৯০০০ টাকার খাম ৩ লাখে বিক্রি করলেন ছাত্রলীগ নেতা
অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছেই না চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বারবার আসামির কাঠগড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এবার তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয় ও হুমকি দিয়ে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে মোট ৩ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী। যাদের কাছ থেকে খাম বিক্রি বাবদ আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। যার প্রকৃত মূল্য ৯ হাজার ৬০০ টাকা।  তবে সভাপতি ও সম্পাদকের এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত হতে চান না বাকি ছাত্রলীগের পদধারী কেউই। তাই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়ে উল্টো হামলার শিকার হতে হয়েছে তাদের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুই ছাত্রলীগের কর্মী। শুধু এ দুজনই নয়, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানানোর ঘটনায় ঘটেছে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।  বৃহস্পতিবার (৯ মে) পর্যন্ত অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।  তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাস মল্লিক সবুজ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাদের পদ থেকে সরাতেই এমন মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে।  জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে আরেকটি গ্রুপের। এই ঘটনায় ১০ জন আহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন দুজন। তাদের অবস্থা গুরুতর।  আহতরা হলেন, ইংরেজি ১ম বর্ষের জাবের বিন জাফর, ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ হোসেন সাবের, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রিয়াজ উদ্দীন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আবদুল মাজেদ ফয়সাল, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের উপবিজ্ঞান প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র মাহিবি তাজোয়ার, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের উপপাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক ও ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ছাত্র এরফান আলম ও আমিন ফয়সাল বিদ্যুৎ।  সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের আহত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের সাধারণ সম্পাদক জনি, ইসতিয়াক হোসেন ও মো. মিজান।  সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নব দেব বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করে আসছে। বর্তমানে অনার্সে ভর্তি চলছে। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী থেকে একটি খাম বিক্রি বাবদ ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড নিতে হলে প্রত্যেকটি থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন সভাপতি-সম্পাদক। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যেন কোনো চাঁদাবাজি না করা হয়। এই সব নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আমরা প্রতিবাদ করে আসছি। আজকেও (বৃহস্পতিবার) একজন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক ১০০ টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমরা প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।  অর্নব দেব আরও বলেন, শুধু আজ নয়, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে এমন চাঁদাবাজি তারা দীর্ঘদিন ধরেই করছেন। এমন ঘটনার প্রতিবাদে চকবাজার থানা ও কোর্টে আমরা মামলাও করেছি। আজ যখন সাধারণ শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা হয় তখনই আমরা প্রতিবাদ করি।  বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজির পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্য, টেম্পোস্টেশন ও টং দোকান থেকেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণে চাঁদাবাজি করত বলে অভিযোগ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম মনিরের।  তিনি বলেন, এসব চাঁদাবাজি করে কলেজ সভাপতি মাহাদুল করিম সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। তাদের দুই জন এতটাই বেপরোয়া যে, তাদের কাছে সবাই অসহায়। তারা একটি কলেজে কীভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য ৩ টাকা দামের খাম ১০০ টাকা আদায় করছে! তবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এই কারণে আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা চাই এই ধরনের মানুষ যেন ক্যাম্পাসে আর না আসে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে। আমরা চাঁদাবাজি চাই না।  ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছে জোর করে খাম বিক্রি করে গেল ৭ দিনে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল সাইমন।  তিনি বলেন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক সিন্ডিকেট করে ভর্তি কার্যক্রমের ফাইল বিক্রি করছে। একটি খামের জন্য ১০০ টাকা চাওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন সাবেরের ওপর গেল কয়েকদিন আগে হামলা করে সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় তার চোখের ওপরের অংশ জখম হয়। আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সে সুস্থ হয়ে আজ ক্যাম্পাসে আসে। আজও তার ওপর হামলা করা হয়। আজ তার কানই ফাটিয়ে দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।  তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই খাম বিক্রি বিষয়টি সভাপতি ও সম্পাদকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করেন হাবিব উল্ল্যাহ রিয়াদ ও মমিনুল ইসলাম নামে দুই ছাত্রলীগ নেতা। প্রত্যেকটি ছাত্রকে তারা ভয়ভীতি ও হামলা-মারধরের হুমকি দিয়েই এই টাকা আদায় করছে। আমিসহ আমাদের কিছু ছাত্রলীগ সহকর্মী এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানাই এবং তাদের সঙ্গ ছেড়ে দিই।  তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ। তিনি বলেন, গেল এক মাস ধরে আমাকে ও সভাপতিকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কলেজে সভাপতি মাহমুদুল করিমের পোস্টার, ব্যানার ছিল। কিন্তু সেই পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলা হয়েছে। কলেজের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, টেম্পু স্টেশন ও টং দোকানসহ কোনো জায়গা থেকেই আমরা চাঁদাবাজি করি না। এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের হেয় করতে চাচ্ছে তারা। আজ বিনা-উষ্কানিতেই তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।  এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমকে কয়েকবার ফোন করলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।  তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থাকার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদ কবির। তিনি বলেন, পূর্বের কিছু ঘটনার জের ধরেই চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের অনুসারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ করেননি।
২ ঘণ্টা আগে

চলতি মাসেই উদ্বোধন হবে টিসিবির পণ্য বিক্রি
চলতি মাসেই এক কোটি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।  মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর বারিধারা পার্কে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ কথা বলেন। সারা দেশে মে মাসের জন্য টিসিবির এক কোটি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, প্রত্যেক কার্ডধারী ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল ও ১০০ টাকা লিটার দরে ২ লিটার সয়াবিন বা রাইসব্র্যান তেল কিনতে পারছেন। টিসিবির কার্ডধারীদের পণ্য কেনার তালিকায় চিনি ও পেঁয়াজের মতো পণ্যও থাকলেও এ দফায় এসব পণ্য বিক্রি করছে না টিসিবি। এদিকে টিসিবি জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী পরিবেশকরা টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ সময় নিজ নিজ এলাকার পরিবেশকদের দোকান বা নির্ধারিত স্থান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা।   অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। আরও উপস্থিত ছিলেন টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আরিফুল হাসান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন।
০৭ মে, ২০২৪

চাহিদা বাড়ায় বিক্রি হচ্ছে নকল খাবার স্যালাইন, গ্রেপ্তার ৩
চলমান তাপপ্রবাহে অনেক কিছুর সঙ্গে বেড়েছে খাবার স্যালাইনের চাহিদাও। এ সুযোগে একটি চক্র নকল খাবার স্যালাইন তৈরি করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছিল দেশজুড়ে। বিভিন্ন ফার্মেসিতে নকল এসব পণ্য বিক্রি ছাড়াও ‘সাধু সেজে’ বিনামূল্যে বিতরণ করছিল সাধারণ মানুষের মাঝেও। তবে গোয়েন্দাদের চোখ এড়ায়নি এই চক্র। শুক্রবার (৩ মে) রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের সদস্যরা। গ্রেপ্তার তিনজন হলো- সজিব, হৃদয় ও শামসুল। তাদের কাছ থেকে দুই হাজার ৮০০ প্যাকেট নকল স্যালাইন, সাত কার্টন টেস্টি স্যালাইন এবং স্যালাইন তৈরির বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে। শনিবার (৩ মে) ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মানুষের এ চাহিদার কারণে এই চক্রটি ১২ বছর ধরে রাজধানীতে নকল খাবার স্যালাইন তৈরি বিক্রি করে আসছিল। এগুলো শুধু চিনি ও লবণ ব্যবহার করে নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হতো। তিনি বলেন, দাবদাহে ওরস্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। তা ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদেরও এ স্যালাইন দরকার। এসব বিষয় পুঁজি করে এ চক্র রাজধানীতে নকল স্যালাইন তৈরি করছিল। এরা এসএমসি স্যালাইন ব্র্যান্ডকে নকল করে এনএমসি লিখে মোড়ক বানাত। টেস্টি স্যালাইনের মোড়কে লিখত ‘টেষ্টী’। তবে প্যাকেটের রং, সাইজ ও বক্স দেখে বোঝার উপায় ছিল না এসব প্যাকেট আসল নাকি নকল। ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে, এরা কোথায় কোথায় এসব স্যালাইন সরবরাহ করেছে বা এদের ক্রেতা কোন কোন ফার্মেসি। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, নোংরা পরিবেশে শুধু চিনি আর লবণ দিয়ে তৈরি এসব স্যালাইনের পানি পান করলে পানিশূন্যতা দূর করার বদলে শরীরের ক্ষতি হবে বেশি। তা ছাড়া প্যাকেটগুলোও নিম্নমানের এবং এগুলো ফুডগ্রেডের নয়।
০৪ মে, ২০২৪

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করতেন আ.লীগ নেতা
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির দায়ে দুলাল পাটোয়ারী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভবিষ্যতে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করবে না শর্তে মুচলেকাও দিয়েছেন তিনি। এ সময় রামগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দুলাল পাটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। তিনি উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের মৃত ইব্রাহিম পাটোয়ারীর ছেলে। জানা যায়, ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা বিল থেকে ফসলি জমির মাটি কেটে দুই শতাধিক পুকুর খনন করে আল মদিনা ও জেবিএম ইটভাটায় মাটি নেওয়ার খবরে গত এক সপ্তাহ থেকে অভিযান চালায় রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।  পরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় দেহলা বিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. শারমিন ইসলাম ও রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান। অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায় মাটি ব্যবসায়ীরা।  রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্থানীয় ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিলুকে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং উক্ত বিলের মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। পরদিন শুক্রবার (৩ মে) আবারও বিলে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার প্রস্তুতিকালে খবর পায় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ও রামগঞ্জ থানার ওসির সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হয় রামগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হেলাল হোসেন। বিকেল ৫টায় ঘটনাস্থল থেকে একটি ভেকু ও নিষিদ্ধ ট্রলি জব্দ করা হয়।  রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. শারমিন ইসলাম জানান, আগের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে না পেয়ে আমরা বিলে মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে আবারও মাটি কাটার প্রস্তুতি নিলে ঘটনাস্থল থেকে একটি ভেকু মেশিন জব্দ করি এবং মাটি ব্যবসায়ী দুলাল পাটোয়ারীকে নগদ ৩ লাখ টাকা জরিমানা করি। এ সময় মুচলেকা দিয়ে সাময়িক ছাড়া পায় এ ব্যবসায়ী।
০৪ মে, ২০২৪

কুকুর বিক্রি করে আয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা
দিনাজপুর সদরে বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার দিয়েছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে একজন যুবক। বিদেশি বিভিন্ন জাতের কুকুর পালন করে করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। সেই খামার থেকে কুকুর বিক্রি করে মাসে আয় করছেন লাখ টাকারও বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা কুকুর সংগ্রহ করছেন তার খামার থেকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে দুই কিলেমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউজ’ নামে এ কুকুরের খামার। খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের কুকুর। সোহাগের কুকুরের খামার দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে অনেক মানুষ। কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। খামারের শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ ভাব এদের। তাদের নির্দেশ মতো খেলা করছে, ছোটাছুটি করছে। জাহিদুল ইসলাম সোহাগ কালবেলাকে বলেন, বছরখানেক আগে শখের বশে সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করি। প্রথমে তিনটি ও পরে সাতটি বাচ্চার মাধ্যমে ভাগ্য খুলে যায়। পরে অনলাইনের মাধ্যমে শুরু করি কুকুর বিক্রি। খামারে আমেরিকান লাসা, টয় কোরিয়ান, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৬৫টি কুকুর রয়েছে।  তিনি বলেন, প্রকারভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হয়। স্থানীয় যুবক রনি নামে একজন বলেন, কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। সোহাগ ভাই এবং তার লোকজন যা বলে কুকুরগুলো তাই শুনে। চুপ থাকতে বললে কুকুরগুলো মাথা নিচু করে বসে বা শুয়ে পড়ে। কোনো লাফালাফি করে না। দিনাজপুর সদর জেলা ভেটেরিনারি অফিসার  ড. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, সতর্কতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খামারটি পরিচালিত হলে খামারি বেশ লাভবান হবেন। নিয়মিত ভ্যাকসিন করা, কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া, রুটিন চেকআপ করাতে হবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন রোগজীবাণু না ছড়ায় সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। খামারে হিংস্র কুকুরও রয়েছে তাই সতর্ক থাকতে হবে সবসময়।
০১ মে, ২০২৪

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে রাস্তার ইট বিক্রির অভিযোগ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছেন আলী এবং দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বালারহাট বাজারের ইজারাদার আনিছুর রহমান বাবু ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। দুই ইউপি সদস্য হলেন ইউনিয়নের ৩ নম্বর বালাতাড়ী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামে। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বালারহাট বাজারের রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজশাহীর বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করলে সোমবার (২২ এপ্রিল) নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী ও ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম শ্রমিক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের এলজিইডি গুদাম মেরামতের নামে রাস্তার প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। এরপর দুই হাজার ইট খোয়া করে গুদাম সংস্কারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে রেখে বাকি ১৮ হাজার ইট বিক্রি করে দেন। বালারহাট বাজারের ইজারাদার আনিছুর রহমান বাবু বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বাজারের রাস্তা থেকে প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। ইট নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তারা বলেন, এ ইট ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার হবে। কিন্তু পরে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ২ হাজার ইট খোয়া করে বাকি ইট বিক্রি করে দিয়েছে।  বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি সহিদার রহমান কাজল বলেন, কাজ শুরুর পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান এসে বাজারের রাস্তার ইট তুলে নিয়ে যান। এতে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লোকজন ইট নিয়ে যেতে বাধা দিলে তারা ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের কথা বলে জোর করে সব ইট নিয়ে যান। শুনেছি পরে ইটগুলো বিক্রি করেছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম সংস্কারের জন্য ১২/১৪ হাজার ইট তুলে আনা হয়েছে। কিছু ইটের খোয়া বানানো হয়েছে আর কিছু ইট বিক্রি করে শ্রমিকদের মজুরি ও ট্রলিভাড়া দেওয়া হয়েছে।  অপর ইউপি সদস্য মহির উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছেন আলী বলেন, গুদাম সংস্কারের জন্য মেম্বাররা ঠিকাদারের কাছ কিছু ইট নিয়েছে শুনেছি। সরকারি ইট হলে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হতো। যেহেতু ইট সরকারি নয় সেহেতু মেম্বাররা কি করেছেন সে ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানি না।  ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম কালবেলাকে বলেন, হাটের রাস্তার ইট বিক্রির ব্যাপারে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি তবে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

কত টাকায় বিক্রি হলো টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রীর স্বর্ণের ঘড়ি
১৯১২ সালে যখন টাইটানিক জাহাজ ডুবে যায়, তখন বহু যাত্রীর সঙ্গে প্রাণ হারান মার্কিন ধনকুবের জন জ্যাকব অ্যাস্টর। ওই সময় অ্যাস্টর ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষধনী। অ্যাস্টরের কাহিনি টাইটানিক সিনেমার প্রধান দুই চরিত্র জ্যাক আর রোজের মতোই। দুর্ঘটনার সময় জাহাজে স্ত্রী ম্যাডেলিনও তার সঙ্গে ছিলেন। তবে তাকে একটি লাইফবোটে তুলে দিয়েছিলেন অ্যাস্টর। ফলে প্রাণে বেঁচে যান ম্যাডেলিন। তবে বাঁচতে পারেননি ধনকুবের অ্যাস্টর। এবার তার স্বর্ণের ঘড়ি নিলামে তুলে রেকর্ড দামে বিক্রি করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা। রোববার আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় শনিবার ইংল্যান্ডে ঘড়িটি নিলামে তুলে হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সন নামে একটি সংস্থা। সেখানে ঘড়িটি ১১ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৬ কোটি টাকার সমান। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যক্তি ঘড়িটি কিনে নিয়েছেন। নিলামকারী সংস্থা জানিয়েছে, টাইটানিক ট্রাজেডির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো জিনিসের বিক্রয়মূল্যের ক্ষেত্রে এটা একটা রেকর্ড। জাহাজ ডুবে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর অ্যাস্টরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় তার কাছে পাওয়া বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে স্বর্ণের ঘড়িটিও ছিল। নিলাম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারের পর ঘড়িটি অ্যাস্টরের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি মেরামত করে ব্যবহার করতেন অ্যাস্টরের ছেলে। হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সনের ধারণা ছিল, নিলামে হয়তো এক থেকে দেড় লাখ পাউন্ড দাম উঠবে সোনার ঘড়িটির। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে সেটা প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতালের রড বিক্রি করলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজে বেচে যাওয়া রড-অ্যালুমিনিয়াম ও অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান উম্মনের বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়মনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে টেন্ডার আহ্বান ছাড়া এবং বিনা নিলামে এসব নির্মাণসামগ্রী বিক্রি করেন তিনি। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে এসব জিনিস বিক্রি করা হয়। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন সম্প্রসারণের কাজে বেচে যাওয়া আনুমানিক প্রায় দুই টন রড ও ১০০ কেজি এলুমিনিয়াম অতিরিক্ত থেকে যায়। অতিরিক্ত থাকা এসব নির্মাণ সামগ্রী ও অক্সিজেন সিলিন্ডার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিনা অনুমতিতে ও সরকারি নিয়মনীতি অনুসারে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়া এবং বিনা নিলামে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। রড ৫৪ টাকা কেজি দরে ও এলুমিনিয়াম থাই ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট আখতারুজ্জামানের মাধ্যমে এসব সামগ্রী কিনেছেন তফাদিয়া গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী রমজান আলী শেখ। এসব মালামাল কালুখালী রেল স্টেশনের পাশে লিটন ভাঙারি দোকানে মজুত রাখা হয়। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট  আখতারুজ্জামান নির্মাণ সামগ্রী ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ অর্থ ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করে নেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালবেলাকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে হাসপাতালের নানা সরঞ্জাম ও ওষুধ বিক্রি ও নানা অনিয়ম করে থাকেন হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আক্তারুজ্জামান।  ভাঙারি ক্রেতা রমজান আলী কালবেলাকে বলেন, আমাকে আখতারুজ্জামান ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর এসব মালামাল দেখিয়ে আমার সঙ্গে দামদর মেটানো হয়। দাম মিলে যাওয়ায় আমি সরঞ্জামগুলো কিনে আনি।  এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান উম্মনের কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দেননি।   রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন কালবেলাকে বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে ও উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ব্যতিত এগুলো বিক্রির সুযোগ নেই। যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে এটা আইনবিরোধী হয়েছে।   উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিমের এপিএস শেকেরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানেন না। ওই কর্মকর্তা নিজেই বিক্রয় করেছেন।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

গুজরাটে রাস্তার ধারে পানিপুরি বিক্রি করছেন নরেন্দ্র মোদি!
প্রথম দেখায় যে কেউ চমকেই যাবেন। গুজরাটে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পানিপুরি বিক্রি করছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে তিনি আসলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নন। বরং অবিকল নরেন্দ্র মোদির মতো চেহারার অনিল ভাই ঠক্কর। চলতি মাসে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়েছেন তিনি। অনিল ভাই ঠক্কর গুজরাটের একটি রাস্তার কিনারে পানিপুরি বিক্রি করেন। স্থানীয়রা মজা করে তাকে প্রধানমন্ত্রী মোদি হিসেবে সম্বোধন করে। কারণ তার চেহারা অনেকটাই নরেন্দ্র মোদির মতো এবং সাইড থেকে দেখে যে কেউ তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলে ভুল করবেন।   পানিপুরি বিক্রেতা অনিল ভাই ঠক্করকে দেকে অনেকে নরেন্দ্র মোদি বলে ভুল করেন কারণ, তার চুলের স্টাইল এবং সাদা দাড়িও প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে মিলে যায়। তিনি নিজ ইচ্ছায় চুল দাড়ির এমন স্টাইল রেখেছেন কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পছন্দ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থেকে অনুপ্রাণিত এবং প্রধানমন্ত্রীর মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেন।  অনিল ভাই ঠক্কর মূলত গুজরাটের জুনাগড় এলাকার বাসিন্দা। ‘তুলসী পানিপুরি সেন্টার’ নামে দোকনটির মালিক তিনি। তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে এই দোকানে পানিপুরি বিক্রি করছেন। দোকানটি প্রথম শুরু করেছিলেন তার দাদা। ৭১ বছর বয়সী এই পানিপুরি বিক্রেতা বলছেন, ক্রেতারা প্রায়শই তার চেহারার কারণে তার সঙ্গে সেলফি তুলতে চায় এবং তিনি এটা উপভোগ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমার চেহারার মিল থাকার কারণে আমি স্থানীয় এবং পর্যটক সবার কাছ থেকেই অনেক ভালোবাসা এবং সম্মান পাই।  অনিল ভাই ঠক্করই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো দেখতে একমাত্র ব্যক্তি নন। এর আগে মুম্বাইয়ের মালাডের বাসিন্দা বিকাশ মহন্তের চেহারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অদ্ভুত মিল দেখা গিয়েছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার বাদ্যযন্ত্র বাজানোর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। অনেকে ভিডিওকে প্রধানমন্ত্রী মোদির ডিপফেক বলে ভুল করেছিলেন।  পরে অবশ্য বিকাশ মহন্তে বিষয়টা খোলাসা করে দিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি তিনিই।   সূত্র: এনডিটিভি  
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে আশ্রয়ের নামে ৯০০ অসহায় অজ্ঞাত মানুষের কিডনি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের অভিযোগ তুলে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।  শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, মিরপুর এলাকায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগের সঙ্গে খেলা করেছে। সে এই শিশু ও বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া অসহায় ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছে। আমরা এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই কুলাঙ্গারকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। তারা অভিযোগ করে জানান, মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও বিদেশে থাকা বিভিন্ন প্রবাসীদের কাছ থেকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে একজন প্রতারক, আমরা চাই দ্রুত তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।   মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং পল্লবী থানা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কালবেলার প্রিন্ট ভার্সনে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। কালবেলার পাঠকদের জন্য সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মিল্টন সমাদ্দার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। মানবতার সেবক হিসেবে তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে অনুসারী (ফলোয়ার) সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অসহায় মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এটাই মিল্টনের আসল চেহারা নয়। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিল অর্থের লোভ। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হিসাব মেলে না মরদেহের, অভিযোগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির: মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, তার আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিল্টন দাবি করেন। মিল্টন জানান, যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট কালবেলার হাতে রয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার দায়িত্বরতরা। তাহলে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় গেছে? ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে অবস্থানকালে কারও মৃত্যু হলে তার সার্টিফিকেট দেন মাহিদ খান নামের একজন চিকিৎসক। তবে তার স্বাক্ষর এবং সিলের সঙ্গে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই। বিএমডিসির বিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং সিলে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল মাহিদ খান নামে একজন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। কমফোর্ট হাসপাতালে তার চেম্বার রয়েছে। তবে সরেজমিন ওই হাসপাতালে গিয়ে উল্লেখিত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। করোনার সময় এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে প্রশ্ন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন। মিল্টন সমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন এক সময় বাসা ভাড়া শোধ করতে পারতেন না। এখন তিনি এগুলো করে কোটি কোটি টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন। আড়ালে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করেন। আমাদের বায়তুর সালাম মসজিদে ওর মরদেহ ফ্রি গোসল করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিছু মরদেহ গোসল করানোর পর দেখা যায়, সবগুলোর শরীরে কাটা দাগ। এ বিষয়ে মিল্টনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা থেকে মানুষ তুলে আনার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যাদের কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভালো থাকে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা করানো হয়। তাদের জন্য ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর সুস্থ হলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া হয়। সুস্থ মানুষ কিন্তু কিছুদিন পরে দেখি মারা যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বারেক চাচা মরদেহ গোসল করাতেন। চাচা বলেছেন, তিনি একবার ওর আশ্রমে গিয়ে এক ব্যক্তিকে সুস্থ সবল দেখে এসেছেন। এর দু-তিন দিন পরই মসজিদে গোসল করানোর জন্য ওই ব্যক্তির মরদেহ আসে। ওই লাশের শরীরেও পেটের দিক দিয়ে কাটা দেখা যায়। এরপর বারেক চাচাও মরদেহ গোসল করাতে অস্বীকৃতি জানান।’ অনেক খোঁজাখুঁজির পর দক্ষিণ পীরেরবাগ আমতলা বাজারে গিয়ে সন্ধান মেলে সেই বারেক চাচার। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফোন করা হলে তিনি নিচে নামছেন জানিয়ে বাসার নিচে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু এরপরই ফোন বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর ইন্টারকমে ফোন করে একজন লোক মারা গেছেন বলা হলে তিনি নিচে নামেন। তবে আশ্রম থেকে আসা মরদেহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি। বারেক নামের এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আগে তার মরদেহ গোসল করাতাম। এখন করাই না।’ এর কারণ জানতে চাইলে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।’ ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ কাজ করেছেন—এমন একজন বলেন, ‘কোনো রোগী অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এখানে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। কারণ, তিনি চান না কেউ পুরোপুরি সুস্থ হোক। এটা তার ব্যবসা।’ ওই ব্যক্তির কথার মিল পাওয়া যায় মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেটেও। যতজনকে দাফন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের প্যাডে। একটি আশ্রমে এত মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে মন্তব্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহাবুব কালবেলাকে বলেন, ‘এত মানুষ মারা যাওয়া অস্বাভাবিক। তার মানে উনার এখানে প্রোপার চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া উনি কতজনকে হাসপাতালে রেফার করেছেন, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। উনার এখানে তো সবাই মারা যেতে পারে না। কেউ বেশি অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রম হসপিটালাইজড হলে সেখানে স্পেশালাইজড চিকিৎসক কে আছেন, সেটা দেখতে হবে। থাকলেও তিনি নিয়মিত যান কি না, সেটাও দেখতে হবে। প্রোপার চিকিৎসা হলে এত মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়।’ আর্থিক হিসাবে চরম অস্বচ্ছতা: সাধারণ মানুষের দানের টাকায় পরিচালিত অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরে আওতাধীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। মিল্টন সমাদ্দারও তার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের অনুমোদন সমাজসেবা থেকে নিয়েছেন। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট এবং দুই বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি নবায়নের কথা থাকলেও তিনি সেটি করেন না। মিল্টন সমাদ্দারের পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হিসাবের মাধ্যমে চলে আর্থিক লেনদেন। এসব মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে কালবেলা। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে কোটি টাকার মতো জমা হয়। তবে মিল্টনের আশ্রমে থাকা সর্বসাকল্যে ৫০ জন মানুষের দেখাশোনার জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরেজমিন মিল্টনের আশ্রম পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন বিষয় প্রচার-প্রচারণার জন্য মিল্টনের রয়েছে ১৬ জনের একটি দল। এরা বিভিন্ন মানবিক গল্পের ভিডিও তৈরি করেন। এরপর সেসব ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেন। শুধু তাই নয়, তার পাঁচটি ফেসবুক পেজ নিয়মিতভাবে ডলার খরচ করে বুস্ট করা হয়। এজন্য গত এক সপ্তাহেই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে হিসাব পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তিকে মারধর, জমি দখলের অভিযোগ: মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে কালবেলার অনুসন্ধানে। তার আশ্রমের ভেতরে রয়েছে নিজস্ব বন্দিশালা। সেখানে আছে লাঠিসোটা, পাইপসহ মারধরের নানা উপকরণ। চুন থেকে পান খসলেই তার লাঠিয়াল বাহিনী হামলে পড়ে। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১০ এপ্রিল সাভারের কমলাপুর এলাকার বাহেরটেকে নিজের কেনা জমি দেখতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের স্বীকার হন মো. সামসুদ্দিন চৌধুরী নামের ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। বাধা দিতে গিয়ে মারধরে স্বীকার হন তারাও। মারধরে মেয়ের জামাই ফয়েজ আহমেদের হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় এবং সামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সামসুদ্দিনের মেয়ে সেলিনা বেগমও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাননি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম কালবেলাকে জানান, ‘আমাদের জমি সে কম দামে ক্রয় করতে চেয়েছে। জমি না বিক্রি করায় সে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। মিল্টন সরকারি রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। যে কারণে আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল না। পরে সরকারি রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করে। এরপর আমার বাবা আর স্বামীকে মিল্টনের আশ্রমের ভেতরে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে অনেক লাঠিসোটা, পাইপ ও ছুরি ছিল। পাইপ দিয়ে একজনের পর একজন করে পেটাতে থাকে। মিল্টন নিজেও একটু পরপর এসে মারধর করে। আমি তখন মিল্টনের পায়ে ধরে আমার স্বামী ও বাবাকে ছেড়ে দিতে বললে আমাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে লোকজন এগিয়ে এলে আমাদের ছেড়ে দেয়।’ এ ঘটনায় মিল্টন সমাদ্দারকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লাহ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। আমরা মিল্টন সাহেবের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছি। এখনো দেয়নি।’ গার্মেন্টসে চাকরি খোঁজার নাম করে গত শুক্রবার সারাদিন সাভারের বাহেরটেক এলাকা ঘুরে ভয়ংকর সব তথ্য পাওয়া গেছে। পুরো এলাকাজুড়ে মিল্টন সমাদ্দার এক আতঙ্কের নাম। তার ভয়ে নিজের বাড়িতে যান না স্থানীয় খ্রিষ্টানপাড়ার অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে একজন হেমন্ত রোজারিও। মিল্টনের আশ্রমের পাশে তার একটি জমি রয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ওই জমি ক্রয় করেছেন। পরে মিল্টন সমাদ্দার জমিটি কিনে নিতে চান। তবে তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে জটিমি জোর করে দখলে নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেন মিল্টন। বাধা দিতে গিয়ে হেমন্ত রোজারিও মারধরের শিকার হন। মিল্টন নিজে তাকে মারধর করে। এরপর স্থানীয় লোকজনের বাধায় ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও এখনো ভয়ে-আতঙ্কে নিজের জমিতে যেতে পারেন না। গত শুক্রবার দুপুরে হেমন্তের বাড়িতে গিয়ে তার চোখেমুখে ভয় ও আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়। তার মা, বোন ও স্ত্রীর অবস্থাও একই রকম। হেমন্ত রোজারিও কালবেলাকে বলেন, ‘আমি ওই জমি কিনেছি। আমি গরিব মানুষ। মিল্টন সাহেব আমার জমি কিনতে চাইছে। আমি বেচি নাই। আমার জমি জোর করে দখল করে একটা ঘর বানাইছে। বাধা দেওয়ায় আমারে ধইরা মারছে। পরে আমারে বলছে, তুই ওই জমিতে আসবি না। এলে তোরে মাইরালামু।’ নন্দন রোজারিও নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘উনাকে এখানে আশ্রম বানাতে আমরাই সাহায্য করেছি। উনি আমার জায়গায় জিনিসপত্র রেখে আশ্রমের কাজ করেছে। ভালো কাজ করে বলে আমরা কিছু বলি নেই। পরে দেখি এসবের আড়ালে তার অন্য উদ্দেশ্য। তিনি এখানকার খ্রিষ্টানদের জমি দখলের উদ্দেশ্যে এসেছেন। কেউ জমি বেচতে না চাইলেই তার উপরে নেমে আসে নির্যাতন। ওর লোকজন তাকে মারধর করে।’ এর আগে কল্যাণপুরের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকেও মারধর করেছেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা করেন। এ ছাড়া নুর আলম মানিক নামের এক ব্যক্তি নিজের বোনকে আনতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। নিরুপায় হয়ে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আশ্রম থেকে উদ্ধার করে। সেই সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই মিল্টন সমাদ্দার ওই ব্যক্তিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছেন। নুর আলম মানিক কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বোনের মানসিক সমস্যা ছিল। আমি ফেসবুকে আমার বোনের ভিডিও দেখে চিনতে পেরে তাকে আনার জন্য মিল্টনের আশ্রমে যাই। আমি জুতা পায়ে দিয়ে তার আশ্রমের ভেতরে ঢোকায় সে আমার গায়ে হাত তোলে। আমাকে তার লোকজন বেধড়ক মারধর করে। জুতা ছিল মূলত উসিলা। সে আসলে আমার বোনকে দিতে চাইছিল না। এটি তার একটা ব্যবসা।’ এ ছাড়া মিল্টনের বিরুদ্ধে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে। মিল্টনের মারধরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি তার জন্মদাতা পিতাও। ২০০১ সালে নিজের পিতাকে বেধড়ক মারধর করেন মিল্টন। সেই ঘটনার জেরে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসীরা জানান। বরিশালের উজিরপুরের বৈরকাঠি গ্রামের শাহাদাত হোসেন পলাশ কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার তার নবাবাকে বেধড়ক মারধর করে। এ কারণে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে সে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে ওঠে। এখন শুনতাছি, উনি নাকি মানবতার ফেরিওয়ালা। এটা শুনে আমরা আশ্চর্য হয়েছি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ: সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও একাধিকবার মিল্টনের তোপের মুখে পড়েছেন। গত ১১ এপ্রিল শ্যামলীর রিং রোডে সেন্ট্রাল মেডিকেলের গেটের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক মিল্টন সমাদ্দারকে বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে আসেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলার সময় নিউজ করার জন্য ভিডিও করতে গিয়ে মিল্টনের তোপের মুখে পড়েন একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদক। সে সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফের তোপের মুখে পড়েন অন্য একটি নিউজপোর্টালের অপরাধ বিভাগের প্রধান। হোয়াটসঅ্যাপে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে মেসেজ করেন মিল্টন সমাদ্দার। আশ্রিতদের হিসাব অতিরঞ্জিত: গত রোববার কল্যাণপুরের অফিসে মিল্টন সমাদ্দারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সে সময় তিনি জানান, তার আশ্রমে বর্তমানে ১৩০ জন নারী, ১২৬ জন পুরুষ, ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন মায়েদের ৬ জন সন্তান এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ৭টি শিশু রয়েছে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১১ জন। তবে পরিচয় করে গোপন গত শুক্রবার সাভার এবং রোববার পাইকপাড়ার আশ্রম এলাকা ঘুরে মিল্টন সমাদ্দারের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি খোঁজার কথা বলে সাভারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর সামনের একটি চায়ের দোকানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন এ প্রতিবেদক। সে সময় আশ্রমের দ্বিতীয় তলায় ৩ জন, তৃতীয় তলায় ২ জন এবং চতুর্থ তলায় ৩ থেকে ৪ জনকে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, আশ্রমে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ জন থাকতে পারেন। এ ছাড়া পাইকপাড়ার আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০ জনের মতো লোক আছেন। বরিশালে চার্চ দখল: বরিশালে ‘চন্দ্রকোনা খ্রিষ্টান মিশনারি চার্চ’ দখল চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। দখলের উদ্দেশ্যে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল করে চার্চের নতুন কমিটি গঠন করে বরিশাল জেলা প্রশাসকে একটি চিঠি দেন। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদ্দারকে। কমিটির বাকি সদস্যদের প্রায় সবাই মিল্টনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না চার্চের দায়িত্বরত যাজকরা। পরে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়, এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এরপর তারা কোর্টে মামলা করলে কোর্ট জালিয়াতি করে চার্চ দখল করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ওই চার্চের সীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। সরেজমিন বরিশালে গিয়ে ওই চার্চের যাজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দার চার্চ দখল করে সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন। তাতে ব্যর্থ হওয়ায় যাজকদের মারধরের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। হেনসন দানিল হাজরা নামে আরেক সহকারী যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘চার্চ দখল করার জন্য আমাকে গুম করে যাজকদের নামে মামলা দিয়েছিল মিল্টন। মামলায় আমি গুম হয়ে গেছি দেখানো হয়। আসামি করা হয় আমার সহকর্মীকে। আমার বাবাকে ম্যানেজ করে মিল্টন এ কাজ করেন। তারা আমাকে গুম করে ফেলতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। পরে আমি পালিয়ে এসপি অফিসে হাজির হয়ে জানাই, আমি গুম হইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিল্টন ও তার বড় ভাই মোল্লা বাড়ির ব্রিজের ওপরে মসজিদের পাশে আমাকে একবার বেধড়ক মারধর করেন।’ অন্য আরেক যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘এই চার্চ দখল করার জন্য মিল্টন সমাদ্দার আমাদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছেন। মারধর করেছেন। আমাদের নামে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। যদিও সব মামলাই কোর্টে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নিয়ে নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘সারা দেশে এমন ৬৯ হাজার সংগঠনের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছু জানা আসলে সম্ভব হয় না। তবে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখব।’ সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য গতকাল বুধবার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ফোন করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘সাভারে আমার আশ্রমে বর্তমানে ২৫৬ জন লোক আছে।’ মরদেহ দাফনের হিসাবে গরমিল সম্পর্কে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। আর্থিক হিসাবে অসংগতি, জমি এবং চার্চ দখলের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমি চিনি না। আপনি সাংবাদিক কি না, সেটা আমি কীভাবে বুঝব?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন। আমার কোনো সমস্যা নাই, সারা দেশের মানুষ জানুক। তবে সেটা প্রোপার ইনভেস্টিগেশন করে করেন।’
২৭ এপ্রিল, ২০২৪
X