রাজশাহীতে বই পড়ে পুরস্কার পেল ২২১২ শিক্ষার্থী
বই পড়ে পুরস্কার পেল রাজশাহীর ২ হাজার ২১২ শিক্ষার্থী। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মহানগরীর ৫১টি স্কুলের প্রায় ৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী বই পড়া কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এসব স্কুলের যেসব ছাত্র-ছাত্রী মূল্যায়নপর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে আজ তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ মে) রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ পুরস্কার বিতরণীতে সহযোগিতায় ছিল গ্রামীণফোন। এক বর্ণাঢ্য উৎসবের মধ্য দিয়ে চারটি পর্বে মোট ২ হাজার ২১২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৬০ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ করেন।  দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, বিশিষ্ট অভিনেতা, লেখক ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গ্রামীণফোনের সার্কেল মার্কেটিং হেড শাহিনুর রহমান এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।  এ ছাড়া অন্যান্য পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নাটোর শাখার সংগঠক অধ্যাপক অলোক মৈত্র, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, লেখক, উপন্যাসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল, বিশ্ব-পরিব্রাজক ও লেখক তারেক অণু, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ  ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সুজন এর সভাপতি ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র রাজশাহী শাখার সাবেক সংগঠক আহমেদ শফিউদ্দিন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন তার স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং এই বিশাল আয়োজনে ও পুরস্কারের বই স্পন্সরের জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, বই মানুষের মনঃস্তাত্ত্বিক বিকাশে সহায়তা করে। বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে জীবনে সার্বিক উন্নয়ন অনেকটাই সহজতর হয়। সে জন্য তিনি বেশি বেশি বই পড়তে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিগত ৪৫ বছর ধরে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের নেতৃত্বে সারা দেশে বইপড়া আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বই পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু জানা যায়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। একটি উন্নত ও সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে বই পড়ার গুরুত্ব অপিরসীম বলে উল্লেখ করেন এবং সবাইকে বইপড়ার আহবান জানান। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীসহ আগত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি আরও বলেন, একটি দেশের জাতিসত্ত্বা নির্মাণ করার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বই পড়ার গুরুত্ব আমরা সবাই যদি অনুধাবন করি তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানরা নৈতিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ে চিন্তার জায়গায় সৎ হওয়ার পরামর্শ দেন কারণ আলোকিত মানুষ হতে হলে সৎ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান। গ্রামীণফোনের সার্কেল মার্কেটিং হেড শাহিনুর রহমান তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই গ্রামীণফোন সবসময়ই তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী। এরই ধারাবাহিকতায় বই পড়ার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই মহতী উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পেরে তারা আনন্দিত বলে জানান। এদিকে আজকের উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার শিরোনামে চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আজকে ৫১টি স্কুলের ২ হাজার ২১২ জন ছাত্রছাত্রী পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ৭৫৫ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৫৭৫ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ৭২৬ জন এবং সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছে ১৫৬ জন। বিজয়ী ১৬৬০ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকের হাতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা পাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি হিসেবে মোট ১৫টি বিশেষ পুরস্কারও প্রদান করা হয়। বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০টি  মূল্যবান বইয়ের একটি করে সেট।  অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।
১০ মে, ২০২৪

২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস / নিজের মতো বই পড়ার অধিকার
বিশ্বে বহু দিবস পালিত হয়। জলাভূমি, পরিবেশ, নদী, মৃত্তিকা, পানি, স্বাস্থ্য, বসতি, পাখি, বাঘ, বন কিংবা মেধাস্বত্ব বিষয়ে। বই দিবসও এমনি। ১৯৯৫ সনে জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২৩ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ঐ বছর দিনটি উইলিয়াম শেকসপীয়র এবং ইনকা গার্সিলাসো দ্য ল্য ভেগাসহ অনেকের জন্ম ও মৃত্যুদিন। দুনিয়ার নানা দেশ নানাভাবে বই দিবস পালন করে। যদিও পৃথিবীর বেশকিছু দেশ নিজেদের মতো করে বছরে একদিন বই দিবস পালন করত। তবে ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস ঘোষণার পর দুনিয়াজুড়ে বহুজন নানাভাবে দিনটি পালনের চেষ্টা করে। একইসাথে ‘ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অন বুকস ফর ইয়াং পিপল’ দোসরা এপ্রিলকে ‘বিশ্ব শিশুতোষ বই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।  ২০২৪ সালের বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘তোমার মতো পড়’। আসলেই আমরা কি আমাদের মতো পড়তে পারি? ব্রিটিশ উপনিবেশ, পাকিস্তান উপনিবেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্যোগ, মহামারি, সবুজ বিপ্লব, দূষণ কিংবা সমাজে বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্য এবং নিরন্তর শ্রেণি প্রতিরোধ কী আমাদের পাঠপদ্ধতি ও পাঠাভ্যাসকে প্রভাবিত করে না?  আমরা চাইলেও কি আমাদের মতো করে বই বাছাই করবার স্বাধীনতা রাখি কিংবা এমন পরিস্থিতি কী চারধারে জারি আছে। কিন্তু প্রতিটি শিশু কী যুব বা প্রবীণের অধিকার আছে তার নিজের মতো করে পড়বার। বাছাই এবং পড়ার স্বাধীনতা। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, অভিভাবক, বিদ্যায়ন, মিডিয়া, বাজার কিংবা প্রবল ক্ষমতার ব্যবস্থা শিশুদের ওপর জোর করে অচেনা অজানা বইয়ের ভাণ্ড চাপিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতি ও বাহাদুরিকে প্রশ্ন করা জরুরি। প্রতিটি মানুষের তার নিজের মতো করে বই পড়ার অধিকার সুরক্ষিত হোক।  নিজে বানান করে পড়া আমার প্রথম বই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’। ছোটবেলায় পারিবারিক পাঠ্য ছিল নজরুলের সঞ্চিতা, রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা, সুকান্ত ও সুকুমার সমগ্র। তখন সবে স্কুলের গণ্ডিতে ঢুকেছি। বড় বোনের বই পড়ার বাতিক ছিল, মা’র কাছ থেকে পাওয়া। বাবার ছিল ট্রাংক ট্রাংক বই। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকার সময়ই ডারউইনের দুনিয়া কাঁপানো অরিজিন অব স্পিসিস বইটির প্রথম দিকের সংস্করণ ধরে দেখার মহাসৌভাগ্য ঘটেছিল। আলেক্সান্দার বেলায়েভের উভচর মানুষ মা পড়ে শোনাতেন দুপুরবেলার ভাত ঘুমের আগে। বিশ্ব সাহিত্য, রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি ছাড়াও ঘরভর্তি ছিল যোগব্যয়াম আর হোমিওপ্যাথির বই। মার্কস থেকে লেনিন প্রগতি প্রকাশনীর লাল নীল সাদা কালো কত কিসিমের বই আজ নামও ভুলে গেছি।  চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তে হয়েছিল দেবীপ্রসাদের যে গল্পের শেষ নেই। বসুমতী, উদয়ন, শিশু, পাতাবাহার, দেশ, বেগম, বিচিত্রা এসব সাময়িকীর পাশাপাশি দৈনিক সংবাদ তখন উল্টেপাল্টে দেখা শুরু করেছি। ঠাকুরমার সাথে রামায়ণ আর মহাভারত পাঠের আসরে গেলেও মগজ পড়ে থাকতো মরুতীর্থ হিংলাজ কি মহাপ্রস্থানের পথে। পথের পাঁচালী আর চাঁদের পাহাড়ের ভেতর কোনটা আগে শেষ করেছি খেয়াল নেই। আমাদের বোন তখন জন রীডের দুনিয়া কাঁপানো দশদিন শেষ করেছে। আমিও হাতে নিয়েছিলাম, টানেনি।  যখন জানলাম আমার নামের প্রথম অংশটি গোর্কির মা উপন্যাস থেকে নেওয়া সেখানেও হাত দিয়েছিলাম। মার হাতে তখন বিমল মিত্রের কড়ি দিয়ে কিনলাম আর বাবার ইউলিসিস। বাসায় বাংলা পঞ্জিকার চল এখনো আছে। চৈত্রসংক্রান্তির দিন ঘরদোরের পাশাপাশি বইপত্র, ট্রাংক, আলমিরা সব সাফসুতরো করা হতো। টাল টাল বই রোদে দেয়া হতো। বইয়ের সারির ভেতর উঁকি মারত নানা মাপের আচারের বয়াম। রোদ পোহানো বইগুলি ঝেড়ে মুছে রাখার সময় আমাদের বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে আসত। দেখাদেখি শেষ হতো না। ইংরেজি বইগুলো আমায় একদমই টানত না। বাবার কাছে ঐগুলোই ছিল যক্ষের ধন।  আরব্য রজনি, মহাভারত, ওডিসি আর ইলিয়াড পড়ার পর আমিও নিঃসন্দেহে আমার বোনের মতোই বইয়ের প্রেমে পড়ে যাই। চৈত্রসংক্রান্তির পরের দিন নববর্ষকে আমরা বলি ‘মাস পয়লা’। বৈশাখের প্রথম দিন ঘরের দরজায় কাঁচা আম পাতা সাজিয়ে ঝোলানো হয়, তাতে দেওয়া হয় রক্তলাল সিঁদূর। নতুন পঞ্জিকাকে কাঁচা হলুদের কষ ও সিঁদূর মাখানো হয়। বইয়ের ট্রাংক কি আলমিরা সর্বত্র তেল-সিঁদূরের ছাপ।  আমরা বড় হয়েছি ছোট্ট মফস্বল নরসিংদীতে। মোহন সিরিজ, দস্যু বনহুর আর চিত্রালী পত্রিকা পড়ত বড়রা। ঐসব তখন শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ। অধ্যাপনার পাশাপাশি বাবার ছিল চাপাতার দোকান। মুন্না টি হাউস। গ্রাম থেকে আসা আত্মীয় পরিজন যারা ঐ দোকানে আসা যাওয়া করত তারাই নিষিদ্ধ বই পড়ার অধিকার পেয়েছিল। শুধু শুনতাম রেলস্টেশনের বইয়ের দোকানে ঐসব বই বিক্রি হয়। পঞ্চম শ্রেণির পরেই আমাদেরকে বাসা পাল্টাতে হলো। বইয়ের যেমন জগাখিচুড়ি, আমাদের বাসাটাও ছিল হিন্দু-মুসলিম-বাঙালি-আদিবাসী আর নানা বয়সের এক মাঝারি বাজার। জীবনের প্রথম যেদিন রেল স্টেশনের সেই নিষিদ্ধ বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়াই, মনে হয় এক আস্ত রেলপথ আমাকে ছিঁড়েখুড়ে গেছে। টিফিনের পয়সা জমানো শুরু তখন থেকেই।  বোন আর আমি। আমাদের ছোট ভাই তখনো বইয়ের নাগাল পায়নি। প্রগতির পর সেবা প্রকাশনী। স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন রেলস্টেশনের সেই নিষিদ্ধ বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। জুল ভার্ন থেকে বারোজ, দ্য লিটিল হাউস অন দ্য প্রেইরি থেকে ড্রাকুলা, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট থেকে মার্ক টোয়েন, ফ্রাংকেনস্টাইন থেকে বারমুডা ট্রায়াংগল। আমাদের বাসায় কখনোই পাঠ্যবইয়ের ভেতরে লুকিয়ে বা আলাদা মলাট মেরে কোনো বই পড়তে হয়নি। এমনকি বয়ঃসন্ধিকাল ও শারীরবিদ্যার বইগুলোও সযতনে আমাদের পড়তে দেওয়া হয়েছে। লোলিটা, প্রজাপতি, বিবর বইগুলো যখন পড়েছি তখন হুমায়ূন আহমেদ, শীর্ষেন্দু, সমরেশ, বুদ্ধদেব, সুনীল আর মিলনের ভরা জোয়ার।  এমনও হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদের নতুন কোনো বই বন্ধুরা ভাড়া দিয়ে পড়ে আবার দোকানে জমা দিয়েছি। পরপর চিনতে শিখি হুমায়ুন আজাদ, হাসান আজিজুল হক, মাহমুদুল হক, শওকত আলী, শওকত ওসমান, সেলিনা হোসেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, দেবেশ রায়, দ্বিজেন শর্মা, আবুল বাশার, প্রবীর ঘোষ, সত্যজিৎ রায়, সৈয়দ শামসুল হক, জীবনানন্দ থেকে সিকদার আমিনুল হক। বিনয় মজুমদার থেকে পুর্নেন্দু পত্রী, শংখ ঘোষ কি জয় গোস্বামী। বুঝতে শিখেছি প্রেমেন্দ্র মিত্র, উপন্দ্রে কিশোর, বুদ্ধদেব বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, জসীমউদদীন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ- এরা অবশ্য পাঠ্য।  বাবার ছিল অভিধান সংগ্রহের নেশা। তখন শুধু বই রাখার জন্য আমাদের নতুন দুটি স্টিলের আলমিরা বানানো হয়েছে। আগের দুটি বাঁশের শেলফ সব মিলিয়ে ভাইবোনদের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে আমরা চালু করি ‘সুপাসো পাঠাগার’। পিশিমনির বাড়িতে, সুনামগঞ্জের বলরামপুরে কংকাবতী পাঠাগারটির বয়স ছিল মেলা। আমাদেরও বেশকিছু পাঠক হয়েছিল। বাবার মতো আমার বোনও যখন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন আমার পরিচয় ঘটে টলস্টয়, কাফকা, সার্ত্রে, জর্জ ওরওয়েল, কামু, হেমিংওয়ের সাথে। যদিও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমি তখন চারু মজুমদার আর আদিবাসী জীবন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উঠি। জীবনে প্রথম সমাপ্ত রচনাবলির নাম ‘বেগম রোকেয়া’।  আমরা বড় হয়েছি নানা মাপের, নানা কিসিমের বইয়ের ভেতর দিয়ে। আদর্শলিপি থেকে শুরু করে নামতা। কয়েক পাতার চ্যাপ্টা মাপের বই। স্কুলের বইগুলোর মাপের সাথে অন্য বইয়ের মিল ছিল না। পঞ্জিকাটি আবার অন্যরকম। অভিধানগুলোর সাথে কৃষ্ণের শত নাম, খনার বচন কি পাঁচালী বইগুলোর শরীর স্বাস্থ্যে কতই না অমিল। গীতা, বেদ, বাইবেল, কোরান শরীফ কি ত্রিপিটক গ্রন্থগুলোর আলাদা মর্যাদা। লাল সালু কাপড়ে মুড়িয়ে ঘরের সবচে পবিত্র স্থানে এদের স্থান। স্নান করে বাসী কাপড় পাল্টিয়ে কাঠদানিতে নিয়ে এসব পড়তে হতো। যাতে পা না লাগে, থুথু না ছিটকে পড়ে এমনতর কত সাবধানতা! তাবিজের মতো ছোট্ট কোরান শরীফ, তালপাতায় লেখা পুঁথি আর বিশাল আকারের মানচিত্রের বইগুলো দেখে বইদেখা বিষয়ে প্রথম জ্ঞান হারাই।  বাবা চালু করেছিলেন বই উপহারের, বিয়ে কি জন্মদিন বা কোনো অনুষ্ঠানে। খুব কাছ থেকে খেয়াল করেছি কেউ তা মন থেকে মেনে নেয়নি। বেলা দে’র গৃহিণীর অভিধান বইটি যখন বাসায় প্রথম আসে, তখন আশপাশের অনেকেই বাসায় ভিড় জমাতে শুরু করে। তো বই আর বই। এভাবেই আমরা বড় হয়েছি। বাংলাদেশের এক বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাকরণে।  আমাদের একবিন্দু অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি, বইয়ের দুনিয়া শরীর-মাংস-মজ্জার এক জীবন্ত চলমানতা। খুব বেশিদিন হয়নি দুনিয়া ভার্চুয়াল বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। এখন বইয়ের দুটি ধরন। পাতা ভরা বই আর ভার্চুয়াল বই। অনেকে বলেন ‘সফট আর হার্ড কপি’। ভার্চুয়াল বইগুলো আবার ‘ই-বুক’ নামেই পরিচিত। সময়ের চাপে আমারও এমনতর বেশকিছু বইয়ের রসদ আছে। কিন্তু ভার্চুয়াল বইয়ের সাথে কাঁচা হলুদ কি রক্তলাল সিঁদুরের কোনো ওঠাবসা নাই। ইঁদুর-ছারপোকার যন্ত্রণা নাই। ময়লা সাফসুতরোর টালমাটাল নাই। আমাদের অনেক বই দাদুর ছিল, বাবার হাতে এসেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বইয়ের এই বিচিত্র যাত্রাপথ কোনোভাবেই কী ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সম্ভব?  ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বইয়ের অন্য মানে, অন্য ব্যাকরণ। বইয়ের স্বভাব ও আচরণ সেখানে ভিন্ন। লেখক, প্রকাশক, পরিবেশক, ক্রেতা, পাঠক সব মিলিয়ে বই ধরে রেখেছে পেশা ও উৎপাদনের এক জটিল সমাজ। এ সমাজে সকলে সকলকে চেনে না। কার বাঁশ বাগানের বাঁশ কাগজকলে যায়, রঙের কারখানায় কার ঘাম ঝরে, কে বই বাঁধাই করে, কে থাকে রাতভর ছাপাখানায় এসব খবর কে রাখে? একটি বই তো আর কেবল লেখক আর পাঠকের একতরফা সম্পর্ক নয়। বিস্তর মানুষের ঘাম আর স্মৃতি আখ্যান নিয়ে একটি বইয়ের জন্ম হয়। আমরা কি দুই মলাটের ভেতর কাগজের পাতায় ছাপানো অক্ষরকেই কেবল বই হিসেবে জানি? কোনোভাবেই নয়। আমাদের কাছে বই বিদ্যা ও জ্ঞান বহন করে। আর তাই বই পায়ে লাগলে আমরা তার কাছে ক্ষমা চাই, সালাম জানাই।  শৈশবে বইয়ের ভেতর বিদ্যাপাতা নামে একপ্রকার ফার্ন গাছের পাতা রাখতাম। এসব পাতা রাখলে নাকি বইয়ের জ্ঞান বিদ্যাপাতার ভেতর দিয়ে মগজে চলে আসে। এভাবেই বিদ্যা জীবন্ত থাকে গাছের পাতা আর বইয়ের পাতার রসায়নে। বই জীবন্ত থাকে বইয়ের পাঠকের ভেতর দিয়ে। পাঠকের নানা সময়ের স্মৃতিগন্ধ, ঝাঁঝ, রক্ত, সাহস লেগে থাকে বইয়ের পাতায় পাতায়। নিজের মতো করে বই পড়বার মতো তৎপরতা জাগিয়ে রাখি আসুন, চারধারে, নিজের ভেতর।  পাভেল পার্থ: লেখক ও গবেষক  
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস আজ
সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত উক্তি ‘বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না।’ এরপরও কমে যাচ্ছে বই পড়া। বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের মধ্যে ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইলন মাস্ক, ড্যান গিলবার্ট, আর্থার ব্ল্যাঙ্ক, ডেভিড রুবেনস্টাইন, জেফ বেজোস সবাই বই পড়ায় প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন, এখনো করেন। তাই বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল ইউনেস্কোর উদ্যোগে ‘বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস’ পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উৎসবের মতোই ছিল বইপ্রেমীদের কাছে। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী কয়েকদিন ধরে কর্মসূচি থাকত। তবে চলতি বছর সেসব কর্মসূচি হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আকারে, অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে। গতকাল পর্যন্ত দিবসটির প্রতিপাদ্যই নির্ধারণ হয়নি। জানা গেছে, বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যেখানে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিত, সেখানে এবারের কর্মসূচি একদিনের। দিবসটি উপলক্ষে আজ (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গ্রন্থাগার মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ প্রধান অতিথি এবং ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন। অনুষ্ঠানে পেপার প্রেজেন্টেশন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুরও উপস্থিত থাকবেন। তবে ইউনেস্কো থেকে কোনো প্রতিপাদ্য নির্ধারণ না করে দেওয়ায় এবারের প্রতিপাদ্য কী হবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তারা। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (প্রচার, প্রকাশনা ও ম্যাগাজিন) মোহাম্মদ ইনামুল হক বলেন, বই থেকে শিক্ষার্থীরা সরে যাচ্ছে। তাদের বইমুখী এবং আলোকিত সমাজ গড়তে প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। দিবসটি উপলক্ষে এবার ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন কোনো কর্মসূচি রাখেনি। জানতে চাইলে কমিশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. তাজউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করতাম। তবে এবার তা হচ্ছে না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দাপ্তরিক কর্মকর্তা তাহির মোহাম্মদ আসিফ বলেন, আজ বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ঘরোয়া আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এবার তা হচ্ছে না। জানতে চাইলে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আরিফ চৌধুরী শুভ বলেন, যারা পাঠাগার করতে আগ্রহী হন, সারা বছর ধরে আসা সে তালিকা অনুযায়ী প্রতি বছর এই দিনটায় পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়। এই দিন উদ্বোধনকৃত পাঠাগারগুলোতে সামর্থ্য অনুযায়ী বই দেওয়া হয়।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

‘নামাজ শিক্ষার বই’ বিক্রি করতে গিয়ে বাসচাপায় প্রাণ হারাল শিশু
রাজধানীর গুলিস্তানে দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে মো. সুমন (৮) নামে এক শিশু হকার নিহত হয়েছে। সুমন বিভিন্ন বাসে নামাজ শিক্ষার বই বিক্রি করত।  বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গুলিস্তান সার্জেন আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু সুমনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা জানিয়েছে, নিহত সুমন শেরপুর জেলার নকলা থানার পাইকশা গ্রামের আব্দুল সামাদের ছেলে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকত সে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা কমিউনিটি পুলিশ সদস্য বাবু বলেন, ‘নিহত শিশুটি বিভিন্ন গাড়িতে নামাজ শিক্ষার বই হকারি করে বিক্রি করত। আজ বিকেলের দিকে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে একটি বাস পেছন দিকে ব্যাক করছিল। তখন দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয় শিশুটি। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, সে আর বেঁচে নেই।’ ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’
০৪ এপ্রিল, ২০২৪

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ব্র্যাক ব্যাংকের বই উপহার
কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সহকর্মীদের মাঝে নারী নেতৃত্ব-দক্ষতা উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন বিকাশের লক্ষ্যে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা আয়োজন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এতে অংশ নেন ব্যাংকের বিভিন্ন ডিভিশনের নারী-পুরুষ সহকর্মীরা। ব্যাংকের এইচআর আয়োজিত সেশনটিতে সময় দেওয়ার জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি থ্যাঙ্কিং ইউ নোটের পাশাপাশি নেতৃত্ব-গুণাবলি বিকাশের ওপর লিখিত একটি বই উপহার দেওয়া হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব হিউম্যান রিসোর্সেস আখতারউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা সহকর্মীদের সফলতার জন্য সহায়তা দিয়ে ক্ষমতায়ন করতে বিশ্বাসী। গঠনমূলক আলোচনার সুযোগের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক বই উপহার দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ক্রমাগত শিক্ষা ও উন্নতির সংস্কৃতি গড়ে তুলে নারীর ক্ষমতায়ন করা আমাদের লক্ষ্য।
০৪ এপ্রিল, ২০২৪

ভ্যান গাড়িতে বই বিক্রি করছেন মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ৮৭ বছর বয়সে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও দেশ গড়ার লক্ষ্যে ভ্যানগাড়িতে ব‌ই নিয়ে ছুটছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মুক্তিযুদ্ধ করতে শক্তি ও সাহস অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বিহারিপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধা এনছান আলী খান ১৯৩৬ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল গনি খান ছিলেন পেশায় একজন কৃষক। এনছান আলী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কাফিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের পুলিশবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালির উপরে। সেই সময় ১৯৭১ এর রণাঙ্গনে মুক্তিকামী সৈনিক ২ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন হায়দার আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এনছান আলী খান। ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে অস্ত্র হাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। পুলিশে কর্মরত অবস্থায় সোনারগাঁও, কাচপুর, মুগ্ধাপাড়া, আদমজী জুট মিল সংলগ্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশ রক্ষায় ঢাকা সারদা পুলিশ লাইনে জীবনকে বাজি রেখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী বর্তমানে বই বিক্রি করছেন ভ্যান গাড়িতে। ঝুপড়ি ঘরে করছেন জীবনযাপন। জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে এসেও ৮৭ বছর বয়সে স্বপ্ন দেখে আগামী দিনগুলোর। মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী বলেন, আমি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে এখন ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাচ্ছি। সম্মানী ভাতা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভ্যান গাড়িতে বই বিক্রি করি মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ইসলামী শিক্ষার দিনের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সেজন্য আমি বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ভ্যান গাড়িতে করে বিনা লাভে স্বাধীনতার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ বিভিন্ন রকমের বই বিক্রি করতেছি। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।  তিনি আরও বলেন, জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। ভ্যান গাড়ি এখন আর যেন চলছে না। দুই পায়ে দেখা দিয়েছে ব্যথা। পাড়া মহল্লায় ভ্যান গাড়ি নিয়ে বই বিক্রি করতে অনেক টা কষ্ট হচ্ছে।  এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমি বাড়ি ঘর চাই না। সরকার আমাকে একটি দোকান ঘর দিলে ভ্যান গাড়িতে নয় দোকানে বসে বই বিক্রি করতাম। আমি বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।
২৪ মার্চ, ২০২৪

বাংলা ভাষায় ব্যাংকাসুরেন্সের প্রথম বই ‘বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স’
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তায় এবং একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে বিমার বহুমুখী ভূমিকা রয়েছে। বিমা খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে বিপণন ব্যবস্থা বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে করপোরেট এজেন্ট হিসেবে ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিপণনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা বিক্রয়ের এক অভিনব পদ্ধতির নাম ব্যাংকাসুরেন্স।   ব্যাংকাসুরেন্সের মাধ্যমে ব্যাংক ও বিমাকারীর যৌথ প্রচেষ্টায় গ্রাহকরা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য বিমা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশের ব্যাংকগুলো নিজস্ব পণ্যের পাশাপাশি বিমাপণ্যও বিক্রি করে এবং বাংলাদেশেও এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের স্বনামধন্য বিমা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত মো. মাহমুদুল ইসলাম তার নিয়মিত লেখনী ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিমা শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স’ বইটি তার লেখা ১০ম বই।  বইটির লেখক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষায় প্রথম ব্যাংকাসুরেন্সবিষষক বই ‘বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স’। এই বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যাতে ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্সে সম্পৃক্ত কর্মী-কর্মকর্তারা উপকৃত হবার পাশাপাশি যারা ব্যাংকাসুরেন্সে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য বিশেষ সহায়ক হয়।  এ ছাড়াও বইতে বিশেষ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, যাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যাংক ও বিমা কর্মকর্তা উভয়ে নিজ নিজ অবস্থানে পেশাগত সাফল্য দেখাতে পারে। লেখক বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স’ সবার সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই। 
১১ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের বই কেজিদরে বিক্রি করেন প্রধান শিক্ষিকা
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। এ ছাড়া বিনামূল্যে দেওয়া সরকারি বই বছর শেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে কেজিদরে বিক্রি করেন ওই শিক্ষিকা।   জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার ৯৫ নম্বর আদমজীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা বেগম। তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অগোচরে পরিচ্ছন্ন কর্মীর বেতন দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১২০ টাকা করে আদায় করেন। সরকারি বেতনভুক্ত একজন দপ্তরি থাকার পরেও আরেকজন পরিচ্ছন্ন কর্মী রেখেছেন তিনি। তার বেতন দেওয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বছর শেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরনো বই ফেরত নিয়ে মজিবুর নামে একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে কেজি দরে বিক্রি করেন। বই কেনার বিষয়টি ব্যবসায়ী মজিবুর স্বীকার করেছেন।   অভিভাবক ইলিয়াছ বলেন, প্রধান শিক্ষিকার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাই অপাতত আমার সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছি না। স্কুলটি সরকারি হলেও টাকা দিতে হয়।   জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা বেগম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে বই বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আর টাকা নেওয়া হবে না। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিপি বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষিকা টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানতে পেরে সভা ডেকেছি। সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।     নারায়ণগঞ্জ জেলা  শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় বা পুরোনো বই ফেরত নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১১ মার্চ, ২০২৪

সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
রংপুরের পীরগাছায় ১১ মণ সরকারি বই বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ ছাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ ভাঙারি মালামাল ক্রেতা সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।  বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানাহাট এলাকায়। পরে ওই দিন রাতেই বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দুলালকে বাদী করে একটি মামলা হয়।  মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম দুলাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাকে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ডেকে এনে মামলার বাদী করেছেন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভালো। উনি যদি পরে মামলাটি তুলে নিতে বলেন তাহলে তিনি তুলে নেবেন। এ বিষয়ে জানতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকারের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।  এর আগে, বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে পাওটানাহাটে একটি ভাঙাড়ি দোকানে বিক্রির জন্য সাইফুল ইসলাম ভ্যানে করে দুই বস্তা বই নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ভ্যান থেকে কিছু বই পড়ে গেলে বইগুলো দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে বস্তা খুলে দেখেন সেগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সালের নতুন বই। এ সময় স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি বইগুলি দক্ষিণ ছাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলাম মুকুল ও তার স্ত্রীর নিকট থেকে ২০ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছেন। পরে স্থানীয়রা থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বইসহ সাইফুল ইসলামকে থানায় নিয়ে যায়। সাইফুল ইসলাম উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের দামুশ্বর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কিসামত ছাওলা গ্রামের আমান আলী মুহুরীর ছেলে।
০৯ মার্চ, ২০২৪
X