ডিউটিরত অবস্থায় গুপ্ত হামলার শিকার নরসিংদী সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই আদনান রহমান গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে নরসিংদী সদর থানার সামনে এ গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন বুধবার হামলাকারী একই থানায় পুলিশের অপারেটর আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এতে এই পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে যায়। অদৃশ্য কারণে জেলা ও থানা পুলিশ বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এমনকি ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। আহত পুলিশ সদস্য আদনান ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বীরখারুয়া গ্রামের এটিএম খলিলুর রহমানের ছেলে বলে জানা গেছে।
সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, থানার পাশেই এক বাসায় এসআই আদনান তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তিনি খাবার খেতে বাসায় যান। খাবার খেয়ে বাসা থেকে থানায় আসার পথে ঈদগাহের কোনায় এলে হামলাকারী পেছন থেকে কাঠ বা বাঁশ দিয়ে আদনানের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। থানার ১০০ গজের মধ্যে নির্জন স্থানে মাঝরাতে কেউ তাকে বাঁচতে আসেনি। পরে রক্তাক্ত মাথা চেপে ধরে নিজেই থানায় গিয়ে পড়ে যান আদনান। পরে তার সহকর্মীরা ছুটে এসে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পথে আহত আদনান কয়েকবার বমি করেন। তার অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠান। পরে তার সহকর্মীরা রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিউরো সার্জন আমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার সকালে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে থাকা সহকর্মী এসআই মাসুদ ও ভগ্নিপতি হানিফ খান।
এদিকে একই থানায় পুলিশের ওপর পরপর দুটি হামলার পরও হামলাকারী থানার সামনে থেকে কীভাবে পালিয়ে যায়—তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আহতের স্বজনরা জানান, আদনান মাত্র সাত মাস আগে ফরিদপুরের মেয়ে চৈতিকে বিয়ে করেছেন। স্বামীর এ অবস্থায় চৈতি একেবারে ভেঙে পড়েছেন।
ভগ্নিপতি ফারুক আরও জানান, হাসপাতালের সব ব্যয়ভার নরসিংদী জেলা পুলিশ বহন করছে। তার দুই সহকর্মী বলেন, ঘটনার সময় একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীকে শনাক্ত করা হলেও তাকে আটক করা যায়নি। হামলাকারীর নাম সাইফুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার আলোকবালি গ্রামে। সে একজন মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মাদক-সংক্রান্ত দুটি মামলা রয়েছে বলেও জানান তারা।
নরসিংদী সদর থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছি। কেন এমন ঘটনা ঘটল—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কাশেম বলেন, বিষয়টি জানার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। হামলাকারী কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কি না বা এটা কোনো নাশকতা কি না; এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীকে আটকের পর তা নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে। এদিকে এ ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আসলে এক অনিরাপদ শহরের নাম নরসিংদী।
মন্তব্য করুন