আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের বিষয়ে কথা বলতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আবারও সাক্ষাৎ করবে বিএনপি। কয়েক মাস ধরে দলটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের যে দাবি জানিয়ে আসছিল, সে ব্যাপারে একটি স্পষ্ট পথ নির্দেশিকা পেতেই যমুনায় গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পরই নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে দলীয় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে তারা দু-একটি কর্মসূচির দিকেও যেতে পারে।
জানা গেছে, বৈঠকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতা ও গণহত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দ্রুত এই নৃশংসতা বন্ধের দাবিও জানিয়েছে। একই সঙ্গে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এই বর্বর হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সব মহানগরে প্রতিবাদ র্যালি করবে দলটি। এদিন বিকেল ৪টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই প্রতিবাদ র্যালি শুরু হবে। এর রুট চূড়ান্ত না হলেও কাকরাইল, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, বাংলামোটর হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এ ছাড়া আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে দেশীয় সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেবে বিএনপি। সেদিন শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে মেলাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর এটি ছিল দলটির নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ও সংস্কারের ইস্যু ছিল অন্যতম। বিএনপি গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর দলীয় মতামত জমা দিয়েছে। সেখানে সংস্কারের পক্ষেই দলটির মতামত রয়েছে। সংস্কার ইস্যুতে তারা যে সরকারকে সহযোগিতা করছে, সে বিষয়ে দলটি তাদের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, সরকারের উচিত নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক যত সংস্কার রয়েছে, সেগুলো সরকার একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। আর বাকি সংস্কারগুলো একটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে। তবে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো আশ্বস্ত নয় বিএনপি। তাদের মধ্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার নানা শঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপি মনে করে, এটি নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নয়। কারণ, নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আসলে কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতে শিগগির প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে দলটি।
জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে কনসার্ন, সংশয়—সেটি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবে দলটি। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির যে মতামত, সেটাও তারা তুলে ধরবে। চিকিৎসার জন্য গত রোববার সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপি মহাসচিব। সপ্তাহখানেক পরে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটিতে আরও আলোচনা হয়েছে, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে; সে কারণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চায় না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া—এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘটিত শতাব্দীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে রাজধানীতে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণজমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলটি এই মার্চ ফর কর্মসূচিতে সংহতি জানাবে এবং তাদের নেতাকর্মীরাও সেখানে অংশ নিতে পারেন।
বৈঠকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পিনাকী ভট্টাচার্যের যে বিষোদ্গার এবং নানা নেতিবাচক মন্তব্য, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেন, পিনাকী হয়তো কারও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কারও এজেন্ট হয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকতে পারেন। এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।
এ ছাড়া বিএনপির নিম্ন সারির নেতা কেউ কেউ সাম্প্রতিক সময়ে টকশোসহ বিভিন্ন জায়গায় যে ‘উল্টোপাল্টা’ কথা বলছেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। নেতারা মনে করেন, এ ধরনের কথাবার্তায় এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে দলের একটা গাইডলাইন দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন