কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ঝুঁকি বাড়ছে আমদানি-রপ্তানির

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। যদিও এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই, তার পরও যুদ্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যয় বৃদ্ধি ও নানা ধরনের সমস্যার আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় তৈরি পোশাক পাঠাতে হরমুজ প্রণালি ও সুয়েজ খাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ দুটি রুট ব্যবহার করলে সময় ও খরচ দুটিই কম পড়ে। কিন্তু চলমান সংঘাতের ফলে হরমুজ প্রণালি ব্যবহারে বাধা তৈরি হলে রপ্তানি ব্যয় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে বিদেশি ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিমত, মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে যুদ্ধ অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। বিশেষ করে এই সংঘাত বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য পথগুলোর ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে। তাদের মতে, ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে এই যুদ্ধ। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, শিপিং ব্যয়ও ঊর্ধ্বমুখী এবং উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সাম্প্রতিক একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক ঝাঁকুনি, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ আরোপের পর আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে, যদিও এর আগে তা ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্বে মোট তেলের এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে মধ্যপ্রাচ্য। এরই মধ্যে শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে—ইউরোপীয় শেয়ারবাজার ১.১ শতাংশ এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচারস ১.৩ শতাংশ কমে গেছে।

এই হামলা এমন এক সময় হয়েছে, যখন গ্লোবাল স্টক সূচক বিগত বৃহস্পতিবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল এবং এপ্রিল থেকে তা ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। বিনিয়োগকারীরা এখন পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে কি না, তা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালবেলাকে বলেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বৈশ্বিক বাণিজ্য ও উৎপাদনে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। ট্রাম্পের ট্যারিফজনিত ধাক্কা সামলানোর পর এমন একটি সংঘাত সরাসরি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে জ্বালানি খাতে মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে, শিপিং খরচ বেড়েছে এবং উৎপাদনেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, যার প্রভাব স্টক মার্কেটেও দৃশ্যমান। তিনি বলেন, বিশ্ব জ্বালানির এক-তৃতীয়াংশ উৎপন্ন হয় মধ্যপ্রাচ্যে। হরমুজ প্রণালি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে, যা অর্থনীতিতে বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে।

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের পরিবহনের পাশাপাশি সুয়েজ খাল হয়ে বিপুল পরিমাণ বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন হয়। এই পথ ব্যবহারে বাধা তৈরি হলে জাহাজগুলোকে আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ হয়ে ঘুরে যেতে হবে। এতে সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়বে। এই বাড়তি পথ পাড়ি দিতে সময় প্রায় ১৫ দিন বেশি লাগবে। আর শিপিং খরচ প্রতি কনটেইনারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

শিপিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বিরাজ করছে, কারণ এটি দিয়ে বিশ্বে মোট তেলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ হয়। ইরানের সীমানার কাছাকাছি থাকা এই জলপথে যে কোনো বিঘ্ন বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।

তারা আরও বলেন, ইরানের মিত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে কেউ কেউ সুয়েজ খালের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সক্ষমতা রাখে, যা ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট। গত বছর ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা রেড সাগরে নিজেদের প্রভাব দেখিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. মাসরুর রিয়াজ কালবেলাকে বলেন, ইসরায়েলি হামলা সরাসরি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ইরানের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সুয়েজ খাল নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট। হুতিরা গত বছর রেড সাগরে তাদের সামর্থ্য দেখিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি আবার তৈরি হলে শিপিং সময় ও ব্যয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেও মত দেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিসিবি নির্বাচনে মনোনয়ন নিলেন ৬০ প্রার্থী

ঝাড়ু হাতে নিজেই রাস্তা পরিষ্কারে নামলেন ডিসি সারোয়ার

বিএনপি গণতন্ত্র ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে : মহসীন হোসাইন

এমসিসিআইর অনুষ্ঠানে পরামর্শক কমিটির সদস্য / ‘বিদ্বেষ’ থেকে এনবিআর ভাগ হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হবে

হঠাৎ ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠালো ইরান

গণতান্ত্রিক শক্তি এক না হলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে : তারেক রহমান

কোটিপতি হওয়ায় রাগ করে নিজের কোম্পানি দান করে দেন উদ্যোক্তা!

মাসুমা রহমান নাবিলা ও ভিট বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

ইয়াবা বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বন্ধুর হাতে খুন 

শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তারেক রহমান : মাহবুবুর রহমান  

১০

বিসিএস ২২ ব্যাচ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও শরৎ সন্ধ্যা

১১

ঢাকা কলেজের নর্থ হলে লাইট-ফ্যান উপহার দিল ছাত্রদল

১২

ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

১৩

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সারজিস

১৪

চীনে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে হাতের কাটা নখ, রহস্য কী জেনে নিন

১৫

দুর্গাপূজা উপলক্ষে তুরাগে শতাধিক হিন্দু পরিবারকে তারেক রহমানের উপহার

১৬

রাজ্জাকের পদত্যাগে অবাক শান্ত

১৭

কোটের হাতাতে এই অতিরিক্ত বোতাম কেন থাকে, আসল রহস্য জেনে নিন

১৮

আবুধাবিতে বিশ্বের প্রথম ‘নেট জিরো এনার্জি’ মসজিদ

১৯

ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল

২০
X