তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে বিদেশি ঋণ নিতে পারবে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। জেদ্দাভিত্তিক ঋণ সরবরাহকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। দেশে এলএনজি আমদানির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেট্রোবাংলার এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে জ্বালানি তেল আমদানিতে একই সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিপিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার আবেদন করলেও সেটি পর্যালোচনা শেষে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। খবর অর্থ মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আইটিএফসি অনেকটা কঠিন শর্তে পেট্রোবাংলাকে এ ঋণ দেবে। যেখানে ৬ মাসের ডেফার্ট পেমেন্টের শর্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি-সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) অতিরিক্ত ২ শতাংশ হিসাবে এ ঋণের সুদ দিতে হবে ৭ শতাংশ হারে। বর্তমানে এসওএফআর মানদণ্ড নির্ধারিত আছে ৫ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে ডলার সংকট পুরোপুরি না কাটলেও এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখা জরুরি। আবার আমদানি অব্যাহত রাখতে গেলেও এ খাতে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ করতে হবে। এ অবস্থায় এলএনজির অভ্যন্তরীণ মজুত ও আমদানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং চলমান সংকটের মুখে অভ্যন্তরীণ রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখার বিকল্প পথ হলো বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণকে অনুমোদন দেওয়া। পেট্রোবাংলার বিষয়টি তেমন বিবেচনাতেই অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে একই ধরনের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কিন্তু এরই মধ্যে বিপিসি কর্তৃক দেশে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি
হয়েছে। পাইপলাইনেও তাদের জ্বালানি তেল রয়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর বিপিসির জন্য আগেই ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে নতুন করে তাদের অতিরিক্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিবেচিত হয়নি।
এদিকে পেট্রোবাংলাকে বিদেশি ঋণ গ্রহণের অনুমোদনের তথ্য জানিয়ে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে একটি দাপ্তরিক আদেশ জারি করা হয়েছে। শাখার একজন উপসচিব স্বাক্ষরিত ওই আদেশে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, পেট্রোবাংলা কর্তৃক তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির লক্ষ্যে আইটিএফসি থেকে অর্থায়নের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রদান করা হলো। তবে আইটিএফসি থেকে অর্থায়নের এ ব্যয় কোনো অবস্থাতেই বিপিসির সঙ্গে আইটিএফসির অর্থায়ন ব্যয়ের বেশি হবে না। উপরন্তু পেট্রোবাংলার সঙ্গে আইটিএফসির নতুন অর্থায়ন চুক্তির ব্যয় হ্রাস করার বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, আইটিএফসি থেকে এর আগে বিপিসি যে ঋণ নিয়েছে, তার সুদহার ধরা হয় ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এসওএফআর+১ অর্থাৎ ৬ শতাংশ।
জানা গেছে, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়াম পণ্য বা জ্বালানি তেল আমদানিতে নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিপিসি। এ কারণে সংস্থাটি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ দাবি করেছিল। সেটি নাকচ হওয়ার পরপরই তারা ফের আইটিএফসি থেকে অনুমোদিত ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলার নেওয়ার প্রস্তাবের অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠায় অর্থ বিভাগে। একই ধরনের সংকটের কথা জানিয়ে এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাও ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ নেওয়ার আবেদন করেছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিপিসি ও পেট্রোবাংলার এ ঋণ প্রস্তাবটি নিয়ে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ বৈঠকেই ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদন ও কোন প্রক্রিয়ায় ঋণ অনুমোদন করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হয়।
মন্তব্য করুন