শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৭ এএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সুপারিশেই আটকা নদীর ভাগ্য

নদীকৃত্য দিবস আজ
সুপারিশেই আটকা নদীর ভাগ্য

‘তের শত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?’ ১৩০০ নদী! সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা এখন রূপকথার গল্প মনে হতে পারে। দখল-দূষণে দিনে দিনে মরছে নদী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বলছে, দেশে নদনদীর সংখ্যা ১ হাজার আটটি। এখন আর নদীতে পালতোলা নৌকার বহর দেখা যায় না। পানিশূন্য নদীতে কোথাও কোথাও চলে চাষাবাদ। দুই যুগ আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে নদী দূষণ হলেও এখন সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। দূষণে নদীর পানি ও নদীনির্ভর প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট হয়েছে। আর দখলের কারণে অনেক নদী ভরাট হয়েছে, নাব্য হারিয়েছে। নদীর ভাগ্য কেবল উদ্যোগ, নির্দেশনা ও সুপারিশের মধ্যেই আটকে আছে। ২০১৯ সালে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে রক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। দখল ও দূষণকারীদের তালিকা হলেও নদী রক্ষায় দৃশ্যমান কার্যকর উদ্যোগ নেই। গবেষণায়ে উঠে এসেছে, গত ৫০ বছরে দখল-দূষণে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী।

এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। নদীর প্রতি মানুষের করণীয় কী, নদী রক্ষায় দায়িত্ব, মানুষের দায়বদ্ধতা কতটুকু—এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে দিবসটি পালন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীকৃত্য নয়, যেন নদীর শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে। নদী রক্ষার জন্য অনেক আইন আছে। তবে সেগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করা হয় না।

নদী গবেষকরা বলছেন, নানা কারণে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশের অনেক নদী। একাদশ শতাব্দীতে দেশে প্রায় দেড় হাজার নদী ছিল। হারিয়ে যেতে যেতে ষাটের দশকে সেই নদীর সংখ্যা ৭৫০-এ এসে দাঁড়ায়। আর এখন প্রবহমান নদীর এ সংখ্যা কমে হয়েছে ২৩০। গত ৫০ বছরেই হারিয়ে গেছে দেশের ৫২০টি নদী। বাকি নদীও এক এক করে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নদী দূষণ ও অবৈধ দখলদারি থেকে ৪৮ নদী রক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় সমীক্ষা চালিয়ে নদী দখলকারী ৩৮ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। দখলদারদের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মুছে ফেলা হয়। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে ওই প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে দখলদারদের নাম বাদ দেয় কমিশন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প শেষ হলেও দখলদারদের তালিকা প্রকাশ না করায় প্রকল্পের পুরো টাকা গচ্চা গেছে। ২০২২ সালে সারা দেশে নদী দূষণকারীদের তালিকা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি প্লান্ট। ঢামেকের তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ঢাকার জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে খ্যাত বুড়িগঙ্গা। শুধু ঢামেক নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) ২২০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের তরল বর্জ্য দূষিত করছে রাজধানীর খাল ও নদনদীগুলোকে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত ২৮০টি উৎসের মধ্যে ২২০টিই ছিল হাসপাতাল। পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত চিঠি দিলেও হাসপাতালগুলো তরল বর্জ্য নির্গমন কমাচ্ছে না।

এক সময় রাজধানীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় নদী। ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীকে রক্ষায় ২০০৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। ঘোষণার ১৪ বছর পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি সেই নির্দেশনা।

নদী দখল নিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী মন্ত্রী-মেয়রসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন। এর পরই তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়।

বিআইডব্লিউটিএর একাধিক প্রতিবেদন বলছে, ধীরে ধীরে নদী দখল হচ্ছে। নদীর তীর দখল ও ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে কারখানা গড়ে উঠছে। নদীতে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর অবস্থান ধরে জরিপ করায় নদী সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

নদীবিষয়ক সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) ২০২২ সালে দেশের ৫৬টি নদীর ওপর জরিপ করে এক-তৃতীয়াংশ নদীতে অতিমাত্রায় দূষণ খুঁজে পায়। শুষ্ক মৌসুমে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫৬টি নদীর মধ্যে ২৫টিরই ৫ মিলিগ্রামেরও কম পাওয়া গেছে, যা মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খাল, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাড়িধোয়া, সিলেটের সুতাং এবং বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতিলিটারে ১ মিলিগ্রামেরও কম পাওয়া গেছে, আর ঢাকা বিভাগের বালু ও তুরাগ নদীতে এর পরিমাণ ২ মিলিগ্রামের কম।

বরিশাল বিভাগের ভোলা খালসহ পাঁচ নদী রামনাবাদ, আন্ধারমানিক, খাপরা ভাঙ্গ ও বলেশ্বর নদী মারাত্মক প্লাস্টিক দূষণের শিকার। ৫৬টি নদীর মধ্যে ১৬টি গৃহবর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণের শিকার। অন্যদিকে ৩৫টি নদী প্লাস্টিক, কলকারখানার বর্জ্য এবং পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হয়েছে। রংপুরের কেবল তিনটি নদী ছাড়া দেশের সব বিভাগের নদীই শিল্পকারখানার দূষণের শিকার। ২০১৬ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল দেশের অন্তত ২৯টি নদী চরম নদী দূষণের শিকার।

আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, দেশের নদনদীগুলো রক্ষায় প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বর্ডার এলাকায় যে নদনদীগুলো আছে, সেগুলোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মধ্যে অন্য যেসব নদনদী আছে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক নদীতে পলি জমে গেছে। এগুলোর প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করে সঠিক ড্রেজিং করতে হবে।

তিনি বলেন, নগরের নদনদীগুলো দূষণ করে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। দখলের কারণে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। নদীতে মাছ নেই। নদীগুলো দখল-দূষণ মুক্ত করতে হবে। নদী বাঁচাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নেয়। এগুলো সুফল বয়ে আনে না, কারণ নদীকে পলিটিক্যালি প্রায়োরিটি করা হয়নি। এটা যত দিন করা না হবে, তত দিন বাংলাদেশের নদনদীগুলো দখল হতেই থাকবে।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, নদী যারা ধ্বংস করেছে বা করছে, তাদের যদি আপনি শাস্তি দিতে না পারেন, একটাও যদি আপনার উদাহরণ না থাকে, তাহলে আপনি কীভাবে নদী রক্ষা করবেন? পৃথিবীর যে জায়গায় আইন একেবারেই বাস্তবায়ন হয় না, সেটা আপনি কীভাবে আশা করবেন? সরকারি কোনো কর্মকর্তা তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব না পালন করার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আমরা কি দেখেছি যে, একজন দূষণকারীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে?

রাজধানীতে নদী রক্ষা কমিশনের নিজস্ব কার্যালয় নেই। পুরানা পল্টনের এনএসসি টাওয়ারের ১৭ তলায় মাসে ৭ লক্ষাধিক টাকা ভাড়ায় চলছে সংস্থাটি। ঢাকার বাইরে কোথাও কমিশনের শাখা নেই। বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি সচিবালয়ে অফিস করেন। প্রতিদিন দুয়েক ঘণ্টার জন্য কমিশনের কার্যালয়ে যান। জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘নদী দখল নিয়ে যে অভিযোগগুলো আসছে, তার সব তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন বরাবর পাঠাচ্ছি। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। আমি তিন সপ্তাহ হলো দায়িত্ব নিয়েছি, মূলত রুটিনওয়ার্কগুলো করছি। কমিশনে প্রচুর কাজ আছে। এত কাজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন সম্ভব নয়। শিগগিরই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনের নিজস্ব কার্যালয়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গণপূর্ত বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উত্তরা বা পূর্বাচলের দিকে ২০ কাঠা জায়গা বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদনদীর প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধান না করে গত বছর নদীর সংখ্যা ১ হাজার আটটি নির্ধারণ করেছে। অথচ নদীমাতৃক এ দেশে আরও ছয় শতাধিক নদনদীর অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। দেশ, মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থে নদী এবং দখলদারের তথ্য ফের সমীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরাই এই বিতর্ক অবসানের একমাত্র পথ।

প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, নদনদী রক্ষা করতে সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা দেখি বহু নদী খুন হয়ে গেছে। এখন যেসব নদী অর্ধমৃত, সেগুলোও কিছুদিনের মধ্যে মারা যাবে। অভিন্ন নদনদীগুলো নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা, পরিবেশের বিপর্যয় বিবেচনা না করে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ এবং বেসরকারি শিল্পকারখানার দূষণ ও দখলের কারণে আমাদের নদনদীগুলো মারা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে নদী ও পরিবেশ রক্ষা করতে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। নদীকে মুনাফার উৎস হিসেবে দেখার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। নদী শুধু রক্ষার কথা বললেই হবে না। দায়ও নিতে হবে। সরকারি সংস্থার নদী দখল বন্ধ, নদী রক্ষা কমিশন, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে কার্যকরী করতে ক্ষমতা দিতে হবে। এই কাজগুলো করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করতে হবে এবং সর্বশেষ, নদী ও পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধার-দেনা করে আলু চাষ, লাভের বদলে কাঁধে ঋণের চাপ

যে শঙ্কায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন টিউলিপ

তিন কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৫

দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

সরাইলে বিএনপির নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

মানিকগঞ্জে নিজ বাড়িতে নারীকে গলা কেটে হত্যা 

ভৈরবে আ.লীগ কার্যালয় থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

আন্দোলন-ধর্মঘটে ‘কার্যত অচল’ রাবি, ব্যাহত শিক্ষার পরিবেশ

রাজবাড়ীতে জমি বন্ধক নিয়ে গাঁজা চাষ, চাষি আটক

টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ তদন্ত প্রতিবেদনে যা ছিল

১০

নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী মারা গেছেন

১১

ভারত থেকে এলো ২৪৫০ টন চাল

১২

নারায়ণগঞ্জে আগুনে পুড়ল দুই কারখানা

১৩

উপসচিব বিতর্ক এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের বাস্তবতা 

১৪

কিশোরগঞ্জে হাসপাতালে ভুল ইনজেকশনে ২ রোগীর মৃত্যু

১৫

আবারও আসছে শৈত্যপ্রবাহ

১৬

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী মালদ্বীপের পাসপোর্ট

১৭

কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নতুন বার্তা

১৮

দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন দাবানলকে ভয়াবহ করছে আরও

১৯

ধুম ৪-এ রণবীর

২০
X