ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ আন্দোলন ভালোভাবে দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন প্রশাসন। গণগ্রেপ্তার, মারধর, আইনি হয়রানি, বহিষ্কারের হুমকিসহ নানাভাবে দমনপীড়ন করে বিক্ষোভ ঠেকানোর চেষ্টা করছে তারা।
তবু শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এত সহজে তারা হাল ছাড়বেন না। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।
শুক্রবার (৩ মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ চান শিক্ষার্থীরা। তারা চান, এ ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলকে চাপ দিক। এ ছাড়া তাদের একটি অংশ স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিও করছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি শক্ত দাবি উত্থাপিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা চান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক চান না তারা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলকে যুদ্ধে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা করছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে আছে ইসরায়েলি কোম্পানি বা ইসরায়েলে ব্যবসা করে বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থেকে মূলধন সংগ্রহ করে কার্যক্রম চালায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাভ্যাংশ দেয়। তা স্কলারশিপ, গবেষণা, পরীক্ষাগারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ইসরায়েলকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে। যুদ্ধের বিশাল খরচ বহন, অস্ত্র কেনা, সামরিক রসদ পরিচালনায় ইসরায়েলের যে মহাশক্তি, তার পেছনে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ওই সব প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বিক্রি, বিনিয়োগ ও সব ধরনের আর্থিক চুক্তি বাতিল চায়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে হামাস। এর জবাবে গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, র্যালি, অনশন, সভা করে যুদ্ধ বন্ধের দাবি করছে।
সর্বশেষ ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা, যা দমনে পুলিশ ডাকে কর্তৃপক্ষ।
তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ২ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সর্বশেষ বুধবার রাতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে ২০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সেখানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইসরায়েলপন্থি ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ ছাড়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণগ্রেপ্তার চালিয়ে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় শত শত পুলিশ। তবু দেশের ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন