করলা চাষে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকের
লালমনিরহাট কালীগঞ্জে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে করলা চাষ। করলা চাষ করে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ পরামর্শ।  কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সবজি চাষি নুর মোস্তফা (৫৬) দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনান্য ফসলের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে তিনি নিজের ২০ শতাংশ জমিতে করেছেন করলার চাষ। গত এক মাসেই তিনি ৩০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আগামী কয়েক মাসে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। তার মতো এমন আরও অনেক চাষি উপজেলায় এ বছর করলার চাষ করেছেন। করলা চাষি আবুল বাশার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ধান, গম, শাকসবজি চাষ করি। কৃষিকাজ করেই আমার জীবন জীবিকা চলে। এ বছর গত এপ্রিল মাসে আমি নিজের ২০ শতাংশ জমিতে উন্নতজাতের করলা চাষ করি। ৩৫ দিন পরে ফলন আসে। প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। প্রতি সপ্তাহে ২ দিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি করলা বিক্রি করছি। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছি। এই মৌসুমে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করব বলে আশা করছি। কাকিনা ইউনিয়নের আরেক চাষি সুমন মিয়া বলেন, আমি আমার ১৫ শতাংশ জমিতে চলতি মৌসুমে করলার চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দামও পেয়েছি। আমার পরিবারের মুখে এখন খুশির হাসি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমার চলবলা ইউনিয়নে প্রায় ৫০ জন কৃষক করলা চাষে সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হয়েছেন চাষিরা। ফলনের শুরুর দিকে স্থানীয় বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে করলা। এখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন করলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। 
১৩ মে, ২০২৪

ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ছাত্রলীগ নেতা
ভাগ্য বদলের আশায় ৩ মাস আগে দুবাই পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. রাকিব উদ্দিন (২১) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। কয়েক দিন আগেই কোম্পানির চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তিন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে লিফট দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। বুক ভরা আশা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়া রাকিব বাড়ি ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে। শুক্রবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতিয়ার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। মো. রাকিব উদ্দিন হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের দক্ষিণ চরইশ্বর রায় হোতারাগো বাড়ি মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে। জানা যায়, চার ভাই এক বোনের মধ্যে রাকিব উদ্দিন চতুর্থ। দ্বীপ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৩ মাস আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দুবাই পাড়ি জমান। সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। গত ১৮ এপ্রিল কর্মক্ষেত্রে লিফট দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন রাকিব। ৯ দিন আইসিইউতে থাকার পর ২৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় রাকিবের লাশ নিজ বাড়িতে আসলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জানাজা শেষে ওমর মুন্সী মসজিদের পাশের পারিবারিক কবরস্থানে দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। রাকিবের বড় ভাই ইরাক উদ্দিন বলেন, আমার ভাই কাজে গিয়ে লিফট দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়। তারপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ৯ দিন পর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। আমাদের সংসার এলোমেলো হয়ে গেল। রাকিবের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, আমার বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। রাকিব পড়াশোনা রেখে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের মাথায় আজ সে কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছে। তার মা রেজিয়া বেগম বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদ উদ্দিন বলেন, রাকিব খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হাতিয়ার অনেকেই বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। যারা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশ গমন করেছেন। রাকিব উদ্দিন ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দুবাই গিয়ে তিন মাসের মধ্যে কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন। সংসারের হাল ধরতে তিনি বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন।
১১ মে, ২০২৪

হেভিওয়েটদের ভাগ্য পরীক্ষা আজ
ভারতে চলমান অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে আজ মঙ্গলবার ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ১ হাজার ৩৩১ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজকের ভোটে। তাদের মধ্যে অমিত শাহ, শিবরাজ সিং চৌহান, বাসবরাজ বোম্মাই, প্রহ্লাদ প্যাটেল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দিগ্বিজয় সিং, নারায়ণ রাণেসহ একাধিক হেভিওয়েট নেতা পরীক্ষায় বসবেন আজ। এদিকে তৃতীয় দফা ভোটের আগে রোববার মধ্যরাতে উত্তর প্রদেশের আমেথিতে হামলা হয়েছে কংগ্রেস অফিসে। হামলার পাশাপাশি সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় সেখানে বেশ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। খবর এনডিটিভির আজ যে ৯৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে সেগুলো হচ্ছে—আসামের ৪, বিহারের ৫, ছত্তিশগড়ের ৭, গোয়ার ২, গুজরাটের ২৫, কর্ণাটকের ১৪, মধ্যপ্রদেশের ৯, মহারাষ্ট্রের ১১, পশ্চিমবঙ্গের ৪, উত্তর প্রদেশের ১০, দাদরা অ্যান্ড নগর হাভেলি এবং দমন অ্যান্ড দিউর ২টি আসনে। আজকের ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হবে ১০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ৪ জন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ একাধিক হেভিওয়েটের। অমিত শাহ, শিবরাজ সিং চৌহান, বাসবরাজ বোম্মাই, প্রহ্লাদ প্যাটেল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দিগ্বিজয় সিং, নারায়ণ রাণের ভোট পরীক্ষা হবে আজ। গতবার এ ৯৩ আসনের মধ্যে ৭৫টিতেই জয়ী হয়েছিল এনডিএ। ৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল অবিভক্ত শিবসেনা। বর্তমানে ইন্ডিয়া ব্লকে থাকা দলগুলো সব মিলিয়ে জিতেছিল ১১টি আসনে। দুটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন নির্দলীয় প্রার্থীরা। একটি আসন জিতেছিল এআইইউডিএফ। পশ্চিমবঙ্গে আজ ভোট গ্রহণ হবে জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, উত্তর মালদহ ও দক্ষিণ মালদহ লোকসভা আসনে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে উত্তর মালদহ আসনটি জিতেছিল বিজেপি। দক্ষিণ মালদহ আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ আসনে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস এবং তৃণমূল জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া ব্লকের সদস্য হলেও রাজ্যে তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছে। উত্তর মালদহ থেকে গতবার বিজেপির খগেন মুর্মু ৮৪ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। দক্ষিণ মালদহ থেকে আবু হাসেম খান চৌধুরী জিতেছিলেন মাত্র ৮ হাজার ভোটে। মুর্শিদাবাদ থেকে গতবার তৃণমূলের আবু তাহের খান জিতেছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ভোটে। জঙ্গিপুর থেকে তৃণমূলের খলিল উর রহমান জয়ী হয়েছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ভোটে। এবার শুধুমাত্র দক্ষিণ মালদহ থেকে কংগ্রেস জয়ী প্রার্থী বদল করেছে। এবার সেই আসন থেকে লড়ছেন আবু হাশেম খান চৌধুরীর ছেলে ইশা খান চৌধুরী। বাকি তিন আসনে জয়ী প্রার্থীরা নিজেদের দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন ফের। এবারও এ চার আসনে গতবারের মতো ফল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে উত্তর প্রদেশের আমেথিতে রোববার মধ্যরাতে কংগ্রেস পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা বাইরে পার্ক করা বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে এবং হট্টগোল সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা রাতেই উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভে নামেন। ঘটনার পরই পার্টি অফিসে ছুটে আসেন কংগ্রেস জেলা সভাপতি প্রদীপ সিঙ্গল। এখানে গত নির্বাচনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরেছিলেন। এবার রাহুল এখানে নির্বাচন করছেন না। এর বদলে তিনি রায়বেরেলিতে মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া আসনে প্রার্থী হয়েছেন। অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় কংগ্রেস বিজেপির স্মৃতি ইরানিকে দুষছে। এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমেথির বিজেপি প্রার্থীকে অভিযুক্ত করে পোস্ট করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, ‘স্মৃতি ইরানি এবং বিজেপি কর্মীরা আমেথিতে ভয় পেয়ে গেছে। পরাজয়ের ভয়ে বিজেপির দুষ্কৃতকারীরা লাঠি, রড নিয়ে কংগ্রেসের পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। অফিসের বাইরে রাখা গাড়িও ভাঙচুর করেছে তারা। আমেথির মানুষ এবং কংগ্রেসের কর্মীদের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন।’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও ফুটেজও শেয়ার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ঘটনার সময় সাধারণ মানুষের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা ঘটনায় পুলিশ নির্বাক। এ হামলা প্রমাণ করছে, আমেথিতে বিজেপি হারছে।’
০৭ মে, ২০২৪

রসগোল্লায় ভাগ্য খুলেছে শরিফের
টেনেটুনে সংসার চলতো শরিফ সর্দারের। টেনেটুনে চলা সংসারে রসগোল্লা তৈরি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে খুলেছে তার। চাঁদপুরে হাইমচরের চরভৈরবীতে দুর্গম গ্রাম এলাকায় রসগোল্লা বিক্রি করে এখন সাবলম্বী তিনি। শরিফ সর্দার নিজেই রসগোল্লা তৈরি করে ছোট দোকানে বিক্রি করেন। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত হোটেলে লোকজন ভিড় করেন লোকজন। শনিবার (৪ মে) ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী বাজারের ইসলামিয়া হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, কড়াইয়ে রসগোল্লা ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে গরম গরম রসগোল্লা বিক্রি করছেন দোকানি শরিফ সর্দার। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে আত্মীয়দের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রসগোল্লা। জানা গেছে, শরিফ সর্দার হচ্ছেন আবুল হাসেম ও মো. নুরজাহান বেগম দম্পতির ছেলে। বর্তমানে তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারসহ ৩ মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সংসারের পুরো খরচটাই এই রসগোল্লা বিক্রি আর হোটেল ব্যবসাকে ঘিরে তিনি সংগ্রহ করেন। তার ব্যবসায়িক এ কাজে আরও ৫ জনের কর্মসংস্থানও হয়েছে। মো. মিন্টু নামে এক যুবক বলেন, আমি শুধু এখানে গরম গরম রসগোল্লা খেতেই আসি। এ গ্রামে এত সুস্বাদু মিষ্টি পাওয়া যায় তা ভাবতেই অবাক লাগে। আমি প্রায়ই রুটির সঙ্গে রসগোল্লা খেতে এখান থেকে কিনে নিয়ে যাই। মিঠুন নামের আরেকজন বলেন, মূল শহরের দোকানপাট অনেকটা দূরে হওয়ায় নদী পাড়ের খেটে খাওয়া মানুষ এ বাজার থেকেই ভালোমন্দ কিনে খায়। তবে বাজারটি পূর্ণতা পেয়েছে শরিফের রসগোল্লাকে ঘিরে। বিয়ে কিংবা উৎসবে আতিথেয়তার জন্য এখান থেকে সবাই রসগোল্লা কিনতে পারে। শরিফ সর্দার কালবেলাকে বলেন, আমার হোটেল ব্যবসা প্রায় ৩০ বছর। রসগোল্লা বানাচ্ছি ১২ বছর ধরে। দিনে ২৭০ টাকা কেজি দরে কমপক্ষে ২৫ কেজি রসগোল্লা বিক্রি করতে পারি। নিজের গোয়ালের গাভীর দুধ দিয়েই রসগোল্লা তৈরি করি। সপ্তাহে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার রসগোল্লার চাহিদা বেশি থাকে। তিনি বলেন, শুরুর দিকে কারিগররা রসগোল্লা বানাত। পরে আমি দেখতে দেখতে শিখে গেছি। এখন আমি নিজেই বানাচ্ছি। কখনো দিনে ৩০/৪০ কেজি রসগোল্লাও বিক্রি করছি। চাহিদা থাকলে দুবেলা এবং স্বাভাবিকভাবে এক বেলাই রসগোল্লা তৈরি করি। সবাই যখন রসগোল্লা খেয়ে ভালো বলে তখন মনে শান্তি পাই। আমি রসগোল্লা তুলনামূলক সীমিত লাভে বিক্রি করি। কেউ যদি আমার কাজে উৎসাহ দেয় আমার কাছে বিষয়টা ভালো লাগে।
০৪ মে, ২০২৪

কৌশিক বসুর নিবন্ধ / যেভাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচারী নেতৃত্ব এবং চরমপন্থি আন্দোলন গতিলাভ করেছে। বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে গণতন্ত্র পশ্চাদপসরণ করেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যখন চাপের মধ্যে পড়ে, তখন আমাদের লালিত আদর্শ, যেমন সকলের জন্য সমান স্বাধীনতা এবং অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয় ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।  গণতান্ত্রিক চর্চা পিছিয়ে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে বড় বড় প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর খবরের দ্রুত বিস্তার অন্যতম। তবে যেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা হলো অনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং রাজনৈতিক বলকানায়নের অদ্ভুত সম্মিলন। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় শক্তিগুলো বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবনের ওপর অসম প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ওই সব মানুষের কোনো রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর নেই বিশেষত তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্ধারণে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেন না। অথচ তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব।  গণতন্ত্রের মূল নীতি হলো, রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের সেই নেতাদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রভাব থাকতে হবে। এই ধারণাটি এতটাই মৌলিক যে এমনকি রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোও নির্বাচন করে, দৃশ্যত নাগরিকদের তাদের নেতা ‘বাছাই’ করার সুযোগ দেয়।  অবশ্য, এই নির্বাচনগুলো বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার জন্য সত্যিকারের কোনো হুমকি হয়ে ওঠে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উত্তর কোরিয়ার ২০২৩ সালের নির্বাচনে কিম জং-উনের ওয়ার্কার্স পার্টি ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখান থেকেই প্রতীয়মান হয় কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর নির্বাচনগুলো প্রহসন মাত্র।  সমস্যাটি বোঝার জন্য, একটি দৃশ্য কল্পনা করা যেতে পারে যে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা শুধু কলম্বিয়া প্রদেশের ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ওয়াশিংটনের প্রতিটি বাসিন্দাদের ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে এবং সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী রাষ্ট্রপতি হবেন। বাকি প্রদেশের ভোট প্রদানের অধিকার বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অধিকার থাকবে না। এই প্রক্রিয়াটি যদি প্রতারণা থেকে মুক্ত এবং স্বচ্ছও হয়, তবে এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষষ্ট্রে গণতন্ত্র রয়েছে বলে বিবেচনা করা কঠিন হবে। কারণ নির্বাচিত নেতারা স্বাভাবিকভাবেই অন্য সব জায়গার আমেরিকানদের চেয়ে ওয়াশিংটনের বাসিন্দাদের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেবেন, কারণ বাকিদের অবস্থান তাদের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার ওপর সামান্যতম প্রভাব ফেলবে না। যদিও এই দৃশ্যটি অনেক দূরের বলে মনে হতে পারে। তারপরও বিশ্বের লোকজন নিজেদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রদেশের মতো একই অবস্থানে খুঁজে পাবে, যেখানে নেতা নির্বাচনে তাদের কোনো অধিকার নেই কিন্তু নির্বাচিত নেতা তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ ও শাসন করছে।। গত চার দশকের ত্বরান্বিত অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত সরবরাহ চেইন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি পুঁজি ও পণ্যের অবাধ প্রবাহকে সহজতর করেছে। এর মানে এই যে বড় শক্তিগুলো এখন মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে সক্ষম। কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। যদিও আমেরিকান নেতা নির্বাচনে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই। সাপ্লাই চেইন ছিন্ন করে বা আর্থিক প্রবাহে হেরফের করে অসংখ্য অর্থনীতিকে ধসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নাগরিকদের মার্কিন নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব নেই।  একইভাবে, ইউক্রেনীয় বা জর্জিয়ান নাগরিকরা রাশিয়াকে শাসন করবে তা নির্ধারণে কোনো প্রভাব রাখতে পারে না, যদিও রাশিয়াকে কে শাসন করবে তার ওপর তাদের ভাগ্য ও মঙ্গল অনেকটাই নির্ভর করে।  বৈশ্বিক গণতন্ত্রের এই অবক্ষয়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ভূরাজনৈতিক পরিণতি হবে ভয়াবহ। যদিও মার্কিন সরকার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অশ্বারোহী পন্থা অবলম্বন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট আমাদের জন্য একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। গত ছয় মাস ধরে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিঃশর্ত সমর্থন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে উপকৃত করেছে। মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং এলিজাবেথ ওয়ারেন যেমন উল্লেখ করেছেন, সাধারণ ইসরায়েলিদের লক্ষ্য, যারা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান, নেতানিয়াহু এবং তার উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক মিত্রদের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন, যারা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চান। ক্ষমতা নিজেদের দখলে রাখতে সংঘর্ষ আরও প্রলম্বিত করতে ইচ্ছুক নেতানিয়াহু ও তার উগ্র ডানপন্থি মিত্ররা।  এতে গণতন্ত্র বিরোধী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। যদি ইসরায়েলের নাগরিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারত, তাহলে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি সম্ভবত ভিন্ন হতো। এই ধরনের নীতি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এজেন্ডার পরিবর্তে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়ের স্বার্থের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতো। তবে ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনে জিতলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিন্তু আমি আশা করি, মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জিতবে। সেক্ষেত্রে আমরা একটি ভিন্ন মধ্যপ্রাচ্য নীতি দেখতে পাব।  এই জটিলতার কোনো সহজ সমাধান নেই। ইসরায়েলিরা মার্কিন নির্বাচনে ভোট দেবে না এবং ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার পরবর্তী নেতা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের প্রসার এবং এর ফলে বিশ্ব গণতন্ত্রের ক্ষয়, বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দুর্বলতাগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরে। আমি যেমন আমার বই দ্য রিপাবলিক অব বিলিফসে বলেছি, রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই বাধ্যতামূলক আইন ও প্রবিধান বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এরিক পসনার এবং ক্যাস সানস্টেইন সঠিকভাবে বলেছেন,  মূল বিষয় হলো যথাযথ নিয়ম প্রণয়ন করা গেলে ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে সেটি বাস্তবায়ন করে। বর্তমান পরিস্থিতি এই বার্তাই দেয় যে, বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষে আমাদের আরও কার্যকর বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করতে সচেষ্ট হতে হবে। কৌশিক বসু: বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো। কপিরাইট: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ২০২৪
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের ভাগ্য চূড়ান্ত হবে কাল
যুগের পর যুগ ধরে জাতিসংঘের সদস্যপদ পেতে চেষ্টা-তদবির করে আসছে ফিলিস্তিন। বিশ্বের বড় বড় দেশ ও নেতাদের অনুরোধ করে আসছেন ফিলিস্তিনি নেতারা। তবে এত বছর পার হলেও শুধু জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষকের মর্যাদা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দেশটিকে। বছরের পর বছর ধরে বৈশ্বিক সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদে আটকে আছে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের আবেদন। তবে আগামীকাল শুক্রবার পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের আবেদনের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হবে। এই ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনিদের আবেদনের প্রস্তাব পাস হলে জাতিসংঘের সদস্যপদের পাশাপাশি কার্যত বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে ফিলিস্তিনের। তবে কূটনীতিকরা বলেছেন, এমনটা কখনো হতে দেবে না ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তাই এই প্রস্তাব আটকে দেবে বিশ্ব সংস্থাটির স্থায়ী সদস্য ওয়াশিংটন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় ফিলিস্তিনের আবেদন নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হবে। খসড়া প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাস হতে হলে প্রস্তাবের পক্ষে কমপক্ষে ৯টি ভোটের প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশকে—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া বা চীন—ভেটো প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এদের কেউ ভেটো দিলে সেই প্রস্তাব আর পাস হবে না। কূটনীতিকরা বলছেন, এবারের প্রস্তাবে পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ পক্ষে ভোট দেবে। তাই প্রস্তাব আটকে দিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। গত ছয় মাস ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। ইসারয়েলি হামলায় সেখানে প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে এই যুদ্ধের মধ্যে আবারও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমধানের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমধানের মূল কথা হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাশাপাশি অবস্থান করবে। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমধানের সমর্থক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এটি নিয়ে জাতিসংঘের কিছু করা ঠিক হবে না। কোনো দেশকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে হলে অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের ছাড়পত্র লাগবে। নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়পত্র দিলে বিষয়টি উঠবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। ১৯৩ সদস্য বিশিষ্ট এই পরিষদের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দিলেই তবে ওই দেশটি জাতিসংঘে প্রবেশ করতে পারবে। তবে এর যে কোনো পর্যায়ে ভেটো দিতে পারে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ঐতিহাসিকভাবে জাতিসংঘে ইসরায়েলের ঢাল হিসেবে কাজ করে আসছে দেশটি। সাধারণত ইসরায়েলবিরোধী কোনো প্রস্তাবই জাতিসংঘে পাস হতে দেয় না তেল আবিবের দীর্ঘদিনের মিত্র ওয়াশিংটন।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ধরলাকে ঘিরে ভাগ্য বদলের আশা
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীরে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ভাগ্যবদলে আশার আলো দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ধরলা নদীকে কেন্দ্র করে সেখানকার মানুষ বেকারত্ব ঘুচিয়ে বদলাতে চাচ্ছেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে আছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। তিনি শুক্রবার (২৮ মার্চ) কুড়িগ্রামের এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন। জানা গেছে, ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ধরলা নদীর তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সেই কথা রাখতে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় ভুটানের রাজা ও রানীর কাছে প্রস্তাব রাখেন কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার। শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকার ধরলা নদীর তীরে বাংলাদেশ ও ভুটানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা জেলার দারিদ্র্যতা, মঙ্গা ও বেকারত্ব ঘোচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।  জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন হলে এ জেলায় দারিদ্র্যতার হার কমবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল। সেইসঙ্গে সেখানকার মানুষ নিজেদের দারিদ্র্যতা মোচন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। জেলার উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশার আলো দেখছেন অনেকেই।  ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশেই গড়ে তোলা হবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘ধরলার তীরে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে জেনে আমরা আনন্দিত। এতে এই এলাকার অবহেলিত চরাঞ্চলের লোকজনের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে।’ মাদ্রাসার সহসভাপতি মহিউদ্দীন খান বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর জন্য একটা মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের এখানে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাই। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে জেলার ভাগ্য বদলে যাবে।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে ঢাকা থেকে মালামাল কিনে ব্যবসা করি। আমার জেলায় নতুন করে কলকারখানা তৈরি হলে আর বাইরে গিয়ে ব্যবসা করতে হবে না। নিজের জেলায় ব্যবসা করতে পারব।’ ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার অনেক এলাকা চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে সেহেতু ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুতগতিতে বাড়বে। তবে যেসব কৃষক চাষাবাদ করছেন তাদের ন্যায্য অধিকার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।’ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মো. শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ‘এ জেলার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে সুযোগ-সুবিধা আর অধিকার বঞ্চিত। জেলাবাসীর দাবি ছিল শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে আমাদের। ফলে আমাদের বন্দরগুলো আরও সচল হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের ধরলা নদীর তীর ঘেঁষে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কের পাশে ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জায়গা অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ভুটানে প্রবেশের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। এতে সহজে যাতায়াত করা যাবে এ পথ দিয়ে। ফলে ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে জেলার আর্থসামাজিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আরও ৮৬ একর জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এগুলো অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া জেলার চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করে এই বিশেষ অঞ্চলটিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ১০ মার্চ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল বলেন, জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঘুরে দেখলাম। ভুটান সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের এই অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর শুধু ভুটান নয় কুড়িগ্রামের মানুষ বেশি উপকৃত হবে। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলের মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটবে।   কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের যোগাযোগ ভালো। কুড়িগ্রামের দুটি স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে। আগের চেয়ে এ জেলার অধিকাংশ মানুষ ভালো জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।’
২৮ মার্চ, ২০২৪

সাভারে চায়না গ্রাম; সবজি চাষেই ভাগ্য ফিরেছে অনেকের
ঢাকার অদূরে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের মেইটকা গ্রামে চাইনিজ সবজি চাষে ভাগ্য বদলেছে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র কুব্বাদ হোসেন অভিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজনের। কোনোরকম উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই চাইনিজ সবজি চাষে সফলতা পেয়ে খুশি এসব তরুণ কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত এসব সবজির বার্ষিক মূল্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি ক্ষুদ্র পরিসরে রপ্তানি হয় বিদেশেও। আর এতেই এই এলাকা এখন পরিচিতি পেয়েছে চায়না গ্রাম নামে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই সবজি চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন কৃষকরা। আর তাই বিষমুক্ত সবজি সংগ্রহ করে তা ভোক্তার কাছে সহজেই সতেজভাবে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে চায়নিজ খাবারের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকে এসব সবজির। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা নিজে করছেন এই সবজি চাষ ও অন্যকে দিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ। সাভারের তেঁতুলঝোড়ার দক্ষিণ মেইটকা ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আদি পেশা কৃষিকে ধরে রেখেছিল ধান চাষের মাধ্যমে। কিন্তু কালের বিবর্তনে তারা অল্প সময়ে ফসল আসার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় সবজি চাষকে। ক্রমান্বয়ে তা বিভিন্ন চায়না সবজি চাষের দিকে মোড় নেয়। আর যার হাত ধরে এসব সবজির চাষাবাদ শুরু হয় তিনি কোব্বাত হোসাইন অভি, ২০০৪ সালে মাত্র পাঁচ বিঘা জমিতে বেবীকর্ণ নামে এক প্রকার চাইনিজ সবজি ও দেশীয় সবজি আবাদের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে ২০০ বিঘার উপরে জমিতে ব্রোকলি, রেড ক্যাবেজ, ক্যাপসিক্যাম, লেটুস, স্যালোরি, থাই জিনজার, পার্সলি, বিটরুট, সুইটকন, বেবিকর্নসহ রং-বেরঙের প্রায় ২৬ প্রজাতির চাইনিজ সবজির চাষাবাদ করছেন। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অভি, অন্যদিকে তার প্রতিষ্ঠিত কৃষক বাংলা এগ্রো প্রোডাক্ট নামের প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় শখানেক শ্রমিকের। বয়সে তরুণ ও শিক্ষিত এই কৃষক একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্যদিকে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড অ্যাওয়ার্ড, দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড সহ সরকারি ও বেসরকারি একাধিক পুরস্কার। তরুণ এই উদ্যোক্তা মনে করছেন এসব সবজি যদি বড় পরিসরে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে বছরে এ খাত থেকে কয়েক কুটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এ ব্যাপারে কুব্বাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা একজন ভেটেনারি চিকিৎসক ছিলেন এর পাশাপাশি তিনি বাড়িতে গরুর খামার করেছিলেন সেই খামারের গরুর খাবারের জন্য বোনা ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া ছোট ভুট্টাগুলো (বেবিকর্ন) একদিন বিক্রির জন্য রাজধানীর গুলশান কাঁচা বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আরও অনেক প্রকার বিদেশি সবজির সাথে পরিচিত হই। সেই থেকেই এসব বিদেশি সবজি চাষের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। এসব সবজি আমাদের দেশীয় সবজির চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করে আমারা দিগুন মুনাফার মুখ দেখি। তবে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত গ্রিন হাউস,  পলিশেড  হাউস, ন্যাটহাউস  সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে কোল্ড স্টোরেজের অভাবে সবজি চাষ ও বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে কোব্বাদ হোসাইন অভির দেখাদেখি দক্ষিণ মেইটকাসহ ঐ এলাকার আশপাশের একাধিক গ্রামের তরুণ ও  শিক্ষিত বেকাররা  বিদেশি এসব সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।  উচ্চমূল্যের এ ফসলগুলোতে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা হলেও বিক্রি করেন উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে। সাভার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ঈশরাত জাহান বলেন, আমরা সম্ভাবনাময় এই খাতটির প্রসারে সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আধুনিক কৃষির সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে এসব মূল্যবান সবজি চাষ করে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এসব সবজি রপ্তানি করা সম্ভব। আর এতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে লাখো বেকারের।
১৬ মার্চ, ২০২৪

শখের বশে পাখি পালনে ভাগ্য বদল মোস্তফার
খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু করেছিলেন পাখি পালন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাখির সংখ্যা বাড়ায় শখ বদলে রূপ নেয় ব্যবসায়। তারপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছাতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার পাখি খামারি গোলাম মোস্তফা। খামারি গোলাম মোস্তফা (৩৮) উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের তেঁতাভূমি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে বাড়ির বিশাল খামারের পাশাপাশি তার রয়েছে দুটি পাখির দোকান। বেকারত্ব ঘুচিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালনে তার সফলতার গল্প এখন বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।  জানা গেছে, দেশি-বিদেশি পাখি পালন করে এখন সফলতার সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছেন মোস্তফা। এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন ও বিক্রি করছেন তিনি। নিজের বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচে সফল হওয়ার গল্প শোনান খামারি গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, শখের বসে খাঁচায় পাখি পোষার ইচ্ছে হয়। তারপর গত ২১ সালের শুরুর দিকে খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর নিয়ে পাখি পোষা শুরু করি। পরে কবুতরের সংখ্যা বাড়ায় কবুতরসহ পাখির খামার করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। পরিকল্পনা মতে খামার স্থাপন করে পাখি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে পাখি বিক্রি করে আমার আয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে আমি এগিয়ে যেতে চাইছি আমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন-চূড়ার দিকে। শখের বসে খাঁচায় পাখি পালন শুরু হলেও এখন আমি পুরোদমে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সঙ্গে পাখির ব্যবস্থা করছি। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং এ উপজেলা ছাড়িয়ে আশপাশের উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও পাখি কিনতে অনেকেই আসছেন। চেষ্টা এবং শ্রম থাকলে সফলতা আসবেই। আমি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।  সম্প্রতি তার পাখির খামার ও দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, তার সংগ্রহে বর্তমানে পাকিস্তানি ব্লু সিরাজি, ব্লাক কিং, মুবভাই, এক্সিবিশন হোমার, পাকিস্তানি হাই-ফ্লামিং, ড্যানিশ টাম্বলার, জার্মান আউল, ক্যাপাচিনো, ময়না ঠোঁট ও মালটেসসহ নানা জাতের কবুতর রয়েছে। কবুতরের পাশাপাশি আছে বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া, কোয়েল, ডায়মন্ড টিয়া, ডায়মন্ড ডোভ কোকাটল, লাভবার, প্রিন্স, বাজরিগার, ডায়মন্ড ঘুঘু, টাইগার মুরগি, তিতির, জাবাসহ প্রায় ৫০-৬০ জাতের পাখি। এ ছাড়াও তার খামারে ও দোকানে রয়েছে খরগোশ, একুরিয়াম ও সামুদ্রিক নানা ধরনের সৌখিন মাছ। খামার ও দোকানের এসব পাখির অনবরত কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ মুখরিত থাকে। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর তা বড় করা হয়। এরপর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। এসব পাখিকে খাবার হিসেবে চিকন চাল, কাউন, চিনা, খুদ ও সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়ানো হয়। বর্তমানে খরচ বাদে গোলাম মোস্তফা মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। ব্যবসায় পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে তার।  স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, মফস্বল শহরে এ রকম পাখির দোকান পেয়ে পাখিপ্রেমীরা সহজেই নানা জাতের পাখি ও কবুতর অনায়াসেই সংগ্রহ করতে পারছে।আমিও তার কাছ থেকে পাখি কিনি। পাখির ব্যবসায় সে সফল। পাখি ক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আগে আমি এসব পাখি কুমিল্লা বা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতাম। এখন ব্রাহ্মণপাড়ায় পাখির দোকান হওয়ায় আমাদের মতো পাখি প্রেমীদের জন্য ভালো হয়েছে। আমি প্রায়ই মোস্তফা ভাইয়ের কাছ থেকে কবুতর ও পাখি নেই। তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমিও বাড়িতে ছোট পরিসরে পাখির খামার করার পরিকল্পনা করছি। এদিকে পশু-পাখি পালনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইজমাল হাসান কালবেলাকে বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে পাখি পালন করা সম্ভব। মোস্তফার মতো উপজেলার অনেক যুবক পশু এবং কবুতর ও নানা জাতের পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। 
১২ মার্চ, ২০২৪
X