

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পলিটিকোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দুর্বল লোকদের নেতৃত্বে ইউরোপ ক্ষয়িষ্ণু জাতির দলে পরিণত হয়েছে। মূলত ইউরোপের অভিবাসন নীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। এর আগে আটলান্টিক মহাসাগরীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মার্কিন নিরাপত্তা কৌশলে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে, যা দিয়ে মূলত ক্ষুব্ধ হয়েছে ইউরোপও। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। আলোচনা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পাশাপাশি ইউরোপ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন ট্রাম্প। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে কোটি কোটি টাকার সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা।
এ অবস্থায় গত নভেম্বরে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ২৮ দফা প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। কিন্তু এই প্রস্তাবের পরই ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপ নেতাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। কারণ, এই প্রস্তাবকে একপেশে বলে দাবি করেন ইউরোপীয় নেতারা এবং এতে রাশিয়ার চাওয়া-পাওয়াকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় ইউক্রেন নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সোমবার লন্ডনে বৈঠকে বসেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎজ। যাতে অংশ নেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ওই বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা মার্কিন প্রচেষ্টায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করাকে একটি জটিল মুহূর্ত বলে মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি তারা রাশিয়ার ওপর আরও বেশি অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
এদিকে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিতে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফ্লোরিডায় বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। তবে কিয়েভ এই প্রস্তাবকে রাশিয়ার জন্য বিশেষ সুবিধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবারের বৈঠকের সময় জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন প্রস্তাব থেকে ইউক্রেনবিরোধী ধারাগুলো বাদ দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে—ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চল থেকে পুরোপুরিভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে এবং এ অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া অন্য অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুদ্ধ শেষ করবে। তবে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়াকে পূর্বাঞ্চল ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে কিয়েভে হামলার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।
এ অবস্থায় ইউরোপীয় নেতারা মার্কিন মধ্যস্থতায় এমন একটি যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা করছেন, যেখানে ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা থেকে ইউক্রেন আশঙ্কামুক্ত থাকবে। তবে ট্রাম্প এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দেননি। এ অবস্থায় ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে বিভক্তি চললেও ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
এর মধ্যে ৩৩ পৃষ্ঠার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইউরোপ সভ্যতার দিক থেকে বিলুপ্তির মুখে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাশিয়াকে হুমকি হিসেবেও দেখানো হয়নি। এতে রাশিয়া খুশি হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা এই কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং অভিযোগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের নথির ভাষায় অনেকটা ক্রেমলিনের বক্তব্যের সুরই অনুরণিত হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
কয়েকজন ইইউ কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের ভাষা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এরপর সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি তারা (ইউরোপীয় নেতারা) দুর্বল। ইউরোপ জানে না তাদের কী করতে হবে। তবে তিনি হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডকে সমর্থন করেন। ট্রাম্প বলেন, অভিবাসন নীতির কারণে ইউরোপ আরও দুর্বল হবে। তারা চায় রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকতে, তবে এটি তাদের দুর্বল করছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্টা ইউরোপের বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ইউরোপের জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে সমর্থন দেবে, এই ইঙ্গিত গ্রহণযোগ্য নয়। তার (ট্রাম্প) সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু নতুন কৌশল যেদিকে যাচ্ছে, ইউরোপের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের হুমকি, যা আমরা মানতে পারি না। সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের মিনা অ্যান্ডার বলেন, ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এখন প্রকাশ্যে ইউরোপের প্রতি বিদ্বেষী।
মন্তব্য করুন