অর্থনীতি ভালো অবস্থায় হতাশা রাজনীতি নিয়ে
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন হয়েছে, তা কোনো প্যারাডক্স বা আপাত স্ববিরোধী বিষয় নয়; বরং স্বাভাবিক নিয়মেই এ উন্নয়ন হয়েছে। বিশিষ্টজনের মতে, বিভিন্ন নিয়ামকের সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই চোখে পড়ার মতো এই উন্নয়ন হয়েছে। এখন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে, হতাশা তৈরি হয়েছে রাজনীতি নিয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ-ইকোনমি, পলিটিক্স, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বইটি সম্পাদনা করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান। বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে আর্থসামাজিক উত্তরণ ঘটেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই করা হয়েছিল। তখন ২৫ বছরের বাংলাদেশর অর্থনীতি নিয়ে এতটা উচ্চাশা ছিল না। সেখানে গার্মেন্টস সেক্টরে কতগুলো ভ্যালু অ্যাড হতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। রেমিট্যান্স নিয়ে এত চিন্তাভাবনা করা হয়নি। এখন পরবর্তী ২৫ বছরে এসব পার্থক্য খুঁজে বের করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মিলন হয়েছে। সরকার ও বাজারের মধ্যে এক ধরনের মিথোজীবিতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটাই উন্নয়নের চালিকাশক্তি। ফলে সম্পদ বা সুশাসনের অভাব দেশের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। উন্নতি ও দুর্নীতি দুটোই পাশাপাশি এগিয়েছে। সাফল্যের বিপরীতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অনেক বেশি। তাদের মতে, এতদিন দেশের উন্নয়নের যেসব চালিকাশক্তি ছিল, সেগুলো যে চিরকাল একইভাবে থাকবে, তা নয়। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ হতে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ এত দিন যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেগুলো আর থাকবে না। বাংলাদেশকে নতুন পর্যায়ে যেতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির বাইরে আরও কিছু বিষয় দেশের উন্নয়নে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। সেটা হলো, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিপ্লব; শত প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকা বা লড়াই করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, সেটা। এই প্রবণতার কারণে দেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় রূপান্তরিত হবে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই করা হয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে ভালো জায়গায় যাবে। তখন অর্থনীতি নিয়ে অতটা উচ্চাশা ছিল না। এখন রাজনীতি নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে; বরং অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতবিষয়ক সাবেক প্রধান সৈয়দ আখতার মাহমুদ অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বলেন, দেশের উদ্যোক্তা ও বাজার, নীতিনির্ধারণ ও গবেষণা, আলোচনা ও সংলাপের পৃথক পৃথক জগৎ গড়ে উঠেছে। এসবের মধ্যে সমন্বয় ছিল বলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। সরকার যে সবকিছু করে দিয়েছে, তা নয়; বরং উদ্যোক্তারাও অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু এখন এই সমন্বয় বিনষ্ট হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আগে এই বিষয় যেভাবে কাজ করত, এখন সেভাবে করছে না বলে মনে করেন তিনি। বইটির আরেক লেখক সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ মধ্যম আয় বা ঋণের ফাঁদে পড়ে কি না। শ্রমঘন শিল্পের ওপর ভর করে এত দিন যে উন্নয়ন হয়েছে, সেখান থেকে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন আপাত স্ববিরোধী বিষয় নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া কীভাবে উন্নয়ন হলো, সেটা আর এখন আলোচনার বিষয় নয়; বরং উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হচ্ছে না, এখন সেটা বুঝতে হবে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিকাশ হলেও উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে এটি আর সেভাবে কাজ করবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। দুর্নীতি তিনি বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেশে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আছে। এই চক্র ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তা না হলে সংস্কার হবে না। সরকারের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতাও বাড়বে না। দেশের উন্নয়ন নিয়ে যখন কথা বলা হয়, তখন গড় সূচক নিয়ে কথা বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, দেশে চরম দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের সূত্রে তিনি বলেন, দেশে যেমন অসমতার হার সবচেয়ে বেশি, তেমনি ধনীদের ধন সঞ্চয়ের হারও অনেক বেশি। সে জন্য ধনী ও গরিবের সূচক পৃথকভাবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি। অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল হাসান বলেন, শিল্প খাতের শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিকরা অনেক কষ্ট করে দেশের উন্নয়ন অবদান রাখছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পশ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমেছে; অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মজুরি বাড়েনি। যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন, তারা নানা ধরনের হয়রানি ও অধিকারহানির শিকার হচ্ছেন।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হতাশা কাটাতে লিফলেট দিচ্ছে বিএনপি
জাতীয় নির্বাচনের পর ‘হতাশা কাটিয়ে উঠতে’ বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নির্বাচিত গ্রন্থসমূহের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন লাইনে এসেছে। তারা যদি হতাশা কাটাতে লিফলেট বিতরণ এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে স্বাগত জানাই। আশা করব তারা আবার পেট্রোল বোমা নিয়ে মানুষের ওপর হামলা করবে না। নির্বাচনের পর বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে, আমরা চাই সেটি সোজা হোক। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না—জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, মিয়ানমার থেকে এরই মধ্যে ১.২ মিলিয়ন (১২ লাখ) বিতাড়িত রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আছে। প্রতিবছর তাদের ৩৫ হাজার বাচ্চা জন্ম নেয়। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। এর আগে দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন এবং ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও এলেসান্দ্রো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হতাশা কাটিয়ে উঠতে বিএনপির নতুন কর্মসূচিকে স্বাগত জানাই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির হতাশা কাটিয়ে উঠতে তাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নির্বাচিত গ্রন্থসমূহের মোড়ক উন্মোচনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ বিএনপির চলমান ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এখন লাইনে এসেছে। তারা যদি হতাশা কাটাতে লিফলেট বিতরণ এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে থাকে তাহলে সেটিকে স্বাগত জানাই। আশা করব তারা আবার পেট্রোলবোমা নিয়ে মানুষের ওপর হামলা করবে না। নির্বাচনের পর বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে, আমরা চাই সেটি সোজা হোক।’ মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কী না। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে ইতোমধ্যে ১.২ মিলিয়ন (১২ লাখ) বিতাড়িত রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আছে। প্রতিবছর তাদের ৩৫ হাজার বাচ্চা জন্ম নেয়। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। এর আগে দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন এবং ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও এলেসান্দ্রো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে দুই দেশের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

প্রাণের মেলা / নানা অব্যবস্থাপনায় হতাশা
অমর একুশে বইমেলার পঞ্চম দিন গতকাল সোমবার বিকেল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন পাঠক ও দর্শনার্থী। দর্শনার্থী, লেখক ও পাঠকদের আড্ডায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে টয়লেট, ময়লা, আবর্জনাসহ মেলার ভেতরে খাবারের দোকানগুলোতে অস্বাভাবিক দাম নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয় ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টল ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজলের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় দিন দিন মানুষের ভিড় বাড়ছে। নানা বয়সী মানুষ নতুন বইয়ের খোঁজ করেছেন; কিন্তু মেলার প্রবেশপথে এখনো ঠিকভাবে ইট বিছানো হয়নি। টয়লেট এবং নামাজের স্থান যেনতেনভাবে করা হয়েছে। অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, মেলা জমে উঠেছে। কিন্তু পাঠক ও দর্শনার্থীর জন্য যে টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এবার কাগজসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর দাম বাড়তি। ফলে বইয়ের দামও বেশি। অনেক প্রকাশকই খরচ উঠে আসা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন শিক্ষার্থী রনি। তিনি বলেন, এ মেলার জন্য বছর ধরে অপেক্ষায় থাকি। আড্ডা, বই কেনা, চা খাওয়াÑ সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময় কাটে। কয়েকটা বই কিনেছি। কিন্তু মেলায় একটু পরপরই এত আবর্জনার স্তূপ ও টয়লেটের অব্যবস্থাপনা ভাবাই যায় না। এ ছাড়া মেলা ভেতরে খাবারের দাম তিনগুণ নিচ্ছে বাইরের দোকানগুলোর তুলনায়। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবাও খুব দুর্বল। গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদ রহমান। আলোচনা অংশ নেন ইসরাইল খান এবং তপন বাগচী। সভাপতিত্ব করেন সাইফুল আলম। লেখক বলছি মঞ্চ: গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি নাসির আহমেদ, কবি ইসলাম রফিক, শিশুসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পাল ও লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক। নতুন বই: বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৭০টি। এর মধ্যে গল্প আটটি, উপন্যাস ছয়টি, প্রবন্ধ একটি, কবিতা ৩৪টি, গবেষণা তিনটি, ছড়া একটি, শিশু সাহিত্য একটি, জীবনী তিনটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুটি, ভ্রমণ একটি, ইতিহাস দুটি, বঙ্গবন্ধু একটি এবং অন্যান্য বিষয়ের বই পাঁচটি। নতুন বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনন্যা প্রকাশনী থেকে ইমদাদুল হক মিলনের গল্প ‘অন্ধকার নামতে পারেনি’, শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে জুনাইদ আহমেদ পলকের ভাষণ ‘জাতীয় সংসদে’ ও আহমদ পাবলিশিং পাবলিশিং হাউস প্রকাশিত ডা. সাবরিনা হুসেন মিষ্টির ছোট গল্পের বই ‘বন্দিনী’।
০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা এখন উপলব্ধি করছে নির্বাচন বর্জন করা তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল হয়েছে। গতকাল বুধবার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শহীদ মতিউর রহমানের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বকশীবাজারে নবকুমার ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী। উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, আমার যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, এরপর যখন উপজেলা নির্বাচন হয়, তখন কিন্তু প্রতীক ছিল না। প্রতীক দেওয়ার বিধান পরে চালু হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বরাবরই প্রতীকবিহীন হয়েছে। আমরা আগের সেই পদ্ধতির কথাই বলেছি। এটা নতুন কিছু নয়। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গণহত্যার মাধ্যমে যে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিল, তার মূল নায়ক ছিল পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা। তাকে এরশাদ সাহেবও প্রমোশন দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াও প্রমোশন দিয়েছেন। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন উত্তর জেলা সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মহানগর সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।
২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা এখন উপলব্ধি করছে নির্বাচন বর্জন করা তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল হয়েছে।  বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বকশীবাজারে নবকুমার ইনস্টিটিউটে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মতিউর রহমানের স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষে নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ পুরো পৃথিবী প্রধানমন্ত্রীকে নতুনভাবে নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানাচ্ছে। এতে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তাই আবোল-তাবোল বকছে। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে পলে পলে আন্দোলিত করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। অথচ আজ বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করে বলার চেষ্টা করে একটি হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ স্বাধীনতা সংগ্রামকে তারা অস্বীকার করে। তিনি বলেন, ‘বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। স্বাধীনতা কারও হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে আসেনি। আমাদের এই স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে মতিউর রহমানের আত্মদান রয়েছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’ উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকছে না এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে হাছান বলেন, ‘আমার যখন ২০০৯ সালের সরকার গঠন করি, এরপর যখন উপজেলা নির্বাচন হয় তখন কিন্তু প্রতীক ছিল না। প্রতীক দেওয়ার বিধান পরে চালু হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বরাবরই প্রতীক বিহীন হয়েছে। আমরা আগের সেই পদ্ধতির কথাই বলেছি। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবে এবং যে যার মতো নির্বাচন করবে। যারা বিজয়ী হবেন, তারা উপজেলা চেয়ারম্যান হবেন। এটা নতুন কিছু না।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতীকবিহীন নির্বাচন করার বিষয়টি আমাদের মধ্যে বহু আগে থেকে আলোচনায় ছিল। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে এটি আলোচনার মধ্যে ছিল। সর্বশেষ গত ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে এটি সিদ্ধান্ত হয়।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল চট্টোপাধ্যায়, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ কামাল, আইনবিষয়ক সম্পাদক জগলুল কবির, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

মন্ত্রিত্ববঞ্চিত অঞ্চলে ক্ষোভ ও হতাশা
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও এমপিদের শপথ গ্রহণ শেষে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল নতুন সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভা। কারা হচ্ছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ ছিল না। কে কে মন্ত্রিসভার সদস্য হচ্ছেন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে নানা তথ্য। কোনো কোনো নেতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভাকাঙ্ক্ষীদের অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতেও দেখা গেছে। তবে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর একদিকে যেমন আনন্দ-উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মুষড়ে পড়েন মন্ত্রিত্ববঞ্চিত এলাকার নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মন্ত্রিত্ব না পেয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছে অনেক অঞ্চলের মানুষ। ৭ জানুয়ারি ভোটের পর ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। পরদিন ১১ জানুয়ারি শপথ নেন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার ৩৭ সদস্য। এতে ঢাকা, ফরিদপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের প্রাধান্য দেখা যায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৫ মন্ত্রীর মধ্যে ১৩ জনকে নেওয়া হয়েছে এই তিন বৃহত্তর জেলা থেকে। ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আছেন ঢাকা ও গাজীপুরের চার সংসদ সদস্য। বিদায়ী সরকারে গুরুত্ব পাওয়া সিলেট অঞ্চল এবার মন্ত্রী পেয়েছে বেশ কম। বৃহত্তর বরিশাল কোনো পূর্ণ মন্ত্রী পায়নি। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগও তুলনামূলক কম গুরুত্ব পেয়েছে। বিভাগওয়ারি হিসাব করলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগই মন্ত্রী পেয়েছে বেশি। এর মধ্যে ঢাকায় চারজন পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি রয়েছেন দুজন প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ দুটি, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ একটি করে মোট ১০টি পূর্ণ মন্ত্রী পেয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে বৃহত্তর কুমিল্লায় চারটি, নোয়াখালীতে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলায় দুটিসহ মন্ত্রিত্ব মিলেছে সাতটি। এর বাইরে রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ দুটি করে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। একটিও পায়নি বরিশাল বিভাগ। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও ঢাকা বিভাগের প্রাধান্য বেশি। ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ঢাকা ও গাজীপুরে আছেন দুজন এবং টাঙ্গাইলে একজন মিলে ঢাকা বিভাগেরই আছেন ৫ জন। বাকি ছয়জনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর ও নাটোর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বরিশাল ও পটুয়াখালীতে একজন করে এবং সিলেট ও খাগড়াছড়িতে আছেন একজন করে। এবার মন্ত্রী পায়নি রংপুর অঞ্চল, বৃহত্তর বগুড়া, বৃহত্তর যশোর ও ঝিনাইদহ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী থেকে শাহরিয়ার আলম দুই দফায় প্রতিমন্ত্রী হলেও এবার বাদ পড়েছেন। রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে ৫টিতে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বগুড়ার সাত আসনের মধ্যে ৫টিতে নৌকা জিতলেও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি কারও। দিনাজপুর ও নওগাঁ থেকে একজন করে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন এবার। যদিও তারা আগেও বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া নাটোর থেকে একজনকে করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী। গতবার পঞ্চগড় থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী এবং রংপুর থেকে টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হলেও এবার দুজনই বাদ পড়েছেন। বৃহত্তর রংপুর থেকে দুজন পূর্ণ মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বৃহত্তর পাবনা জেলা থেকেও কেউ ডাক পাননি। ২০১৪ সালে পাবনার শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সিরাজগঞ্জ থেকেও কেউ ডাক পাননি। যদিও ২০০৮ সালে জেলাটি থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছিল। গেল সরকারের আমলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় দুজন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠন করা নতুন সরকারে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি রংপুরের পাঁচ জেলার নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের। এই অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় জায়গা না থাকায় দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ। পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন কালবেলাকে বলেন, টিপু মুনশি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ায় আমরা খুবই মর্মাহত। তিনি পাঁচ বছর বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেত। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন বলেন, এলাকার উন্নয়নে মন্ত্রী প্রয়োজন। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের জন্য। কিন্তু এবার কেউ নেই। জানি না সরকারের কী সিদ্ধান্ত আছে। তবে বাজেটে এই অঞ্চলে অধিক বরাদ্দ আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসলেও বৃহত্তর বগুড়ায় কোনো মন্ত্রিত্ব পায়নি। বরাবরের মতো এবারও বঞ্চিত হলো বগুড়ার মানুষ। মন্ত্রী না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভিমান ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এমনিতেই রাজনৈতিক রোষানলের শিকার বগুড়া জেলা। বড় কোনো অর্জন নেই। তারপর মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আগামী দিনের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, একসময় বগুড়াকে বলা হতে বিএনপির ঘাঁটি; কিন্তু ধীরে ধীরে সে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকছে, যার কারণে নির্বাচনে আসন বাড়ছে; কিন্তু তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি কবি ইসলাম রফিক বলেন, বগুড়ায় যোগ্য সংসদ সদস্য থাকলেও তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রিসভায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় দলমত নির্বিশেষে বগুড়ার সব মানুষ কষ্ট পেয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর আলম মাস্টার বলেন, বগুড়ার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে মন্ত্রিসভায় বগুড়ার একজন প্রতিনিধি রাখা প্রয়োজন। তাতে দলের ভাবমূর্তি বাড়ত ও এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত হতো। একই কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) সাধারণ সম্পাদক কে জি এম ফারুক। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন ঝুনু বলেন, বগুড়ার নির্বাচিত অনেক সংসদ সদস্যই যোগ্য ছিলেন; কিন্তু কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি, যা খুব বেদনাদায়ক। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় সরকারের মন্ত্রিসভায় বরাবরই এগিয়ে থাকে বৃহত্তর যশোরাঞ্চল (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল)। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তিনটি সরকারে মন্ত্রিসভাতেও স্থান মিলেছিল যশোরাঞ্চলের সংসদ সদস্যদের। তবে চতুর্থবার সরকার গঠনের পর চারটি জেলার কোনো প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভায় নেই। এতে এ অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবং মাগুরা-২ আসন থেকে নির্বাচিত বীরেন শিকদারকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যশোর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্যকে করা হয় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী; কিন্তু এবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ কোনো ধরনের প্রতিনিধিত্ব নেই মন্ত্রিসভায়। এ প্রসঙ্গে যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান বুলু বলেন, যশোর সবসময়ই বঞ্চিত। এবার বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা মন্ত্রীশূন্য। আওয়ামী লীগ প্রতিবারই যশোর থেকে বেশিরভাগ সংসদ সদস্য পায়। সে বিবেচনায় এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী রাখা প্রয়োজন। সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি শাহীন ইকবাল বলেন, আমাদের যশোর অঞ্চল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। আমরা মনে করি, সরকার বিষয়টির দিকে সুদৃষ্টি দেবে। জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, যশোর থেকে আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবকটি আসন পেয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের অনেক দাবি এখনো পূরণ হয়নি। আমরা একজন পূর্ণ মন্ত্রী চাই, যিনি এ অঞ্চলকে গড়ে তুলবেন। গত ৪টি সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করার পরও মন্ত্রিসভায় কারও ঠাঁই না হওয়ায় জেলাবাসী হতাশ। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহ্ উদ্দীন মিয়াজী একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তার বাবা মঈন উদ্দীন মিয়াজীও এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সে বিবেচনায় আমরা ঝিনাইদহবাসী তার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার অন্যতম দাবিদার। সমাজকর্মী কামারুজ্জামান পিন্টু বলেন, ঝিনাইদহ থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সবাই মন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন; কিন্তু এক দশকেও গুরুত্বপূর্ণ এ জেলা থেকে কেউ মন্ত্রী হননি। খুলনা বিভাগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় চারজন করে থাকলেও এবার স্থান পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন খুলনা-৫ থেকে নির্বাচিত নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ফরহাদ হোসেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন ফরহাদ হোসেন। তবে বাদ পড়েছেন বাগেরহাটের হাবিবুন নাহার, খুলনার বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও যশোরের স্বপন ভট্টাচার্য্য। বরিশাল বিভাগে ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিন পূর্ণমন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন ছিলেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভার শুরুতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব হতাশার হলেও শেষদিকে সম্প্রসারিত পরিষদে আলোকিত হয়েছিল। তবে এবার বিভাগ একজন পূর্ণ মন্ত্রী না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক ও পটুয়াখালী-৪ আসনের মুহিবুর রহমান। জাহিদ ফারুক বিগত সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মুহিবুর রহমান প্রথম জায়গা পেলেন। সিলেট বিভাগ এক প্রতিমন্ত্রী ও দুজন মন্ত্রী পেয়েছে এবার। মৌলভীবাজার-৪ থেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। আর সিলেটের বিশ্বনাথের সন্তান চিকিৎসক সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়েছেন। সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। বিপরীতে ঠাঁই হয়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। এ ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ময়মনসিংহ-৯ থেকে নবনির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সংসদে টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নেত্রকোণার মোস্তাফা জব্বার। এবার তিনি বাদ পড়েছেন। প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন রংপুর থেকে রফিকুল ইসলাম, যশোর থেকে উত্তম ঘোষ, ঝিনাইদহ থেকে মাহমুদ হাসান টিপু, বগুড়া থেকে প্রদীপ মোহন্ত ও জয়পুরহাট থেকে আছাদুল ইসলাম।
১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

কোথাও আনন্দ, কোথাও হতাশা
আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ২৬ মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার। গত মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ১৫ মন্ত্রী, ১৩ প্রতিমন্ত্রী, দুজন উপমন্ত্রীসহ মোট ৩০ জন। তাদের মধ্যে তিনজন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। আর দুজন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন। যারা নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন তাদের এলাকায় যেমন আনন্দের বন্যা বইয়ে গেছে, অন্যদিকে যারা বাদ পড়েছেন, হতাশা নেমে এসেছে তাদের নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন মন্ত্রী হওয়ার খবরে খুশির বন্যা বইছে জেলাজুড়ে। আনিসুল হককে তৃতীয়বারের মতো এবং র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে প্রথমবারের মতো পূর্ণ মন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও জেলার সাধারণ মানুষ। ময়মনসিংহ জেলার একজন এবার নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। তার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত নান্দাইলবাসী। তবে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত এবং বিগত মন্ত্রিসভার গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শরীফ আহমেদ এবার ডাক পাননি। এ কারণে হতাশ ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে চতুর্থবার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এবারের মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে এখানকার ‘একচ্ছত্র অধিপতি’ শাহরিয়ারের মন্ত্রিসভায় জায়গা না হওয়ায় খুশি হয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় দিনাজপুর-৪ আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নির্বাচনী এলাকা খানসামায় আনন্দ মিছিল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার রাতে খানসামা বাজার, পাকেরহাট, রামকলা ও কাচিনীয়াহাটে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল হয়। এরপর মিষ্টি বিতরণ করা হয়। গতকাল সকালেও বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে। ছেলে ও ভাগনের ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ডের কারণে এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। এমনটাই মনে করছেন তার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার-১-এর দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। তার মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়া নিয়ে এখানকার মানুষের কোনো আক্ষেপও নেই। অন্যদিকে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের মন্ত্রী হওয়ার খবরে মৌলভীবাজার জেলাসহ তার নির্বাচনী এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা। নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। তিনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে রাজবাড়ীতে। বুধবার সন্ধ্যায় পাংশা শহরে আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের আহসানুল ইসলাম টিটু নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এ খুশিতে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। তবে গত সরকারে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ড. আব্দুর রাজ্জাক এবার মন্ত্রিত্ব হারানোয় তা হতাশ করেছে টাঙ্গাইলবাসীকে। চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গত মেয়াদে তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার নওফেল পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। বাকলিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমত উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, ‘শুনেছি আমাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলেটা এবারও মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য। তাই খুব খুশি লাগছে। নওফেল তার বাবার মতোই অনেক সুনাম কুড়িয়েছে।’ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নাম নতুন মন্ত্রিসভায় না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সিলেট-১ বরাবরই মর্যাদাপূর্ণ আসন। স্বাধীনতার পর এখানে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালন করে সিলেটের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। গত সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কিন্তু এবারই প্রথম মন্ত্রিত্ব পাননি সিলেট-১ আসনের মানুষ। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন ইমরান আহমদ। গত সরকারে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ছিলেন। এবার তিনিও বাদ পড়েছেন। তবে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এখানকার মানুষ। যমুনা আর ব্রহ্মপুত্র-বিধৌত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা প্রথমবারের মতো পূর্ণ মন্ত্রী পেল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তখনকার কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ মোশাররফ ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০২০ সালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে শেখ হাসিনা বেছে নেন ইসলামপুর থেকে নির্বাচিত তিনবারের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালকে। এবার তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ইসলামপুরের মানুষ। গত সরকারে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর এবার পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন ফরহাদ হোসেন। এ খবরে আনন্দে ভাসছে মেহেরপুর জেলা। মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আবু সালেহ মো. নাজমুল হক সাগর বলেন, ‘ফরহাদ হোসেন একজন আলোকিত ও মেধাবী মানুষ। তার মন্ত্রী হওয়ার খবরে আমরা গর্বিত।’ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পানিসম্পদ মন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আবদুর রাজ্জাক। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে গত সরকারের সময় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এবার মন্ত্রিসভায় কেউ না থাকায় হতাশ শরীয়তপুরের আপামর মানুষ। দীর্ঘদিন পর মন্ত্রীশূন্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান। বীর বাহাদুর উশৈ সিং গত দুই মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এবার তিনি বাদ পড়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ফলে খাগড়াছড়ির মানুষ আনন্দিত হলেও হতাশা নেমে এসেছে বান্দরবানে। সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়ায় হতাশ পঞ্চগড়ের সাধারণ মানুষ। তাদের ধারণা, এলাকাটি চলমান উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নেতাকর্মীরা। (কালবেলার ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।)
১২ জানুয়ারি, ২০২৪

ছাড়ের আসনে হতাশা আ.লীগের তৃণমূলে
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর হিসাবনিকাশ শেষে ৩৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকছেন না। এর মধ্যে ৩২ আসনে জোটের শরিক ও মিত্রদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে দলটি। অন্য পাঁচটি আসনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যাচাই-বাছাইয়ে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এই আসনগুলোতেও আওয়ামী লীগের কেউ থাকছে না। সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সর্বমোট ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে দরকষাকষি শেষে গতকাল রোববার ৩২টি আসন থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়, যারা নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেওয়া হয় ২৬টি আসন। এসব আসনে জাপার প্রার্থীরা ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এসব হিসাবনিকাশের মধ্য দিয়ে নৌকা পেয়েও হারালেন আওয়ামী লীগের ৩০ নেতা। এই ৩২ আসনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে। তবে এসব আসনে দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র অনেকেই নির্বাচন অংশ নিচ্ছেন। অনেকে অসন্তোষ থেকে জাপা ও শরিকদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলেও তাদের কথায় ফুটে উঠেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আসন বণ্টনে কম ছাড় দেওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ও মিত্রদের মধ্যেও। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ১৬টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল ১৪ দলের শরিকরা। এবার সংখ্যাটা একই রকম থাকবে বলে আশা করেছিলেন দলগুলোর নেতারা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন তারা। একইভাবে জাপাকে গতবারের চেয়ে তিনটি আসনে কম দেওয়ায় তাদেরও রয়েছে ক্ষোভ। গত নির্বাচনে ২৯টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জাপা। এবার তাদের ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। জাপার সঙ্গে যে ২৬ আসনে সমঝোতা হয়েছে সেগুলো হলো—ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-১ ও ২, গাইবান্ধা-১ ও ২, বগুড়া-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ-৫ ও ৮, কিশোরগঞ্জ-৩, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ফেনী-৩, চট্টগ্রাম-৫ ও ৮ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। তাদের জন্য বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, গত তিন নির্বাচনে একই আসনে বারবার ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ আছে দলে। সংসদ সদস্য অন্য দলের হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্য হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ থেকেই অনেককে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে উৎসাহিত করবে। অনেকে প্রকাশ্য না পারলেও গোপনে শরিক ও মিত্রদের বিপক্ষে কাজ করবে। ময়মনসিংহ-৮ আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুস সাত্তারকে বাদ দিয়ে আবারও ফখরুল ইমামকে জাপার প্রার্থী করায় এই আসনে অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফির উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মানুষ আশা করেছিল এবার হয়তো নৌকার প্রার্থীই থাকবে। কিন্তু নৌকার প্রার্থী ও তার ভাতিজার দ্বন্দ্বে এই আসনটি মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। বরিশাল-৩ আসনে সরদার মো. খালেদ হোসেনকে বাদ দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে মনোনয়ন দেওয়ায় মুলাদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন সুমন বলেন, দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দলীয় প্রার্থী। তবে এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছে। গাইবান্ধা-২ আসনে মাহবুব আরা গিনির পরিবর্তে জাপার আব্দুর রশিদ সরকারে মনোনয়ন দেওয়ায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা কালবেলাকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাহার হওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে নৌকার প্রার্থী করায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল তো বঞ্চিত হচ্ছেই। কেননা, এই আসনে আওয়ামী লীগের যে অবস্থান এবং যে কার্যক্রম তাতে অনেকেই এই আসনে ভোট করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর জন্য এই আসন ফাঁকা রাখার বিষয়ে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, আমরা আর ইনুর পক্ষে ভাড়া খাটতে চাই না। আমরা কামরুল আরেফিনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা তার পক্ষেই থাকব। কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ আর ইনুকে এমপি হিসেবে দেখতে চায় না। সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, সাময়িক কষ্ট তো থাকবেই। তবে কোনো ক্ষোভ থাকবে না। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। কষ্ট ভুলে গিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে এক হয়ে কাজ করবেন তারা।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিশ্বকাপের হতাশা ভুলে টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে : জি এম কাদের
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আজ এক অভিনন্দন বার্তায় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ক্রিকেট কোচ ও ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান তিনি। অভিনন্দন বার্তায় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বিজয়ের মাসে এই বিজয় প্রত্যাশিত ছিল। বোলিং, ব্যাটি ও ফিল্ডিংয়ে টাইগাররা যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে তা অসাধারণ। তিনি বলেন, বিশ্বকাপের হতাশা ভুলে টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পরবর্তী টেস্টেও টাইগারদের বিজয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে একইভাবে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
০২ ডিসেম্বর, ২০২৩
X