সংঘাত এড়াতে আরব লীগের অভিনব প্রস্তাব
গাজায় ইসরায়েলের হামলার আট মাসেরও বেশি সময় পার হতে চলল। এই সময়ের মধ্যে গাজার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরব দেশগুলোর জোট ‘আরব লীগ’ একরকম বোবাই হয়ে ছিল বলা চলে। তবে এবার সেই নীরবতা ভেঙে কিছু একটা বলল আরব লীগ। বৃহস্পতিবার বাহরাইনের মানামাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আরব লীগের সম্মেলন। সম্মেলন থেকে গাজাসহ ফিলিস্তিনের দখলকৃত সব অঞ্চলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে আরব দেশগুলোর এই জোটটি। সম্মেলনে জোটের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রায় সবাইই উপস্থিত ছিলেন।  বৈঠক শেষে সম্মেলন থেকে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘যত দিন পর্যন্ত দ্বিরাষ্ট্র নীতি কার্যকর না হচ্ছে, তত দিন ২২ দেশের এই জোট ‘মানামা ঘোষণা’ থেকে ফিলিস্তিনের দখলকৃত সব অঞ্চলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানাচ্ছে।  এ ছাড়া এই সম্মেলন থেকে ফিলিস্তিনের সব পক্ষকে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের বা পিএলও'র অধীনে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে। জোটটি বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে তারা শুধু পিএলওকে স্বীকৃতি দেয়। মূলত, গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে পিএলও। দলটিতে ক্ষমতাসীন ফাতাহ মুভমেন্টের আধিপত্য রয়েছে। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলিরা সরে গেলেও এখনো জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অংশ দখল করে রেখেছে তারা। ইসরায়েলিরা সেসব ভূখণ্ড ফেরত না দেওয়ায় এখন পশ্চিম তীর, জেরুজালেম এবং গাজাকে নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হচ্ছে। যেই রাষ্ট্রের রাজধানী হবে জেরুজালেম। তবে দখলদার ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্র নীতিও এখন আর মানছে না। ফলে গাজাসহ অন্যান্য জায়গায় হামাসসহ বেশ কয়েকটি দল কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
১৭ মে, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত হলে দেশেও প্রভাব পড়বে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত হলে তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় এমপি সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। এতে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বাড়ে, যা আমদানি ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়ে প্রভাব পড়ে। তাই বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনিসিয়া, কানাডা, রাশিয়া এসব দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রশ্নে ড. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিসিবিতে যে লোকবল আছে, তা দিয়ে আমরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছি—সেটাই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। গ্রামে যারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারেন বা করছেন, তাদের খুব একটা কষ্ট ও হাহাকার নেই। তার পরও সবসময় আমাদের প্রচেষ্টা থাকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার। যেসব পণ্যের প্রয়োজন বেশি, সেগুলো দেশে উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানিও হচ্ছে। এতে আমাদের রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। মানুষের কল্যাণটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সরকারদলীয় এমপি মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। জনসাধারণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারছেন। স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার জনগণের কষ্ট লাঘবে সবসময় সচেষ্ট। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সবধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে শিগগিরই ক্রলিং পেগভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। আশা করি, নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের ঈদ, ঝড়বৃষ্টি, রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যায়। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা না এলে কী করবেন। হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই, সে যদি গাড়ি চালাতে শুরু করে, তা বোঝা দুষ্কর। দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুযোগ দিয়েছি। আমাদের গাড়ির সংখ্যার তুলনায় ড্রাইভার খুব কম। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এখন শুধু হাতেকলমেই ট্রেনিং নয়, একেবারে কম্পিউটারাইজড হচ্ছে সবকিছু। ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। চালকদের যাতে দীর্ঘ সময় একটানা গাড়ি চালাতে না হয়, এজন্য আমরা তাদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এজন্য অনেক বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। সবাইকে বলব, আপনারা চালকদের দিয়ে গাড়ি চালান। সে সময়মতো খেলো কি না, বিশ্রাম নিতে পারল কি না, তার খেয়াল রাখবেন।
০৯ মে, ২০২৪

পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানে ইরানের প্রেসিডেন্ট
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পাকিস্তান পৌঁছেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে নূর খান বিমানঘাঁটিতে ইরানি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান পাকিস্তানের গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রী মিয়া রিয়াজ হোসেন পীরজাদা। পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সফর সঙ্গীদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সফররত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এটিই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফর। খবর জিওটিভি ও দ্য ডনের। পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আর্থ ডে উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি চারা রোপণ করেছেন। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। রাইসির পাকিস্তান সফরকালে পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং বাণিজ্য, সংযোগ, জ্বালানি, কৃষি, এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের বিস্তৃত এজেন্ডা থাকবে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদের অভিন্ন হুমকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা ঘটনা এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করবেন পাকিস্তান ও ইরানের নেতারা।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল
সব আশঙ্কাকে সত্যি করে দিয়ে অবশেষে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক ঘাঁটির শহরে এসব হামলা চালানো হয়।  গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই পাল্টা হামলার হুমকি দেয় নেহতানিয়াহু প্রশাসন। যদিও বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে এমন আচরণ না করতে অনুরোধ করে পশ্চিমা দেশগুলো। শেষ পর্যন্ত সেই অনুরোধ রাখেনি তেলআবিব।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন সিনেটরের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর দেওয়া হয়। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও ইস্ফাহানে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান, ইস্ফাহাস, সিরাজসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। সক্রিয় করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও।  ইরানের মহাকাশ সংস্থার একজন মুখপাত্রের বরাতে কাতারি সংবাদমাধ্যম  আলজাজিরা জানায়, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ছোট ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত চলমান এ হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি পাল্টা এ হামলার দায়ও স্বীকার করেনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।  ইরানের ইস্ফাহান শহরটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শহরটিতে সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের সাইট এবং ঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া নিকটবর্তী নাতাঞ্জ শহরে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ সাইটগুলোর অবস্থান রয়েছে।  এদিকে শনিবার রাতে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে ইরানের হামলার প্রতিশোধ নিতে নানান ছক কষছে পশ্চিমাদের ভরকেন্দ্র আমেরিকা। এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে- ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর তারা এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।  ইসরায়েল অবশ্য ইতোমধ্যেই তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। মূলত ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত বছরের অক্টোবরে শেষ হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং বিভিন্ন সময়ে নতুন নিষেধাজ্ঞাও যুক্ত করে। 
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : এবার জর্ডানের ভিন্ন সুর
ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার জন্য এবার ইসরায়েলকে দায়ী করল জর্ডান। ইরানের হামলার এক সপ্তাহ না পেরুতেই নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করে এ অভিযোগ তোলা হয়। ইরানের ছোড়া বেশ কিছু ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছার আগেই ভূপাতিত করে মুসলিম বিশ্বে বেশ সমালোচিত জর্ডান। এ পরিস্থিতির মধ্যে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে দেশটির পক্ষ থেকে বক্তব্য এলো। মিডল ইস্ট মনিটর রয়টার্সের বরাতে এ সংবাদ প্রকাশ করে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেন। আয়মান বলেন, বিশ্বের উচিত নেতানিয়াহুকে থামানো। বর্তমান উত্তেজনা বাড়ানোর পেছনে তিনিই দায়ী। জর্ডানের এ নেতা আরও বলেন, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলায় কর্মকর্তা নিহতের প্রতিশোধ নিয়েছে দেশটি। ইরান বলেছে, তারা আর কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। নতুন করে উত্তেজনাও বাড়াতে চায় না। কিন্তু নেতানিয়াহু এটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, তিনি গাজা যুদ্ধ থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরাতে চাইছেন। এ কাজে ইরান ইস্যু ব্যবহার করা হচ্ছে। তেহরানের ওই হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ ময়দানে প্রকাশ্যে যুক্ত হয়েছে মুসলিম দেশ জর্ডানও। তারা কয়েক ডজন ইরানি ড্রোনগুলো করে ভূপাতিত করেছে। এদিকে ইসরায়েলকে ওই সহযোগিতার পর জর্ডানের সাধারণ নাগরিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা তাদের সরকারকে বেঈমান উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। জর্ডানিরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করে তাদের সরকার বেঈমানি করেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় নির্যাতিত মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যারা কয়েক মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন তারা খুবই মর্মাহত হয়েছেন।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

মিয়ানমারে সংঘাত : মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া। এপারে প্যারাবনের পর নাফনদের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টেকনাফ সীমান্তে রাখাইন রাজ্যে গত তিন দিন থেমে থেমে গোলাগুলি চললেও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেনি। তবে রোববার (১৭ মার্চ) রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এপারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম।  রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কিছুটা উত্তরে নাকপুরা এলাকায় হঠাৎ রাতে মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে রোববার রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজন শুনতে পাননি। নাগপুরা এলাকার বিপরীতে (নাফনদের এপারে) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপল্লি চৌধুরীপাড়া ও ফুলের ডেইল গ্রাম। রাতে ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টার শেলের বিকট শব্দ এপারের লোকজনের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতদিন রাত ও দিনে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলেছে। উভয়পক্ষ থেকে গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে মংডু টাউনশিপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। টেকনাফ হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ছয় দিন মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোতে দিনের বেলায় গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতের বেলায় কয়েকটি গ্রামে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যেত। কিন্তু গতকাল রাতে হঠাৎ একসঙ্গে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ এপারের লোকজনকে ভাবিয়ে তুলেছে। সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় আরাকান আর্মি স্থলপথে নাকপুরা এলাকার বিজিপি সেক্টর ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়। এরপর বিজিপি সদস্যরাও পাল্টা জবাব দেয়। তখন রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে টানা ৩৩ মিনিট মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির অবস্থানের ওপর মর্টার শেলগুলো নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাফেজ এনামুল হাসান বলেন, রাতের বেলায় বিকট শব্দের মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে গত তিন চার দিন শান্ত থাকার পর হঠাৎ করে রবিবার রাতে গুলাগুলি বিস্ফোরণের ঘটনা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তবে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়নি। অনেকটা স্বাভাবিকতা বিরাজ করছে সীমান্তে। সংঘাতের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে যাতে এখানে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেখানকার কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছোট দলে আসা এসব রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ইতোমধ্যে রুখে দিয়েছে বিজিবি।
১৮ মার্চ, ২০২৪

গাজায় সংঘাত অবসানে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং সেখানকার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা ও মানবাধিকার নিশ্চিতে উপযুক্ত সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে অর্গাইনাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ১৯তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক্সট্রা অর্ডিনারি সেশনে বক্তৃতাকালে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এ সময় ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মানবিক করিডোর উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সেফটি নেটের ওপর জোর দেন হাছান মাহমুদ। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ: ড. হাছান মাহমুদ জেদ্দায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি সংস্থার সচিবালয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ড. হাছান দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনে এ সহযোগিতা আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসির নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের জন্য ওআইসির নিরলস সমর্থন ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। বিশেষ করে আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা মামলার জন্য তহবিল সংগ্রহে ওআইসির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
০৬ মার্চ, ২০২৪

ওআইসি বিশেষ সম্মেলন / গাজায় সংঘাত অবসানে সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং সেখানের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি উপযুক্ত সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সৌদি আরবের জেদ্দায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে অর্গাইনাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) ১৯তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক্সট্রাঅর্ডিনারি সেশনে বক্তৃতাকালে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এ সময় ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মানবিক করিডোর উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সেফটি নেটের ওপর জোর দেন হাছান মাহমুদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের নীতি ও অনুশীলন থেকে উদ্ভূত আইনি পরিণতি সম্পর্কে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশের দেওয়া জোরালো বিবৃতির কথা উল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেন যে, এই অঞ্চলে শিগগিরই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে যা মুসলিম উম্মাহর দাবি। তিনি বলেন, এ জন্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং সব পক্ষের সংকল্পের কোনো বিকল্প নেই। 
০৫ মার্চ, ২০২৪

কেন্দ্র বনাম ঢাবি ছাত্রলীগের বিভেদে বারবার সংঘাত
কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিভেদের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার সংঘাতে জড়াচ্ছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছেন ঢাবি শাখার নেতারা। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথ হলে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাও কেন্দ্র বনাম ঢাবি নেতাদের দ্বন্দ্বের ফল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা বিষয়ে ঢাবি নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ পদধারীরা। এর মধ্যে গত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে ঢাবির নেতাদের বক্তৃতা দিতে না দেওয়ায় তাদের এই মনোমালিন্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অধিভুক্ত সাত কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাটানি এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই রেওয়াজের বাইরে গিয়ে কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ইচ্ছামতো পদায়নসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগ। সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে আয়োজিত কনসার্টে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে হল কমিটির পদপ্রত্যাশী ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী গণেশ ঘোষের ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার পর গণেশ দুঃখ প্রকাশ করে সৈকতের কাছে ক্ষমা চান। তবে কেন্দ্রীয় ও ঢাবির নেতারা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর রাত দেড়টার দিকে ইনান ও সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। রাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এ সংঘর্ষ। আগের রাতের এ ঘটনা নিয়ে পরদিন (শুক্রবার) সৈকতের অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ইনানের কাছে বিচার দিতে গেলে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। সেদিন রাতে আবারও জগন্নাথ হলে দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কয়েক দফায় ঘটে যাওয়া এই সংঘর্ষে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে আহত হন অপূর্ব চক্রবর্তী, পলাশ রায় সৌরভ, স্বপন, তপন, সাগর, রুদ্র, অনন্ত, সেতু, বর্ষণ, কার্তিক কুমার, পল্লব মণ্ডল ও অর্পণ। অন্যদিকে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীদের মধ্যে আহত হন গণেশ, প্রীতম সাহা, অভিষেক ভাদুড়ি, জয় দাস, অনুপ হাওলাদার, বিভাষ ঘোষ, দেবাশীষ, আনন্দ, ধ্রুব, চিন্ময়, রিদ্ধি ও অভি। এর আগেও গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে জগন্নাথ হলেই ইনান ও সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে মারামারি হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও জগন্নাথ হল সংসদের সাবেক ভিপি উৎপল বিশ্বাসের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ৬ জানুয়ারি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শাড়ি বণ্টন নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। এতে কেন্দ্রীয় সংসদের উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক তানিয়া আক্তার তাপসী আহত হন। ৬ ফেব্রুয়ারি ফজলুল হক মুসলিম হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় কমিটির সাদ্দাম হোসাইন, শেখ ইনান ও ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শয়নের অনুসারীদের সম্মিলিত পক্ষ এবং ঢাবি সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। ২২ জুন সিট দখলকে কেন্দ্র করে মাস্টারদা সূর্য সেন হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী আয়েশা সিদ্দিকা রূপাকে মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাদ্দাম হোসাইনের অনুসারী আতিকা বিনতে হোসাইনের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারিতেও মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সূর্য সেন হল ও বিজয় একাত্তর হলের অনুসারীরা সালাম দেওয়াকে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে ৩ জন আহত হন। তাদের মধ্যে সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার দিনই ছাত্রলীগের চারজনকে বহিষ্কার করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আক্ষেপ প্রকাশ করে ঢাবির হল পর্যায়ের একজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমরা ‘সবসময় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলি। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে এত বিভেদ, বিভাজন, মারামারি-কাটাকাটি, সংঘর্ষ এগুলো ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই সংগঠনে বারবার এ ধরনের ঘটনা দেখতে হচ্ছে। আমরা আমরাই মারামারিতে জড়াচ্ছি। আমরা নিজেরাই মিলেমিশে থাকতে পারছি না, ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারছি না। এগুলো দেখে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী শক্তি আমাদের নিয়ে মজা নেয়, যা খুবই দুঃখজনক।’ জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘কোনো কোনো অনুষ্ঠানে বেশি মানুষ উপস্থিত থাকলে অনেক সময় নিজেরা নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক সময় এরকম ছোটখাটো ঝামেলা হয়। এটা তো কর্মী পর্যায়ের ঝামেলা। কর্মী পর্যায়ে টুকিটাকি ভুলভ্রান্তি ঘটে। কিন্তু নেতৃত্ব পর্যায়ে কোনো বিভেদ হচ্ছে না—এ রকমটা নয়। এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনাও যেন না ঘটে, সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। সংগঠনের ঐক্য নষ্ট হয়, এমন কোনো ঘটনা কেউ ঘটালে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিই বা নেওয়ার চেষ্টা করি, ভবিষ্যতেও এটা করব।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনোরকম বিরোধ নেই বলে আমার মনে হয়। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাম্বার ওয়ান এবং সবচেয়ে সুসংহত ইউনিট। এ ইউনিটটি অতীতের ধারা বজায় রেখে ছাত্রলীগের সব কর্মসূচিতে ভালোভাবে কাজ করবে এবং ছাত্রলীগের সব নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে কোনো গ্রুপিং নেই। এখানে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে। এই ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমেই অনেক সময় ছোটখাটো ঘটনা ঘটে এবং ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যে কোনো গ্রুপিংয়ের উপস্থিতির সুযোগ নেই।’ মন্তব্যের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও ঢাবি মাজহারুল কবির শয়নকে বারবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিয়ানমার সীমান্তে সংঘাত নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘সতর্ক আছি’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারে দেশটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের মর্টার শেল যাতে আর আমাদের সীমান্তে এসে না পড়ে এ বিষয়ে নজর রাখছি। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক আছেন। মিয়ানমার সরকারের সাথেও এ বিষয়ে আমরা যোগাযোগের মধ্যে রয়েছি। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মর্টার শেল ছিটকে আসার বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এসব কথা বলেন তিনি। মর্টার শেল উড়ে আসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব যে, সেখান থেকে কোনো মর্টার শেল আমাদের দেশে আসবে না। তবে আমরা সতর্ক আছি এ ব্যাপারে। এদিকে, মিয়ানমারে গোলাগুলি বন্ধ হলেও এপারের সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। এরই মধ্যে রোববার সীমান্তে মর্টার শেলের বিকট শব্দের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) মিয়ানমারে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসার পর রোববার কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। এ সময় বিজিবির সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমার নিজ দেশ শান্ত রাখতে বা বিদ্রোহ দমনে কী পদক্ষেপ নিবে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও প্রায় সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফিরতে পারেনি।
২৯ জানুয়ারি, ২০২৪
X