হাতি মারার ফাঁদে পড়ে কৃষকের মৃত্যু
ধানক্ষেত রক্ষা করতে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে হাতি মারার ফাঁদ পাতেন কৃষকরা। কিন্তু সে ফাঁদে আটকে পড়ে নজির আহমেদ (৪৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৪ মে) সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত নজির আহমেদ স্থানীয় চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মোহছেন সিকদার পাড়া এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে। হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মহসিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নজির আহমদ ওরফে বার্মাইয়া নজির নামে এক কৃষকের ঝলসানো মরদেহ উদ্ধার করি। পরে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টার দিকে সাতকানিয়া ঘোনা এলাকায় ধানক্ষেতে পানি দিতে গেলে হাতি মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়েন নজির আহমেদ। এ সময় অন্য কৃষকরা নিহতের আত্মীয়স্বজন ও হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। দুপুর ১২টার দিকে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মহসিন চৌধুরী ও এএসআই সোলায়মান খাঁনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা হওয়ায় প্রায়ই বন্যহাতির আনাগোনা থাকে। বিশেষ করে এদের পাল রাতে ধানক্ষেতে আসে। এ অবস্থায় নিজেদের ধান রক্ষায় এর চারপাশে বৈদ্যুতিক লাইন সংযুক্ত করে হাতি মারার ফাঁদ পাতেন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নাপিতচিতা এলাকার আব্দুল ছাত্তার, জমির উদ্দিন, মো. সাজ্জাদ ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোটন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে হাতি মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন কৃষক নজির আহমেদ। এতে বিদ্যুৎস্পর্শে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ওরফে ছোটনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ঘটনায় কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। তবে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
০৫ মে, ২০২৪

হাতি শুঁড় দিয়ে আছাড় মারল কৃষককে
শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ীতে ধানক্ষেত পাহারা দেওয়ার সময় বন্যহাতির আক্রমণে ওমর আলী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম বাতকুচি টিলাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।  নিহত ওমর আলী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কালবেলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ওমর আলী রাতে বোরো ধানক্ষেত পাহারা দিতে যান। অন্যান্য রাতে আশপাশে স্থানীয় কৃষক থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে তিনি একাই পাহাড়ের ভেতরে ধানক্ষেত পাহারা দিতে যান। এ সময় একদল বন্যহাতি পাহাড় থেকে নেমে এসে ওমর আলীকে ঘিরে ফেলে। হাতি শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় মেরে ও পায়ে পিষ্ট করে ওমর আলীর ভুঁড়ি ও মাথার মগজ বের করে ফেলে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে। রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টা আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। 
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

হাতি দিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করায় দুই মাহুতকে কারাদণ্ড
দিনাজপুরের খানসামায় হাতি দিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করায় দুই মাহুতকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় হাতি ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজির ঘটনায় তাদের আটক করা হয়। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন, খানসামা থানা ও খানসামা ফায়ার সার্ভিস এবং বন বিভাগ। এসময় দুই মাহুতকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হুবালা মণ্ডলপাড়া এলাকার সুবহান আলীর ছেলে মো. ইয়াছিন ইসলাম (২০) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কাজলা এলাকার সাগর ইসলামের ছেলে মো. আজিজুল হক (২১)। খানসামা থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, তাদের বুধবার (১৭ এপ্রিল) দিনাজপুর কারাগারে পাঠানো হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও মো. তাজউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর আওতায় আসামি দুজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

জার্মানিতে ২০ হাজার হাতি পাঠানোর হুমকি
পূর্ব আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় বিশ্বের মোট হাতির এক-তৃতীয়াংশের বাস। সংখ্যার হিসেবে যা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। তাই যুগের পর যুগ ধরে দেশটি ট্রফি হান্টিংয়ের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর হান্টিং প্রতিযোগিতা শেষে এসব ট্রফির বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশ জার্মানিতে। তবে এখন এসব ট্রফি আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে দেশটি। এতেই জার্মানির ওপর চটেছেন বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট। এমনকি জার্মানিতে ২০ হাজার হাতি পাঠানোর হুমকি দিয়ে বসেছেন তিনি। খবর বিবিসির। বিনোদনের নামে বন্যপ্রাণি শিকারের প্রথা ট্রফি হান্টিং নামে পরিচিত।‌ ট্রফি শিকারিরা সাধারণত বন্যপ্রাণির শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন— মাথা, চামড়া, শিং ও দাঁত ইত্যাদি সংগ্রহ করে পরে নিজেদের বীরত্ব ও সফলতার প্রতীক হিসেবে প্রদর্শন করেন। আর এ ক্ষেত্রে তাদের কাছে শিকারের জন্য আফ্রিকার বিগ ফাইভ নামে পরিচিত সিংহ, মহিষ, হাতি, চিতাবাঘ ও গন্ডার বেশি জনপ্রিয়। চলতি বছরের শুরুতে হান্টিং ট্রফি আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কথা চিন্তা-ভাবনা করার কথা জানায় জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তবে বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকগওয়েটসি মাসিসি জার্মান সংবাদপত্র বিল্ডকে বলেছেন, জার্মানির এই পদক্ষেপ নিলে তা শুধু বতসোয়ানদের ভুগাবে। তিনি বলেন, সংরক্ষণ প্রচেষ্টার কারণে বতসোয়ানায় হাতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শিকার করা হলে এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের আপনারা বন্যপ্রাণির সঙ্গে বসবাসের কথা বলেন। কিন্তু জার্মানদেরও উচিত এসব প্রাণীর সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করা। বতসোয়ানায় বিশ্বের মোট হাতির এক-তৃতীয়াংশের বাস। সংখ্যার হিসেবে যা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। হাতির পাল প্রায় সময় লোকালয়ে ঢুকে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে, ফসল খেয়ে ফেলে। এমনকি অনেক সময় হাতির পদতলে পড়ে মানুষও মারা যান। হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর আগে অ্যাঙ্গোলার মতো দেশে ৮ হাজার হাতি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে বতসোয়ানা। এ ছাড়া মোজাম্বিককে আরও কয়েকশ হাতি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব করেছে দেশটি। বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকগওয়েটসি মাসিসি বলেন, আমরা জার্মানিকেও এমন উপহার দিতে চাই। আমি রসিকতা করছি না। এ ক্ষেত্রে আমি না শুনব না।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

বিনোদনে হাতি ব্যবহারে লাইসেন্স প্রদান স্থগিত
সার্কাসে হাতির ব্যবহার, হাতির পিঠে ভ্রমণ, বিয়েবাড়িতে শোভাবর্ধন, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের র্যালিতে বিজ্ঞাপনের মতো বিভিন্ন বিনোদন কাজে হাতির ব্যবহারে ব্যক্তি মালিকানায় লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হাতির ওপর নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং হাতিকে বিনোদনের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যক্তি মালিকানা নতুন করে লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। অভিনেত্রী জয়া আহসানের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে গত রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন বিনোদন কাজে হাতির ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়। অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল এ রিট করেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা দুই বন্য হাতি ফিরে গেল ভারতে
ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায় চলে আসা দুই বন্য হাতি ভারতে ফিরে গেছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় বাংলাবান্ধা কাশিমগঞ্জ সীমান্ত পিলার ৭৩০ এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি। পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। হাতিগুলো ফিরে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরেছে।  বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধীনস্থ রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে দুটি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে এগুলো তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নেয়। হাতিগুলো বেপরোয়া হয়ে কিছু বাড়িঘরে সামান্য ভাঙচুর করে। এতে করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন। অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেল ৪টায় কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতীয় বন বিভাগের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আলোচনা হয়। সন্ধ্যার পরে বিজিবি, বিএসএফ ও উভয় দেশের বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীমান্ত পিলার ৭৩০ দিয়ে হাতি দুটি ভারতে চলে যায়। বিজিবিকে তথ্যটি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিশ্চিত করেছে। বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, হাতি দুটি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জ থেকে ভারতে চলে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কেটে স্বস্তি ফিরেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয়রা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এজন্য বিজিবি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। এর আগে, সন্ধ্যার দিকে হাতির ধাক্কায় নুরুজ্জামান নামের এক কিশোর গুরুতর আহত হয়। এরপর সন্ধ্যা ৭টার পর পঞ্চগড় জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে সে মারা যায়।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কক্সবাজারে ‘বৈদ্যুতিক ফাঁদে’ আটকে হাতির মৃত্যু
কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে ফসল রক্ষায় ধানখেতে পাতা ‘বৈদ্যুতিক ফাঁদে’ আটকে এক হাতির বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। হাতিটির আনুমানিক বয়স ৮ বছর। তবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করছে না বন বিভাগ। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে হাতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারোয়ার আলম। তিনি জানান, সোমবার ভোরে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের রহিমের ঘোনা এলাকায় ধানখেত থেকে একটি মৃত বন্য হাতির বাচ্চা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কী কারণে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য বলেন, ধান বাঁচাতে কৃষক রহিম মিয়া বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রাখেন। ভোরে একদল বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে ধানখেতে নেমেছিল। ধারণা করা হচ্ছে সেই সময় হাতির বাচ্চাটি বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা যায়।
২৫ অক্টোবর, ২০২৩

কাপ্তাইয়ে বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে একটি বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন এর মতিপাড়ার দুর্গম কাঁঠালতলী এলাকা থেকে হাতির মৃতদেহটি উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের রাইখালী রেঞ্জ অফিসার জাহিদুল ইসলাম জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হাতিটির মৃত্যুর খবর পেয়েছি। পরে কাপ্তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক হাজারীসহ আমরা ঘটনাস্থলে সকাল ১০টায় পৌঁছাই। সেখানে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করেছি। তবে হাতিটির বয়স অনেক বেশি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোকজনিত হাতিটির মৃত্যু হতে পারে।  এ ছাড়া তিনি জানান, এই বিষয়ে বন বিভাগ কর্তৃক চন্দ্রঘোনা থানায় জিডি করা হবে এবং যে স্থানে হাতিটি মারা গেছে সেই স্থানে মাটি খুঁড়ে হাতিটি পুঁতে ফেলা হবে।
১২ অক্টোবর, ২০২৩

এশিয়ার প্রথম ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ / নিচে চলবে ট্রেন, ওপর দিয়ে পার হবে হাতি
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বুক চিরে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্বপ্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস। এই ওভারপাসের উপরে হাতি ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। রেললাইনের কারণে বন্যপ্রাণী চলাচলে যেন কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি না হয়, এজন্য তৈরি করা হয়েছে এলিফ্যান্ট ওভারপাস। জানা যায়, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বুক চিরে গেছে রেললাইন। এর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়েছে। এই অংশে বন্যহাতির চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় বিষয়টি মাথায় রেখে ৩টি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।  ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে জন্য এশিয়ার উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দল প্রায় দুই বছর কাজ করেছেন। ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যাতায়াত করা এশিয়ান প্রজাতির হাতি সবচেয়ে বেশি চলাচল করে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা দিয়ে। ওভারপাস দিয়ে হাতিরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াত করতে পারবে। অপরদিকে অভয়ারণ্য এলাকায় বন্যপ্রাণীরা যাতে রেললাইনে আসতে না পারে তার জন্য করা হচ্ছে লবণ পানির লেক। বন্যহাতি লবণ পানি পান করতে পছন্দ করে। এ ছাড়া বন্যহাতির দল কোথাও পানি দেখলে সেখানে অবস্থান করতেও পছন্দ করে। সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ মিটার দীর্ঘ এলিফ্যান্ট ওভারপাসের কাজ প্রায় পুরোটা সম্পন্ন হয়েছে। ওভারপাসের উপরে লাগানো হয়েছে হাতির পছন্দের কলা, বাঁশসহ প্রায় ৪১ প্রজাতির গাছ। যার ফলে এই ওভারপাস দিয়ে যাতায়াতে আকৃষ্ট হবে বন্যহাতির দল। ওভারপাসের দুই পাশে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে চেষ্টা করলেও এই সীমানা প্রাচীরের কারণে বন্যহাতির দল রেললাইনে যেতে পারবে না। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ রেজাউল হক জানান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সাইড ওয়াল নির্মাণের কাছ চলছে। আগামী ১৫ অক্টোবর রেলপথে ট্রয়াল হবে। এ ছাড়া আগামী ২৮ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হোছাইন জানান, বন্যহাতির দল যেই করিডোর দিয়ে বেশি যাতায়াত করে, সেখানেই এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত অভয়ারণ্যের বন্যহাতিসহ অন্যান্য প্রাণীরা ওভারপাস ও আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়াতে অভ্যস্ত না। সেহেতু রেললাইন এড়িয়ে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করতে একটু সময় লাগবে তাদের। রেললাইনের কাজ শুরুর পর থেকে বন্যহাতির চলাচল আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হাতি বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ জানান, অভয়ারণ্য এলাকায় রেললাইনে নির্মিত আন্ডারপাসগুলো স্ট্যান্ডার্ড সাইজের হয়নি। এ ছাড়া বন্যাহাতি চলাচলের জন্য নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাসের সাইজও আরো দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন ছিল। হাতি খুবই বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী। সুতরাং চলাচলের পথে সামান্য পরিবর্তন হলেও তারা বুঝতে পারে। ওভারপাস দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করাতে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ওভারপাস দিয়ে প্রথমে বন্যহাতি চলাচল করতে দ্বিধাবোধ করলেও উপযোগী পরিবেশ পেলে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। চুনতি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মী সানজিদা রহমান বলেন, পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে এশিয়ান হাতি উল্লেখযোগ্য যার কিছু সংখ্যক বর্তমানে অবস্থান করছে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায়। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে ঢাকা কক্সবাজার রেললাইন। এ রেললাইনের প্রস্তাবিত নকশা অনুসরণ না করে হাতি চলাচলের জন্য মাত্র তিনটি আন্ডারপাস করা হয়েছে যার সংখ্যা এবং সাইজ কোনোটাই মানা হয়নি। একটা মাত্র ওভারপাস দেওয়া হয়েছে যার দৈর্ঘ্য এবং চওড়া আরও বড় হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। হাতি অত্যন্ত সতর্ক এবং বুদ্ধিমান প্রাণী, চলাচলের পথে কোনো বিপদ বা পরিবর্তন আঁচ করতে পারলে তারা পথ পরিবর্তন করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে তাদের খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রেলের উচ্চমাত্রার শব্দ শুনলে ওই পথে হাতি চলাচলে ভয় পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সরকারের এই রেললাইন একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বরাবরের মতো এবারেও তাদের স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষী আচরণ করেছেন যার কারণে এই মেগা প্রজেক্টটা প্রশ্নবিদ্ধ হলো। আমরা আশা করব, রেল চলাচল শুরু হওয়ার আগেই চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্যপ্রাণীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিশ্চিত করবেন।’ এদিকে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাস পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছু বিবেচনা করে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিজিক্যালি স্ট্যাডিতে ন্যাচারালি ওই জায়গা দিয়েই বন্যহাতি যাতায়াত করে। তাই তাদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ওই স্থানে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এশিয়ার কোনো দেশে বন্যপ্রাণীর জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটিই রেলপথে প্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস।
০৬ অক্টোবর, ২০২৩

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ / হঠাৎ কেন ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বাংলাদেশ?
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরের সময় উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তিতে সাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। হাসিনা-ম্যাখোঁ যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন তা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ছিল না, এমনকি এর ব্যয়ভার বহন করার সক্ষমতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, আগামী নির্বাচনের আগে ফ্রান্সকে খুশি করতেই এই উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। গত ১০-১১ সেপ্টেম্বর ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বাংলাদেশ সফরকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে। তার হাসি, হ্যান্ডশেক এবং সাংস্কৃতিক অবগাহনকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সেগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছিল। আর এসব কিছুর পিছনে ছিল একটি গভীর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা। সেই এজেন্ডায় প্রকৃতপক্ষে কারা উপকৃত হবেন, তা যাচাই করার দাবি রাখে।    দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় ম্যাখোঁ একজন সম্মানিত পরিদর্শনকারী ব্যক্তিত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি দাঁড়িয়ে লোকসংগীত শুনেছেন, পুরান ঢাকার রাস্তায় রিকশায় চড়েছেন এবং নানা ব্যঞ্জনের বাংলা খাবারের স্বাদ নিয়েছেন। এতকিছুর পরেও ম্যাখোঁ তার মোহনীয় ঐতিহাসিক সফরকে সম্পূর্ণরূপে ছদ্মবেশে ঢাকতে পারেননি। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যে ১০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজ বিক্রির চুক্তি করেছেন। এই উড়োজাহাজ ক্রয় বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং বাংলাদেশকে বছরের পর বছর এর ভার বহন করতে হবে।   চীনের প্রভাববলয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে ‘তৃতীয় পথ’ খুঁজছে পশ্চিমা অনেক দেশ। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ম্যাখোঁ তার সফর সাজিয়েছেন। বাংলাদেশে তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতাকে পুঁজি করা। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিতে পারে। আর এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে, ম্যাখোঁ বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে ফরাসি বিমানশিল্পের পক্ষে একটি লাভজনক চুক্তি স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হন।   বাংলাদেশ-ফ্রান্স এমন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন যার বোঝা বহন করার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন নানামুখী সংকট মোকাবিলা করছে। রিজার্ভ সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি, সরকারের বিপুল ঋণ ইত্যাদি সমস্যার মধ্যে আলোচ্য চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। এ চুক্তিটি এমন এক সময়ে স্বাক্ষরিত হলো যখন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র।   একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে এবং নির্বাচনে জোরপূর্বক প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ফ্রান্সের সঙ্গে উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এটি ইউরোপের সমর্থন আদায়ে সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে।  উড়োজাহাজ নয় যেন উড়ন্ত সাদা হাতি:  এভিয়েশন শিল্পের উত্থানের মধ্যেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা। দুর্বল পরিকল্পনা, যোগ্য পাইলটের অভাব, দক্ষ কেবিন ক্রুর ঘাটতি এবং বর্ধিত অপারেশনাল অব্যবস্থাপনার মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং থাই এয়ারলাইন্সের একটি বিমান যথাক্রমে দৈনিক ১০ দশমিক ২ ঘণ্টা এবং ১২ ঘন্টা ব্যবহারের বিপরীতে বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা উড়োজাহাজ গড়ে আনুমানিক দৈনিক ব্যবহার হয় মাত্র পাঁচ ঘণ্টা । যদিও ওয়াইড-বডি বোয়িং উড়োজাহাজগুলো দৈনিক ১৩-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে পারে, তবে ২০১৩ সালের জুনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই ধরনের বিমান গড়ে প্রতিদিন ১০-১৩ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।   মূলত পাইলটের ঘাটতি এবং সময়সূচি সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই এই অপচয় হয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ বিমান তার বহরকে দ্বিগুণ করেছে। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে রয়েছে ২১টি বিমান। ২০০০ সালে যেখানে ২৮টি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট যাতায়াত করত সেখানে বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২১টিতে। লাভজনকতাও হারিয়েছে তারা। আর এই সংকট তৈরি হয়েছে অপারেশনাল ঘাটতির কারণে। এই সংকটের মধ্যেও বিমান বাংলাদেশের নতুন বিমান কেনার সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত ব্যবসায়িক যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে রাজস্ব ফেরত দিতে না পারায় সম্প্রতি বাংলাদেশে রুট স্থগিত করেছে অনেক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স। এতে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমানের ব্যবহার বেড়েছে। তবুও বাংলাদেশ বিমান একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়ে গেছে।   ২০২১ এবং ২০২২ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রায় ৪১ মিলিয়ন ডলার এবং ৫৪ মিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জনের দাবি করেছে। অথচ ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েলের কাছে বিমানের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বিল বকেয়া রয়েছে, যার কোনো হিসাব সেখানে ছিল না। এই অপরিশোধিত বিলগুলো হিসাব করলে বিমান বাংলাদেশ লাভের পরিবর্তে ব্যাপক লোকসানে রয়েছে।  তৃতীয়ত, বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কারণ বাংলাদেশের বহরে থাকা বেশিরভাগ বিমানই বোয়িং কোম্পানির। নতুন আরেকটি কোম্পানির বিমান চালানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ পাইলট বাংলাদেশের নেই। প্রশিক্ষিত রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীর অভাব রয়েছে। পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের জন্য নতুন টাইপ-রেটিং সার্টিফিকেশন প্রয়োজন হবে, যা অনেক ব্যয়বহুল। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, এয়ারবাস থেকে দুটি ডেডিকেটেড কার্গো বিমান কেনার সিদ্ধান্ত। এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিমান বাংলাদেশের ৪,৯৮,০০০ টন কার্গো পরিবহনের ক্ষমতা ছিল। যেখানে পরিবহন করা হয়েছে মাত্র ২৮,০০০ টন পণ্য, যা মোট ক্ষমতার মাত্র ৬ শতাংশ। ডেডিকেটেড পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেন অপচয় সে বিষয়ে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিশেষজ্ঞরা তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।   প্রথমত, বাংলাদেশে এয়ার কার্গোর চাহিদা অনেকটা মৌসুমী। বছরে মাত্র ৫-৬ মাস এয়ার কার্গোর চাহিদা থাকে। সুতরাং, অফ-সিজনে উড়োজাহাজগুলো অলস বসে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৫-৬ মাস বাংলাদেশ বা এশিয়া থেকে ইউরোপ/উত্তর আমেরিকা অভিমুখে পণ্য যাবে, কিন্তু আসার সময় তাদের ফিরতে হবে খালি। সুতরাং এটা কোনোভাবেই লাভজনক হবে না। ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে, ডলার সংকটে জ্বালানি, সার এবং মৌলিক পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায়ও অপ্রয়োজনীয় বিমান ক্রয় দেশের জন্য ক্ষতিকর একটি সিদ্ধান্ত। সুতরাং ১০টি এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত কোনো প্রকার বাণিজ্যিক প্রয়োজনের পরিবর্তে রাজনৈতিক সুবিধার দ্বারাই অনুপ্রাণিত বলে মনে করা যেতে পারে।  মূল্যায়নের আগেই ক্রয়ের সিদ্ধান্ত:  কোনো টেন্ডার ছাড়াই এবং প্রযুক্তি ও আর্থিক মূল্যায়ন না করেই এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। ডেইলি স্টার বেশকিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে: ৩ মে ২০১৩ তারিখে বিমানের পরিচালনা বোর্ড উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ‘‘আটটি পর্যন্ত রোলস-রয়েস চালিত A350-900/1000 বিমান (‘A350 প্যাক্স এয়ারক্রাফ্ট’) বা ‘অন্য যে কোনো উপযুক্ত বিমা’ (প্রশস্ত বা সরু) ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ দুই দিনের মধ্যে ৫ মে ২০২৩ তারিখে, প্রধানমন্ত্রী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড ডমিনিক জনসনের সঙ্গে একটি যৌথ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুসারে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারবাস কোম্পানি থেকে 8টি রোলস-রয়েস চালিত A350-900/1000 বিমান এবং পণ্যবাহী দুটি এয়ারবাস (আরও আলোচনা সাপেক্ষে) ক্রয় করা হয়েছে।  ডেইলি স্টার বিমানের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। যারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যখন এয়ারবাস কেনার ঘোষণা দেয় তখন মূল্যায়ন কমিটি মাত্র কয়েকটি নিষ্পত্তিহীন সভা করেছে এবং বিমান ‘রাষ্ট্রের কাছে কোনো প্রতিবেদন পেশ করার ধারেকাছেও ছিল না।’ ঘটনার প্রকৃতি এবং ক্রমানুযায়ী এই ইঙ্গিত দেয় যে, সরকার পরিবর্তন হলে চুক্তিটি আইনি পর্যালোচনার মুখে পড়বে।   জিয়া হাসান : বাংলাদেশি লেখক এবং অর্থনীতিবিদ। তিনি আলজাজিরা, দ্য স্ট্রেইট টাইমস, দ্য হিন্দু এবং স্ক্রল ইনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর প্রবন্ধ লিখে থাকেন।   (ঈষৎ সংক্ষেপিত এবং নিবন্ধের শিরোনাম পরিবর্তন করা হয়েছে)  
০৩ অক্টোবর, ২০২৩
X