বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে, তবে তা লেজুড়বৃত্তিক হবে না। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত নীতি সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির প্রশ্ন: নয়া অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক এ আয়োজনে হাসনাত আরও বলেন, যে ছাত্ররাজনীতি আমাদের পড়ার টেবিল থেকে বের করে মধুর ক্যান্টিনে নেতাদের প্রটোকল দিতে বাধ্য করে, সেই ছাত্ররাজনীতি আমরা চাই না। বিদ্যমান দলীয় ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ছাত্ররাজনীতি যেখানে শিক্ষার্থীদের হলের আবাসন সংকট, খাবার মানসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলার কথা ছিল, সেখানে তারা গণরুম জিইয়ে রেখে আসন নিয়ে রাজনীতি করেছে। দলীয় ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে তাদের যে ‘মাদার পার্টি’, সেটাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।
নতুন দিনের ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এমন ছাত্ররাজনীতি আমরা চাই না, যে ছাত্ররাজনীতিতে ‘মাদার পার্টি’ তার ছাত্র সংগঠনের প্রেসক্রিপশন লিখে দেবে। এই রিক্রুটমেন্ট পলিসিতে রাজনীতি কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের সেই রিক্রুটমেন্ট পলিসি থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হওয়া উচিত। তাই ছাত্ররাজনীতি হতে হবে ডাকসুকেন্দ্রিক।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ আরমান সভাপতিত্বে ও মোস্তফা মুশফিকের সঞ্চালনায় এ আয়োজনে হাসনাত ছাড়াও আলোচক হিসেবে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবং ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির উপদেষ্টা এম এ এস ওয়াজেদ, ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন মুজাহিদ মাহি ও ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মোস্তারি। আলোচকের তালিকায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের নাম থাকলেও তিনি এ আয়োজনে অংশ নেননি।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে রেহনুমা হৃদি বলেন, আমরা চাই গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির চর্চা হোক। সেইসঙ্গে হল ও একাডেমিক এরিয়ায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক।
শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা থাকলে আজ এই আলোচনা সভার প্রয়োজন হতো না। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির জন্য সর্বপ্রথম ট্যাগিং কালচার বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখেছি, বিশ্বজিৎকে হিন্দু শাখার কর্মী বলে কীভাবে নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। আবরারকে কীভাবে ট্যাগিং দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠবে।
ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু বলেন, ছাত্ররাজনীতি বলতে এর সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। যেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে; বরং এটিকে শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। সেই জন্য সবার আগে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টায় আসতে হবে।
নাগরিক কমিটির আখতার হোসেন বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কেন শিক্ষার্থীদের যে ভয়টা রয়েছে সে বিষয়ে আমাদের ভেবে দেখা উচিত। বিগত সময়ে ছাত্রলীগ যে র্যাগিং কালচার চালু রেখেছিল তার ট্রমা এখনো কাটেনি। গত দেড় দশক ফোন থেকে দেখে চেক করে করে মারধর করার রাজনীতি থেকে আমরা বেড়ে উঠেছি। আমি নিজেই তার ভুক্তভোগী। দমননীতি, গেস্টরুম কালচার, মাদার সংগঠনের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়ার যে প্রবণতা সে জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।