেয়া রয়েছে ১৮০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া দেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো থেকে গ্যাস ক্রয়ে বকেয়া রয়েছে ১৭০ মার্কিন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে উচ্চ সুদে ৫০০ মিলিয়ান ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। সুদের হার ৭ শতাংশের বেশি হবে। বিষয়টি শিগগির চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মো. আলতাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পেট্রোবাংলার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। ডলারের অভাবে আমরা বিল পরিশোধ করতে পারছি না। এজন্য একটু বেশি সুদ হলে এখন ঋণটা প্রয়োজন। সংস্থাটির অপর পরিচালক (পিএসসি) মো. শাহিনুর ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ডলারের অভাবে আমরা শেভরনসহ অন্যান্য আইওসির বিল পরিশোধ করতে পারছি না। এ মুহূর্তে ডলারের সংস্থান করা জরুরি। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে আইটিএফসি থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে গত জুলাই থেকে চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের সিনিয়র সচিব শরিফা খান। জানা গেছে, আইটিএফসি থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বৈঠক উপস্থিত সবাই একমত হয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মত পেলে আইটিএফসির সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু করা হবে। এরই মধ্যে বর্তমান বকেয়া পরিশোধ ও আগামী ছয় মাসের জন্য এলএনজি আমদানি নিশ্চিত করতে আইটিএফসির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা এখন পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। ওই বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে এলএনজিবাহী প্রথম কার্গো দেশে আসে। পরে গত পাঁচ অর্থবছরে ৪৬ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ঘনমিটার (১ হাজার ৬২৯ বিলিয়ন ঘনফুট) বা দেড় টিসিএফের বেশি এলএনজি আমদানি হয়েছে, যা দেশে এক বছরের গ্যাসের চাহিদার সমান। ২০১৮ সালের আগস্টের পর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত আমদানিনির্ভর এ জ্বালানিটি কিনতে গত পাঁচ অর্থবছরে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি (১০ বিলিয়ন ডলার) গুনতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি ব্যয়ের হিসাব পাওয়া না গেলেও এ খরচ ২৫ হাজার কোটি টাকার কম নয়। আরপিজিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি দুই উৎস দেশ—কাতারের রাশ লাফফান লিকুইফায়েড কোম্পানি (কাতারগ্যাস) এবং ওমানের ওকিউ ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওকিউটি) এবং স্পট মার্কেট থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ঘনমিটার। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ঘনমিটার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ দশমিক ১৫, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৪৫ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এলএনজি কিনতে কাতার এনার্জি, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে পেট্রোবাংলার। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করে পেট্রোবাংলা।
২৪ নভেম্বর, ২০২৩

পাইপলাইন অটোমেশনে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা
প্রথমবারের মতো গ্যাস পাইপলাইন অটোমেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। মূলত পাইপলাইন থেকে চুরি ও সিস্টেম লস ঠেকাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অটোমেশনের প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ করেছে। গ্যাস নেটওয়ার্ক অটোমেশনে ঠিকাদার নিয়োগে সংস্থাটি আগামী বছর দরপত্র আহ্বান করবে বলে জানা গেছে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তুতি নির্ধারণ করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্সকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ওই প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের কাজে প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ, ব্যয় প্রাক্কলন প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্ট প্রস্তুতের কাজ করবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। চলতি নভেম্বরে তারা রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া আইএলএফের বিল পরিশোধে ডলারের মূল্যহার নিয়ে একটি জটিলতা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত এক সভায় তা সমাধান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় খনিগুলো থেকে উত্তোলিত গ্যাসের সঙ্গে আমদানিকৃত এলএনজি মিশিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। আমদানিকৃত এ ব্যয়বহুল গ্যাস আনার পর জ্বালানি খাতে সার্বিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। এই ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাসে সিস্টেম লস বেড়ে গেছে। বছরে প্রায় ৭-৮ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। এ সিস্টেম লসের ৫-৬ শতাংশই চুরি, যার পরিমাণ বছরে ৫০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু নানা উদ্যোগের পরও কোনো অবস্থাতেই চুরি ও অপচয় কমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চুরি ও অপচয় ঠেকাতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলার প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় লিখিতভাবে জানানো হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো হলো তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড। ওই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তারা বেশ কয়েকটি রিপোর্ট তৈরি করে পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টগুলো আবার পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে পাঠায়। বর্তমানে কোম্পানিগুলোর পর্যালোচনার ভিত্তিতে রিপোর্টগুলো চূড়ান্ত করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স। বর্তমানে প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্ট, ব্যয় প্রাক্কলন রিপোর্ট প্রণয়ন এবং সিস্টেম নির্ধারণ বাকি রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের সিস্টেম লসের বেশিরভাগই চুরি। এই চুরি নানা প্রচেষ্টার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না। কেননা চুরির সঙ্গে গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত। অবৈধ গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বিতরণ কোম্পানির কর্মীদের মার খাওয়ার ঘটনাও কম নয়। সঞ্চালন ও বিতরণ সিস্টেমকে অটোমেটেড করা হলে উৎস ও গ্রাহক পর্যন্ত গ্যাসের ট্র্যাক রাখা যাবে। এর ফলে কোনো প্রান্তে ও স্থানে কতটুকু গ্যাস ব্যবহার হয়েছে বা বেরিয়ে গেছে, তা শনাক্ত করা যাবে এবং সে অনুযায়ী গ্যাস বিল তৈরি করে গ্রাহকের কাছে পাঠানো যাবে। এ ছাড়া অটোমেশন নিশ্চিত হলে অবৈধ গ্রাহকদেরও চিহ্নিত করা যাবে এবং গ্যাস উত্তোলন-আমদানি-বিতরণ-বিল আদায়ের প্রকৃত চিত্র তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে। এর ফলে গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণও কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
০৭ নভেম্বর, ২০২৩

জালালাবাদ গ্যাসে মতবিনিময় সভা পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের
সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেম লিমিটেডে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শনিবার মতবিনিময় করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। মতবিনিময় সভায় জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনজুর আহমদ চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অফিসের নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখা, যথাসময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, সব ধরনের গ্রাহকসেবা নিশ্চিতকরণ, সিস্টেম-লস সীমিত পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে বাস্তব ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন। সভায় কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জালালাবাদ গ্যাস কর্মচারী লীগের (সিবিএ) নেতৃবৃন্দ এবং জালালাবাদ গ্যাস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
০৫ নভেম্বর, ২০২৩

পেট্রোবাংলা কর্মকর্তা পড়তে গিয়ে পালালেন
উচ্চতর পড়াশোনা করতে গিয়ে পালালেন সরকারের এক কর্মকর্তা। পড়ালেখার নির্দিষ্ট সময়ের পরও কর্মস্থলে যোগ দেননি। এমনকি কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা ওই কর্মকর্তার বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা ও ইমেইলে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় পলাতক ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। পলাতক এই কর্মকর্তার নাম মো. শাহরিয়ার ফরহাদ। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে উৎপাদন ও বিপণনে কর্মরত ছিলেন। দুই বছরের বেশি সময় আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস রিও গ্র্যান্ড ভ্যালিতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে যান। পড়াশোনা শেষে চলতি বছরের মে মাসে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত যোগদান করেননি। যোগদান না করায় এরই মধ্যে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে পেট্রোবাংলা। এই কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ১ জুন পেট্রোবাংলায় যোগ দেন। একই বছরের ১ ডিসেম্বর তার চাকরি স্থায়ী হয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কালবেলাকে বলেন, দেশের বাইরে পড়তে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের পর কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার একাধিক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা শাহরিয়ার ফরহাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস রিও গ্র্যান্ড ভ্যালিতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর (এমএস) পড়তে যান। এজন্য তিনি ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২ মে পর্যন্ত দুই বছর চার মাস ছুটি নেন। ছুটির শর্ত অনুযায়ী প্রোগ্রাম শেষে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার শর্ত ছিল। তিনি তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কর্মস্থলে যোগ দেননি। ওই কর্মকর্তারা জানান, কোর্সের সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপে কর্মস্থলের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন বলে জানা গেছে। গত ৭ আগস্ট পলাতক কর্মকর্তা শাহরিয়ার ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা গঠন করে পেট্রোবাংলা। অভিযোগনামার একটি কপি অভিযুক্ত কর্মকর্তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ইমেইলও করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার গঠিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরহাদ ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যান। চলতি বছরের ২ মে প্রোগ্রাম শেষ হলেও সংস্থার চাকরিতে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শাহরিয়ার ফরহাদের ইমেইলে বক্তব্য চেয়ে মেইল করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এলএনজি আমদানির শুল্ক-কর পরিশোধ করছে না পেট্রোবাংলা
দেশের বিভিন্ন কারখানা ও বাসাবাড়ির গ্রাহক পর্যায়ে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমোন্নতিতে এই এলএনজির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি চাহিদার জোগান দিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে এই গ্যাস আমদানিও করতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষে এই গ্যাস আমদানির দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা। কিন্তু অতি সম্প্রতি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এলএনজি আমদানিতে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শুল্ক-কর পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে। সেটিও এক টাকা দুই টাকা কিংবা ১০০-২০০ কোটি নয়, ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে কোনো বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। ফলে দীর্ঘ এই সময়সহ আগের পুঞ্জীভূত অপরিশোধিত এই বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পেট্রোবাংলার কাছে এই পরিমাণ অর্থ পাওনা হয়েছে। এদিকে রাজকোষের পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে সরকার একদিকে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না, অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। অথচ দফায় দফায় তাগিদ দিয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেট্রোবাংলার এই বকেয়া আদায় করতে পারছে না। এখন এই দেনা-পাওনা নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা আশ্বস্ত করে বলছে, পর্যায়ক্রমে শিগগিরই এই বকেয়া পরিশোধ করা হবে। সেটি বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট হোক বা পেমেন্টের মাধ্যমেই হোক। সূত্র জানায়, এলএনজি আমদানি বাবদ শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ পেট্রোবাংলার বর্তমান বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে বকেয়া জমতে জমতে এই পরিমাণ বকেয়া দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে আমদানি হওয়া সর্বমোট ১১৫টি বিল অব এন্ট্রির এবং ৩৫টি আইজিএমের বিপরীতে এই বকেয়া জমেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর থেকে অদ্যবধি শুল্ক-কর বাবদ আর কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। এতে করে শুল্ক খাতে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় চিঠি চালাচালি করেও পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না শুল্ক বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, পেট্রোবাংলার কাছে দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক-কর বকেয়া হয়ে আসছে। সবশেষ গত দেড় বছরে পেট্রোবাংলা কর পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। যদি পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে এই বকেয়া মাসে মাসেও সমন্বয় করা হতো, তাহলেও এনবিআর রাজস্ব আদায় বেড়ে যেত।উপায় না দেখে ১১৫ বিল অব এন্ট্রি এবং ৩৫টি আইজিএমের বিপরীতে জমে থাকা বকেয়া পরিশোধে বারবার তাগাদা দিচ্ছে কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পেট্রোবাংলায় পাঠানো এক চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর সেকশন ৭৯ অনুযায়ী, আমদানির ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি এবং দলিলাদি কমিশনার বরাবর দাখিল করতে হবে। একই আইনের সেকশন ৮০ অনুযায়ী পণ্য চালান শুল্কায়নে প্রদেয় শুল্ক করাদি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবুও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এলএনজি আমদানির কোনো শুল্ক-কর পরিশোধ করছে না পেট্রোবাংলা। সাধারণ এলএনজি অন্যান্য পণ্য চালানের মতো খালাস হয়। এলএনজি খালাস হয়ে থাকে এফএসআরইউর মাধ্যমে। অর্থাৎ এলএনজির পণ্য চালান সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার কালবেলাকে বলেন, এলএনজি আমদানির শুল্ক-কর একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটা ধারাবাহিকভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে। আর বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট হোক আর পেমেন্টের মাধ্যমে হোক এটা পরিশোধ করা হবে। এলএনজি আমদানি সংক্রান্ত বিষয়াদি একটি চলমান প্রক্রিয়া বলেও মনে করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এলএনজি আমদানি / ডলারের খোঁজে পেট্রোবাংলা
মার্কিন ডলার সংকটের কারণে দেশে উৎপাদিত গ্যাস এবং আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। তবে গত মাস থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলার ছাড় করার পর বকেয়া বিলের আংশিক পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে গ্যাস ও এলএনজির বকেয়া বিল এবং জরিমানা পরিশোধ করা হচ্ছে। এলএনজি আনতে চলতি বছর ৭৩৪ মিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অবস্থায় দেশে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে মার্কিন ডলারের খোঁজ করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। বিষয়টি এখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মূল্যায়ন করছে। পাশাপাশি এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) থেকেও মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন উল্লেখ করে কোনো কথা বলেননি। একই বিষয়ে সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলতাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এলএনজি আনতে আমরা আইটিএফসির কাছে ঋণ চেয়েছি। বিষয়টি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য নেই। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২৩ জুলাই ইআরডি সচিব শরিফা খানের সভাপতিত্বে পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ গ্রহণ-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জ্বালানি সচিব, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট উপসচিব উপস্থিত ছিলেন। সভায় জ্বালানি সচিব বলেন, দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে পেট্রোবাংলার জন্য এ বছর বিশেষ বিবেচনায় এলএনজি আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ করলে দেশের বিদ্যামান রিজার্ভের ওপর কোনোরূপ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। একই বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানির জন্য এর আগে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এলএনজি আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেন) অনুরূপ শর্তে ঋণ নিলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তাও থাকবে। সভায় উপস্থিত অর্থ বিভাগের উপসচিব মাসুদা বেগম পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সায় দিলেও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঋণ অনমনীয় হওয়ার কারণে নন-কনসেনশনাল কমিটির মতামত নেওয়া প্রয়োজন। ওই সভায় আইটিএফসি ছাড়াও এআইআইবি এবং এনডিবি থেকে পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বিবেচনা করা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গেছে, গত মাসে এলএনজি আমদানির বিপরীতে বিল পরিশোধ করতে না পারায় অতি জরুরি এ পণ্যটি আমদানির চুক্তি স্থগিত করার কথা জানিয়েছে একাধিক রপ্তানিকারক কোম্পানি। পাশাপাশি বকেয়ার অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যুকৃত স্ট্যান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (এসবিএলসি) থেকে অর্থ আদায় করার কথা জানিয়েছে ওইসব আন্তর্জাতিক সংস্থা। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের কোম্পানি গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো (কার্গো নং-১০) এবং টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের সুইজারল্যান্ডের ব্রাঞ্চ থেকে করা দুই কার্গো (কার্গো নং-৭ ও ৮) এলএনজি আমদানি করা হলেও এখনো অর্থ পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। ওই কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক থেকে ডলার না পাওয়ার কারণে আমদানি বিল পরিশোধ করা যায়নি। এমনকি বিল পরিশোধের সময় পেরিয়ে গেলেও বিল না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটি তাগাদাপত্র দেয় এবং বিল পরিশোধের সময়সীমাও বেঁধে দেয়। বিল পরিশোধের তাগাদাপত্রে কোম্পানি দুটির একটি গানভর উল্লেখ করে পেট্রোবাংলা বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য আহ্বানকৃত দর প্রস্তাবে কোম্পানিটি অংশগ্রহণ করবে না। এলএনজি আমদানির জন্য ‘কনফার্ম নোটিশ’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা স্থগিত করা হবে। একইভাবে অন্য কোম্পানি টোটাল এনার্জিসের পক্ষ থেকে এক ইমেইল বার্তায় জানানো হয়েছে, পেট্রোবাংলা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এসবিএলসি থেকে অর্থ আদায় করা হবে। জানা গেছে, গানভর সিঙ্গাপুরের সরবরাহকৃত এলএনজির বিপরীতে বিলের পরিমাণ ৪১ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি রয়েছে ২৮ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গানভরের সরবরাহকৃত এলএনজির দাম আংশিক পরিশোধ করা হলেও টোটাল এনার্জিসের দুই কার্গো এলএনজির বিপরীতে বিলের পুরোটাই বাকি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আরও জানান, নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে লাইবরের (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অপার রেট) সঙ্গে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী যত দিন বিল অপরিশোধিত থাকবে, তত দিন দেরিতে পরিশোধের জন্য জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া জ্বালানি খাতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ গ্যাসের বকেয়া বিল সুদসহ ২৮ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৯ মার্কিন ডলার পাওনা পেট্রোবাংলার কাছে।
১৯ আগস্ট, ২০২৩
X