৭০০ বছরের পুরোনো গির্জাকে মসজিদ বানালেন এরদোয়ান
প্রায় সাতশ বছর আগের একটি অর্থোডক্স গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ২০২০ সালে এরদোয়ান যখন গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তর করার নির্দেশ দেন, তখন ইউরোপের দেশ গ্রিস এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। সেই গির্জাটিই সোমবার মসজিদ হিসেবে নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। মসজিদে রূপান্তরিত হওয়া গির্জাটি একটি বাইজেন্টাইন আমলের স্থাপনা। এটি কোরা গির্জা নামেই পরিচিত। ১৪৫৩ সালে অটোমান তুর্কিরা কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর এটিকে কারিয়া মসজিদে রূপান্তরিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমানদের পতন হলে তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তখনই আংকারার কারিয়া মসজিদ হয়ে যায় কারিয়া জাদুঘর। প্রায় শতাব্দীকাল পর কারিয়া জাদুঘরকে আবার কারিয়া মসজিদ হিসেবে ফিরিয়ে আনলেন এরদোয়ান। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে কোরা গির্জাটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে যথেষ্ট মূল্যবান একটি স্থাপনা। কারণ গির্জার ভেতরে রয়েছে ১৪শ শতকের ফ্রেস্কো আর্ট, যার শিল্পমূল্য অসীম। কাঁচা দেয়ালের ওপর রঙের আঁচড়ে আঁকা এসব চিত্রকর্ম তৎকালীন শৈল্পিক উৎকর্ষতার চিহ্ন বহন করে। গির্জাটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করার পর যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ইতিহাসবিদদের একটি দল মূল গির্জার এসব চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধার করে। চার বছর আগে যখন কোরা গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তরের আদেশ দেওয়া হয়, তখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ গ্রিস। এ ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিল দেশটি। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে নিজের ইচ্ছায় অটল থাকেন এরদোয়ান। যদিও এরদোয়ানবিরোধীদের মতে, এই কাজের মধ্য দিয়ে নিজের জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করার মতো ঘটনা তুরস্কে এটিই প্রথম নয়। ২০২০ সালে ইউনেসকো কর্তৃক সুরক্ষিত আয়া সোফিয়ার ঘটনাও অনেকটাই কারিয়া মসজিদের মতোই। ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়া প্রথমে ছিল একটি প্রাচীন গির্জা। ভবনটিকে মসজিদ, তারপর জাদুঘর এবং তারপর আবার মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। সে ঘটনায় তুরস্কসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একজন জনপ্রিয় মুসলিম শাসক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
০৭ মে, ২০২৪

শুভ্রতার প্রতীক মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার আট মিনারবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদ
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর থেকে পূর্বে গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম ইসমানিরচর। এটি হোসেন্দী ইউনিয়নের একেবারে দক্ষিণ দিকের একটি জনপদ। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। ১৯৪১ সালে গ্রামটিতে কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হাত ধরে নির্মিত হয় ইসমানিরচর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওই জনপদের মুসলমানরা দীর্ঘ প্রায় ৮৪ বছর পর মসজিদটির পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। পরে মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তাজুল ইসলাম খাঁনসহ গ্রামবাসীর হাত ধরে ৮ শতাংশ জমির উপরে ৫৫ স্কয়ার ফিট প্রস্থ ও ৫২ স্কয়ার ফিট দৈর্ঘ্যের তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটির পুনর্নির্মাণ শুরু হয় ২০১৮ সালে। মসজিদের ভিতরে মোজাইক বিশিষ্ট কারুকার্যের মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখানে অ্যারাবিয়ান মসজিদগুলোর ডিজাইন অনুসরণ করে কারুকার্য করা হয়েছে। মসজিদটির ভিতরের মেহেরাব থেকে শুরু করে বাইরের আটটি মিনারেও চোখ জুড়ানো বিভিন্ন নকশা আঁকা হয়েছে, ফলে মসজিদটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  সরেজমিনে দেখা যায়, ৮ শতাংশ জায়গার ওপর রড, সিমেন্ট, সুড়কি ও ইট পাথর দিয়ে মসজিদটি তৈরির পর কারুকার্য আর সাদা রং দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এর সৌন্দর্য। মসজিদের ছাদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে চারটি করে আটটি নয়নাভিরাম মিনার। তবে মাঝখানে আরও একটি বড় গম্বুজ তৈরি করার ইচ্ছে রয়েছে এলাকাবাসীর। মসজিদটির ভিতরে নিচতলায় বিভিন্ন ধরনের সুনিপুণ কারুকার্যের মেলবন্ধনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার দরজার পূর্ব পাশে রয়েছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ না হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে নিচতলার মতোই কারুশিল্পের নকশা থাকবে সেখানে। মসজিদটি নির্মাণে রাজমিস্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন রাজশাহীর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করে সাড়া ফেলেছেন। এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসা কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করার আগে তারা চেয়েছেন জেলার সব থেকে সুন্দরতম মসজিদ তৈরি করতে। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এক একটি মসজিদের ডিজাইন দেখে জ্ঞানলাভ করার চেষ্টা করেছেন তারা। সুন্দর মসজিদের খোঁজ করতে করতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চর ডুমুরিয়ার সামারচর এলাকার একটি মসজিদের সন্ধান পান। পরে সেই মসজিদের আদলে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে মসজিদটির সৌন্দর্য আরও ফুটিয়ে তোলার জন্য সামারচরের মসজিদটির স্ট্রাকচার থেকে কিছুটা ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়। ৮টি মিনার বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করতে এখন পর্যন্ত আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। আশপাশের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হলে মসজিদটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের। তবে আল্লাহর ঘর নিয়ে তারা কোনো প্রতিযোগিতামূলকভাবে মসজিদটি নির্মাণ করেননি। এরইমধ্যে মসজিদটির নান্দনিক রূপ মুগ্ধ করেছে মুসল্লিসহ স্থানীয় বাসিন্ধাদের। প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক আসেন মসজিদটি দেখতে। ইতোমধ্যে গজারিয়া উপজেলার সব থেকে সুন্দর মসজিদের তকমা পেয়েছে মসজিদটি। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলার সুন্দরতম মসজিদগুলোর মধ্যে সেরা ১০ এ জায়গা করে নিয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ বলছেন, মসজিদের পাশে থাকবে একটি ইসলামিক গ্রন্থাগার। যেখান ইসলামের জ্ঞান অর্জন করার সব ধরনের পবিত্র বই থাকবে। তা ছাড়া একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।  মসজিদের সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম খান জানান, মসজিদটি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাদের। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করে মুন্সীগঞ্জ জেলার শেষ্ঠ মসজিদ করার চেষ্টা করেছেন। এই মসজিদের আরও উন্নয়নে দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
০৩ মে, ২০২৪

বরিশালে মসজিদ থেকে তাবলিগ জামাতের মাংস চুরি
বরিশালে তাবলিগ জামায়াতের মুসল্লিদের জন্য রান্নার উদ্দেশ্যে রাখা ১৩ কেজি গরুর মাংস চুরির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১ মে) দুপুরে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার দারুল মোকাররম জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনার পর স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ মাসে এ মসজিদে অর্ধডজন চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি মুসল্লিদের। এর আগে বুধবার সকালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে ১৯ জন মুসল্লি ৪০ দিনের চিল্লায় এ মসজিদে আসেন। এ খবরে বরিশালের স্থানীয় তাবলিগ জামায়াতের সাথীরা ছুটে এসে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য মাংস কিনে রাখেন। দুপুরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মাংস রেখে তাবলিগের সাথীরা জোহরের নামাজ পড়তে গেলে সেই মাংস চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তারা। তাবলিগ জামায়াতের সাথী ও স্থানীয়রা জানান, মসজিদ থেকে বিভিন্ন সময় অনেক কিছু চুরি হলেও ১৩ কেজি গরুর মাংস চুরির ঘটনা এটাই প্রথম। মাংস চুরির পর পরই ৬ হাজার টাকাসহ একটি মানিব্যাগ ও একটি সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। একইদিন মসজিদ কম্পাউন্ডে ৩টি চুরির ঘটনায় হতবাক সবাই। মসজিদ কমিটির সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, চুরির রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী ধরতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নাফিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে শুনেছি। এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরীতে হঠাৎ করে চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুরির ঘটনা রোধ করতে কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি অচিরেই চুরি বন্ধ হবে।
০২ মে, ২০২৪

বিচিত্র / পাকিস্তান সংসদের মসজিদ থেকে ২০ জোড়া জুতা চুরি
মসজিদ থেকে জুতা চুরির ঘটনা প্রায় শোনা যায়। তাই বলে সংসদ ভবনের মসজিদ থেকে সংসদ সদস্যদের জুতা চুরির ঘটনা নিশ্চয় শোনেননি। তবে ঠিক এ ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের সংসদ মসজিদে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এক-দুই জোড়া নয়, অন্তত ২০ জোড়া জুতা চুরি হয়েছে। খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে। বিড়ম্বনার মুখে পড়েছে দেশটি। সংসদ ভবনের বহুস্তরের নিরাপত্তা টপকে জুতাচোররা কীভাবে ঢুকে পড়ল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, ওই মসজিদটি পাকিস্তানের সংসদ ভবন চত্বরেই। এমপি থেকে সাংবাদিক, ভবনের কর্মী সবাই সেখানে নামাজ পড়েন। গত শুক্রবার নামাজ শেষে এমপিসহ অন্যরা বেরিয়ে দেখেন অন্তত ২০ জোড়া জুতা উধাও। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তারা খালি পায়ে সংসদ ভবনে যান। জাতীয় সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার সময়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব ছেড়ে কোথাও গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে এ ঘটনা ঘটিয়েছে চোররা। এখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ইতিহাস / প্রাচীন নিদর্শন সাহাবা আমলের মসজিদ
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শন ৬৯ হিজরিতে সাহাবা আমলে তৈরি ‘হারানো মসজিদ’। রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে মসজিদটি অবস্থিত। পরে এটি ‘সাহাবায়ে কেরাম মসজিদ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজার ওই স্থানটি বহুদিন ধরে ছিল পতিত জঙ্গল। হিংস্র জীবজন্তু, সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে কেউ ওই স্থানে যেতে সাহস পেত না। পরে জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রাচীনকালের তৈরি ইট। যার মধ্যে ছিল ফুল অঙ্কিত। মাটি ও ইট সরাতে গিয়ে একটি পূর্ণ মসজিদের ভিত বেরিয়ে আসে। এ সময় একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। যার মধ্যে স্পষ্ট অক্ষরে আরবিতে লেখা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ হিজরি সন ৬৯। তখনই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন, এটি একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। পরে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার নামকরণ করা হয় ‘সাহাবায়ে কেরাম মসজিদ’। সদর থেকে মাইক্রোবাস, বাস কিংবা রিকশা নিয়ে হারানো মসজিদে যাতায়াত করা যায়। বর্তমানে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। প্রাচীন এই মসজিদটি দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। তারা মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেন। আবার অনেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে মানত করেন। মসজিদ ঘিরে তৈরি হয়েছে হাফেজিয়া মাদ্রাসা। সেখানে রয়েছে দোকানপাট। হারানো মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. জাকারিয়া বলেন, প্রাচীন এই মসজিদের নিদর্শন হিসেবে এখনো বেশ কিছু ইট রয়েছে। রয়েছে প্রাচীন কারুকাজে তৈরি ইমাম সাহেবের খুতবা পড়ার মেহরাব। মসজিদের ভেতরে এখনো রয়েছে প্রাচীনকালে এই মসজিদে প্রবেশের গলি, যা কাচ দিয়ে ঢেকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার দজলা ও ফোরাতের মতো ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি গণ্য করা হয়। রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাকে বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহারের কথা লিপিবদ্ধ আছে। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পাড় ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের যাতায়াত ছিল। হারানো মসজিদটি সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। একটি কমপ্লেক্সসহ ঐতিহাসিক প্রাচীন এই মসজিদটি আরও সুন্দর করে তৈরির পরিকল্পনা করছে একটি দাতা সংস্থা। এটি নির্মাণ হলে হলে প্রাচীন হারানো মসজিদ হবে মুসলমানদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

পাঁচশ বছরের সাক্ষী বাবা আদম মসজিদ
মুন্সীগঞ্জের সুফি সাধক বাবা আদম শহীদ হওয়ার প্রায় ৩০০ বছর পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে ১৪৭৯ সালে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন আবু জাফর শাহের ছেলে বিক্রমপুরের শাসক মহান মালিক কাফুর শাহ একটি মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট কারুকার্য খচিত নয়নাভিরাম মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৪৮৩ সালে। এরপর থেকেই এ মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক মসজিদটির এখন জীর্ণ দশা। মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ইসলাম প্রচারের শুরুর দিকে বাবা আদম নামে ছিলেন একজন সুফি সাধক। ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিবিজড়িত শহর তায়েফে ১০৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনায় বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) এর সাহচর্য পেতে ইরাকের বাগদাদে আসেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ১১৫২ সালে ১২ জন আউলিয়া নিয়ে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের দরগাবাড়ি এলাকায় আসেন। ১১৭৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের রাজা বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাকে। শাহ হুমায়ুন কবির ‘দ্য ব্যাটল অব কানাই চাংগু’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১১৫২ খ্রিষ্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রাচীন রামপালনগরে ধর্ম প্রচারের জন্য বাবা আদমের আগমন। তিনি মুন্সীগঞ্জ এলাকার কপালদুয়ার, মানিকেশ্বর ও ধীপুরে তিনটি খানকাহ নির্মাণ করে ইসলাম প্রচার করেন। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, বল্লাল সেন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বশবর্তী হয়ে স্থানীয় মসজিদে আজান দেওয়া ও গরু জবেহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বাবা আদম দমবার পাত্র ছিলেন না। তিনি প্রতিবাদ করেন। পরবর্তী সময়ে ১১৭৮ সালে বিক্রমপুরের কালাইচং ময়দানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধ ১৫ দিন স্থায়ী হয়েছিল। যুদ্ধের প্রথম ১৪ দিন জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়নি। শেষ দিন রাজা বল্লাল সেন নিজে যুদ্ধে নামেন। এই যুদ্ধে বল্লাল সেন পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা করেন। তিনি বিপুল মুসলমান বাহিনী দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যান এবং যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় বল্লাল সেন ২০ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব করেন। বাবা আদম সরল বিশ্বাসে তা মেনে নেন; কিন্তু সেই রাতেই ঘটে বিশ্বাসঘাতকতা। দরগাহ বাড়িতে এশার নামাজের পর বাবা আদম মোরাকাবা থাকা অবস্থায় বল্লাল সেন তার তরবারি দিয়ে তাকে হত্যা করেন। বাবা আদম মসজিদ (খতিব) মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রায় ৫৩৯ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ সদরের দরগাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাবা আদম মসজিদটি ১৪৮৩ সালে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুর নির্মাণ করেন। শহীদ বাবা আদমকে মিরকাদিমের দরগাবাড়িতে দাফনের পর তার মাজারের পাশে নির্মাণ করা হয় এই মসজিদ। এটি ছিল তার মৃত্যুর ৩১৯ বছর পরের ঘটনা। বাবা আদম মসজিদ (সদস্য) মোহাম্মদ হোসেন রেনু বলেন, বাবা আদমের নামে নির্মিত এ মসজিদটি দেখতে বছরজুড়ে দরগাবাড়িতে দেশ-বিদেশে থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসেন। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখা কিংবা কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা এ স্থাপনাটি সংরক্ষণে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উচিত দ্রুত এটি সংরক্ষণ করা। মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার দরগা বাড়ি গ্রামে এর অবস্থান। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে চার কিলোমিটার পথ পেরুলেই বাবা আদম মসজিদ। আর ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে সড়কপথে মসজিদের দূরত্ব মাত্র ২৮ কিলোমিটার। সদরঘাট থেকে নৌপথে মিরকাদিম লঞ্চঘাটে নামার পর আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তারিত ভিত্তি এলাকা দৈর্ঘ্যে ৪৩ ফুট এবং প্রস্থে ৩৬ ফুট। এর দেয়াল ইটে নির্মিত, যা প্রায় ৪ ফুট প্রশস্ত। ইটের আকার ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি। এগুলো লাল পোড়ামাটির ইট। সম্মুখভাগে তিনটি খিলানাকৃতির প্রবেশ পথ রয়েছে, যার মাঝেরটি বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। অভ্যন্তরভাগে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। আর পূর্ব দেয়াল মসজিদের সামনের ওপরের দিকে রয়েছে ফারসি ভাষায় খোদাই করা কালো পাথরের ফলক। মসজিদের ভেতরে ঢুকে সামনে গেলে চার কোনায় চারটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ চোখে পড়ে। মসজিদের খিলান, দরজা, স্তম্ভের পাদদেশ, মেঝে ও ছাদের কার্নিশের নিচে ইট কেটে মুসলিম স্থাপত্যকলার অপূর্ব নকশাও লক্ষ্য করা যায়।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

মসজিদের জন্য দান করা ডিমটি হয়ে গেল সোনার চেয়ে দামি
মসজিদ নির্মাণে গ্রামবাসী অনুদান সংগ্রহ করছিলেন। সেই দানে শরিক হওয়ার ইচ্ছে জাগে এক গরিব লোকের। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় একটি ডিম দান করেন। তিনি নিজেও জানতেন না এ ডিম সোনার চেয়ে দামি।  জানা গেছে, দান করা ডিমটি প্রায় আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে পুরো গ্রামে হৈচৈ। খবর এনডিটিভির। ঘটনাটি ঘটেছে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে। এখানের সোপোরের গ্রামবাসীরা মালপোরা গ্রামে মসজিদ নির্মাণের জন্য অনুদান সংগ্রহ করছেন। এ মসজিদের জন্যই ডিমটি দান করা হয়। রোববারের (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানায়, মসজিদ কমিটি অন্যান্য দানের মতো ডিমটি সানন্দ্যে গ্রহণ করে। পরে সেটিকে নিলামের জন্য তোলা হয়। মুহূর্তে খবরটি আশপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের জন্য ওই ব্যক্তির সরলতা গ্রামবাসীদের আকৃষ্ট করে। নিলামে একের পর এক ডিমটি হাতবদল হতে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা অনুদান সংগ্রহ বাড়াতে বারবার ডিমটি দান করে নিলামে তোলেন। এতে একপর্যায়ে ডিমটি ২ লাখ ২৬ হাজার রুপিতে বিক্রি হয়। পুরো টাকা মসজিদের জন্য দান করেন নিলামকারীরা। মসজিদ কমিটির একজন সদস্য সংবাদমাধ্যমটিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  মসজিদকে আল্লাহর ঘর হিসেবে সম্মান করা হয়। ইসলাম ধর্মে মসজিদ নির্মাণ বেশ সওয়াবের কাজ। কোনো মুসলমান মসজিদ নির্মাণে অংশ নিলে ওই মসজিদে যত দিন ইবাদত করা হবে, তিনি সওয়াব পাবেন। এ ছাড়া জান্নাতে তিনি বিশেষ প্রতিদান পাবেন বলেও ইসলামে প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
১৫ এপ্রিল, ২০২৪

সবজি বিক্রির টাকায় মসজিদ বানালেন বৃদ্ধ
বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মসজিদ বানিয়েছেন হারুন অর রশীদ হাওলাদার (৬৮)। তিনি ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মৃত মেনাজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। জানা যায়, ত্রিশ বছর ধরে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন তিনি। এটাই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। পরিবারে সদস্য ছয়জন। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সবজি বিক্রি করার টাকা জমিয়ে একদিন তিনি হজ পালন করবেন। সঙ্গে দেশে একটি মসজিদও নির্মাণ করবেন। তাই কষ্ট করে অল্প অল্প করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। হারুন অর রশীদ একদিন ভেবে দেখলেন যদি তিনি হজ করেন তাহলে তার একার সওয়াব হবে। কিন্তু যদি তিনি একটা মসজিদ নির্মাণ করেন তাহলে এলাকার সবাই সেখানে নামাজ পড়তে পারবেন।  যেই চিন্তা সেই কাজ। জমানো টাকা দিয়ে তিনি জমি কিনে নির্মাণ করলেন শাহী জামে মসজিদ। হারুন বলেন, সবজি বিক্রি করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে রামপুর এলাকায় জমি কিনি। এরপর সেখানে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেছি। ওই এলাকার আশপাশের কোনো গ্রামে মসজিদ না থাকায় সবাইকে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়। বৃষ্টির মৌসুমে এলাকার মুসল্লিদের নামাজ পড়তে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে যেতে কষ্ট হয়। অনেকেই যায় না। বাড়িতেই নামাজ পড়ে। তাই চিন্তা করলাম হজে না গিয়ে সেই টাকা দিয়ে এই এলাকার মানুষের জন্য মসজিদ নির্মাণ করি। তাতে এই এলাকার মানুষের কষ্ট কম হবে। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো মানুষের সহযোগিতা নেওয়া হয়নি। জমি কেনা থেকে মসজিদ নির্মাণ সবকিছুই আমার টাকায় করেছি। এখনো মসজিদের অনেক কাজ বাকি আছে। মসজিদের টাইলস, অজুখানা, পুকুরে ঘাটলা, ফ্যান, মাইক, মসজিদের সামনে একটা বারান্দার কাজ বাকি আছে। এছাড়া হুজুরের থাকার জন্য একটা রুম করতে হবে। যদি কেউ সহযোগিতা করে, তাহলে মসজিদের বাকি কাজগুলো করতে পারব।  মসজিদের পাশে বাচ্চাদের জন্য একটা মাদ্রাসা নির্মাণ করতে চান তিনি। তিনি বলেন, আশা আছে সবকিছুই করব, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।  এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী তালুকদার বলেন, আমার ওয়ার্ডে মুসলিম পরিবার কম থাকায় এই এলাকায় মসজিদ নেই। তাই হারুন ভাই সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা জমিয়ে জমি কিনে একটা মসজিদ নির্মাণ করছেন। এখনো মসজিদের অনেক কাজ বাকি আছে। যদি কেউ সহযোগিতা করত তাহলে কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হতো। মসজিদের মুসল্লি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই এলাকার আশপাশে কোনো মসজিদ নেই। যে মসজিদ আছে সেখানে নামাজ পড়তে যেতে আসতে ২০ টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে। হারুন ভাই আমাদের এখানে মসজিদ নির্মাণ করায় আমাদের এলাকার মানুষের নামাজ পড়তে যেতে আর কষ্ট হবে না গাড়ি ভাড়াও যাবে না। ঝালকাঠি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল কাইয়ুম বলেন, সবজি বিক্রির টাকায় জমি কিনে মসজিদ নির্মাণ করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। তার মতো একজন সবজি বিক্রেতা হয়েও মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এটা আসলেই একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুল হক বলেন, মসজিদটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করেছেন। এখানে আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা সম্ভব না। ওখানে মসজিদ নির্মাণ না করে তার পেছনে ২০০ গজ দূরে একটা পাঞ্জেগানা মসজিদ (ছোট কাঠের তৈরি একটি মসজিদ) আছে সেট পুনরায় নির্মাণ করলে ভালো হতো।
১৩ এপ্রিল, ২০২৪

‘আ.লীগের দীর্ঘ ক্ষমতার সুফল পাচ্ছে মানুষ’
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, সাম্প্রদায়িকরা এক সময় মানুষের মাঝে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করত। তারা মানুষকে ভুল তথ্য দিত। তবে এখন আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় জনগণ তার সুফল ভোগ করছে।  শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জুমার নামাজ আদায় ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি উপজেলায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছে। আধুনিক চিত্তাকর্ষক নিদর্শন ও উন্নত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এসব মসজিদে ১ হাজার ২০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এরকম সারা দেশে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কিছুর অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, আজ সব চেয়ে খুশির বিষয় যুবকরাও এখন রমজানে ইতেকাফ থাকে। কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমাদের চলতে হবে। কবরে সদকায়ে জারিয়া ও আমল ছাড়া আমাদের সঙ্গে আর কিছুই যাবে না।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইশতিয়াক ইমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক ও চেয়ারম্যান নোয়াব আলী, সুগ্রীব মজুমদার দোলন, চেয়ারম্যান আমিন শরিফ, এম এ কাইয়ুম শাহ, কলিম উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, আজিজুল হক বাবুল, মো. ইদ্রীস, সাংগঠনিক সম্পাদক সগীর আজাদ, আবদুল মালেক, যুবলীগের আহ্বায়ক শওকত ওসমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিদোয়ানুল হক রহিম, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হকসহ প্রমুখ।
১২ এপ্রিল, ২০২৪

বেলজিয়ামের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণ
প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন বোরহানউদ্দিন চৌধুরীবাড়ি জামে মসজিদ। বেলজিয়াম থেকে কলকাতা হয়ে আনা হয়েছিল মসজিদটির নির্মাণসামগ্রী। ভারতের কলকাতা থেকে আসা শ্রমিকরা ৩ থেকে ৪ বছরে মসজিদটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। ১৮৬০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয়েছে। শুধু মসজিদ নয়, জমিদার বোরহানউদ্দিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে বোরহানউদ্দিন উপজেলারও। প্রাচীন ও দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি ভোলার বোরহানউদ্দিন সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন-দরুন বাজার মূল সড়কের পাশে রামকেশব গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১ একর ৪০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মসজিদটির পশ্চিম পাশে রয়েছে ঘাট বাঁধানো পুকুর। কারুকার্য খচিত চারটি লোহার পিলারের বারান্দা পেরিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে বাদামি রঙের তিনটি কাঠের দরজা। মসজিদের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে আরও দুটি জানালা। যা নির্মাণের পর থেকে এখনো একই রকম বিবর্ণহীন। ওপরে লোহার বিম। তার উপরে চুন, সুরকি ও পাথরের ঢালাই। মসজিদের দক্ষিণ পাশে খোলা মাঠ। তৎকালীন সময়ে মসজিদের পূর্ব পাশে ছিল তিনটি কাচারি। যেখানে পথিকরা আশ্রয় নিতেন। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলেও সম্প্রতি সেখানে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য বিশ্রামাগার এবং সাধারণ মুসল্লিরের জন্য ওজু ও গোসলখানা করা হয়েছে। চৌধুরী বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি ও মসজিদের নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ক মাহাবুব আলম চৌধুরী জানান, কারুকার্য খচিত মসজিদটি নির্মাণের জন্য শ্বেতপাথর, লোহার বিম, চুন সুরকি, দরজা-জানালার কাঠসহ সব নির্মাণসামগ্রী বেলজিয়াম থেকে আনা হয়েছিল। বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর ছিল তিন ছেলে। তার সব সম্পত্তি চার ভাগ করে তিন ভাগ সন্তানদের মধ্যে আর এক ভাগ ওয়াকফ্ স্টেট করে মসজিদের জন্য রেখে যান। মসজিদের জন্য তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অনেক জমি তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্নে বিলীন হয়ে যায় এবং সরকারি খাসজমিতে পরিণত হয়। বর্তমানে ১২ একর জমি রয়েছে। সেই জমির আয় দিয়েই মসজিদের আনুষঙ্গিক কাজ ও খরচ করা হয়। মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামান জানান, দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এই মসজিদটি দেখতে আসেন এবং মসজিদে নামাজ আদায় করেন। মসজিদ মাঠে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জামায়াতও অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লি শামিম আহমেদ নোমান চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে মসজিদটির বেশ কয়েকবার সংস্কারকাজ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে ব্যক্তিগত অনুদান থেকে তিনি মসজিদটির রং ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেন।  প্রাচীন এই মসজিদটি নির্মাতা জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী ১৯১৩ সালের ৪ মে মারা যান। মসজিদের পাশেই তাকে কবরস্থ করা হয়েছে।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪
X