সম্পাদকীয় / ভোগান্তি দূর করুন
হৃদরোগের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে দেশের অসহায় মানুষের অন্যতম প্রধান ভরসাস্থল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সার্ভার সমস্যায় রোগী ভর্তি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। হৃদরোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর চিকিৎসালয়ে রোগী সেবার ক্ষেত্রে এই দুরবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হাসপাতালটির লোকাল সার্ভারে (ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার) সমস্যা হয়েছে। তাই হাসপাতালের ভর্তি ও বহির্বিভাগের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ। শুধু হাতে লেখা কাগজে ভর্তি কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেটাও চলছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। ফলে হার্টের নানা জটিলতা নিয়ে ভর্তি অনেক রোগী পরীক্ষা করাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেককেই ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে। অর্ধশত বছর বয়সী সাভারের হেমায়েতপুরের বাসিন্দা আজগর আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন এনজিওগ্রাম করাতে। সোমবার তিনি সাভার থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আসেন এনজিওগ্রাম করাতে। এসে জানতে পারলেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এনজিওগ্রাম সেবা বন্ধ। এভাবে বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে বহু রোগীকে। আমরা জানি, সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসংখ্য রোগী এ হাসপাতালে আসেন। তারা যখন নিজ নিজ এলাকায় তাদের পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না, তখন তাদের বেশিরভাগেরই এ হাসপাতালে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কেননা, তাদের অধিকাংশই আর্থিকভাবে সচ্ছল নন। এ ছাড়া রোগটির চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। সবার পক্ষে এ ব্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে তাদের একমাত্র ঠিকানা হয় জাতীয় এ ইনস্টিটিউটটি। আর এখানে এসে যদি তারা এ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন, তাহলে তাদের কী দশা হয়—এটা সংশ্লিষ্টদের ভাবা দরকার। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ প্রশ্ন করতে হচ্ছে, বিষয়টি কি তারা গুরুত্বসহকারে ভেবেছেন অথবা তৎপর হয়েছেন? তা যে যথাযথভাবে করা হয়নি, এটি স্পষ্ট জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের এ বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে। তিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। কালবেলার পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জানতেন না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা যে প্রকট, সেটা পরিষ্কার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালকের কথায়ও। তিনি বলেছেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের লোকাল সার্ভারে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, তার জানা নেই। বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি। এর আগে অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম দিকে এসি নষ্ট ও অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যার কারণে হাসপাতালটির ছয়টি অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ টানা তিন দিন বন্ধ ছিল। তিন দিন পর সমস্যার আংশিক সমাধান হলে একজন রোগীর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়। সে সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেক রোগীকে। আমরা মনে করি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের এসব চিত্র কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এর জন্য দায়ী নিশ্চিতভাবেই সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা এবং আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব। কেননা, হাসপাতালে সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে আর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা তা জানেনই না—এটা কেমন দায়িত্বশীলতা! মনে রাখতে হবে, যারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রাপ্তি তাদের নাগরিক ও মৌলিক অধিকার; আর যারা সেই দায়িত্ব সম্পাদনের ভার কাঁধে নিয়েছেন, তাদের বেতন হয় এসব মানুষের কষ্টার্জিত টাকায়। আমরা চাই, দ্রুত এ সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন।
১৫ মে, ২০২৪

কিশোরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুত অফিসে কর্মবিরতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি
সারাদেশের মতো কিশোরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। রোববার (৫ মে) সকালে কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ অফিসের ভেতরে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হোন। ব্যানার আর ফেস্টুনে লেখনির মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল ৯টা থেকে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদমর্যাদা সরকার ঘোষিত গ্রেড অনুযায়ী ৬ মাস পিছিয়ে পে-স্কেল ও ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, এপিএ বোনাস সমহারে না দেওয়া, লাইনম্যানদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লাইনম্যান ও বিলিং সহকারী পদায়ন না করা, যথাসময়ে পদন্নোতি না করা, লাইনক্রু লেভেল-১ ও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার (চুক্তিভিত্তিক), বিলিং সহকারী (কানামুনা) চাকুরী নিয়মিত না করা। এ ছাড়া স্মারকলিপিতে অংশগ্রহণ করায় ভোলার এজিএম আইট ও এজিএম অর্থকে সাময়িক বরখাস্ত, সিরাজগ্ঞ্জ-২ এর ডিজিএম (কারিগরি) এজিএম আইটিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সংযুক্ত করায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ ও ভবিষ্যতে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে এ কর্মসূচি পালনের সময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। সেবা নিতে আসা গ্রাহক আলা উদ্দিন বলেন, সকাল ১০টার সময় আমি একটি অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসি। এ সময় কর্মকর্তারা মানববন্ধন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমার অভিযোগ দাখিল করতে পারিনি। তাই চলে যাচ্ছি। তাদের নাকি কর্মবিরতি চলছে। অনেকই এভাবে ফিরে গেছেন।
৩০ নভেম্বর, ০০০১

কিশোরগঞ্জে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে কর্মবিরতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি
সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। রোববার (৫ মে) সকালে কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ অফিসের ভেতরে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হন। ব্যানার আর ফেস্টুনে লেখনীর মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল ৯টা থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদমর্যাদা সরকার ঘোষিত গ্রেড অনুযায়ী ৬ মাস পিছিয়ে পে-স্কেল ও ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, এপিএ বোনাস সমহারে না দেওয়া, লাইনম্যানদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লাইনম্যান ও বিলিং সহকারী পদায়ন না করা, যথাসময়ে পদোন্নতি না করা, লাইনক্রু লেভেল-১ ও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার (চুক্তিভিত্তিক), বিলিং সহকারী (কানামুনা) চাকরি নিয়মিত না করা। এ ছাড়া স্মারকলিপিতে অংশগ্রহণ করায় ভোলার এজিএম আইটি ও এজিএম অর্থকে সাময়িক বরখাস্ত, সিরাজগ্ঞ্জ-২ এর ডিজিএম (কারিগরি) এজিএম আইটিকে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডে সংযুক্ত করায় পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ ও ভবিষ্যতে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে এ কর্মসূচি পালনের সময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। সেবা নিতে আসা গ্রাহক আলাউদ্দিন বলেন, সকাল ১০টার সময় আমি একটি অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসি। এ সময় কর্মকর্তারা মানববন্ধন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমার অভিযোগ দাখিল করতে পারিনি। তাই চলে যাচ্ছি। তাদের নাকি কর্মবিরতি চলছে। অনেকেই এভাবে ফিরে গেছেন।
০৫ মে, ২০২৪

জেনারেটর চলে না ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে
এই বৈশাখের তীব্র গরমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। চলমান এই অব্যাহত লোডশেডিং এ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ও তাদের স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সেবাগ্রহীতার অভিযোগ, সারা দেশে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করেছে সরকার। অথচ এই হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও লোডশেডিংয়ের সময় তা চালানো হয় না। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনসহ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে মাঝরাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় হাসপাতালের জেনারেটর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চালানো সম্ভব হচ্ছে না।   হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিগত ৮ বছর আগে এ হাসপাতালে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইঞ্জিনচালিত ৮ কেভি (কিলো ভোল্ট) ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর বরাদ্দ দেয় সরকার। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি পরিস্থিতিতে এটি বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের কথা। কিন্তু এটি চালানোর জন্য তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে এটি হাসপাতাল বা রোগীদের কোনো কাজেই আসছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সিলিংয়ে ঝুলছে সারি সারি বৈদ্যুতিক পাখা৷ কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সবই বন্ধ। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকা সেবা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনেরা  তীব্র এই গরমে ছটফট করছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের এ সময় রোগী ও তার স্বজনরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করলেও গরম কাটছে কিছুতেই।  রোগীর স্বজনেরা জানান, বিদ্যুৎ যখন চলে যায় তখন অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সে সময় হাতপাখাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাদের দাবি, হাসপাতালে আগত রোগীদের কথা চিন্তা করে লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর বা অন্য বিকল্প উপায়ে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর ব্যবস্থা করা। যাতে  তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয় এই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম থেকে।  শিশু ওয়ার্ডের শয্যায় চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শিশু বৃষ্টিকে (৪)। পাশে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে চুলার আগুনে বাম পায়ের নিচের অংশ দগ্ধ হয় বৃষ্টির। দুইদিন ধরে এ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। বেশি গরম পড়লে মেয়েটা ছটফট করে মেয়েটি। বিদ্যুৎ চলে গেলে এই গরমে একেবারেই কাহিল অবস্থা হয় তাদের। তারা জানান, এটি একেবারে বদ্ধ ঘর। সবসময় ঘরে গরম থাকে। এরপর মানুষের যাতায়াতে গরমের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।  আবু বক্কর সিদ্দিক স্ত্রী জানান, তাদের বেডের ওপর পাখাটি প্রায় অকেজো। কাউকে বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।  রোগীর স্বজন মেঘলা বানু, হাজেরা বেগম, লিলি বেগম ও আকমল হোসেন জানান, দিনে কয়েকবার লম্বা সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ সময় শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বাসহ উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। হাসপাতালে এসে সুস্থ হওয়ার চেয়ে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের রোগীরা। তারাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। রোগীদের স্বস্তির জন্য যা হাতের কাছে পাচ্ছেন তা দিয়েই বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, হাসপাতালের নিজস্ব জেনারেটর রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জ্বালানির বরাদ্দ না থাকায় এটি সব সময় চালানো হয় না। শুধু ওটি বিভাগের জন্য অস্ত্রোপচারের সময় জেনারেটর চালানো হয়।  উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএসও) ডা. রাশেদুজ্জামান জানান, যেখানে জরুরি প্রয়োজন সেখানে জেনারেটর (বিদ্যুৎ) সরবরাহ হয়। জ্বালানি যতটুকু বরাদ্দ পাওয়া যায় সে অনুযায়ী জেনারেটর চালানো হয়।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

দিনভর ভোগান্তি শেষে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট ১২ ঘণ্টার মাথায় স্থগিত ঘোষণা করেছে। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ঐক্য পরিষদ। এর আগে ধর্মঘট কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈঠক ডাকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঐক্য পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। দুপুরে শুরু হওয়া এ আলোচনা শেষ হয় ৬টার দিকে। আলোচনায় কিছু দাবি তুলে ধরেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করেন তারা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা বলেন, আপাতত আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি। কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের নিরাপত্তা চাই। এখন থেকে কাপ্তাই সড়কে পুলিশ পাহারা দেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। যদি আমাদের কোনো গাড়িতে ফের হামলা হয়, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে দিনভর দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ। নতুন ব্রিজ এলাকায় বাস-মিনিবাস না পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ির পথে যেতে কেউ ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়েন ট্রাকে, কেউ ভাড়া করেন মিনি ট্রাক। তুলনামূলক কাছাকাছি দূরত্বে যারা পাড়ি দিচ্ছিলেন, তাদের ভরসা ছিল ভ্যানগাড়ি কিংবা বাইক। বাইক-ট্রাক-ভ্যানগাড়িতে করে অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারলেও তল্পিতল্পা হাতে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ফুটপাত কিংবা সড়কে। জেলা-উপজেলা থেকে কোনো গণপরিবহনও নগরীতে প্রবেশ করেনি। দূরপাল্লার গণপরিবহনেরও একই পরিস্থিতি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল থেকে সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এরপর বেলা গড়াতেই গণপরিবহন সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তপ্ত রোদ যেন সেই দুর্ভোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। নগরের অন্যতম প্রবেশমুখ কাপ্তাই রাস্তা এলাকা। রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, রাঙামাটি, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এই প্রবেশমুখ দিয়েই প্রতিদিন শহরে যাতায়াত করে অন্তত ৮ লাখ মানুষ। দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে টানা চার দিন সড়কটি অবরুদ্ধ ছিল। গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তাওফিক হোসাইন নিহত হন। সহপাঠী মৃত্যুর ঘটনায় টানা চার দিন আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবরুদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা থেকে সরে আসে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে ঘোষণা হয় ৯ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ক্ষতিপূরণ দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন
(গতকালের পর) এবার বলি যৌথ খতিয়ানের আরেকটি সমস্যার কথা, যাতে খতিয়ানের সঙ্গে বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন হওয়ায় ভোগান্তির কারণ সৃষ্টি করে ভূমি ব্যবহারকারী মালিকদের মধ্যে। ধরা যাক, কোনো একটা যৌথ খতিয়ানে মালিকরা ক, খ, গ, ঘ, ঙ এবং তাদের অংশ যথাক্রমে ০.৬৯৫০, ০.০২২৫, ০.০২২৫, ০.১৩০০, ০.১৩০০। এই খতিয়ানে তিনটি প্লটে জমির পরিমাণ ৭৫ শতক, ৫ শতক ও ২৮ শতক এবং মোট জমি ১০৮ শতক। কাজেই তারা তাদের অংশ অনুযায়ী প্রাপ্য হলেন ক=৭৫ শতক, খ= ২.৫ শতক, গ=২.৫ শতক, ঘ=১৪ শতক এবং ঙ=১৪ শতক। বাস্তবে প্রথম প্লটের ৭৫ শতক ক-এর দখলে। দ্বিতীয় প্লটের ৫ শতক খ ও গ-এর দখলে। আর তৃতীয় প্লটের ২৮ শতক ঘ ও ঙ-এর দখলে। তারা মৌখিক বণ্টনমতে এভাবেই শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছিল। কিন্তু গন্ডগোল বাধায় প্রচলিত বিধান। বলাবাহুল্য, এ বিধান প্রচলিত ছিল আমি যখন এসিল্যান্ড ছিলাম তখনো। অর্থাৎ এ মালিকদের প্রত্যেকের আইনগত হিস্যা প্রতিটি প্লটে (মানে তিনটি প্লটেই), শুধু ভোগকৃত একটি প্লটে নয়। কিন্তু এ বিধান বা প্রচলনটি মালিকদের স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কীভাবে? বাস্তব অসুবিধার কথাটা বলি এখন—ওই বিধান অনুযায়ী মালিক ঘ কিংবা ঙ তার হিস্যামতে তিনটি প্লট হতে পাবে (৭৫×০.১৩০০+৫×০.১৩০০+২৮×০.১৩০০)= ৯.৭৫+০.৬৫+ ৩.৬৪=১৪.০৪ অর্থাৎ ১৪ শতক। তার মানে খতিয়ান দৃষ্টি তাদের স্বত্ব বিদ্যমান তিনটি প্লটেই থাকে। কিন্তু বাস্তবে ভোগদখল করে মাত্র একটি প্লটে। সুতরাং বাস্তবটাই তার জন্য সুবিধাজনক। আর এই সুবিধার কারণে মালিক ঘ কিংবা ঙ নিজ প্রয়োজনে যদি জমি বিক্রি করতে চায়, তবে শুধু দখলকৃত একটি প্লট থেকে তার প্রাপ্য ১৪ শতক জমি বিক্রি করতে পারবে না। ওই একটিমাত্র প্লটের দাগ নম্বর দিয়ে ১৪ শতকের দলিল করে দিলেও নতুন মালিক নামজারি করার সময় আইনত নামজারি পাবেন ওই প্লট থেকে মাত্র ৩.৬৪ শতক জমির। ফলে তিনি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভূমি অফিসে এখন এটাই প্রচলিত প্র্যাকটিস। কিন্তু নামজারির সময় যখন শুনানি হয়, তখন বাস্তব দখলের বিষয়টি যদি সহ-অংশীদাররা স্বীকার করে মেনে নেয়, তবে সব প্লটের পরিবর্তে প্রাপ্য অংশের দখলমতে এক বা একাধিক প্লটে রেখে দিয়েই এসিল্যান্ড নামজারির চূড়ান্ত আদেশ দিতে পারে। এ বাস্তব দখলের বিষয়টি Quasi judicial matter হিসেবে শুনানিতে বিবেচনায় নিয়ে এসিল্যান্ড তা করার ক্ষমতা রাখে। অথচ সেই প্র্যাকটিস কেউ করে না। কাজেই এ সমস্যা দূর করার জন্য বাস্তব দখলকে বিবেচনায় নিয়ে যৌথ খতিয়ানের স্বত্ব বিক্রির দলিল সম্পাদন ও নামজারি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা দরকার। আরেকটি শেষ পর্যবেক্ষণের কথা বলি। সেটা হলো, অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনাল হতে রায় পেলেও হিন্দু মালিকদের অনুকূলে ওই রায়ের ভিত্তিতে নামজারি করে দিতে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো খুব গড়িমসি করে। এসিল্যান্ডরা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া আবেদনই গ্রহণ করতে চায় না। এ সমস্যাটির দিকেও ভূমি মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সুতরাং ওপরের আলোচনা থেকে জনস্বার্থে নিম্নবর্ণিত সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে: (১) অনলাইনে খাজনা নেওয়ার জন্য সব ভূমিমালিকের নাম আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। এতে আগে পরিশোধিত খাজনার তথ্য সম্পৃক্ত করে হালনাগাদ শুদ্ধ হিসাব সঠিকভাবে রাখা দরকার। (২) যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক যেন শুধু তার অংশের জমির জন্য আংশিক খাজনা প্রদান করতে পারে, সেই সুযোগ থাকা দরকার। (৩) প্রবাসী শ্রমিকরা যদি বিদেশ থেকে তাদের নিজের জমির খাজনা অনলাইনে দিতে চায়, তবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা দরকার। (৪) অনলাইনে নামজারি করার সময় যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক নিঃস্বত্ববান হলে কিংবা মালিকানায় অংশ হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে তার প্রতিফলন আগের খতিয়ানে কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডরা যেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। (৫) নামজারির সময় প্রতিটি প্লটের শ্রেণি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া দরকার। (৬) দলিল রেজিস্ট্রি বা নামজারির সময় জমির খাজনা কোন সাল পর্যন্ত পরিশোধিত, তার তথ্যও সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা দরকার এবং খাজনা আদায়ের সময় সঠিক হিসাব ভূমিমালিককে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। (৭) যৌথ মালিকানার খতিয়ানগুলোকে প্রচলিত বিধানের পরিবর্তে বাস্তব দখলের ভিত্তিতে রেকর্ড সংশোধন করে শুদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এজন্য একটা পরিপত্র জারি করে নির্দেশনা দেওয়া দরকার। আর যতদূর সম্ভব খারিজ খতিয়ান সৃজন করে তা হালনাগাদ করার একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে ইউনিক ডাটাবেজ তৈরি হবে এবং গণমুখী ব্যবস্থাপনায় ভূমি মালিকরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া খাজনার টাকা হিসাব করতেও সুবিধা হবে। (৮) যারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছে, তাদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ পরিচালনায় দক্ষ করতে হবে এবং ভূমির ডাটাবেজ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে তুলতে হবে। (৯) অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা হিন্দুদের জন্য সহজ ও সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকর করে নামজারি দ্রুত করার জন্য যাতে এসিল্যান্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেজন্য নির্দেশনা প্রদান করা দরকার। (১০) জরিপের সময় কোনো ভূমিমালিকের নামের বানান কিংবা সারবত্তাহীন করণিক ভুল সংশোধনের ক্ষমতা এসিল্যান্ডকে প্রদান করে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা না হয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে পরিপত্র জারি করা দরকার। লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
২০ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দূর করুন
গত ২৩ মার্চ ‘দৈনিক কালবেলা’য় আমার লেখা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় হয়রানি এবং কিছু সুপারিশ’ প্রকাশিত হয়েছিল। আবার কিছুদিন আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যৎসামান্য জমির খাজনা দিতে গিয়ে অবগত হলাম জনসাধারণের আরও কিছু ভোগান্তির বিষয়। বলাবাহুল্য, ১৯৮২ সালে উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্ব ছিল উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার (ইউআরও) কাছে। পরে এ দায়িত্ব এসি(ল্যান্ড)দের ওপর ন্যস্ত করা হয় ১৯৮৮ সালের মধ্যভাগে। আর আমার ব্যাচ (বিসিএস ’৮৪) দিয়েই ভূমি প্রশাসনে এ সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমি খুবই মন খারাপ করেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেসি বাদ দিয়ে আগের ইউআরও অফিসে আমাকে পদায়ন করায়। কিন্তু সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে যোগদান করেই আমি আবেদন করেছিলাম ভূমি প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করার জন্য। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসিল্যান্ড, আরডিসি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদে ৯ বছর ভূমি প্রশাসনে কাজ করতে হয়েছিল। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমি এবং এলএটিসিতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ অধিবেশন পরিচালনা করেছি। তবে আমাদের সময়ের এবং এখনকার প্রজন্মের কর্মকর্তাদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছি। সে প্রসঙ্গ না হয় আজ থাক। এখনকার অভিজ্ঞতাটা সোজা কথায় বলি, খারাপ লেগেছে কিছু বিষয়। কিছু বিষয় আছে, যা প্রায়োগিক ত্রুটির কারণেই জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়েছে— প্রথমত, জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করার জন্য আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই সেবা যারা দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তারা কতটুকু প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত, এতে কিছু নিয়মকানুন কতটা গণমুখী করে প্রয়োগ হয়? তৃতীয়ত, যৌথ খতিয়ানে জমির মালিকদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নতুন কিছু ভোগান্তির বিষয় অবহিত হয়েছি। এখন জমির খাজনা দিতে হয় অনলাইনে। এজন্য যিনি খাজনা দেবেন তার নামে এনআইডি দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় অনলাইনে। এতে অবশ্য প্রথমবার কোনো একটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কাছ থেকে অনুমোদন লাগবে অনলাইনেই। এটা ঠিক আছে। বলা হচ্ছে যে, যেই নামের এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, সেই নামে বাংলাদেশের যত জায়গায় যত জমি আছে, তার সবটাই এ অ্যাকাউন্টে ভেসে উঠবে। ফলে একজন ভূমিমালিক তার সব জমির খাজনা একত্রে পরিশোধ করতে পারবেন। এ উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে চমৎকার। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এখনো একজন মালিকের সব জমি অনলাইনে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ ডাটাবেজ তৈরির কাজটি এখনো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে প্রত্যেক ভূমিমালিক নিজের সব জমির তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তা এন্ট্রি করে নিতে পারেন। তাই এ প্রক্রিয়ায় শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে তা ঠিক হয়ে যাবে। সুতরাং এই অনলাইনে খাজনা প্রদানের ব্যবস্থাটি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এ ব্যবস্থার আরও একটা সুফল হলো, সব ভূমিমালিকের নামে থাকা জমিগুলোর একটা ‘কমপ্রিহেনসিভ ডাটাবেজ’ তৈরি হয়ে যাবে। তখন একটা ‘ইউনিক’ ভূমি প্রশাসনও কার্যকর করা যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা এখনো এ প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। যারা বয়সে প্রবীণ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, তাদের কেউ কেউ এখনো পর্যন্ত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালাতেই জানেন না। তবে তরুণ বয়সের কর্মচারীরা ওই প্রবীণদের অজ্ঞতা সাধারণ জনগণকে বুঝতেই দেয় না। এজন্য এ চ্যালেঞ্জের দিকটা অপ্রকাশিত থেকে যায়। আবার যারা সেবা নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ‘আইটিতে অশিক্ষিত’। তা ছাড়া জায়গা-জমির কাগজপত্র বোঝেন না, এমন অনেক শিক্ষিত মানুষও আছেন। কাজেই সেবাগ্রহণকারী অনেকেই বাধ্য হন অন্য কারও সাহায্য নিতে এবং এতে কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকারও হন (ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় একটা পেশাজীবী শ্রেণি তৈরি হচ্ছে এদের সাহায্য করতে)। যাহোক, এ পরিবেশের সঙ্গেও মানুষ হয়তো একসময় নিজেকে প্রস্তুত করে নেবে। এবার বলি দ্বিতীয় বিষয়ে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার কথা। বিদ্যমান নিয়মকানুন কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করছে, তা বলি— (১) আগে যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিক তার নিজের অংশের জমির খাজনা আংশিক হিসেবে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন অনলাইনে আংশিক খাজনা দেওয়ার সুযোগ নেই বলা হচ্ছে। মালিকদের যে কোনো একজনের একটি এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে পুরো খতিয়ানের খাজনা দিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা উৎসাহ দিচ্ছে। যিনি আংশিক খাজনা দিতে চান, তাকে তার অংশের জমি খারিজ খতিয়ান করে তারপর আলাদা করে খাজনা দিতে পারবেন মর্মে বলা হচ্ছে। তবে এই খারিজ খতিয়ান করা তো সময়সাপেক্ষ। (২) অনলাইনে মিউটেশন পদ্ধতি চালুর পর অন্য আরেকটি সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মিউটেশন করার সময় মালিকের নাম কিংবা জমির পরিমাণ লাল কালিতে কেটে নতুন নাম ও জমির পরিমাণ সংশোধন করে লিখে মিউটেশন চূড়ান্ত করা হতো। এতে কোনো সমস্যা হতো না। আর এখন যৌথ খতিয়ানের কোনো মালিকের পুরো অংশ নতুন কেউ কিনলে অনলাইনে মিউটেশন করার সময় তার নামে নতুন একটা খতিয়ান চালু করে দেওয়া হয় বটে। কিন্তু মূল যৌথ খতিয়ানে ওই বিক্রেতার নাম ও জমির পরিমাণ বাদ দেওয়ার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। এ কারণে খাজনা দিতে গেলে তখন আবার হিসাব-নিকাশে সমস্যাও দেখা দেয় কিংবা পূর্ব খতিয়ানে নাম বাদ না দেওয়ায় পূর্ব মালিকও খাজনা দিয়ে দিতে পারে (আমি নিজে ভুক্তভোগী)। ফলে ল্যান্ড-লিটিগেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে। (৩) গত বছর জমির সাব-কবলা দলিল করার সময় খাজনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেই দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়েছিল। তারপর যথারীতি নামজারি করা হয়েছে। এখন আমার পুরো খাজনার টাকা পরিশোধ করার পর যখন প্রিন্ট কপি পাই, তখন দেখা গেল ওই জমির তিন বছরের বকেয়াসহ খাজনার টাকা নেওয়া হয়েছে। একটু অবাক হলাম। তারপর বুঝলাম যে, গত বছর দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় যেই খাজনা পরিশোধ করা হয়েছিল, তা অনলাইন অ্যাকাউন্টে এখনো এন্ট্রি হয়নি। কাজেই ওই মুহূর্তে আর এ বিষয়ে কিছু করার ছিল না। (৪) খাজনা পরিশোধের প্রিন্ট কপি পাওয়ার পর দেখতে পেলাম, যেই মালিক তার সম্পূর্ণ অংশ জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হয়ে গেছে, তার নামও পূর্বের যৌথ খতিয়ানে রয়ে গেছে। আবার জমির প্লটগুলোর শ্রেণি ভুল লেখা হয়েছে। যেমন নাল স্থলে ডোবা কিংবা বাড়ি স্থলে ডোবা বা ডোবা স্থলে নাল লেখা হয়েছে। এটা হয়তো নতুন নামজারির সময় ভুলে লেখা হয়েছে। সেজন্যই বলেছি যে, সেবাপ্রদানকারীরা কতটুকু প্রস্তুত? (৫) আরেকটি বিষয় হলো, যারা প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রচুর অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠায়, তারা বিদেশ থেকে কীভাবে নিজের জমির খাজনা দেবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনলাইনে খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে কি না? তা জানি না। (আগামীকাল শেষ পর্ব) লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র সচিব, কবি ও গবেষক
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আখাউড়ায় যাত্রী পারাপারে ভোগান্তি
ভারতের আগরতলা ইমিগ্রেশনের সার্ভারে ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পারাপারকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৮টা থেকে আগরতলার ইমিগ্রেশনের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় দুদেশের যাত্রী পারাপার। এতে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সার্ভারের ত্রুটি মেরামত শেষে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক হয়। তবে স্বাভাবিক পারাপার বন্ধ থাকাকালে ভারতের বিমানের টিকেটবাহীদের জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনের মতো সকাল ৮টায় ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়। ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভারতে পাঠানোর পর সোয়া ৮টার দিকে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিএসএফের মাধ্যমে মৌখিকভাবে জানায়, আগরতলা ইমিগ্রেশনের সার্ভার ডাউন আছে। এ কারণে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তারা আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যাত্রী না পাঠাতে অনুরোধ করে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলেন, আমরা আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারাও শূন্য রেখায় আসে। আমরাও শূন্য রেখায় যাই। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা আমাদের যেসব যাত্রীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিট আছে তাদের ভারতে পাঠাতে বলে। আমরা যাদের টিকেট আছে তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভারতে পাঠিয়েছি। তবে সোয়া ১২টার পর ফের যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক হয়। এদিকে সমস্যার কারণে দুদেশের আটকে পড়া যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা চিত্ত দে নামে এক যাত্রী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। আগরতলা যাওয়ার জন্য। এসে শুনি আগরতলার সার্ভার ডাউন। তিন ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। এটা খুবই কষ্টদায়ক। ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মো. খাইরুল আলম বলেন, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সার্ভার সচল হয়েছে। এরপর যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক হয়েছে। উল্লেখ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সাত থেকে আটশ যাত্রী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গমন করেন। সেখান থেকে অনেকেই চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে বিমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গমন করেন।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪
X