বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট ১২ ঘণ্টার মাথায় স্থগিত ঘোষণা করেছে। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ঐক্য পরিষদ। এর আগে ধর্মঘট কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈঠক ডাকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঐক্য পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। দুপুরে শুরু হওয়া এ আলোচনা শেষ হয় ৬টার দিকে। আলোচনায় কিছু দাবি তুলে ধরেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করেন তারা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা বলেন, আপাতত আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি। কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের নিরাপত্তা চাই। এখন থেকে কাপ্তাই সড়কে পুলিশ পাহারা দেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। যদি আমাদের কোনো গাড়িতে ফের হামলা হয়, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে দিনভর দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ। নতুন ব্রিজ এলাকায় বাস-মিনিবাস না পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ির পথে যেতে কেউ ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়েন ট্রাকে, কেউ ভাড়া করেন মিনি ট্রাক। তুলনামূলক কাছাকাছি দূরত্বে যারা পাড়ি দিচ্ছিলেন, তাদের ভরসা ছিল ভ্যানগাড়ি কিংবা বাইক।
বাইক-ট্রাক-ভ্যানগাড়িতে করে অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারলেও তল্পিতল্পা হাতে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ফুটপাত কিংবা সড়কে। জেলা-উপজেলা থেকে কোনো গণপরিবহনও নগরীতে প্রবেশ করেনি। দূরপাল্লার গণপরিবহনেরও একই পরিস্থিতি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল থেকে সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এরপর বেলা গড়াতেই গণপরিবহন সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তপ্ত রোদ যেন সেই দুর্ভোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
নগরের অন্যতম প্রবেশমুখ কাপ্তাই রাস্তা এলাকা। রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, রাঙামাটি, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এই প্রবেশমুখ দিয়েই প্রতিদিন শহরে যাতায়াত করে অন্তত ৮ লাখ মানুষ। দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে টানা চার দিন সড়কটি অবরুদ্ধ ছিল।
গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তাওফিক হোসাইন নিহত হন। সহপাঠী মৃত্যুর ঘটনায় টানা চার দিন আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় অবরুদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা থেকে সরে আসে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে ঘোষণা হয় ৯ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ক্ষতিপূরণ দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।