হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪০ এএম
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এলএনজি আমদানি

ডলারের খোঁজে পেট্রোবাংলা

ডলারের খোঁজে পেট্রোবাংলা

মার্কিন ডলার সংকটের কারণে দেশে উৎপাদিত গ্যাস এবং আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। তবে গত মাস থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলার ছাড় করার পর বকেয়া বিলের আংশিক পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে গ্যাস ও এলএনজির বকেয়া বিল এবং জরিমানা পরিশোধ করা হচ্ছে। এলএনজি আনতে চলতি বছর ৭৩৪ মিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।

এ অবস্থায় দেশে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে মার্কিন ডলারের খোঁজ করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। বিষয়টি এখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মূল্যায়ন করছে। পাশাপাশি এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) থেকেও মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন উল্লেখ করে কোনো কথা বলেননি। একই বিষয়ে সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলতাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এলএনজি আনতে আমরা আইটিএফসির কাছে ঋণ চেয়েছি। বিষয়টি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য নেই।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২৩ জুলাই ইআরডি সচিব শরিফা খানের সভাপতিত্বে পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ গ্রহণ-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জ্বালানি সচিব, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট উপসচিব উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জ্বালানি সচিব বলেন, দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে পেট্রোবাংলার জন্য এ বছর বিশেষ বিবেচনায় এলএনজি আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ করলে দেশের বিদ্যামান রিজার্ভের ওপর কোনোরূপ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। একই বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানির জন্য এর আগে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এলএনজি আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেন) অনুরূপ শর্তে ঋণ নিলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তাও থাকবে। সভায় উপস্থিত অর্থ বিভাগের উপসচিব মাসুদা বেগম পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সায় দিলেও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঋণ অনমনীয় হওয়ার কারণে নন-কনসেনশনাল কমিটির মতামত নেওয়া প্রয়োজন। ওই সভায় আইটিএফসি ছাড়াও এআইআইবি এবং এনডিবি থেকে পেট্রোবাংলার অনুকূলে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বিবেচনা করা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত মাসে এলএনজি আমদানির বিপরীতে বিল পরিশোধ করতে না পারায় অতি জরুরি এ পণ্যটি আমদানির চুক্তি স্থগিত করার কথা জানিয়েছে একাধিক রপ্তানিকারক কোম্পানি। পাশাপাশি বকেয়ার অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যুকৃত স্ট্যান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (এসবিএলসি) থেকে অর্থ আদায় করার কথা জানিয়েছে ওইসব আন্তর্জাতিক সংস্থা।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের কোম্পানি গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো (কার্গো নং-১০) এবং টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের সুইজারল্যান্ডের ব্রাঞ্চ থেকে করা দুই কার্গো (কার্গো নং-৭ ও ৮) এলএনজি আমদানি করা হলেও এখনো অর্থ পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। ওই কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক থেকে ডলার না পাওয়ার কারণে আমদানি বিল পরিশোধ করা যায়নি। এমনকি বিল পরিশোধের সময় পেরিয়ে গেলেও বিল না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটি তাগাদাপত্র দেয় এবং বিল পরিশোধের সময়সীমাও বেঁধে দেয়।

বিল পরিশোধের তাগাদাপত্রে কোম্পানি দুটির একটি গানভর উল্লেখ করে পেট্রোবাংলা বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য আহ্বানকৃত দর প্রস্তাবে কোম্পানিটি অংশগ্রহণ করবে না। এলএনজি আমদানির জন্য ‘কনফার্ম নোটিশ’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা স্থগিত করা হবে। একইভাবে অন্য কোম্পানি টোটাল এনার্জিসের পক্ষ থেকে এক ইমেইল বার্তায় জানানো হয়েছে, পেট্রোবাংলা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এসবিএলসি থেকে অর্থ আদায় করা হবে।

জানা গেছে, গানভর সিঙ্গাপুরের সরবরাহকৃত এলএনজির বিপরীতে বিলের পরিমাণ ৪১ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি রয়েছে ২৮ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গানভরের সরবরাহকৃত এলএনজির দাম আংশিক পরিশোধ করা হলেও টোটাল এনার্জিসের দুই কার্গো এলএনজির বিপরীতে বিলের পুরোটাই বাকি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আরও জানান, নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে লাইবরের (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অপার রেট) সঙ্গে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী যত দিন বিল অপরিশোধিত থাকবে, তত দিন দেরিতে পরিশোধের জন্য জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া জ্বালানি খাতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ গ্যাসের বকেয়া বিল সুদসহ ২৮ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৯ মার্কিন ডলার পাওনা পেট্রোবাংলার কাছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তবুও প্রার্থী হলেন সেই নাছিমা মুকাই 

গাজীপুরে কারখানার ১০ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

রাজশাহীতে আগুনে পুড়ে ছাই ১০ বিঘার পানের বরজ

বিয়েবাড়ি থেকে কনের পিতাকে তুলে নিয়ে টাকা দাবি

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর , এলাকায় উত্তেজনা

ঈশ্বরদীতে ফেনসিডিলসহ রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহি আটক

এমপি আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ কোটিপতি প্রার্থী : টিআইবি

রাইসির জন্য দোয়ার আহ্বান

প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা সিটির কাছেই থাকল

১০

বাংলাদেশকে লক্কড়ঝক্কড় দেশে পরিণত করেছে আ.লীগ : প্রিন্স

১১

২০৩০ সালে সাড়ে ৫২ লাখ যাত্রী বহন করবে মেট্রোরেল  

১২

পেনিনসুলা স্টিলের এমডিসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৩

ইরানের প্রেসিডেন্টের সন্ধানে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, সাহায্য করতে চায় ইরাক

১৪

সাঈদ খোকনের বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলবেন না মেয়র তাপস

১৫

কিরগিজে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার উদ্বেগ

১৬

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষকরা

১৭

‘অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার আগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন’

১৮

বিএনপি এখন জনগণের আস্থার স্থল : আব্দুস সালাম

১৯

চট্টগ্রাম নগর আ.লীগের সম্মেলন অক্টোবরেই

২০
X