কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ধরলাকে ঘিরে ভাগ্য বদলের আশা

কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকার ধরলা নদীর তীরের এই জমিতে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকার ধরলা নদীর তীরের এই জমিতে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছবি : কালবেলা

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীরে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ভাগ্যবদলে আশার আলো দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ধরলা নদীকে কেন্দ্র করে সেখানকার মানুষ বেকারত্ব ঘুচিয়ে বদলাতে চাচ্ছেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে আছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। তিনি শুক্রবার (২৮ মার্চ) কুড়িগ্রামের এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ধরলা নদীর তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সেই কথা রাখতে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় ভুটানের রাজা ও রানীর কাছে প্রস্তাব রাখেন কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার।

শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকার ধরলা নদীর তীরে বাংলাদেশ ও ভুটানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা জেলার দারিদ্র্যতা, মঙ্গা ও বেকারত্ব ঘোচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন হলে এ জেলায় দারিদ্র্যতার হার কমবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল। সেইসঙ্গে সেখানকার মানুষ নিজেদের দারিদ্র্যতা মোচন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। জেলার উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশার আলো দেখছেন অনেকেই।

ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশেই গড়ে তোলা হবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘ধরলার তীরে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে জেনে আমরা আনন্দিত। এতে এই এলাকার অবহেলিত চরাঞ্চলের লোকজনের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে।’

মাদ্রাসার সহসভাপতি মহিউদ্দীন খান বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর জন্য একটা মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের এখানে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাই। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে জেলার ভাগ্য বদলে যাবে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে ঢাকা থেকে মালামাল কিনে ব্যবসা করি। আমার জেলায় নতুন করে কলকারখানা তৈরি হলে আর বাইরে গিয়ে ব্যবসা করতে হবে না। নিজের জেলায় ব্যবসা করতে পারব।’

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার অনেক এলাকা চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে সেহেতু ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুতগতিতে বাড়বে। তবে যেসব কৃষক চাষাবাদ করছেন তাদের ন্যায্য অধিকার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।’

জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মো. শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ‘এ জেলার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে সুযোগ-সুবিধা আর অধিকার বঞ্চিত। জেলাবাসীর দাবি ছিল শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে আমাদের। ফলে আমাদের বন্দরগুলো আরও সচল হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের ধরলা নদীর তীর ঘেঁষে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কের পাশে ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জায়গা অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ভুটানে প্রবেশের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।

এতে সহজে যাতায়াত করা যাবে এ পথ দিয়ে। ফলে ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে জেলার আর্থসামাজিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আরও ৮৬ একর জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এগুলো অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া জেলার চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করে এই বিশেষ অঞ্চলটিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত ১০ মার্চ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল বলেন, জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঘুরে দেখলাম। ভুটান সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের এই অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর শুধু ভুটান নয় কুড়িগ্রামের মানুষ বেশি উপকৃত হবে। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলের মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটবে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের যোগাযোগ ভালো। কুড়িগ্রামের দুটি স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে। আগের চেয়ে এ জেলার অধিকাংশ মানুষ ভালো জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১০ বছরে পাঠাও, রয়েছে মাসজুড়ে অফার

রাকসু নির্বাচন / জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারের ‘ভোট চাইছেন’ শেখ হাসিনা!

এখন পরনির্ভর হয়ে আছি, আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি বদির বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

শহিদুল আলমদের জাহাজসহ ফ্রিডম ফ্লোটিলার সব নৌযান আটক

বানরের আক্রমণে শতাধিক ছাত্রী আহত

মুখ খুললেন রাশমিকা মান্দানা

গুমের শিকার বিশেষ বন্দিদের ‘মোনালিসা’ নামে ডাকা হতো

রাজশাহীতে হাজার ছাড়িয়েছে সাপে কাটা রোগী, মৃত্যু ৩৮

মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে যে ১০ খাবার

১০

চট্টগ্রামের সিকো অ্যারেনাতে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন রবি এলিট গ্রাহকরা

১১

বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া সেই ডেপুটি গভর্নর এবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন

১২

প্রথম ফুটবলার হিসেবে নতুন ইতিহাস গড়লেন রোনালদো

১৩

বাংলাদেশি শাড়ির জাদুতে মুগ্ধ তুরস্ক

১৪

কতদিন পর পর তোয়ালে ধুচ্ছেন? সঠিক সময় ও পদ্ধতি জেনে নিন

১৫

বজ্রপাতে প্রাণ হারানো রাসেদকে ‘চিরঞ্জীব সভাপতি’ ঘোষণা

১৬

ইতালি সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৭

ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারে জন্ম নেওয়া ওমর পেলেন নোবেল

১৮

ডোবায় মিলল অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ

১৯

চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ও শিবিরের ইশতেহার ঘোষণা

২০
X