প্রায় সাতশ বছর আগের একটি অর্থোডক্স গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ২০২০ সালে এরদোয়ান যখন গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তর করার নির্দেশ দেন, তখন ইউরোপের দেশ গ্রিস এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। সেই গির্জাটিই সোমবার মসজিদ হিসেবে নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
মসজিদে রূপান্তরিত হওয়া গির্জাটি একটি বাইজেন্টাইন আমলের স্থাপনা। এটি কোরা গির্জা নামেই পরিচিত। ১৪৫৩ সালে অটোমান তুর্কিরা কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর এটিকে কারিয়া মসজিদে রূপান্তরিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমানদের পতন হলে তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তখনই আংকারার কারিয়া মসজিদ হয়ে যায় কারিয়া জাদুঘর। প্রায় শতাব্দীকাল পর কারিয়া জাদুঘরকে আবার কারিয়া মসজিদ হিসেবে ফিরিয়ে আনলেন এরদোয়ান।
ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে কোরা গির্জাটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে যথেষ্ট মূল্যবান একটি স্থাপনা। কারণ গির্জার ভেতরে রয়েছে ১৪শ শতকের ফ্রেস্কো আর্ট, যার শিল্পমূল্য অসীম। কাঁচা দেয়ালের ওপর রঙের আঁচড়ে আঁকা এসব চিত্রকর্ম তৎকালীন শৈল্পিক উৎকর্ষতার চিহ্ন বহন করে। গির্জাটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করার পর যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ইতিহাসবিদদের একটি দল মূল গির্জার এসব চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধার করে।
চার বছর আগে যখন কোরা গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তরের আদেশ দেওয়া হয়, তখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ গ্রিস। এ ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিল দেশটি। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে নিজের ইচ্ছায় অটল থাকেন এরদোয়ান। যদিও এরদোয়ানবিরোধীদের মতে, এই কাজের মধ্য দিয়ে নিজের জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করার মতো ঘটনা তুরস্কে এটিই প্রথম নয়। ২০২০ সালে ইউনেসকো কর্তৃক সুরক্ষিত আয়া সোফিয়ার ঘটনাও অনেকটাই কারিয়া মসজিদের মতোই। ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়া প্রথমে ছিল একটি প্রাচীন গির্জা। ভবনটিকে মসজিদ, তারপর জাদুঘর এবং তারপর আবার মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। সে ঘটনায় তুরস্কসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একজন জনপ্রিয় মুসলিম শাসক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
মন্তব্য করুন