কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন

শ্যামসুন্দর সিকদার
ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন

(গতকালের পর)

এবার বলি যৌথ খতিয়ানের আরেকটি সমস্যার কথা, যাতে খতিয়ানের সঙ্গে বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন হওয়ায় ভোগান্তির কারণ সৃষ্টি করে ভূমি ব্যবহারকারী মালিকদের মধ্যে।

ধরা যাক, কোনো একটা যৌথ খতিয়ানে মালিকরা ক, খ, গ, ঘ, ঙ এবং তাদের অংশ যথাক্রমে ০.৬৯৫০, ০.০২২৫, ০.০২২৫, ০.১৩০০, ০.১৩০০। এই খতিয়ানে তিনটি প্লটে জমির পরিমাণ ৭৫ শতক, ৫ শতক ও ২৮ শতক এবং মোট জমি ১০৮ শতক।

কাজেই তারা তাদের অংশ অনুযায়ী প্রাপ্য হলেন ক=৭৫ শতক, খ= ২.৫ শতক, গ=২.৫ শতক, ঘ=১৪ শতক এবং ঙ=১৪ শতক। বাস্তবে প্রথম প্লটের ৭৫ শতক ক-এর দখলে। দ্বিতীয় প্লটের ৫ শতক খ ও গ-এর দখলে। আর তৃতীয় প্লটের ২৮ শতক ঘ ও ঙ-এর দখলে। তারা মৌখিক বণ্টনমতে এভাবেই শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছিল।

কিন্তু গন্ডগোল বাধায় প্রচলিত বিধান। বলাবাহুল্য, এ বিধান প্রচলিত ছিল আমি যখন এসিল্যান্ড ছিলাম তখনো। অর্থাৎ এ মালিকদের প্রত্যেকের আইনগত হিস্যা প্রতিটি প্লটে (মানে তিনটি প্লটেই), শুধু ভোগকৃত একটি প্লটে নয়। কিন্তু এ বিধান বা প্রচলনটি মালিকদের স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কীভাবে? বাস্তব অসুবিধার কথাটা বলি এখন—ওই বিধান অনুযায়ী মালিক ঘ কিংবা ঙ তার হিস্যামতে তিনটি প্লট হতে পাবে (৭৫×০.১৩০০+৫×০.১৩০০+২৮×০.১৩০০)= ৯.৭৫+০.৬৫+ ৩.৬৪=১৪.০৪ অর্থাৎ ১৪ শতক। তার মানে খতিয়ান দৃষ্টি তাদের স্বত্ব বিদ্যমান তিনটি প্লটেই থাকে। কিন্তু বাস্তবে ভোগদখল করে মাত্র একটি প্লটে। সুতরাং বাস্তবটাই তার জন্য সুবিধাজনক। আর এই সুবিধার কারণে মালিক ঘ কিংবা ঙ নিজ প্রয়োজনে যদি জমি বিক্রি করতে চায়, তবে শুধু দখলকৃত একটি প্লট থেকে তার প্রাপ্য ১৪ শতক জমি বিক্রি করতে পারবে না। ওই একটিমাত্র প্লটের দাগ নম্বর দিয়ে ১৪ শতকের দলিল করে দিলেও নতুন মালিক নামজারি করার সময় আইনত নামজারি পাবেন ওই প্লট থেকে মাত্র ৩.৬৪ শতক জমির। ফলে তিনি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ভূমি অফিসে এখন এটাই প্রচলিত প্র্যাকটিস। কিন্তু নামজারির সময় যখন শুনানি হয়, তখন বাস্তব দখলের বিষয়টি যদি সহ-অংশীদাররা স্বীকার করে মেনে নেয়, তবে সব প্লটের পরিবর্তে প্রাপ্য অংশের দখলমতে এক বা একাধিক প্লটে রেখে দিয়েই এসিল্যান্ড নামজারির চূড়ান্ত আদেশ দিতে পারে। এ বাস্তব দখলের বিষয়টি Quasi judicial matter হিসেবে শুনানিতে বিবেচনায় নিয়ে এসিল্যান্ড তা করার ক্ষমতা রাখে। অথচ সেই প্র্যাকটিস কেউ করে না।

কাজেই এ সমস্যা দূর করার জন্য বাস্তব দখলকে বিবেচনায় নিয়ে যৌথ খতিয়ানের স্বত্ব বিক্রির দলিল সম্পাদন ও নামজারি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা দরকার। আরেকটি শেষ পর্যবেক্ষণের কথা বলি। সেটা হলো, অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনাল হতে রায় পেলেও হিন্দু মালিকদের অনুকূলে ওই রায়ের ভিত্তিতে নামজারি করে দিতে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো খুব গড়িমসি করে। এসিল্যান্ডরা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া আবেদনই গ্রহণ করতে চায় না। এ সমস্যাটির দিকেও ভূমি মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।

সুতরাং ওপরের আলোচনা থেকে জনস্বার্থে নিম্নবর্ণিত সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে:

(১) অনলাইনে খাজনা নেওয়ার জন্য সব ভূমিমালিকের নাম আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। এতে আগে পরিশোধিত খাজনার তথ্য সম্পৃক্ত করে হালনাগাদ শুদ্ধ হিসাব সঠিকভাবে রাখা দরকার।

(২) যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক যেন শুধু তার অংশের জমির জন্য আংশিক খাজনা প্রদান করতে পারে, সেই সুযোগ থাকা দরকার।

(৩) প্রবাসী শ্রমিকরা যদি বিদেশ থেকে তাদের নিজের জমির খাজনা অনলাইনে দিতে চায়, তবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা দরকার।

(৪) অনলাইনে নামজারি করার সময় যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক নিঃস্বত্ববান হলে কিংবা মালিকানায় অংশ হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে তার প্রতিফলন আগের খতিয়ানে কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডরা যেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

(৫) নামজারির সময় প্রতিটি প্লটের শ্রেণি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া দরকার।

(৬) দলিল রেজিস্ট্রি বা নামজারির সময় জমির খাজনা কোন সাল পর্যন্ত পরিশোধিত, তার তথ্যও সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা দরকার এবং খাজনা আদায়ের সময় সঠিক হিসাব ভূমিমালিককে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার।

(৭) যৌথ মালিকানার খতিয়ানগুলোকে প্রচলিত বিধানের পরিবর্তে বাস্তব দখলের ভিত্তিতে রেকর্ড সংশোধন করে শুদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এজন্য একটা পরিপত্র জারি করে নির্দেশনা দেওয়া দরকার। আর যতদূর সম্ভব খারিজ খতিয়ান সৃজন করে তা হালনাগাদ করার একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে ইউনিক ডাটাবেজ তৈরি হবে এবং গণমুখী ব্যবস্থাপনায় ভূমি মালিকরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া খাজনার টাকা হিসাব করতেও সুবিধা হবে।

(৮) যারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছে, তাদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ পরিচালনায় দক্ষ করতে হবে এবং ভূমির ডাটাবেজ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে তুলতে হবে।

(৯) অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা হিন্দুদের জন্য সহজ ও সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকর করে নামজারি দ্রুত করার জন্য যাতে এসিল্যান্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেজন্য নির্দেশনা প্রদান করা দরকার।

(১০) জরিপের সময় কোনো ভূমিমালিকের নামের বানান কিংবা সারবত্তাহীন করণিক ভুল সংশোধনের ক্ষমতা এসিল্যান্ডকে প্রদান করে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা না হয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে পরিপত্র জারি করা দরকার।

লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রবাসে স্বামীদের জিম্মি করে দেশে স্ত্রীদের ধর্ষণ (ভিডিও)

স্নাতক পাসে একাধিক পদে চাকরি দেবে হুয়াওয়ে

চরম দুর্দিনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাঁশ মালী পরিবারের সদস্যরা

দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলেন সরকারি কর্মকর্তা

ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে চাকরি, বয়সসীমা অনির্ধারিত

আ.লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়: রিজভী

৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক হামলা-হুমকির মুখে রিপোর্ট করেন : জাতিসংঘ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সৌদির কঠিন শর্তারোপ

বন্ধুর হয়ে দিচ্ছিলেন প্রক্সি পরীক্ষা, অতঃপর...

১০

‘সানজিদার হাত ভাঙা, কান দিয়ে ঝরছিল রক্ত’

১১

নোবিপ্রবিতে বি ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

১২

যে কারণে আবারও ধোনির সতীর্থ হতে চান মোস্তাফিজ

১৩

নিহত সেনার মায়ের সঙ্গেও মিথ্যাচার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

১৪

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবা

১৫

‘শান্তির সংস্কৃতি’সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত

১৬

হল-ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা

১৭

জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 

১৮

ঢাকার ভেতরে আরেক ঢাকা

১৯

ছাত্র না হয়েও ছাত্রলীগ নেতা থাকেন ঢাবির হলে, করেন ইন্টারনেট ব্যবসাও

২০
*/ ?>
X