ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সহজ করবে সরকার
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। ব্যবসায়ীদের মার্কেট এক্সেসের সুযোগ তৈরিতেও সরকার কাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার এফবিসিসিআইর মতিঝিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিজনেস রিলেটেড ব্যারিয়ার্স অ্যান্ড পসিবল ওয়ে-আউট’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যে কোনো ব্যবসা উদ্যোগকে সফল ও প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের দায়িত্ব। বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বাধাহীনভাবে ও সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে, সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত জরুরি। এ জন্য এফবিসিসিআইসহ বেসরকারি খাতের সব অংশীজন, গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা এবং একাডেমিশিয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সেমিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এবং আসিয়ান দেশগুলোর বিজনেস হাব হিসেবে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিডা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৮টি এজেন্সির ১৫০টির বেশি সেবা এক ছাতার নিচে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জ্যানওসকি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে এখানে জার্মান থেকে বিনিয়োগ আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রবন্ধে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সনদ প্রাপ্তি এবং নবায়নের দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা দ্রুত হ্রাসের পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে সনদ প্রদান এবং উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমাতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্ব দেন। সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
১৫ মে, ২০২৪

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ফকির আলমগীর। তিনি মধ্য পাকুন্দিয়া এলাকার ফকির লাল মিয়ার ছেলে। সোমবার (১৩ মে) সকালে পাকুন্দিয়া পৌর শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি। জানা যায়, ভুক্তভোগী ফকির আলমগীর পাকুন্দিয়া পৌর সদরের মৌসুমী সিনেমা হল এলাকায় ঔষধ ফার্মেসির ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। একই এলাকার মহি উদ্দিনের ছেলে হাসান তারেক ও মিলন মিয়ার ছেলে আজাহারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে টাকা পয়সার লেনদেনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে পাওনা টাকা চাওয়ায় রোববার (১২ মে) রাত ১০টার সময় অভিযুক্তরা দোকানের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এ সময় প্রতিবাদ করলে একপর্যায়ে দেশি অস্ত্রসহ দোকানে হামলা চালানো হয়। এতে ফকির আলমগীর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এদিকে দোকানে ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনায় এক লাখ টাকার ক্ষতি ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ফকির আলমগীর ফার্মেসির ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাকুন্দিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটু লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
১৩ মে, ২০২৪

আইপিএলে গোয়েঙ্কারা এসেছেন শুধু ব্যবসা করতে: শেবাগ
লখনৌর মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা রাগের ভঙ্গিতে কথা বলে চলেছেন। আর পাশে বিমর্ষমুখে সেই কথাগুলো শুনে যাচ্ছেন দলটির অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, চলমান আইপিএলে এটি সবচেয়ে বিব্রতকর দৃশ্য। মাঠে প্রকাশ্যে দলের অধিনায়ককে এভাবে কথা শোনাচ্ছেন দলটির মালিক- এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বরং ম্যাচ হারার পরও দলের ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে দেখা যায় শাহরুখ খান, প্রীতি জিনতাদের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের। ঘটনাটি গত ৮ মের। ঘরের মাঠে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হেরে যায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস। পরে টেলিভিশনে দেখা যায় দলের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে কিছু একটা বলছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। গোয়েঙ্কার হাত নাড়ানো ও চেহারার অভিব্যক্তিতে বোঝা যায় মাঠেই দলের অধিনায়কের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন তিনি, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। চলমান সেই সমালোচনায় এবার যুক্ত হলেন ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ। এ সময় তিনি ভারতীয় এই ব্যবসায়ী প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আইপিএল থেকে ৪০০ কোটি রুপি লাভ করেও কেন তিনি ক্ষুব্ধ? ভারতের আরপিএসজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। আইপিএলের দল লখনৌর মালিকও তিনি। স্টেডিয়ামে বসে দেখে দলের খেলা। হায়দরাবাদের ম্যাচেও তিনি মাঠে ছিলেন। লখনৌর দেওয়া ১৬৬ রানের টার্গেট মাত্র ৯.৪ ওভারে জিতে যায় হায়দরাবাদ। ম্যাচ শেষে লখনৌর অধিনায়ক রাহুলের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায় দলটির মালিককে। ঘটনার বেশ পেরিয়ে গেলেও থামছে না সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সমালোচনা। ভারতীয় ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে দেওয়া সাক্ষৎকারে শেবাগও যোগ দিলেন এই সমালোচনায়। ম্যাচ হারলেও দল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরা সব ব্যবসায়ী, এরা শুধু লাভ-ক্ষতি বোঝে। কিন্তু এখানে তো তার কোনো ক্ষতিও হয়নি। তাহলে কী নিয়ে তিনি এত ক্ষুব্ধ? আপনি ৪০০ কোটি রুপি আয় করেন। এটা এমন ব্যবসা, যেখানে আপনার নিজের কিছুই করার নেই। এখানে কাজ করার জন্য অন্যরা আছে, যা-ই ঘটুক না কেন, আপনি তো লাভ করছেন।’ এ সময় ভারতের সাবেক ওপেনার আরও বলেন, ‘আপনার কাজ খেলোয়াড়দের উদ্দীপিত করা। যে ঘটনাটা ঘটেছে, এই খেলোয়াড় চলে যেতে চাইলে, তাকে নেওয়ার জন্য আরও ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে। আর আপনি যদি একজন খেলোয়াড়কে হারিয়ে ফেলেন, আপনার জেতার সুযোগ শূন্য হয়ে যাবে।’ আইপিএলের চলতি আসরে এখনো শেষ চারে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে লখনৌর। ১২ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে টেবিলের ৬ নম্বরে রয়েছে দলটি।
১৩ মে, ২০২৪

সমাজসেবা যখন ব্যবসা
দিন দশেক আগেও মিল্টন সমাদ্দার নামটি আমার কাছে প্রায় অচেনাই ছিল। তিনি সমাজসেবা করেন, পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে মানুষের সেবা করতেন; এটুকুই জানতাম। কিন্তু তার সমাজসেবার ধরন, অর্থের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। প্রায় দুই কোটি লোক যাকে ফলো করেন, তার সম্পর্কে এত কম জানা নিয়ে আমার মধ্যে একটু অপরাধবোধও ছিল। স্বীকার করছি, একজন সাংবাদিক হিসেবে এটা আমার ব্যর্থতা। আমার ব্যর্থতা পুষিয়ে দিতেই যেন মাঠে নামল দৈনিক কালবেলা। দারুণ এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে তারা মিল্টন সমাদ্দারের গোমর ফাঁস করে দেয়। কালবেলার প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিল্টন সমাদ্দার সারা দেশের সাধারণ মানুষের আলোচনায় পরিণত হন। কালবেলার রিপোর্ট অবশ্য অনেকে বিশ্বাস করেননি। অনেকেই বলেন, কালবেলা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজকর্মী মিল্টন সমাদ্দারের পেছনে লেগেছে। অনেকে এমনও বলছেন, এভাবে গণমাধ্যম পেছনে লাগলে কেউ আর ভালো কাজ করতে এগিয়ে আসবে না। অনেকেই কালবেলার রিপোর্টের নানা ত্রুটি তুলে ধরেন। এটা ঠিক, মিল্টন সমাদ্দার সহায়তা না করায় কালবেলার অনুসন্ধানে অনেক ত্রুটি রয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে, কিডনি বিক্রি করার অভিযোগটি আমার কাছেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কারও শরীর থেকে গোপনে কিডনি সরিয়ে ফেলে তা অন্য কারও শরীরে সরাসরি প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। অন্য অনেকের মতো আমারও কালবেলার প্রতিবেদন নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়ে গিয়েছিল। আমার সংশয় দূর করে দিয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার স্বয়ং। কালবেলার প্রতিবেদনের পর প্রায় সব গণমাধ্যমই মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে। কালবেলাকে সহায়তা না করলেও অন্য অনেক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। নিজের ফেসবুক পেজেও আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন মিল্টন। তার বেশ কিছু বক্তব্য শোনার পর আমার সব সংশয় দূর হয়ে যায়। তার বক্তব্যে অনেক গোঁজামিল ছিল। কথা শুনে তাকে আমার স্রেফ ধূর্ত ও চালিয়াত মনে হয়েছে। মিল্টন সমাদ্দারের বক্তব্য শোনার পর আমার যেসব বন্ধু তাকে ভালো মানুষ বলছিলেন, তাদের বলি, এ লোকের ঘাপলা আছে। তার বক্তব্য শোনার পর আমি বিশ্বাস করি, অনুসন্ধানে কিছু ত্রুটি থাকলেও কালবেলার প্রতিবেদন মোটা দাগে সত্যি। মিল্টন সমাদ্দার রাস্তার অসহায়, অসুস্থ, ভবঘুরেদের তুলে এনে তার প্রতিষ্ঠিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ কেন্দ্রে আশ্রয় দিতেন। এ তুলে আনা এবং আশ্রয় দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি তিনি ভিডিও করে তার ফেসবুক পেজে প্রচার করতেন। এ প্রচারণার জন্য তার ছিল ১৬ সদস্যের একটি টিম। ফেসবুক বুস্টের পেছনে তিনি মাসে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করতেন। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য তিনি বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন। দেশ ও প্রবাস থেকে তার আবেদনে প্রচুর সাড়াও মিলত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হতো। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসতেন। কিন্তু এর পুরোটাই ছিল আসলে মুখোশ। সেই মুখোশের আড়ালেই ছিল মিল্টন সমাদ্দারের ভয়ংকর চেহারা। এখন পর্যন্ত যা খবর জানা যাচ্ছে, তাতে তাকে একজন সাইকোপ্যাথ ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। রাস্তা থেকে তুলে আনা অসুস্থ, অসহায় মানুষগুলো মিল্টন সমাদ্দারের কেন্দ্রে গিয়ে মাথার ওপর ছাদ, খাবার হয়তো পেতেন। কিন্তু মিল্টন তাদের কোনো চিকিৎসা দিতেন না, সেবা দিতেন না। উল্টো ভয়ংকর নির্যাতন চালাতেন। আসলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পর ভেঙে পড়ে তার প্রতারণার সাম্রাজ্য। তিনি এখন গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছেন। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, মিল্টন কখনোই অসুস্থ ব্যক্তিদের কোনো হাসপাতালে নিতেন না। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত, সে অংশগুলো মিল্টন ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতেন। বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলেন। সে সময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। তার ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে’ শুধু কয়েকটা ছুরি ও ব্লেড পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৯০০ মরদেহ দাফনের দাবি করলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন ১০০ মরদেহের হিসাব দিতে পেরেছেন। এ মরদেহ দাফনের জন্যও প্রয়োজনীয় ডেথ সার্টিফিকেট বা ডাক্তারের কোনো কাগজ থাকত না। যা থাকত তাও জাল। কারণ তার কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। রাস্তা থেকে তুলে আনা মানুষের শেষ পরিণতি হতো বিনা চিকিৎসায়, নির্যাতনে, ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু। মানুষের এ নির্যাতনই ছিল মিল্টনের আনন্দ। তার অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা থাকলেও তিনি তা আশ্রিতদের কাজে ব্যয় করতেন না, বরং ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসেই ব্যয় হতো সমাজসেবার জন্য পাওয়া অর্থ। অসহায় মানুষকে পুঁজি করে মিল্টন গড়ে তুলেছেন একাধিক কেন্দ্র, কিনেছেন জমি, গাড়ি। গড়ে তুলেছেন লাঠিয়াল বাহিনী। এ বাহিনী সস্তায় জমি বিক্রি করতে না চাইলে লোকজনকে ধরে এনে মারধর করত। নিজের বাবাকে পিটিয়ে ঢাকায় আসা মিল্টন বনে গিয়েছিলেন মানবতার ফেরিওয়ালা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখলের। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নথি জাল করে বিভিন্ন চার্চ দখলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, কালবেলা যা লিখেছে, অনেক কমই লিখেছে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে এখন বেরিয়ে আসছে অজগর। গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ-লোমহর্ষক ঘটনা আছে। তদন্ত শেষ না হলে এসব ঘটনা বলা ঠিক হবে না।’ মিল্টন সমাদ্দারের ঘটনা আমাদের সমাজব্যবস্থায় একটা বড় ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। মানুষের বিশ্বাস টলে যাবে। অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা মানুষের সেবা করতে চান। কিন্তু নানান ব্যস্ততা ও উদ্যোগের অভাবে তা করতে পারেন না। বিশেষ করে প্রবাসী অনেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান। তারা মিল্টন সমাদ্দারের মতো লোকদের ওপর ভরসা করে অর্থ দেন। কিন্তু সেই অর্থের এমন অপব্যবহারে মানুষের ওপর আর মানুষ বিশ্বাস করবে না। বাংলাদেশে অর্থ উপার্জনের অনেক উপায় আছে। কেউ ব্যবসা করেন, কেউ প্রতারণা করেন। মিল্টন সমাদ্দাররা ব্যবসা করেন মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে। তার মূল পুঁজি মানুষের দারিদ্র্য আর অসহায়ত্ব। এ অসহায়ত্ব ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে মানবিক মানুষের আবেগকে কাজে লাগান মিল্টনরা। অর্থ উপার্জনের নিকৃষ্টতম উপায় হলো মানুষের আবেগকে ব্যবহার করা। মিল্টন সমাদ্দারের ঘটনায় সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হবে অসহায় মানুষের। মিল্টন একা নন, এমন আরও অনেকে অসহায় মানুষের সেবা করেন। মিল্টনের ঘটনায় মানুষের বিশ্বাস টলে গেলে অসহায় মানুষদের জন্য অর্থ আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা কমে যে যাবে তা নিশ্চিত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবে সারা দেশে এমন ৬৯ হাজার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে। সবই জনসেবা করে এটা হয়তো ঠিক নয়। আবার সবাই মিল্টন সমাদ্দারের মতো প্রতারকও নয়। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এসব সংগঠনের ব্যাপারে সঠিক তদন্তের। আর কোনো মিল্টন সমাদ্দার মানবতাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। যাতে সত্যিকারের সমাজসেবা যারা করেন, তারা নিরুৎসাহিত না হন। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু আর যেন মিল্টন সবার চোখের সামনে এ ধরনের নির্মমতা চালাতে না পারে। পুলিশ বা প্রশাসন যেন কালবেলার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে। সব ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই সরকারের দায়িত্ব। লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
০৮ মে, ২০২৪

গ্রেপ্তার-হামলার পরও যে দাবিতে অনড় মার্কিন শিক্ষার্থীরা
ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ আন্দোলন ভালোভাবে দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন প্রশাসন। গণগ্রেপ্তার, মারধর, আইনি হয়রানি, বহিষ্কারের হুমকিসহ নানাভাবে দমনপীড়ন করে বিক্ষোভ ঠেকানোর চেষ্টা করছে তারা।  তবু শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এত সহজে তারা হাল ছাড়বেন না। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। শুক্রবার (৩ মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ চান শিক্ষার্থীরা। তারা চান, এ ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলকে চাপ দিক। এ ছাড়া তাদের একটি অংশ স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিও করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি শক্ত দাবি উত্থাপিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা চান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক চান না তারা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলকে যুদ্ধে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা করছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে আছে ইসরায়েলি কোম্পানি বা ইসরায়েলে ব্যবসা করে বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থেকে মূলধন সংগ্রহ করে কার্যক্রম চালায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাভ্যাংশ দেয়। তা স্কলারশিপ, গবেষণা, পরীক্ষাগারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ইসরায়েলকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে। যুদ্ধের বিশাল খরচ বহন, অস্ত্র কেনা, সামরিক রসদ পরিচালনায় ইসরায়েলের যে মহাশক্তি, তার পেছনে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ওই সব প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বিক্রি, বিনিয়োগ ও সব ধরনের আর্থিক চুক্তি বাতিল চায়। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে হামাস। এর জবাবে গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, র‌্যালি, অনশন, সভা করে যুদ্ধ বন্ধের দাবি করছে। সর্বশেষ ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা, যা দমনে পুলিশ ডাকে কর্তৃপক্ষ। তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ২ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  সর্বশেষ বুধবার রাতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে ২০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সেখানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইসরায়েলপন্থি ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণগ্রেপ্তার চালিয়ে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় শত শত পুলিশ। তবু দেশের ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
০৩ মে, ২০২৪

কুকুর বিক্রি করে আয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা
দিনাজপুর সদরে বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার দিয়েছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে একজন যুবক। বিদেশি বিভিন্ন জাতের কুকুর পালন করে করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। সেই খামার থেকে কুকুর বিক্রি করে মাসে আয় করছেন লাখ টাকারও বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা কুকুর সংগ্রহ করছেন তার খামার থেকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে দুই কিলেমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউজ’ নামে এ কুকুরের খামার। খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের কুকুর। সোহাগের কুকুরের খামার দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে অনেক মানুষ। কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। খামারের শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ ভাব এদের। তাদের নির্দেশ মতো খেলা করছে, ছোটাছুটি করছে। জাহিদুল ইসলাম সোহাগ কালবেলাকে বলেন, বছরখানেক আগে শখের বশে সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করি। প্রথমে তিনটি ও পরে সাতটি বাচ্চার মাধ্যমে ভাগ্য খুলে যায়। পরে অনলাইনের মাধ্যমে শুরু করি কুকুর বিক্রি। খামারে আমেরিকান লাসা, টয় কোরিয়ান, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৬৫টি কুকুর রয়েছে।  তিনি বলেন, প্রকারভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হয়। স্থানীয় যুবক রনি নামে একজন বলেন, কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। সোহাগ ভাই এবং তার লোকজন যা বলে কুকুরগুলো তাই শুনে। চুপ থাকতে বললে কুকুরগুলো মাথা নিচু করে বসে বা শুয়ে পড়ে। কোনো লাফালাফি করে না। দিনাজপুর সদর জেলা ভেটেরিনারি অফিসার  ড. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, সতর্কতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খামারটি পরিচালিত হলে খামারি বেশ লাভবান হবেন। নিয়মিত ভ্যাকসিন করা, কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া, রুটিন চেকআপ করাতে হবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন রোগজীবাণু না ছড়ায় সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। খামারে হিংস্র কুকুরও রয়েছে তাই সতর্ক থাকতে হবে সবসময়।
০১ মে, ২০২৪

পোস্ট অফিসে আইসক্রিমের ব্যবসা
ভোলার আলীনগর ও চরসামমাইয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী এলাকার সুকদেব ডাকঘরটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবহার হচ্ছে পোস্টমাস্টারের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সেন্টার হিসেবে। ডাকঘর ভবনের দুটি কক্ষেই রয়েছে দুটি বিশাল আকারের ডিপফ্রিজ। ফ্রিজের মধ্যে সংগ্রহ করে রাখা হয় আইসক্রিম। এখান থেকে প্রতিদিন আইসক্রিম নিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হয়।  সরেজমিনে পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায় দুটি কক্ষে তালা ঝুলছে। ডাকটিকিট নেওয়ার পকেট স্থানটি ধুলাবালিতে ঢাকা। নামেমাত্র পোস্ট অফিস হলেও ব্যবহার হচ্ছে না কোনো কিছুই। ধুলাবালির আস্তরণে ঢাকা পড়েছে আসবাবপত্র। অফিসে নেই পোস্টমাস্টার ও পোস্টম্যান। তাদেরকে না পাওয়া গেলেও দেখা মেলে পোস্টমাস্টার মো. মনিরুল ইসলামের ছেলের। সে জানায়, তার বাবা বাজারে তাদের দোকানে দোকানদারি করছেন। পোস্ট অফিসের ভেতর রাখা ফ্রিজ দোকানের।  পোস্টমাস্টারকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে জানান, রোগী দেখতে তিনি ভোলা হাসপাতালে গেছেন। আসতে দেরি হবে।  ওই অফিসে সংযুক্ত ডাকপিয়ন অমল কৃষ্ণ দে জানান, চিঠি থাকলে তিনি কেবল তা বিতরণ করেন। তিনি ৩টি পোস্ট অফিসের দায়িত্বে থাকায় একদিন পরপর  আসেন।  এ বিষয়ে জেলার প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো. কামরুল আহসান বলেন, পোস্ট অফিসের সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। মনিরুল ইসলাম যে কাজ করছেন তা সঠিক নয়। তার বিরুদ্ধে যথানিয়মে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  ওই দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন জানান, সরকারের কোনো অফিস কারও ব্যক্তিগত কাজে বা ব্যবসা সেন্টার হতে পারে না। জরুরি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

গদাই নদীতে বাঁধ দিয়ে আ.লীগ নেতার মাটি ব্যবসা
নাটোরের সিংড়ায় গদাই নদীতে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে মাটি ব্যবসা শুরু করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. নওফেল উদ্দিন চৌধুরীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। বিষয়টি জানতে পেরে বাঁধ অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি বাঁধ নির্মাণকারীরা। অবশেষে সেই বাঁধ ভেঙে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।    সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার নলবাতা এলাকায় অবৈধ বাঁধ অপসারণে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা। পাশাপাশি অবৈধভাবে নদীতে বাঁধ দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা নওফেল উদ্দিন চৌধুরীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

‘আমার ছেলেকে দেখে রাইখো’
‘আমার ছেলেকে দেখে রাইখো’- ‍স্ত্রীকে ফোন দিয়ে এ কথা বলে বিষপানে আত্মহত্যা করেন সঞ্জীব দেবনাথ। তিনি পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী।  শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার লাউখোলা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জীব দেবনাথ মৃত্যুর আগে স্ত্রী মুক্তা দেবনাথের কাছে ফোন করে এসব কথা বলেন।  বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের কাউয়াদি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, সঞ্জীব দেবনাথ (৫০) দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। ব্যবসার খাতিরে অনেকের কাছে টাকা পান তিনি। আবার তার কাছেও অনেকে টাকা পান। যাদের কাছে টাকা পেতেন তারা পাওনা পরিশোধ না করে উলটে তাকে নানা ধরনের হুমকি দিত। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। হতাশা থেকে সঞ্জীব দেবনাথ আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে দাবি নিহতের পরিবারের। নিহতের স্ত্রী মুক্তা দেবনাথ বলেন, আমার স্বামী দুপুরে দোকানে থাকা অবস্থায় আমাকে ফোন করে বলেন, আমার ছেলেকে দেখে রাইখো। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি বাড়িতে আসেন এবং বিছানায় পড়ে যান। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তিনি বিষ জাতীয় কিছু খেয়েছেন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর পরই তিনি মারা যান। জাজিরা থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, বিষপানে এক ব্যক্তি মারা গেছেন শুনে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে শতকোটি টাকার ব্যবসা
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলে পাঁচ দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজারে। ছুটির সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল এবং গেস্ট হাউসগুলো শতভাগ বুকিং থাকায় শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বরাবরের মতো হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল পর্যটকদের। হোটেল মালিক পক্ষের দাবি পাঁচ দিনের ছুটি থাকলেও হোটেলগুলোতে শতভাগ বুকিং ছিল মাত্র দুই দিন। আর পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ছাড়াও রেস্তোরাঁ, ওয়াটার বাইক, বিচ বাইক, কিটকট, শামুক ঝিনুক, শুঁটকি, বার্মিজ পণ্য বিক্রিসহ কয়েক লাখ মানুষ সরাসরি পর্যটনশিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পর্যটক আসলে তাদের আয়ের পথ সুগম হয়। তবে বুকিংয়ের বাইরে ওয়ার্কিং পর্যটকের সংখ্যা বেশি। পর্যটন উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের সেবায় হোটেল-মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকারেরা কয়েকদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। এ ধারাবাহিকতা থাকলেও হয়তো আরও বেশি আয় করা সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের সময়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু করায় কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। তবে তারা কক্সবাজার এসেই হোটেল দেখে বুকিং দিচ্ছে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মিলে ২৫ হাজারের মতো কক্ষ রয়েছে। সে হিসেবে এক দিনে হোটেল কক্ষের ভাড়া থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকার উপরে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ, ওয়াটার বাইক, কিটকট, শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি এবং বার্মিজ পণ্য বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ কোটি টাকার মতো। এ হিসাবে ঈদের পাঁচ দিনের ছুটিতে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে বছরজুড়ে পর্যটকের আগমন থাকত। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, একটা সময় পর্যটকরা বুকিং দিয়ে কক্সবাজারে আসত। এখন ট্রেন চালু হওয়ায় এসেই হেটেলের রুম দেখে বুকিং দিচ্ছে। এবারে ঈদের এক দিন পরে কক্সবাজারে আসে পর্যটক। রোববার (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ বুকিং ছিল। কিন্তু সোমবার (১৫ এপ্রিল) থেকে ফের ৫০ ভাগে নেমে আসবে। দুই দিন হলেও ব্যবসাটা ভালো হয়েছে। আমি মনে করি, এবারের ছুটিতে পর্যটনশিল্প ব্যবসায় সবক্ষেত্রে প্রায় শতকোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে। কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, যেমন আয় তেমন ব্যয়। দুই দিনের ব্যবসা দিয়ে তো আর বছর পার করা সম্ভব না। তারপরও যা আয় হয়েছে তা দিয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পেলে আরও বেশি পর্যটক আসত কক্সবাজারে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল আমাদের। সৈকতে পর্যটকদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি আমরা। বিপদাপন্ন কোনো পর্যটক একটি বাটন টিপেই সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। বলতে পারেন পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, এখনো পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তারপরও হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছেন।
১৪ এপ্রিল, ২০২৪
X